তদন্ত দুই ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধেও | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
কোটি টাকার বেশি নগদে ড্রাফ্ট, তৃণমূলের জবাব চাইল কমিশন | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও কলকাতা | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিধি ভেঙে খরচের অভিযোগ নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইণ্ডিয়াকে তদন্তের নির্দেশ দিল নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে কৈফিয়ত চেয়ে তৃণমূল নেতৃত্বকেও চিঠি দিয়েছে তারা। সিপিএমের তরফে সম্প্রতি তৃণমূলের বিরুদ্ধে নির্বাচনে কালো টাকা ব্যবহারের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার ভিত্তিতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর। তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নগদ ১ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা দিয়ে দু'টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে তারা ড্রাফট তৈরি করেছে। সেই টাকা দেওয়া হয়েছে দু'টি বিজ্ঞাপন সংস্থাকে। অথচ ভোটের সময় নগদ টাকার লেনদেন যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার জন্য রাজনৈতিক দলগুলিকে নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কেরও নিয়ম (২০০৯ সালে জারি করা) হল, ৫০ হাজার বা তার বেশি মূল্যের ড্রাফট নগদ টাকা দিয়ে কেনা যাবে না। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করে তার পরেই পে অর্ডার তৈরি করতে হবে। তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠানো চিঠিতে নির্বাচন কমিশন বলেছে, "জানা গিয়েছে যে, গত ২৩ মার্চ ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইণ্ডিয়া থেকে ১ কোটি ২৩ লক্ষ টাকার পে অর্ডার তৈরি করেছে আপনার দল। 'ভিস্যুয়াল অডিও' নামে একটি সংস্থাকে ওই টাকা দেওয়া হয়েছে। একই ভাবে ২৪ এপ্রিল ইলাহাবাদ ব্যাঙ্ক থেকে 'এম পাওয়ার গ্লোবাল অ্যাকসেস ইণ্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড'-এর নামে ১০ লক্ষ টাকার পে অর্ডার তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সর্বদলীয় বৈঠকে কমিশন বারবার বলেছিল এবং সব দলকে নির্দেশিকা পাঠিয়ে জানিয়েছিল যে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নগদ টাকা ব্যবহার করা যাবে না।" এই ঘটনা সম্পর্কে তৃণমূলের বক্তব্য জানতে চেয়েছে কমিশন। তাদের শুক্রবারের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে বলে আজ দিল্লিতে উপ নির্বাচন কমিশনার বিনোদ জুতসি জানান। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, "চিঠি পেয়েছি। যথাসময়ে জবাবও দেব।" একই ভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক দু'টির বিরুদ্ধে তদন্ত করতে। কমিশন জানতে চেয়েছে— "রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিধি ভেঙে এবং নির্বাচনী ব্যয় নিয়ে কমিশনের নির্দেশ অমান্য করে কী ভাবে নগদ টাকার বিনিময়ে পে অর্ডার তৈরি করা হল।" 'নিয়ম ভেঙে' যারা ড্রাফট তৈরি করেছে বলে অভিযোগ, সেই ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইণ্ডিয়ার ১, হেমন্ত বসু সরণি শাখা এবং ইলাহাবাদ ব্যাঙ্কের ২, নেতাজি সুভাষ রোড শাখাকেও আলাদা করে চিঠি পাঠাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ওই ব্যাঙ্ক দু'টির কর্তাদেরও শুক্রবারের মধ্যে চিঠির জবাব দিতে বলা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার তাঁদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে রাজ্যের যুগ্ম মুখ্য নির্বাচনী অফিসার দিব্যেন্দু সরকার জানান। নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপে স্বাভাবিক ভাবেই 'উল্লসিত' সিপিএম। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোটে কালো টাকা ব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে প্রচার পর্বের প্রায় শুরু থেকেই সরব তারা। গত কাল রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব কমিশনের কাছে এ ব্যাপারে 'সুনির্দিষ্ট তথ্য' দিয়ে নালিশ জানিয়ে এসেছেন। তার পর আজ দিল্লিতে একই অভিযোগ নিয়ে কমিশনের কাছে গিয়েছিলেন সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশির সঙ্গে দেখা করার পরে তিনি বলেন, "কমিশনের দাবি মতো আমরা কালো টাকা সংক্রান্ত আরও তথ্য জমা দিয়েছি।" কলকাতায় সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, "দু'টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চারটি ২৫ লক্ষ টাকা এবং একটি ২৩ লক্ষ টাকার ব্যাঙ্ক ড্রাফট করা হয়েছে নগদ টাকা জমা দিয়ে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। তাঁরা কী তদন্ত করছেন, তা আমরা জানি না। কিন্তু ৪৯,৯৯৯ টাকার বেশি নগদে ব্যাঙ্ক ড্রাফট করা যায় না। কী করে তা করা হল, তা রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে তদন্ত করে দেখতে হবে। তৃণমূল যে ভোটে কালো টাকার ব্যবহার করছে, এটাই তার প্রমাণ। এই ড্রাফটের টাকায় তৃণমূলের অডিও প্রচারের বিল মেটানো হয়েছে।" বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ইলাহাবাদ ব্যাঙ্ক এবং ইউবিআই— দুই ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষই জানান যে, বিষয়টি তাঁদের জানা নেই। কী পরিস্থিতিতে ওই পে অর্ডার মঞ্জুর করা হয়েছে, তা তাঁরা খতিয়ে দেখবেন। ইউবিআই-এর চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভাস্কর সেন বলেন, "সাধারণত আমাদের ব্যাঙ্কে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অঙ্কের ক্ষেত্রে নগদ টাকা জমা নিয়ে পে অর্ডার ইস্যু করা হয়। টাকার অঙ্ক তার বেশি হলে প্রথমে অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিয়ে তার পর পে অর্ডার ইস্যু করাই প্রথা। এই ক্ষেত্রে অত টাকার পে অর্ডার ওই ভাবে আমাদের ব্যাঙ্ক আদৌ ইস্যু করেছে কিনা অথবা করে থাকলে কী পরিস্থিতিতে তা করেছে, তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।" ইলাহাবাদ ব্যাঙ্কের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর এম আর নায়ক বলেন, "বিষয়টি আমার জানা নেই। খতিয়ে দেখে তার পরই প্রতিক্রিয়া জানাতে পারি।" সিপিএম সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক দু'টি গোড়ায় নগদ টাকা নিয়ে ড্রাফট তৈরি করা যাবে না বলে জানিয়েছিল। কিন্তু পরে তৃণমূলের এক নেতা প্রভাব খাটিয়ে ওই লেনদেনে তাদের বাধ্য করেন। নির্বাচন কমিশন সূত্রে বলা হচ্ছে, বিষয়টি সামনে আসার পরে প্রথমে আয়কর দফতর তা খতিয়ে দেখে। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই তৃণমূল এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক দু'টিকে অবিলম্বে নোটিস পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয় রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুনীল গুপ্তকে। শান্তির তৃতীয় পর্বে ভোটের হার দেখে আশায় দু'পক্ষই নিজস্ব প্রতিবেদন একেবারে 'গণতন্ত্রের উৎসব'-এর মেজাজেই সম্পন্ন হল রাজ্যে বিধানসভা ভোটের তৃতীয় পর্ব! নির্বিঘ্নেই মিটল রাজধানী কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী দুই জেলা উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভোট। বিধানসভা ভোটের প্রথম দুই পর্বের মতো বুধবার তৃতীয় দফাতেও মানুষের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। নিজের ভোট নিজে দিতে পেরে খুশি— এই ছিল সার্বিক মনোভাব। নির্বাচন কমিশনকেই যার জন্য 'কৃতিত্ব' দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট সব মহল। কমিশনের হিসাবে, তিন জেলায় গড় ভোটের হার ৭৭%। জেলাওয়াড়ি পরিসংখ্যান নিলে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এই হার যথাক্রমে ৮৩% ও ৮৩.৭৫%। কলকাতায় ভোটের হার প্রায় ৬৪%। শহর কলকাতায় ভোটদানের হার অবশ্য বরাবরই শহরতলি বা মফস্সলের চেয়ে কম থাকে। সেই অর্থে কলকাতার কিছুটা কম ভোটের হার অস্বাভাবিক নয়। ভোটকেন্দ্রে লম্বা লাইন। কেষ্টপুরে দেশকল্যাণ চৌধুরীর তোলা ছবি। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কেন্দ্র যাদবপুরের কিছু এলাকায় সিপিএম রিগিং করেছে। মমতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু উত্তর ২৪ পরগনার বীজপুর ও হাড়োয়ার মোট ৪০টি বুথে পুনর্নির্বাচন দাবি করেছেন। সেই দাবি অবশ্য রিগিং সংক্রান্ত নয়। তবে এ দিন রাত পর্যন্ত তৃণমূলের রিগিং বা সিপিএমের পুনর্নির্বাচন, কোনও দাবিই আনুষ্ঠানিক ভাবে কমিশনের কাছে জমা পড়েনি। বিক্ষিপ্ত কিছু গোলমালের অভিযোগ ছাড়া এ দিনের ভোট ছিল শান্তিপূর্ণ। কিন্তু 'শান্তির ভোট' ছাপিয়ে যুযুধান দুই শিবিরকেই 'ইতিবাচক' মেজাজে রেখেছে ভোটদানের হার। বস্তুত, ২০০৯-এ লোকসভা নির্বাচনে ভোটের হার ছিল একই রকম। সেই নিরিখে তৃণমূল শিবির আশা করছে, লোকসভা ভোটের ফলাফলের ধারাই অক্ষুণ্ণ থাকবে। আবার ২০০৬-এ বিধানসভা নির্বাচনেও ভোটের হার প্রায় এই রকমই ছিল। সে বার কিন্তু বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল বামফ্রন্ট। তাই ভোটের হার থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছনো এখনই সম্ভব হচ্ছে না কোনও শিবিরের পক্ষেই। 'উৎসবে' সামিল। বুধবার পার্ক সার্কাসের একটি বুথে। —রাজীব বসু প্রথম দুই দফার মতো এ দিনও চড়া হারে ভোটদানকে 'পরিবর্তনের সূচক' বলে মনে করছে তৃণমূল শিবির। তাদের মতে, দীর্ঘ দিনের বাম জমানার অবসান ঘটাতেই মানুষ বেশি সংখ্যায় বুথে ভিড় জমাচ্ছেন। সচরাচর বেশি হারে ভোটদানকে 'প্রতিষ্ঠান-বিরোধী' মনোভাবের পরিচায়ক বলেই ধরা হয়। সেই যুক্তিতেই তৃণমূল শিবির আত্মবিশ্বাসী। দলের নেতা মুকুল রায়ের কথায়, "উৎসবের মেজাজে লোকে তো আর প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ভোট দিতে যায় না!" যার ভিত্তিতে স্বয়ং মমতাও প্রকাশ্যে দাবি করেছেন, তিন দফায় ভোট-হওয়া ১৭৯টি আসনের মধ্যে বিরোধী জোট প্রায় ১৫০টি পাবে। পক্ষান্তরে, বিমানবাবুর পাল্টা দাবি, তিন পর্যায়ে যা ভোট হয়েছে, তাতে তাঁরা নিশ্চিত যে, অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গঠিত হচ্ছে। তাঁর কথায়, "মানুষ যে মনোভাব নিয়ে ভোট দিতে এসেছেন, তাতে বলা যায়, গণনার পরে আমাদের কথা সত্য প্রমাণিত হবে। যাঁরা দিন-রাত পরিবর্তনের মালা জপ করছেন, তাঁরা মুখের উপরে জবাব পাবেন!" সিপিএম শিবিরের দাবি, রাজ্যে 'আতঙ্কের পরিবেশ' গড়ে ওঠা ঠেকাতে মরিয়া হয়ে মানুষ ভোট দিতে বেরোচ্ছেন। 'পরিবর্তন' ঠেকাতে সেই ভোট জমা পড়ছে বাম-বাক্সেই। সিপিএমের এক রাজ্য নেতার কথায়, "১৯৮০ সালের পরে আর ভোট দিতে বেরোননি, এমন মানুষকেও এ বার বুথে যেতে দেখা গিয়েছে। আমরা আশা করছি, তৃণমূল নেত্রীর হাতে বাংলার ভার তুলে দিতে চান না বলেই তাঁরা বেরিয়ে আসছেন। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, কার হাতে বাংলা ভার দেখতে চাইছেন, সেই জবাব ১৩ মে-র আগে মেলা সত্যিই মুশকিল!" ভোট দিয়ে বুথ থেকে বেরোচ্ছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বুধবার শুভাশিস ভট্টাচার্যে তোলা ছবি। কিন্তু ২০০৬-এর বিধানসভা নির্বাচন দেখলে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং কলকাতায় ভোটের হার ছিল যথাক্রমে ৮৩%, ৮০% ও ৬৩%। এ বারের মতোই। সে বার কিন্তু বামফ্রন্ট উত্তর ২৪ পরগনার ২৮টির মধ্যে ২৪, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ২৮টির মধ্যে ২১ এবং কলকাতার ২১টির মধ্যে (যেখানে বাম ভোট বরাবরই অপেক্ষাকৃত কম) ৯টি জিতেছিল। রাজ্যে পেয়েছিল মোট ২৩৫টি আসন। ফলে, ২০০৬ এবং ২০০৯-এর ভোটের হার প্রায় একই হয়েও ফলাফল ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ২০১১-য় একই রকম ভোটের হারে তৃণমূল না সিপিএম, কার বরাত খুলবে, তার উত্তর সত্যিই 'রহস্যময়'! সপরিবার ভোট দিচ্ছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বুধবার কৌশিক দাসের তোলা ছবি। তৃতীয় দফার ভোটে রিগিংয়ের অভিযোগ তুলেও মমতা অবশ্য আশাপ্রকাশ করেন, কংগ্রেস-তৃণমূল জোট প্রায় ১৫০টি আসন পাবে। তাঁর কথায়, "কারা সরকার গঠন করবে, এই তিন পর্বের ভোটের মধ্যে দিয়েই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে।" ভোটের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের উপরে হামলার ঘটনায় সিপিএম-কে দায়ী করে মমতা বলেন, "ওরা হেরে যাবে জেনেই আক্রমণ করেছে! বুঝে গিয়েছে, কফিনে শেষ পেরেক পোঁতা হয়ে গিয়েছে!" ভোটগ্রহণ পর্ব চলাকালীন দলীয় কর্মীদের শান্ত ও সংযত থাকার আবেদন জানান তিনি। মমতার সুরেই জোটসঙ্গী কংগ্রেস হাইকম্যাণ্ডের তরফে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শাকিল আহমেদ দিল্লি রওনা হওয়ার আগে বলেন, "১৩ তারিখ ফলপ্রকাশের পরে বোঝা যাবে, মানুষ পরিবর্তনের পক্ষেই রায় দিয়েছেন!" শাকিল 'সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ' নির্বাচনের জন্য কমিশনকে 'অভিনন্দন' এবং 'শৃঙ্খলাবদ্ধ' হয়ে ভোট দেওয়ায় রাজ্যের মানুষকে 'ধন্যবাদ' জানিয়েছেন। জোকা কারমেল হাইস্কুল সংলগ্ন এলাকায় ঝামেলার খবর মমতার অভিযোগ মূলত মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্র যাদবপুর নিয়েই। মমতা দুপুরে বলেন, "খবর এসেছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন যাদবপুরে বেশ কয়েকটি বুথে বিএসএফ এবং সিআইএসএফ জওয়ানদের বসিয়ে রেখেছে। স্থানীয় পুলিশের একাংশের সহায়তায় সিপিএমের গুণ্ডারা রিগিং করেছে। রায়পুর গভর্নমেন্ট হাইস্কুল, মহামায়া হাইস্কুল, কেন্দুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদর্শ বিদ্যাপীঠে রিগিং হয়েছে। কারা ওই সব করছে, তা আমরা জানি। সমস্ত নথিপত্র আমরা জোগাড় করেছি। প্রতিবারই মুখ্যমন্ত্রী রিগিং করে জেতেন। এ বারেও ১০২ এবং ১১০ নম্বর ওয়ার্ডে রিগিং হয়েছে। রিগিং না-করলে তো উনি জিততে পারবেন না!" যার জবাবে আলিমুদ্দিনে বিমানবাবু বলেন, "একদম বাজে কথা। সব অভিযোগ মিথ্যা!" মহাকরণে যাদবপুর নিয়ে অভিযোগের ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি বুদ্ধবাবু। নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত থাকায় টানা দিন দশেক মহাকরণে পা না-দিলেও এ দিন বিকালে ঘণ্টাখানেকের জন্য দফতরে আসেন তিনি। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, মমতার আসনের দাবির বাস্তব ভিত্তি আছে? তিনি নিরুত্তরই ছিলেন। বন্দি ভাগ্য। ভোট শেষে ইভিএম 'সিল' করা হচ্ছে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুনীল কুমার গুপ্ত জানান, কোনও দলের অভিযোগই রাত পর্যন্ত কমিশনে জমা পড়েনি। তবে তৃণমূল রিগিং-এর অভিযোগ জানিয়েছে কমিশনের পর্যবেক্ষককে। কেন্দ্রভিত্তিক ভোটের স্ক্রুটিনি শুরু হবে আজ, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে। তার মধ্যে কমিশনে অভিযোগ জমা পড়লেও তারা তা বিবেচনা করবে। অসুস্থতায় মৃত ৪, সরানো হল ২৪ জন ভোটকর্মীকে নিজস্ব প্রতিবেদন অঙ্কের হিসেবে রাজ্যে নির্বাচনের 'মূল মঞ্চ' বলে চিহ্নিত কলকাতা এবং দুই ২৪ পরগনায় বুধবার তৃতীয় দফার ভোট নিছকই কিছু খুচরো ঘটনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকল। এ দিন তিন জেলার ৭৫টি আসনের নির্বাচনে সকাল থেকেই অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের তরজা চললেও গুলি-বোমা-লাঠালাঠি কিংবা বুথ দথলের চেনা চিত্র চোখে পড়েনি। বরং দমদম থেকে বসিরহাট, বারুইপুর থেকে বেলেঘাটা— প্রায় সর্বত্রই দেখা গিয়েছে নিশ্চিন্ত ভোটারের দীর্ঘ লাইন। তবে নির্বাচন কমিশনের কড়া অনুশাসনের মধ্যেও কলকাতা কিংবা দুই জেলার আনাচেকানাচে ভোটকর্মীদের নিয়ে প্রায়ই দানা বেঁধেছে অসন্তোষ। তারই জেরে সারা দিনে, কলকাতায় আট জন এবং দুই ২৪ পরগনায় ১৬ জন ভোটকর্মীকে সরিয়ে দেয় কমিশন। যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় বিভিন্ন বুথ থেকে ১০৬টি ইভিএম-ও সরিয়ে দেওয়া হয়। নির্বিঘ্ন নির্বাচনের মধ্যেও অবশ্য ভোট দিতে এসে অসুস্থতায় মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। চড়া রোদে দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে পড়াই তাঁদের মৃত্যুর কারণ বলে জানিয়েছে কমিশন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং (পশ্চিম) কেন্দ্রের ১৩৮/৯০ নম্বর বুথের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মোমিনা সর্দার (৬৬)। আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মারা যান তিনি। দুপুরে কুলতলিতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার সময়ে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় রেণুকা হালদার (৩৫) নামে এক মহিলার। ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক শেখর সেন জানান, কুলতলিতে ১৮৬ নম্বর বুথে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রেণুকাদেবী। মাথা ঘুরে পড়ে সেখানেই মারা যান তিনি। তৃতীয় ঘটনাটি ঘটে উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙা কেন্দ্রের দত্তপুকুরে। সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার সময়ে আধাসেনার সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু হয় বিমলকান্তি রায় (৪৭) নামে এক ব্যক্তির। আচমকাই বুকে হাত দিয়ে বসে পড়েন তিনি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়। স্থানীয় সিপিএমের অভিযোগ, জওয়ানদের ধাক্কায় পড়ে গিয়েই মারা গিয়েছেন বিমলবাবু। এক নজরে তিন জেলা ● অসুস্থ হয়ে মৃত ৪ শুধু তিন ভোটার নয়, এ দিন মৃত্যু হয়েছে এক ভোটকর্মীরও। তাঁর নাম অবোধবিহারী সিংহ (৫৫)। পুলিশ জানায়, সাউথ ক্যালকাটা গার্লস কলেজের ১৭৭ নম্বর বুথের পোলিং অফিসার অবোধবিহারীবাবু ভোট শেষ হওয়ার পরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। বুকে ব্যথা অনুভব করেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই তিনি রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ মারা যান। হৃদে্রাগই তাঁর মৃত্যুর কারণ বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। দিনভর পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনীর তল্লাশি চলে কলকাতা এবং দুই জেলায়। তারই জেরে উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু তাজা বোমা। বারাসত কেন্দ্রের তালপাকুড়িয়ায় একটি মাঠ থেকেও মিলেছে চারটি বোমা। বিভিন্ন ঘটনায় গ্রেফতারও করা হয় ১০১ জনকে। ভাঙড়ে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের বীরেন মণ্ডল-সহ কয়েক জন দলীয় কর্মী পুলিশের লাঠিতে জখম হন। পুলিশের অভিযোগ, সাতগাছি বুথে বীরেনবাবু ভোট দেওয়ার পরে নির্বাচন বিধি ভেঙে বুথের ১৫০ মিটারের মধ্যে দাঁড়িয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিলেন। তারই জেরে উত্তেজনা ছড়ায়। সামাল দিতে পুলিশ লাঠি চালালে আহত হন বেশ কয়েক জন। অন্য দিকে সিপিএম-সমর্থকদের লাঠির ঘায়ে তাঁর গাড়ির কাচ ভেঙে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জয়নগর বিধানসভা কেন্দ্রের এসইউসি প্রার্থী তরুণ নস্কর। বনগাঁ উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের খয়রামারির ৯৫/১১৫ নম্বর বুথে প্রিসাইডিং অফিসার ছিলেন সঞ্জয় মিত্র। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল-সমর্থকেরা সকালেই অভিযোগ তোলেন, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ওই বুথের দরজা বন্ধ করে তিনি ইভিএমের সিল খুলে ভোট দিচ্ছিলেন। বুথের পাশেই ক্যাম্প করে থাকা তৃণমূলকর্মীরা আওয়াজ শুনে ওই ঘরে গিয়ে দেখেন, ভোটযন্ত্রের সিল খোলা। সঞ্জয়বাবু তাঁদের জানান, তিনি 'মক টেস্ট' করছিলেন। এ ব্যাপারে কমিশনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। উত্তেজনা এড়াতে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দুপুরে বাগদার পদ্মপুকুরে বাম সমর্থকদের সঙ্গে তৃণমূলের হাতাহাতি শুরু হয়। মকশেদ মণ্ডল নামে এক তৃণমূল-সমর্থককে বাঁশ দিয়ে পেটানো হয় বলে তৃণমূলের অভিযোগ। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে সিপিএম। ব্যারাকপুর মহকুমার বীজপুরে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পথে ভোটারদের আটকানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের প্রার্থী নির্ঝরিণী চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, পলিটেকনিক হাইস্কুলের বুথে তাঁদের পোলিং এজেন্ট মানস সিংহকে রিভলভারের বাট দিয়ে মেরে বুথ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেয়ে ওই এলাকা থেকে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ছোটখাটো এমন উত্তেজনা অবশ্য কোথাওই বেশি দূর গড়াতে পারেনি। তবে সারা দিনেবুঝিয়েও ভোটকেন্দ্রে আনা যায়নি উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙা কেন্দ্রের চালতেবেড়িয়ার বাসিন্দাদের। রাস্তা ও বিদ্যুতের দাবিতে ওই গ্রামের কয়েকশো বাসিন্দা ভোট বয়কট করেন। বুঝিয়ে লাভ হয়নি। চিট ফাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি গৌতমের নিজস্ব প্রতিবেদন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের মাঝ পর্বে এসে হঠাৎ করেই বিতর্কের কেন্দ্রে কয়েকটি চিট ফাণ্ড সংস্থা। তাদের কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী তথা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব। গৌতমবাবুর মতে, কিছু চিট ফাণ্ড জনগণের টাকা নয়ছয় করছে। এই টাকা বড়লোকেদের নয়। গরিব মানুষ সেখানে টাকা রেখেছিলেন। কিন্তু ফেরত পাচ্ছে না। সেই টাকা ফেরত না দিয়ে অন্য ব্যবসায় লাগানো হচ্ছে। এটা বরদাস্ত করা যায় না। তিনি আরও জানান, ক্ষমতায় ফিরলে তাঁরা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। প্রয়োজনে জেলে পুরবেন। কয়েকটি চিট ফাণ্ডের 'রমরমা ব্যবসা' কী ভাবে হল এবং তা রুখতে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ করছে তা আজ, বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত বলবেন বলে বুধবার আবাসনমন্ত্রী জানান। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের মতে, সাধারণ মানুষের টাকা নয়ছয়কারী চিট ফাণ্ড সংস্থাগুলি বিরুদ্ধে রাজ্য ধারাবাহিক ভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে। এ ব্যাপারে নজরদারি চালানোর জন্য সরকার অর্থনৈতিক অপরাধ দমন 'সেল' গড়েছে। তবে বর্তমানে যে আইনে এই সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তার অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে রাজ্যের অর্থ দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, "এখন এই ব্যাপারে যে আইন রয়েছে, তাতে রাজ্য সরকার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোনও চিট ফাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। কোনও ব্যক্তি প্রতারিত হয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় মামলা দায়ের হয়।" আশি ও নব্বইয়ের দশকে এই ধরনের মমলার ভিত্তিতেই বেশ কয়েকটি চিট ফাণ্ড সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু তাতে সমস্যার সমাধান পুরোপুরি করা যায়নি। 'সেবি'-র কাছে নাম নথিভুক্ত করে ফের রাজ্য জুড়ে এই ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে। তা হলে সমস্যার স্থায়ী সমাধানে রাজ্য সরকারের ভাবনা কী? অর্থ দফতরের ওই কর্তাটি জানান, ২০০৮ সালে রাজ্য স্তরে একটি আইন করতে উদ্যোগী হয় সরকার। 'প্রোটেকশন অফ ইনভেস্টার অ্যাণ্ড ডিপজিটর অ্যাক্ট' নামে ওই আইনের খসড়া রাজ্য বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়। তার পরে সেটি পাঠানো হয় রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য। পরে কয়েকটি ছোটখাটো সংশোধনের কথাও ওঠে এবং সেগুলি করেও ফেলা হয়েছে। তবে এখনও বিষয়টি রাষ্ট্রপতির বিবেচনাধীন। কী রয়েছে ওই খসড়ায়? অর্থ দফতরের বক্তব্য, ওই আইন কার্যকর হলে রাজ্য সরকার নিজে থেকেই চিট ফাণ্ডের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারবে। জেলার ক্ষেত্রে জেলাশাসক এবং কলকাতায় পুলিশ কমিশনারকে ওই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে ওই আইনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডেরও বিধান রয়েছে। মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ আদালত গড়ে বিচার ও বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরতের বন্দোবস্তও রয়েছে ওই আইনে। রাজ্যের অর্থ দফতর সূত্রে খবর, চিট ফাণ্ডের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সর্বস্বান্ত হওয়া ঠেকাতে এই আইনটিই মোক্ষম অস্ত্র হতে পারে। তামিলনাড়ু, গুজরাত, মহারাষ্ট্র-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে ওই ধরনের আইন চালু রয়েছে। অসীমবাবু বলেন, "এই নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে অনেক বার কথা বলেছি। কিন্তু কাজ কিছুই হয়নি।" চিদম্বরম বিধি ভেঙেছেন, কমিশনে নালিশ ইয়েচুরির নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি প্রথম দিন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও আলিমুদ্দিনের নেতাদের সমালোচনা। দ্বিতীয় দিন পলিটব্যুরোর কড়া বিবৃতি। আজ একেবারে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ। পশ্চিমবঙ্গে পি চিদম্বরমের এক দিনের নির্বাচনী প্রচারের জবাবে তিন দিন ধরে পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে সিপিএম। আজ নির্বাচন কমিশনের কাছে পি চিদম্বরমের বিরুদ্ধে আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন সীতারাম ইয়েচুরি। ইয়েচুরির যুক্তি, রাজ্যে প্রচারে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বিবৃতি দিয়ে তিনি ভোটারদের প্রভাবিত করতে চাইছেন। চিদম্বরম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বক্তৃতা করেছেন, না কংগ্রেস-নেতা হিসেবে, কমিশন তা জানতে চাক। পলিটব্যুরোর এই সদস্যের আরও অভিযোগ, চিদম্বরম ও তার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সংবাদমাধ্যমের কাছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বাছাই করা তথ্য ফাঁস করে সিপিএম তথা বামফ্রন্টকে হামলাকারী হিসেবে প্রমাণ করতে চাইছে। উপ-নির্বাচন কমিশনার বিনোদ জুতসি জানিয়েছেন, ইয়েচুরির অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। সিপিএমের আপত্তির কারণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্র থেকে জানানো তথ্য। গত কাল মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছিল, রাজ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরে রাজনৈতিক সংঘর্ষে যে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে অর্ধেকই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক। বাকিদের মধ্যে ৫ জন সিপিএমের। একই ভাবে নির্বাচনের আগেও রাজনৈতিক সংঘর্ষে হতাহতের তালিকায় তৃণমূল সমর্থকের সংখ্যাই বেশি। চিদম্বরম নিজেই কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলন করে সেই পরিসংখ্যান পেশ করেছিলেন। তাৎপর্যপূর্ণ হল, চিদম্বরমের তথ্যকে কিন্তু মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেননি ইয়েচুরি। তাঁর অভিযোগ হল, বেছে বেছে সেই সব পরিসংখ্যানই তুলে ধরা হচ্ছে, যাতে বামেদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়। চিদম্বরম এক বারও বলছেন না, ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে মাওবাদী ও তৃণমূলের হাতে ৩৮০ জন বাম কর্মী-সমর্থক নিহত হয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক হাল 'নিকৃষ্টতম' বলে বর্ণনা করেছেন, তার মধ্যেও সত্যের থেকে রাজনীতিই বেশি রয়েছে বলে সিপিএম-নেতাদের অভিযোগ। ইয়েচুরি আজ মনে করিয়ে দিয়েছেন, ইউপিএ-সরকারের প্রথম জমানায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে বাম সরকারের গালভরা প্রশংসা করতেন। দ্বিতীয় ইউপিএ-সরকারে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যেতেই রাজ্য সরকারের নিন্দাও শুরু হয়ে গেল। ইয়েচুরি আজ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশির কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে তিন দফার ভোটগ্রহণ মোটামুটি শান্তিতে কাটলেও এ বার থেকে বিরোধীরা হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করবে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতাদের ব্যাখ্যা, এখনও পর্যন্ত যে সব জেলায় নির্বাচন হয়েছে, তাতে বিরোধীদের ভালই শক্তি ছিল। কিন্তু চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ দফায় রাজ্যের যে সব এলাকায় ভোট হবে, সেখানে অনেক জায়গাতেই বিরোধীদের বিশেষ শক্তি নেই। অনেক জায়গায় আবার মাওবাদীদের সঙ্গে তৃণমূলের যোগসাজস রয়েছে। কাজেই ওই সব এলাকায় ভোটের সময় বামেদের উপর হামলা হতে পারে। এর আগে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ১৭৫টি জামিন-অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করার দাবি কমিশনের কাছে জানিয়েছিল সিপিএম। সেই দাবি আজ আবার জানিয়েছেন ইয়েচুরি। দুই সেনাপতি কালো টাকা নিয়ে আজ কুরেশির কাছে গৌতম কাজী গোলাম গউস সিদ্দিকী • কলকাতা নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার নিয়ে আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব আজ, বৃহস্পতিবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশির কাছে সরাসরি অভিযোগ জানাবেন। রাজ্যের নির্বাচন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এক দিনের সফরে কলকাতা আসছে। নানা কাজের ফাঁকে দুপুর সাড়ে ১২টায় গৌতমবাবুকে একান্তে ১০ মিনিট সময় দিয়েছেন কুরেশি। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের কাছে মঙ্গলবারই নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার নিয়ে খামবন্ধ তথ্য জমা দিয়েছেন গৌতমবাবু। রাজ্য নির্বাচন দফতর তা পাঠিয়ে দিয়েছিল দিল্লিতে। রাজ্য নির্বাচন দফতরে তথ্য জমা দেওয়ার পাশাপাশি গৌতমবাবু তাঁর অভিযোগ নিয়ে সরাসরি মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। রাজ্য নির্বাচন দফতর থেকে আবাসনমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে সরাসরি কুরেশির সচিবের কাছে আবেদন জানাতে বলা হয়েছিল। সেই মতো গৌতমবাবু দিল্লিতে যোগাযোগ করেন। রাজ্য নির্বাচন দফতরের খবর, বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের তিন সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের সদস্যরা রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলবেন। তার ফাঁকেই গৌতমবাবুর সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন কুরেশি। তা গৌতমবাবুকে এ দিন জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। তবে গৌতমবাবু জানিয়ে দেন, তিনি কুরেশির সঙ্গে একান্তে কথা বলতে চান। সেই মতো বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় আবাসনমন্ত্রীর জন্য ১০ মিনিট সময় বরাদ্দ করেছেন কুরেশি। নজিরবিহীন ভাবে ভোটপর্বের মধ্যেই রাজ্যে আসছেন কুরেশি ও তাঁর দুই সঙ্গী। তাঁরা আসছেন রাজ্যের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি জানতে। বেলা ১২টা থেকে রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলবেন। তার পরেই গৌতম দেবের সঙ্গে বসবেন কুরেশি। ওই বৈঠকের পরে রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ, স্বরাষ্ট্রসচিব জ্ঞানদত্ত গৌতম ও রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা)র সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। রাতেই তাঁরা দিল্লি ফিরে যাবেন। চতুর্থ পর্যায়ের ভোটের জন্য বিহারের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারকে বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসেবে পাঠাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যেই এ দিন ভোটপর্ব চলাকালীন বৈদ্যুতিন মাধ্যমে তিনি কেন সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, সে ব্যাপারে গৌতমবাবুর কাছে ব্যাখ্যা চাইল কমিশন। এ দিনের নির্বাচনে গৌতমবাবু প্রার্থী ছিলেন। তাই নির্বাচন চলাকালীন এ ধরনের সাক্ষাৎকার দেওয়া বিধিভঙ্গের সামিল বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। একই কারণে বেলেঘাটার তৃণমূল প্রার্থী পরেশ পালের কাছেও কৈফিয়ৎ তলব করেছে কমিশন। অন্য দিকে আসানসোলে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে গত ১৮ এপ্রিল তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় লালবাতি লাগানো গাড়ি ব্যবহার করেছিলেন বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জমা পড়েছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার কল্যাণবাবুকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে কমিশন। ভাল ভোট, মানল 'আমরা-ওরা' ভোটের লাইনেও 'আমরা-ওরা' টানাটানি। এবং তা খোদ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কেন্দ্র যাদবপুরেই। গাঙ্গুলিবাগানের মহামায়া পাঠশালার বুথে বুধবার ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন এক বৃ্দ্ধ। আর তার পরেই বুথে কোন দলের বিশৃঙ্খলা ওই অসুস্থতার জন্য দায়ী এবং কারা আগেভাগে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে, সেই নিয়ে কাজিয়া বাধে সিপিএম এবং তৃণমূলের মধ্যে। দুই দলের কর্মী-সমর্থকদের বিবাদ যখন তুঙ্গে, তখন চিৎকার করে ওঠেন অজয় রায় নামে সত্তরোর্ধ্ব ওই বৃদ্ধের স্ত্রী। বলেন, "আপনারা কেউ একটাও কথা বলবেন না। যা বলার বা করার আমরা বাড়ির লোকেরা করব।" খুব ছোটখাটো কিছু ঘটনা ছাড়া যাদবপুর কেন্দ্রে এ দিন নির্বাচন হয়েছে নির্বিঘ্নে। একই ছবি শহর ও শহরতলির অন্যান্য কেন্দ্রেও। সকাল থেকে দলে দলে ভোট দেওয়াটাই ছিল এ দিনের সামগ্রিক মেজাজ। পাঁচটা পর্যন্ত সময়সীমা থাকলেও বিধাননগরের মতো জায়গায় ভোট চলেছে প্রায় সাড়ে ছটা পর্যন্ত। প্রচারের সময়ে এলাকার মাটি কামড়ে পড়ে থাকলেও ভোটের দিন কোনও বারই নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে হাজির থাকেন না মুখ্যমন্ত্রী। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রতিপক্ষ মণীশ গুপ্ত অবশ্য নিজে সকাল থেকে অধিকাংশ বুথে ঘুরে বেড়িয়েছেন। বুদ্ধবাবুর নির্বাচনী এজেন্ট বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য অভিযোগ তোলেন, তৃণমূল প্রার্থীর মদতেই যাদবপুরের বিভিন্ন বুথে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। আর মণীশবাবুর পাল্টা অভিযোগ, সিপিএম মরিয়া হয়ে বহিরাগত এনে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছে। সকালে মহামায়া পাঠশালার সামনে যেখানে মণীশবাবু ও বিকাশবাবুর তরজা শুরু হয়েছিল, দুপুরে সেখানেই এক সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগ ওঠে সিপিএম সমর্থকদের বিরুদ্ধে। ওই সাংবাদিক যাদবপুর থানায় এ নিয়ে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। শান্তিপূর্ণ ভোটের মধ্যেই দুপুরে গিরিশ পার্ক থানার কয়েক মিটারের মধ্যে থেকে গ্রেফতার করা হয় সিপিএমের প্রাক্তন কাউন্সিলর অরূপ অধিকারীকে। বুধবার দুপুরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ এবং রামদুলাল সরকার ষ্ট্রিটের মোড়ে দাঁড়িয়ে তিনি ভোটারদের প্রভাবিত করছিলেন বলে অভিযোগ। পর্যবেক্ষকদের নির্দেশে এ দিন উত্তর কলকাতার তিন জন প্রিসাইডিং অফিসার এবং পাঁচ জন পোলিং অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দমদমে এ দিন ছিল উৎসবের মেজাজ। অন্য বারের মতো কোনও দলের কর্মীদের দাপাদাপি ছিল না। দলের ঝাণ্ডা লাগিয়ে রাস্তায় অটোও চোখে পড়েনি। কেন্দ্রের তৃণমূল-প্রার্থী ব্রাত্য বসু বলেন, "এই ভোট স্বতঃস্ফূর্ত।" সিপিএম-প্রার্থী গৌতম দেবের মন্তব্য, "হারার কোনও জায়গাই নেই।" নজরে শহর ● থাকবে মোট ১২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট মিটেছে উত্তর দমদম, বরাহনগর, কামারহাটি— এই তিন কেন্দ্রেও। এই কেন্দ্রগুলিতে ৮০ শতাংশের উপরে ভোট পড়েছে। বরাহনগরের ভিক্টোরিয়া স্কুল ও ঘোষপাড়ার একটি বুথে 'বহিরাগত'দের দিয়ে 'রিগিং'-এর চেষ্টা হয় বলে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যুযুধান তৃণমূল ও সিপিএম। কামারহাটিতে বুথে ঢুকতে গেলে নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে বাধা দেন বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছেন সিপিএম প্রার্থী মানস মুখোপাধ্যায়। কয়েকটি ইভিএম-এ যান্ত্রিক গোলযোগ ছাড়া বারুইপুর পূর্ব, পশ্চিম এবং সোনারপুর উত্তর, দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট শেষ হয়। এই চার বিধানসভা কেন্দ্রে দুপুর আড়াইটের মধ্যে গড়ে পঞ্চাশ থেকে ষাট শতাংশ ভোট পড়ে যায়। ভোট গ্রহণের নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাওয়ার পরেও কয়েকটি বুথে ভোটারদের লাইন ছিল। পাঁচটা বেজে যাওয়ার পরেও বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে ছিলেন বিধাননগরের ভোটারেরা। ভোট শেষে তৃণমূল-প্রার্থী সুজিত বসু বলেন, "খুব ভাল ভোট হয়েছে।" বামপ্রার্থী পলাশ দাসের দাবি, ''জয় নিয়ে একশো শতাংশ নিশ্চিত।" রাজারহাটের মহিষবাথান, নিউ টাউনের বালিগড়ি, পাথরঘাটা, লস্করআইটেও বুথের সামনে লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে বিকেল পর্যন্ত। রাজারহাট-নিউ টাউনের সিপিএম-প্রার্থী তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এ বার লড়াই হাড্ডাহাড্ডি হবে।" অন্য দিকে, তৃণমূল-প্রার্থী সব্যসাচী দত্ত বলেন, "এই প্রথম এলাকার মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিলেন। এটাই আশার কথা।" দু'একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া রাজারহাট-গোপালপুরে ভোট নির্বিঘ্নে শেষ হয়। এই কেন্দ্রের তৃণমূল-প্রার্থী পূর্ণর্েন্দু বসু বলেন, "লোকসভা ভোটে যে জয়ের ব্যবধান ছিল, তা এ বার বাড়বে।" অন্য দিকে, সিপিএম-প্রার্থী রবীন মণ্ডল বলেন, "কেষ্টপুরে দু'একটা ভোটকেন্দ্রে বিরোধীরা গণ্ডগোল করার চেষ্টা করেছিল।" এ দিন সকাল থেকেই দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে 'হেভিওয়েট'দের ভিড়। আটটার আগেই রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের তীর্থপতি ইনস্টিটিউশনে সস্ত্রীক ভোট দিতে গিয়েছিলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় পৌনে ১১টা নাগাদ পৌঁছে যান লেক এলাকার কমলা গার্লস-এ। একটা নাগাদ পাম অ্যাভিনিউয়ে পাঠভবনে গিয়ে স্ত্রী কন্যা-সহ ভোট দেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এর কিছুক্ষণ পরেই সাউথ পয়েন্টে যান যাদবপুর কেন্দ্রের তৃণমূল-প্রার্থী মণীশ গুপ্ত এবং প্রাক্তন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোট দেন ভবানীপুর এলাকার মিত্র ইনস্টিটিউশনে। সকালে তিলজলায় সিপিএম-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এক তৃণমূল সমর্থকের গাড়ি ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। তৃণমূলের-প্রার্থী জাভেদ খান বলেছেন, "আমাদের এক সমর্থক তাঁর পরিবারের লোকেদের সঙ্গে নিয়ে ভোট দিতে গিয়েছিলেন। ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থেকে ৩০০ মিটার দূরে ওই গাড়িটিকে লক্ষ করে ইট ছোড়া হয়।" তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে এই ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করেছে তিলজলা থানার পুলিশ। মেটিয়াবুরুজের মৌলানা হাসনাত স্কুলে গত পুর-নির্বাচনে বোমা পড়েছিল। এ বার সেখানে দুপুর দুটোয় লম্বা লাইন। সংখ্যালঘু মহল্লার এই অঞ্চলটি বরাবরই তীব্র উত্তেজনাপ্রবণ। গণ্ডগোলের জন্যই সেখানে সকাল থেকে র্যাফ আর জওয়ানে ছয়লাপ। গার্ডেনরিচ- মেটিয়াবুরুজের কাছেই মহেশতলাতেও সকাল থেকে বুথে লম্বা লাইন। জোকা এক নম্বর পঞ্চায়েতের লালপুল অঞ্চলের কারমেল হাইস্কুলের পিছনের গ্রামে তৃণমূলের একটি ক্যাম্প অফিসে হামলা চালায় একদল দুষ্কৃতী। বেহালা পূর্বের তৃণমূল প্রার্থী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট, কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষের অভিযোগ, "এখানে এতদিন ভোটই হত না। এ বার বড় লাইন দেখেই হামলা।" সিপিএম-প্রার্থী কুমকুম চক্রবর্তীর পাল্টা অভিযোগ, "হাজরাপাড়ায় বাইরের লোক এনে আমাদের ভোটারদের ভয় দেখানো হচ্ছে।" ইভিএম খারাপ হয়ে যাওয়ায় এক ঘণ্টা দেরিতে ভোট শুরু হয় জোকার জিয়াদার গেট স্কুলে। দুই বেহালাতেই গড় ভোট পড়েছে আশি শতাংশ। বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রের তৃণমূল-প্রার্থী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বললেন, "কর্মীরা তো বলছে ৪০ হাজার ভোটে জিতব"। কন্যার জন্য আইনি লড়াই, জোটেই আছেন করুণানিধি নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভাঙার জল্পনা খারিজ করে দিয়ে ডিএমকে-প্রধান তথা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী মুথুভেল করুণানিধি আজ জানালেন, টু-জি স্পেকট্রাম মামলা নিয়ে আইনি লড়াইয়ের পথেই হাঁটবেন তাঁরা। এই মামলায় প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী তথা ডিএমকে নেতা এ রাজা জেলে। দু'দিন আগে টু-জি কেলেঙ্কারিতে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে করুণানিধির কন্যা কানিমোঝির বিরুদ্ধেও চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় থাকা না-থাকার প্রশ্নে ও পরবর্তী রণকৌশল স্থির করতে চেন্নাইয়ে আজ জরুরি বৈঠক ডাকেন করুণানিধি। বৈঠকের পর তিনি জানিয়ে দেন, "কানিমোঝির বিরুদ্ধে চক্রান্তের বিরুদ্ধে আইনি পথে লড়াই চালাবে দল। মেয়ের পক্ষ নিয়ে সওয়াল করে ডিএমকে-প্রধান এ দিন বলেছেন, "কানিমোঝি শুধু আমার মেয়ে বলে রাজনীতিতে তাঁর উত্থান হয়নি। তৃণমূল স্তরে রাজনীতির মাধ্যমেই ও উঠে এসেছে।" কিন্তু একই সঙ্গে তাঁর এ-ও বক্তব্য, "বিরোধীরা কংগ্রেস-ডিএমকে সম্পর্কে ফাটল ধরাতে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু এই জোট সম্পর্ক অটুট থাকবে।" করুণানিধির এই মন্তব্যে দলের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার প্রতিফলন স্পষ্ট। এবং ডিএমকে নেতৃত্বের এমন প্রতিক্রিয়াই প্রত্যাশা করছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। ঘরোয়া মহলে দলের শীর্ষ নেতারা আগে থেকেই বলছিলেন, কেন্দ্রে ডিএমকে-র সমর্থন প্রত্যাহারের আশঙ্কা তেমন নেই। কারণ, বিধানসভা ভোটে তারা ভাল ফল করলেও কংগ্রেসের সমর্থন ছাড়া রাজ্যে সরকার গঠন করা সম্ভব হবে না। আর ডিএমকে পরাস্ত হলে তো কোনও কথাই নেই। বিশেষ করে তামিলনাড়ুতে যে 'প্রতিহিংসার রাজনীতি' চলে, তাতে জয়ললিতা ক্ষমতায় এলে ডিএমকে নেতৃত্বের একটা খুঁটি অবশ্যই প্রয়োজন। তবে রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, ডিএমকে-র আজকের প্রতিক্রিয়াই চূড়ান্ত বলে ধরে নিলে ভুল হবে। কেননা রাজনীতি কখনও সোজা রাস্তায় চলে না। ৬ মে কানিমোঝিকে আদালতে পেশ হতে হবে। তামিলনাড়ু বিধানসভা ভোটের ফল বেরোবে ১৩ মে। সেই ফলাফলের উপরেও জোটের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে অনেকটাই। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট আজ সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে, টু-জি কেলেঙ্কারিতে জড়িত দু'টি সংস্থার দু'হাজার কোটি টাকা করে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। নোটিস জারি হবে শীঘ্রই। তবে সংস্থা দু'টির নাম প্রকাশ করা হয়নি। বরাকে ব্রডগেজে ঢিলেমি নয় নিজস্ব প্রতিনিধি • শিলচর লামডিং-শিলচর ব্রডগেজ প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবিতে বরাকবাসীর বৃহত্তর আন্দোলনের নামার ঘোষণায় এ বার নড়েচড়ে বসলেন রেল-কর্তারা। আজ লামডিং থেকে শিলচর এসেছিলেন চিফ ইঞ্জিনিয়ার রবীন্দ্র রাম। তিনি অফিসার, কর্মকর্তাদের ডেকে আশ্বস্ত করেন, তাঁদের দিক থেকে এই কাজে কোনও গাফিলতি নেই। কাজ যথেষ্ট দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বরং রাজ্য সরকারের কাঁধে দোষ চাপিয়ে বলেন, "হিংসাদীর্ণ এলাকার উপর দিয়ে জাতীয় প্রকল্পের কাজ এগোচ্ছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের কোনও হেলদোল নেই। নিরাপত্তার জন্য সামরিক, আধা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে রেল বিভাগকেই কথা বলতে হচ্ছে।" ত্রিপুরা বা কাশ্মীরে রেল লাইন দ্রুত এগোতে পারলে এই অঞ্চলে কেন হচ্ছে না? এ প্রশ্নের উত্তরে রবীন্দ্রবাবু বলেন, 'ত্রিপুরার উদাহরণ এ ক্ষেত্রে খাটে না। ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার নিজে রেলকর্মীদের খোঁজ খবর নিয়েছেন। যাবতীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা তাঁরাই করে দিয়েছেন। এখানে কিন্তু তার ছিটেফোঁটাও মিলছে না।'' পরে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল প্রেস বিবৃতিতেও রাজ্য সরকারকে দায়ী করে বলা হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে এই প্রকল্প রূপায়ণে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই রেললাইনে ব্রডগেজের কাজ কতটা এগিয়েছে, তার একটা হিসেবও দেওয়া হয়েছে রেওই বিবৃতিতে। জানানো হয়েছে, ৬৩৮ লক্ষ কিউবিক মিটারের মধ্যে ৬১৪ লক্ষ কিউবিক মিটার মাটি কাটার কাজ এখনও পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ৩৩২টি ছোট সেতুর মধ্যে ৩১৬টি এর মধ্যেই নির্মিত। ৮২টি বড় সেতুর মধ্যে ৪৭টিতে সুপার ষ্ট্রাকচার এবং ৬৮টি সাব ষ্ট্র্যাকচার রূপ হয়েছে। একই ভাবে সুড়ঙ্গের কাজও এগিয়ে চলেছে। ১০ হাজার ৬৫০ মিটারের মধ্যে ৫ হাজার ৬৭২ মিটার সম্পন্ন। অর্থাৎ ১৭টি সুড়ঙ্গের মধ্যে ৭টি পুরোপুরি তৈরি হয়েছে। ২৭টি স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনায় ২৬টি এর মধ্যেই হয়ে গেছে। এখন একদিকে কাজ এগোচ্ছে, অন্য দিকে, ২০৯ কিলোমিটার ৫৬০ মিটার লামডিং-শিলচর লাইনে ব্রডগেজের ট্র্যাক বসতে থাকবে। এ কাজ এগিয়ে চলেছে। ৩৯ কিলোমিটার ২০০ মিটার এর মধ্যে বসানো হয়েছে। শুধু লামডিং-শিলচর নয়, তাঁরা আশা করছেন, ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে একই সঙ্গে শিলচর-জিরিবাস, বদরপুর-বারইগ্রাম, বারইগ্রাম-শুমারঘাট ব্রডগেজ হয়ে যাবে। উন্নয়নের গতি বাড়াতে নয়া দিশা শিল্পমহলের সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি আর্থিক উন্নয়নের গতি বাড়াতে এ বার পথনির্দেশ দিল শিল্পমহল। তাঁদের মতে ভারতকে উন্নত রাষ্ট্রের তালিকায় তুলে আনতে আগামী বছরগুলিতে বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া এবং তা ধরে রাখাই দেশের সামনে মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। কারণ, এত বেশি জনসংখ্যার চাপ এবং গ্রামীণ এলাকায় বেশির ভাগ মানুষের বসবাস সত্ত্বেও বৃদ্ধির চড়া হারই ভারতের উন্নয়নে ধারাবাহিকতা রেখে তাকে উন্নত দুনিয়ার দেশগুলির সঙ্গে এক সারিতে বসাতে পারবে। এই উদ্দেশ্যেই উন্নয়নের পাঁচটি ধাপ চিহ্নিত করেছে বণিকসভা সিআইআই। যে পাঁচ দফা কৌশলের সাহায্যে তারা এগিয়ে চলার পথকে অপেক্ষাকৃত মসৃণ করতে চেয়েছে, সেগুলি হল: (১) স্বচ্ছতা বাড়ানো এই নীতির উপর ভিত্তি করে এগিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে উন্নয়নের পথ সুগম করতে বলেছেন সিআইআই প্রেসিডেন্ট তথা টাটা স্টিলের ভাইস-চেয়ারম্যান বি মুথুরামন। উন্নয়নের হাতিয়ার যেহেতু বিনিয়োগ, তাই তার উপরেই জোর দিয়েছেন তিনি। বিনিয়োগ বাড়াতে এবং লগ্নির কাঠামো ঢেলে সাজতেও পথ বাতলে দিয়েছে সিআইআই। যেমন: ● ১০০টি বৃহৎ শিল্প প্রকল্প চিহ্নিত করে সেগুলি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে রূপায়ণ করা লগ্নি টানতে ১০০টি বৃহৎ প্রকল্প বা 'মেগা প্রজেক্ট' দ্রুত রূপায়ণ করার কাজে হাত দিলে তা অর্থনীতির ভিত আরও মজবুত করতে সাহায্য করবে বলে মনে করছে সিআইআই। এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রকল্প নজরদারি ও রূপায়ণ সংক্রান্ত যে-কমিটি গঠন করেছে, তার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন মুথুরামন। এই ধরনের প্রকল্প যাতে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে শেষ হয়, তা দেখভাল করে ওই কমিটি। এ দিকে, শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ালেই জাতীয় আয়ে উৎপাদন শিল্পের অবদান ২৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করছে সিআইআই। পাশাপাশি, তারা জোর দিয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং উদ্ভাবনে উৎসাহ দেওয়ার উপর। পণ্য-পরিষেবা কর তাড়াতাড়ি চালু করা গেলে, দেশে অভিন্ন বাজার তৈরিও দ্রুত সম্ভব হবে বলে সুপারিশে জানিয়েছে সিআইআই। বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে কৃষিপণ্য চলাচলে নিষেধাজ্ঞা তোলারও আর্জি জানিয়েছে শিল্পমহল। এ জন্য অত্যাবশ্যক পণ্য আইন বাতিলেরও দাবি জানান মুথুরামন। ভারতে ব্যবসা করা যেহেতু অন্য অনেক দেশের তুলনায় এখনও কঠিন, তাই লগ্নির পরিবেশ উন্নত করতে কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছে সিআইআই। জেলার সব কেন্দ্রেই বামেদের লড়াই সেই নন্দীগ্রামের সঙ্গে আনন্দ মণ্ডল • মেদিনীপুর দীর্ঘ দিন পরে মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে সমাবেশ করল বামেরা। দীর্ঘ দিন পরে নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে চার বছর আগের জমি-অধিগ্রহণ বিতর্ক নিয়ে মুখ খুললেন একদা দাপুটে সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠ। যেখানে জমি-অধিগ্রহণ নিয়ে নিজের দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টাও করেছেন প্রাক্তন এই সিপিএম সাংসদ। কিন্তু তাতে চিড়ে কি ভিজল? নন্দীগ্রাম বাজারের ওই নির্বাচনী সমাবেশে লোক হয়েছিল মেরেকেটে হাজারখানেক। সিপিআই প্রার্থী পরমানন্দ ভারতীর জয়ের সম্ভাবনা নিয়েও আত্মবিশ্বাসী কোনও ঘোষণা শোনা যায়নি বাম নেতাদের কথায়। বরং এত দিন রাজ্যে যে কোনও ভোটের সময়ে বিরোধীদের কথায় যেমন ঘুরে-ফিরে আসত 'সন্ত্রাস'-এর অভিযোগ, এ বার শাসক ফ্রন্ট-নেতাদের গলায় সেই 'সন্ত্রস্ত' সুর! বস্তুত, চার বছর আগের সেই জমি-অধিগ্রহণ বিতর্কই বদলে দিয়ে গিয়েছে 'শাসক' আর 'বিরোধী'দের অবস্থান। নন্দীগ্রামে 'শাসক' তো এখন তৃণমূল। বামেরাই বরং বিরোধী ভূমিকায়। 'পরিবর্তন'-এর আঁতুড়ঘর নন্দীগ্রামে 'প্রত্যাবর্তন' নিয়ে তাই আশাবাদী হতে পারছেন না বাম নেতারা। অনেকটাই করতে হয় করার মতোই তাঁদের নির্বাচনী প্রচার এখানে। এই অবস্থায় আত্মবিশ্বাসী নয়, তৃণমূল বলতে গেলে আত্মতুষ্টই। আজ, বৃহস্পতিবার তেখালিতে সভা করতে আসছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০৯-এর লোকসভা ভোটে নন্দীগ্রাম থেকেই রাজ্যে প্রচার শুরু করেছিলেন মমতা। নন্দীগ্রাম থেকেই 'পরিবর্তন'-বার্তা ছড়িয়ে পড়েছিল রাজ্যে। এ বার যখন নন্দীগ্রামে ভোটপ্রচারে আসছেন তৃণমূল নেত্রী, রাজ্যে তিন দফার ভোটগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। মহাকরণের নিয়ন্ত্রণ শেষ পর্যন্ত কার হাতে—তার অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। চতুর্থ দফায় ভোট নন্দীগ্রামের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে। যেখানে তৃণমূলের লক্ষ্য ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতিটি, না-হলে অন্তত অধিকাংশই জিতে 'অ্যাডভান্টেজ' পাওয়া। জেলার অন্য ১৫টি কেন্দ্র নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের যাওবা পরিশ্রম করতে হচ্ছে, নন্দীগ্রামে কিন্তু ঠিক ততটাই তাঁরা গা-ছাড়া। তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য, গত পঞ্চায়েত, বিধানসভা উপনির্বাচন বা লোকসভা ভোটের সময়েও বামেরা তা-ও কিছুটা লড়াই করার মতো প্রচার করেছিল। কিন্তু এ বার সেটুকুও ক্ষমতা নেই তাদের। আর এ কারণেই তৃণমূল কর্মীরাও নন্দীগ্রামে তেমন 'মোটিভেশন' পাচ্ছেন না। জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাস যেমন আছে, তৃণমূলের অন্দরে পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় থাকা দলের নেতাদের একাংশের 'দুর্নীতি' নিয়ে ক্ষোভও তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যে। দলের কর্মীদের একাংশ বলছেন, বিধানসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর প্রচারে পঞ্চায়েতে ক্ষমতাসীন সেই একাংশ নেতা তেমন সক্রিয় হননি। তার পরেও অবশ্য 'সমস্যা' হবে না বলেই মত কর্মী-সমর্থকদের। নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বনশ্রী খাঁড়ার মন্তব্য, "জয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ায় একটা আত্মতুষ্টি কাজ করেছে অবশ্যই। পাশাপাশি, জমি-রক্ষার আন্দোলনকারী নেতা-গ্রামবাসীদের বাড়িতে পুলিশি তল্লাশিও প্রচারে ঘাটতির একটা কারণ।" এর পরেও বনশ্রীদেবীর দাবি, গত বিধানসভা উপ-নির্বাচন (প্রায় ৪০ হাজার) ও লোকসভার মার্জিনের (৫৫০৯৩) চেয়েও বেশি ব্যবধানেই জিতবেন তাঁরা। তৃণমূল প্রার্থী ফিরোজা বিবি শহিদ-জননী। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চের পুলিশি অভিযানে ছেলে ইমদাদুলকে হারিয়েছেন। ১৪ মার্চের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিই ফিরোজার প্রধান অবলম্বন। তাঁর প্রতিপক্ষ সিপিআইয়ের পরমানন্দবাবু যতই বলুন 'তৃণমূলের কার্যকলাপে নন্দীগ্রামের মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে', ফিরোজা বলেন, "গণহত্যার অপরাধীদের মানুষ ক্ষমা করবেন না। দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতেই নন্দীগ্রামের মানুষ বিপুল ভোটে বাম প্রার্থীকে হারাবেন।" নন্দীগ্রামের সেই 'গণহত্যা'-কাঁটাই হলদি পেরিয়ে বামেদের বিঁধছে হলদিয়া-মহিষাদলেও। নন্দীগ্রামের 'দায়' সবচেয়ে বেশি তাড়া করছে যে সিপিএম নেতাকে সেই লক্ষ্মণ শেঠের একদা খাসতালুক এই হলদিয়া-মহিষাদল। মহিষাদলে সিপিএম প্রার্থী আবার লক্ষ্মণ-জায়া তমালিকা পণ্ডা শেঠ। নন্দীগ্রামের দীর্ঘ ছায়ায় হলদিয়া-মহিষাদল রক্ষা এ বার চ্যালেঞ্জ বাম তথা সিপিএম নেতৃত্বের কাছে। আর তৃণমূলের লক্ষ্য, হলদিয়া-মহিষাদল জয় করে পূর্ব মেদিনীপুরে নিরঙ্কুশ আধিপত্য নিশ্চিত করা। হলদিয়ায় তৃণমূল প্রার্থী আবার নন্দীগ্রামেরই মেয়ে শিউলি সাহা। আসলে, পূর্ব মেদিনীপুরে প্রতিটি আসনেই বামেদের লড়াই নন্দীগ্রামের সঙ্গেই। কোর্টের পথে দুর্ঘটনা, আহত ছত্রধর নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম জেল থেকে আদালতের পথে দুর্ঘটনায় সামান্য আহত হলেন জনগণের কমিটির জেলবন্দি নেতা ছত্রধর মাহাতো। আরও ৬ জন বিচারাধীন বন্দি এবং ৩ পুলিশকর্মীও কমবেশি আহত হয়েছেন। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে বন্দিদের সবাইকেই অবশ্য আদালতে হাজির করানো সম্ভব হয়। বুধবার একটি মামলায় ঝাড়গ্রাম আদালতে হাজিরার দিন ছিল ছত্রধরের। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের একটি বিশেষ বাসে নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করেই ছত্রধর-সহ ৩০ জন বন্দিকে মেদিনীপুর কারাগার থেকে আদালতে আনা হচ্ছিল। ঝাড়গ্রামের বালিভাসা এলাকায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে উল্টো দিক থেকে আসা একটি লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটির গা ঘেঁষে চলে যায়। ঝাঁকুনির ফলে বাসের জানালার কাচ ভেঙে কয়েক জন বন্দি ও ৩ পুলিশ আহত হন। লরিটিকে অবশ্য ধরা যায়নি। মেদিনীপুর থেকে ঝাড়গ্রাম অনেকটা দূরত্ব বলেই বদ্ধ প্রিজন ভ্যানের বদলে আলো-বাতাসের বন্দোবস্ত থাকা বাসেই বন্দিদের আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন কারা-কর্তৃপক্ষ। এ দিনই আবার ঝাড়গ্রামের সাপধরা এবং রাধানগরের জয়নগর গ্রামে বিধানসভায় ভোটপ্রার্থী ছত্রধরের সমর্থনে কর্মিসভা হয়েছে। জয়নগরের কর্মিসভায় কয়েকশো মানুষ উপস্থিত ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। মাওবাদী স্কোয়াড সদস্য সন্দেহে ধৃত গৌতম রানাকে বুধবার ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে হাজির করা হলে ৭ দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক শেখ মহম্মদ রেজ্জা। রাষ্ট্রদ্রোহ, খুন, নাশকতা, বেআইনি অস্ত্র ও বিস্ফোরক মজুত রাখার পাঁচটি মামলায় তিনি অভিযুক্ত। গৌতমকে মঙ্গলবার ঝাড়গ্রামের লোধাশুলি থেকে ধরা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করলেও ধৃতের আইনজীবীর বক্তব্য, ১০ দিন আগেই তাঁর মক্কেলকে ধরা হয়েছে। বেআইনি ভাবে আটক রেখে এবং নির্যাতন চালিয়ে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। বেআইনি আটকের দাবির সমর্থনে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে গৌতমের মায়ের ২৪ তারিখের অভিযোগপত্রও পেশ করা হয়। প্রচারে বাধাদানে অভিযুক্ত তৃণমূল নিজস্ব সংবাদদাতা • এগরা প্রচারে গিয়ে তৃণমূলের সন্ত্রাসের কবলে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ তুলল সিপিএম। বুধবার দুপুরে চণ্ডীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী বিদ্যুৎ গুছাইত ভগবানপুর-১ ব্লকের মহম্মদপুর পঞ্চায়েত এলাকার দেড়েদিঘি, পশ্চিমাবাড় গ্রামে প্রচারে গিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে পড়লে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ভগবানপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের দখলে। অভিযোগ, লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই ওই এলাকায় দলীয় কর্মসূচি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বামেদের। তাই নির্বাচন কমিশনকে আগাম জানিয়ে বুধবার ওই এলাকায় প্রচারে গিয়েছিলেন প্রার্থী-সহ প্রাক্তন সাংসদ প্রশান্ত প্রধান, জেলা নেতা নির্মল জানা, অশোক গুড়িয়া প্রমুখ। ইলাসপুর থেকে কয়েকশো কর্মী-সমর্থক নিয়ে তাঁরা পদযাত্রা করেন ন'টি বুথ এলাকায়। ছোট ছোট সভাও হয়। সিপিএমের ভগবানপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক গৌরকান্তি বল, সিপিএম নেতা সুব্রত মহাপাত্রের অভিযোগ, "হুমকির পাশাপাশি দেড়েদিঘিতে তৃণমূল বোমাবাজিও করে।" তৃণমূল নেতা স্বপন রায় অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "প্ররোচনা তৈরি করতে পরিকল্পিত ভাবে মিথ্যা অভিযোগ করছে সিপিএম।" এ দিকে, নির্দল প্রার্থীর (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বুধবার দুপুরে এগরা-২ ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত বাসুদেবপুর পঞ্চায়েত অফিসের সামনে ঘটনাটি ঘটে। এই নিয়ে এগরা থানা ও মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন দুর্গাপদ মিশ্র নামে এগরা বিধানসভা কেন্দ্রের ওই প্রার্থী। মহকুমাশাসক অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে, তৃণমল নেতা প্রকাশ রায়চৌধুরী বলেন, "তৃণমূল নেত্রীর নাম করে ভোট চাইছিলেন ওই প্রার্থী। তাই আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা প্রতিবাদ জানান। ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগও জানিয়েছি নির্বাচন কমিশনে।" আজ পূর্বে প্রচারে মমতা, শনিবার আসছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক ভোট-প্রচারে আজ, বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরে আসছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর শনিবার আসছেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তৃণমূল প্রার্থীদের সমর্থনে বৃহস্পতিবার জেলার পাঁচ জায়গায় সভা করবেন তৃণমূল নেত্রী। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী সভা করবেন দু'জায়গায়। যুযুধান দুই শিবিরের প্রধানদের নির্বাচনী-সভা ঘিরে জোরদার প্রচার চালাচ্ছে দু'পক্ষেই। সভার নিরাপত্তায় কড়া পদক্ষেপ করছে পুলিশ-প্রশাসনও। জমি আন্দোলনের ধাত্রীভূমি নন্দীগ্রামের তেখালি বাজার সংলগ্ন মাঠ থেকেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরু করবেন মমতা। দুপুর ১২টায় সভা সেখানে। তেখালির সভাস্থল নন্দীগ্রাম-খেজুরি, দুই কেন্দ্রেরই মাঝামাঝি এলাকায়। এর পর দুপুর ১টায় পটাশপুর, ২টোয় চণ্ডীপুর, ৩টেয় তমলুকের নিমতৌড়ি ও ৪টেয় পাঁশকুড়ায় সভা করবেন তৃণমূল নেত্রী। পটাশপুরের টেপরপাড়ার মাঠে মমতার সভার প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র। রাজনৈতিক মহলের মতে, জমি আন্দোলন-পর্বের স্মৃতি উস্কে বামেদের আরও চাপে ফেলতেই নন্দীগ্রামে প্রথম সভা করার সিদ্ধান্ত নেত্রীর। নন্দীগ্রাম ও খেজুরি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থীদের সমর্থনে মমতার ওই সভার জন্য জোরদার প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূল। পটাশপুর ও চণ্ডীপুরে সভা করার কারণ সম্ভবত 'অধিকারী পরিবারের সুনজরে না থাকা' ওই দুই কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থীদের পাশে দাঁড়ানো। পাঁশকুড়া পশ্চিমে এ বার শক্ত লড়াই তৃণমূলের। গোষ্ঠীকোন্দল দূর করে কর্মী-সমর্থকদের মনোবল চাঙ্গা করতেই সম্ভবত শেষ সভা পাঁশকুড়ায়। তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মামুদ হোসেন বলেন, "পাঁচটি সভা করলেও জেলার ১৬ কেন্দ্রের প্রার্থীর সমর্থনেই প্রচার করবেন দলনেত্রী।" তুলনায় কম সংখ্যায় সভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ খেজুরির হেঁড়িয়ায় ও পরে তমলুকের নিমতৌড়িতে তিনি সভা করবেন বলে সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে। দু'টি সভাতেই ৮ জন করে প্রার্থী থাকবেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক গুড়িয়া বলেন, "দু'টি সভাতেই এক লক্ষ করে মানুষের জমায়েতের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।" প্রতিদ্বন্দ্বীকেই ভোট দিতে চেয়েছিলেন কংগ্রেস-প্রার্থী বিমান হাজরা • রঘুনাথগঞ্জ বদলে গিয়েছে রুচি, প্রচারের ভাষা। চেহারা বদলে নির্বাচন বুঝি এখন সেটা ১৯৭২ সাল। কংগ্রেসের হবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছেন এসইউসি'র অচিন্ত্য সিংহ। সদরঘাটে সভা চলছে তাঁর। পাশ দিয়েই যাচ্ছিলেন হবিবুর রহমান। প্রতিদ্বন্দ্বী কী বলেন, শোনার জন্য হঠাৎই দাঁড়িয়ে গেলেন। শুনলেন কংগ্রেসের নীতির তুমুল সমালোচনা করছেন অচিন্ত্য। বক্তৃতার একেবারে শেষে বললেন, "যিনি আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন তিনি শিক্ষকতা করেন। তাঁকে মানুষ হিসেবে শ্রদ্ধাও করি।" তারপরে নেমে এসে হবিবুর রহমানের হাত দু'টো ধরে অচিন্ত্য বলেছিলেন, "ভোট তো আর চাইতে পারি না। তবে আশীর্বাদটা চাই।" দু'জনে জড়িয়ে ধরেছিলেন দু'জনকে। সাধারণ মানুষ, যাঁরা বক্তৃতা শুনতে এসেছিলেন, তাঁরাও আপ্লুত হয়ে যান ওই দৃশ্য দেখে। রাজনৈতিক ভাবেও এই দৃশ্যের দর ছিল। হবিবুর রহমান বলেন, "অনেক দিন হল, এখনও ওই কথাটি মনে রয়েছে।" যেমন মনে রয়েছে '৮৭ সালের একটি কথাও। তাঁর সঙ্গে সে বার লড়াই আরএসপি'র আব্দুল হকের। এক মুখ দাড়ি। সাদা লুঙ্গি পাঞ্জাবিতে সুন্দর মানাত তাঁকে। মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। পুরো দমে তখন প্রচার চলছে। সারা দিন ভর পরিশ্রমের পরে একটি গ্রামের পাশে বসে কংগ্রেস কর্মীরা মুড়ি চানাচুর চিবোচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখা গেল আব্দুল হক আসছেন। তাঁদের দেখে ইতস্তত করছিলেন। কিন্তু হবিবুর রহমান এগিয়ে গিয়ে তাঁকে টেনে আনেন। তারপরে প্রায় ঘণ্টা খানেক ধরে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী, তাঁদের দলের লোকজন এক সঙ্গে বসে মুড়ি খেলেন। আব্দুল হক তারপরে বলেছিলেন, "আপনিই জিতবেন, কারণ এত মানুষ আপনার সঙ্গে।" হবিবুর রহমান বলেন, "সে বারেও আমিই জিতেছিলাম ঠিকই। তবে মাত্র দেড় হাজার ভোটে।" অশালীন বাক্যবাণে আক্রান্ত রাজনীতি, প্রতিদ্বন্দ্বীকে কুৎসিত ইঙ্গিতের এখনকার প্রবণতা দেখে তাই হতবাক জঙ্গিপুরের পাঁচ বারের বিধায়ক হবিবুর রহমান। বললেন, "জীবনে বহু রাজনৈতিক নেতার ভাষণ শোনার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। এমনকী বহু বামপন্থী নেতার সভাতে গিয়েও শুনেছি তাদের বক্তব্য। কারণ রাজনীতিতে থাকতে গেলে বিরোধীদের বক্তব্যও শোনা দরকার। কিন্তু আমার কখনও মনে পড়ে না এতটা ব্যক্তিগত কুৎসা কখনও হয়েছে!" তাঁর কথায়, "রুচিবোধের বদল তো আর নির্বাচন কমিশনের দ্বারা সম্ভব নয়!" সাগরদিঘি কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্ধেশ্বর পাহাড়ির কথায়, "ইন্দিরা গাঁধী থেকে শুরু করে বর্তমান রাজনীতিকদের অনেকের সভায় থেকেছি। তাঁদের বক্তব্যও শুনেছি। কিন্তু এ বারের নির্বাচনী বক্তৃতা শুনে কষ্ট পেয়েছি।" তাঁর কথায়, "এর পরেও তরুণ প্রজন্ম, কলেজ ছাত্রছাত্রীরা কি আর ভরসা পাবে রাজনীতিতে আসার?" সত্তরের দশকে দু'বার সিপিএম থেকে বিধায়ক হয়েছেন ফরাক্কার জেরাত আলি। তিনি বললেন, "আমি পেশায় বিড়ি শ্রমিক। সিপিএমে তখন হাতে গোনা লোক। আড্ডা দিতে যেতাম ধুলিয়ানে। সেখানেই আড্ডা দিতেন ধুলিয়ানের পুরপ্রধান কংগ্রেসের খুবই বিত্তশালী সুধীর সাহাও। '৭১ সালে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন ফরাক্কা থেকে। ঘোষণা হল, ওই কেন্দ্রে বাম প্রার্থী আমি। লজ্জায় সন্ধ্যার আড্ডায় সে দিন যাইনি।" পরের দিন সুধীরবাবু তাঁকে জড়িয়ে ধরে বললেন, "তোর মতো কর্মীকে যাঁরা প্রার্থী করতে পারেন, তাঁদের দলটাও এ বার আস্তে আস্তে দাঁড়াবে।" জেরাত আলি বলেন, "সুধীরবাবু সেই দিন ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর ভোটটা আমাকেই দেবেন।" সেই রুচির প্রকাশ এখন নেই। জেরাত আলিই জানান, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গান গেয়ে প্রচার করতে গিয়েছিলেন। কংগ্রেসেরই প্রধানের বাড়ি থেকে তখন তাঁকে ডেকে যত্ন করে খাওয়ানো হয়েছে। জরুরি অবস্থার সময়ে তাঁকে আশ্রয় দিয়েছিলেন ফরাক্কার কংগ্রেসেরই এক পঞ্চায়েত প্রধান কাশেম আলি। পুলিশের চাপেও জানাননি, তিনি কোথায় রয়েছেন। এখনকার রাজনৈতিক পরিবেশ তাই তাঁরা কল্পনাও করতে পারেন না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক কাশীনাথ ভকতের কথায়, "এর জন্য চাই নাগরিক সমাজের গণপ্রতিরোধ।" পরিচয়পত্রটুকুই অস্তিত্ব, উন্নয়ন হয় না গৌরব বিশ্বাস • করিমপুর ভোট আসে, ভোট যায় দিন কেটে যায়, সমস্যা মেটে না। নির্বাচনের মুখে প্রতিশ্রুতি এলাকার মানুষ বলেন, তাঁরা কেবল দেশের সীমান্তেই থাকেন না, থাকেন সভ্যতার সীমান্তেও। তেহট্ট মহকুমার সীমান্তের ওই গ্রামগুলিতে গেলে দেখা যায়, প্রাপ্তির ভাঁড়ার প্রায় শূন্য। দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে সমস্যার তালিকা। প্রশাসনই হোক বা রাজনৈতিক দল, হেলদোল নেই কারও। তেহট্টের সাহাপুর সীমান্তের আয়ুব মণ্ডল বলেন, "কেউই আমাদের সমস্যার কথা ভাবে না।" তাঁদের মূল সমস্যা হল, কাঁটাতার পেরিয়ে ওপারের খেতে চাষ করতে যাওয়া। সাধারণত দেশের অন্যত্র মানুষ সারাক্ষণ পকেটে করে ভোটের সচিত্র পরিচয়পত্র নিয়ে ঘোরেন না। কিন্তু এখানে সেটাই দস্তুর। ওই পরিচয়পত্র দেখিয়েই তাঁদের কাঁটাতার পার হতে হয়। চর মেঘনার রমেশ মাহাতো বলেন, "ওই পরিচয়পত্রটুকুই আমাদের অস্তিত্ব। এমনকী, আমাদের পরিবারে যখন বিয়ে হয়, বরযাত্রীর সংখ্যা ঠিক করে দেয় বিএসএফ।" কিন্তু এটাই তো সীমান্তের নিয়ম। বিমল মণ্ডল বলেন, "নিয়ম বুঝলাম। কিন্তু আমাদের কথাও তো ভাবতে হবে।" কী রকম? বিমলবাবু বলেন, "ধরুন আমাদের বলা হল কাঁটা তারের ওপারে পাট চাষ চলবে না, কলা গাছ লাগানো যাবে না। আমরা নিয়ম মানলাম। কিন্তু তার বিকল্প কী চাষ করব, সে কথা তো ভাবতে হবে কাউকে।" তাঁদের বক্তব্য, রাজনৈতিক দলগুলি যদি তাঁদের পাশে দাঁড়াত, তা হলে সেই কথাটা প্রশাসন ভাবত, এখন তারা তোয়াক্কাই করে না। সীমান্তের বাসিন্দারা বলেন, কিন্তু সে টুকু বাদ দিলেও এই এলাকার উন্নতি বলতে কিছু হয়নি। কাছারিপাড়ার বাসিন্দা তথা করিমপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ শঙ্কর মণ্ডল বলেন, "সীমান্তের বাসিন্দা হিসেবে বলতে কোনও দ্বিধা নেই যে, এতদিন পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দলই সীমান্তের সমস্যা মেটাতে তেমন ভাবে উদ্যোগী হয়নি।" তিনি জানান, যাঁদের হাতে কিছু টাকা জমছে, তাঁরা চলে যাচ্ছেন শহরে। যাঁরা থেকে যাচ্ছেন, তাঁদের ঘিরে আঁধার আরও ঘন হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পানীয় জল সব দিক থেকেই সমস্যায় রয়েছেন সীমান্তের মানুষ। বহু স্কুলে এখনও পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের হার সন্তোষজনক নয়। বহু টাকা ব্যয় করে বসানো আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের নলকূপ বছরের পর বছর খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। এই এলাকায় একশো দিনের কাজের হারও যথেষ্ট দুর্বল। কাজের সন্ধানে বহু মানুষ গ্রাম ছাড়ছেন। রাত দুপুরে প্রসব যন্ত্রণায় কাতর মহিলাকে নিয়ে ছুটে যেতে হয় ১৫ কিংবা ২০ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে। খানা খন্দে ভরা রাস্তায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে ভ্যানরিকশা, সাইকেল বা বেআইনি লছিমন। তারকাঁটার ওপারের গ্রাম চর মেঘনা কিংবা গান্ধিনা হলে লম্বা অপেক্ষার পরে মেলে বিএসএফের অনুমতি। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা, সদর হাসপাতাল ৮০ কিলোমিটার দূরে। শিকারপুরের শিবেন সাহা বলেন, "প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলি। অথচ ভোট ভিক্ষা করা ছাড়া, আর কিছুই করেন না তাঁরা।" তেহট্টের মহকুমাশাসক অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল সীমান্তের এই হতশ্রী চেহারাটা মেনে নিয়েই বলেন, "আমরাও চুপ করে বসে নেই। বিদ্যুৎ, পানীয় জল, রাস্তাঘাটের উন্নতি কিছুটা তো হয়েছে। বাকি সমস্যাগুলোরও আস্তে আস্তে উন্নতি হবে।" মন্দা বাজারও চাঙ্গা করলেন জওয়ানেরা নিজস্ব সংবাদদাতা • করিমপুর নির্বাচনের মুখে একরকম ভাঁটা পড়ে গিয়েছিল সীমান্তের বাজারে। চৈত্র সেল এবং তারপরেই পয়লা বৈশাখের বাজার থমকে গিয়েছিল নির্বাচনী ব্যস্ততায়। কিন্তু নির্বাচন নির্বিঘ্ন রাখতে যাঁরা সে দিন পা দিয়েছিলেন জেলায় তাঁরা যে এ বাবে নিরুপদ্রব ভোটের পাশাপাশি 'মরা' বাজার চাঙ্গা করে দিয়ে যাবেন তা কে ভেবেছিল? জলপাই পোশাক আর কাধে অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে সেই জওয়ানেরাই কিন্তু গত ক'দিনে সীমান্তের সেই মরা বাজারে প্রাণ এনে দিয়ে ফিরে গেলেন। তেহট্ট ও করিমপুরের বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী দোকান বসে রীতিমতো বাজারের চেহারা নিয়েছিল এ ক'দিনে। করিমপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিধান দত্তের কথায়, "প্রথম দিকে বাজার বেশ মন্দা ছিল। একে নির্বাচন, তায় সেনা মোতায়েন। আশঙ্কা ছিল এ বার বাজারটাই বোধ হয় জলে গেল। কিন্তু নিয়মের অনুশানের বদলে এ ক'দিনে বাজারটাই বদলে দিয়ে গেলেন ওঁরা।" বিশেষ করে খাবার, হোটেল, এবং ওষুধের দোকানে ব্যাপক কেনাবেচা হয়েছে। আয় বেড়েছে রিকশা চালকদের। ফলে শান্তিপূর্ণ ভোট-ই শুধু নয়, মরা এবং বাজার চাঙ্গা করায় কৃতিত্বও এখন কেন্দ্রীয়বাহিনীর। তেহট্ট উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে চপ-মুড়ির দোকান দিয়েছিলেন কুশ দত্ত। তাঁর কথায়, "তেহট্ট বাজারে তেলেভাজা বিক্রি করি। ভেবেছিলাম নির্বাচনের কড়াকড়িতে দোকানই দিতে পারব না।" কিন্তু কার্যত হয়েছে উল্টো। গত দিন পনেরো ধরে থাং যা তেলেভাজা বিক্রি হয়েছে তা 'ছ-মাসেও' হয়না বলছেন তিনি। কেন্দ্রীয় বাহিনী যে কানে ছিল তার কাছেই দোকান দিয়েছিলেন তিনি। আর তাতেই কেল্লা ফতে! তাঁর মতোই সামান্য আয়ের বহু মানুষ এই ক'দিনে উপকৃত হয়েছেন। চা,পান-বিড়ি-সিগারেট, ঠাণ্ডা পানীয়, আর জলের বোতল, যাঁরাই দোকান দিয়েছিলেন তাঁরাই লাভের মুখ দেখেছেন। পাশাপাশি, বাড়তি আয়ের মুখ দেখেছেন রিকশা চালকেরাও। তাঁদেরই এক জন বলছেন, "বাসস্ট্যাণ্ড থেকে রিকশায় উঠেছিলেন এক জওয়ান। করিমপুর কলেজ গেটের সামনে নেমে আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন ৫০ টাকার একটা নোট। আমি তো হতভম্ব। কিছু বলতে গেলে জওয়ান বললনে, 'রাখ্ লো।" এমন অভিজ্ঞতা শুধু তাঁরই নয়, তেহট্ট এবং করিমপুরের হেশ কিছু রিকশাচালকের এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে। ভোটের বাজারে তাঁদের পোয়া বারো। অথচ তেহট্ট মহকুমায় নির্বিঘ্নে নির্বাচন হওয়া নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিল প্রশাসন। রবিবার আধাসামরিক বাহিনী চলে যেতে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা অবশ্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। আর এলাকার ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া, "জওয়ানেরা মাঝেমধ্যে এলাকায় এলে ক্ষতি কী!" ভগবানগোলায় ফের অবরোধ তৃণমূলের নিজস্ব সংবাদদাতা • বহরমপুর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্টই জানিয়েছিলেন ব্নধ এবং অবরোধের রাজনীতি পছন্দ নয় তাঁর। রাজ্যের আনাচে কানাচে সে নির্দেশ যে মানছেন না তাঁর দলীয় কর্মীরা বুধবার মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলায় প্রায় ঘণ্টা দুয়েক ধরে পথ অবরোধ করে তা ফের বুঝিয়ে দিলেন তাঁরা। পুলিশের 'পক্ষপাতমূলক' আচরণের প্রতিবাদে বুধবার ভগবানগোলায় পথ অবরোধ করল তৃণমূল। বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণের আগের রাতে অর্থাৎ ২২ এপ্রিল রাতে ভগবানগোলা বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সাগির হোসেন প্রহৃত হন। ওই ঘটনায় কংগ্রেসের নির্দল প্রার্থী সৈয়দ আলমগীরের অনুগামী এক জন এবং সিপিএমের সাত জন-সহ মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে ভগবানগোলা থানায় অপহরণ ও খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। সাগির হোসেনের অভিযোগ, "পুলিশ ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের এক জনও গ্রেফতার হয়নি এবং তারা সকলেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন, তা ভগবানগোলার থানার ওসি-র কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তারই প্রতিবাদে ভগবানগোলার নেতাজি মোড়ে এ দিন দুপুরে দু-ঘন্টার জন্য পথ অবরোধ করা হয়।" প্রসঙ্গত, ভোটগ্রহণের আগের রাতে ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য টাকা বিলি করার অভিযোগে তৃণমূলের ওই প্রার্থী প্রহৃত হন বলেও অভিযোগ। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃণাল মজুমদার (মুর্শিদাবাদ-লালবাগ) বলেন, "যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তাঁদের অবশ্যই গ্রেফতার করা হবে।" সেই সঙ্গে ভোটগ্রহণের আগের রাতে ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য টাকা বিলি করার যে অভিযোগ তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভগবানগোলা থানায় দায়ের হয়েছে, তার রিপোর্ট নির্বাচন কমিশনকে পাঠানো হয়েছে। মৃণালবাবু বলেন, "ওই ঘটনারও তদন্ত চলছে।" সিপিএমের 'দুর্গে' জোটপ্রার্থীর দুশ্চিন্তা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় • কোতুলপুর এক পক্ষ বলছে, "এখনই নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। ওরা আবার জিতবে কী করে!" অন্য পক্ষের দাবি, "ওদের সন্ত্রাসের হুমকি অগ্রাহ্য করে মানুষ এ বার আমাদেরই ভোট দেবেন।" নিছক অঙ্কের হিসাবে রাজনৈতিক 'সন্ত্রাসদীর্ণ' কোতুলপুরে জয়ের ব্যাপারে যখন অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী সিপিএম প্রার্থী পূর্ণিমা বাগদি, তখন কংগ্রেস প্রার্থী সৌমিত্র খাঁকে দুশ্চিন্তায় রেখেছে জোটসঙ্গী তৃণমূলের গোষ্ঠী-কোন্দল। 'পরিবর্তনের' হাওয়াতেও তাই স্বস্তিতে নেই সৌমিত্রবাবু। ও দিকে, বিরোধী শিবিরের এই ছন্নছাড়া অবস্থা উপভোগ করছে সিপিএম। কোতুলপুরে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধীরা সিপিএমের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সরব। তৃণমূলের দাবি, সিপিএমের 'সন্ত্রাসে' ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বহু পঞ্চায়েতে প্রার্থীই দিতে পারেনি তারা। এমনকী, কয়েক জন প্রার্থী দুষ্কৃতীদের হুমকিতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। এ বারও বিধানসভা ভোটের প্রচারের শুরুতেই, মার্চের শেষে চোরকোলা গ্রামে দুষ্কৃতীদের হাতে মার খান খোদ কংগ্রেস প্রার্থীই। তাঁর অভিযোগ, হামলাকারীরা ছিল সিপিএম-আশ্রিত দুষ্কৃতী। পাশাপাশি এলাকার বৈতল, সিহড়, গোপীনাথপুর প্রভতি এলাকায় সিপিএমের 'সশস্ত্র শিবির' থাকার অভিযোগ তুলেও সোচ্চার হয়েছেন তিনি। জয়পুর থানা লাগোয়া উত্তরবাড় অঞ্চলের কিছু গ্রামে অস্ত্র উদ্ধারের দাবিতে আন্দোলনেও নেমেছিল তৃণমূল। সিপিএম প্রার্থী পূর্ণিমা বাগদি। সম্প্রতি, দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে কোতুলপুরে জনসভায় এসে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়াও বৈতলে সিপিএমের 'সশস্ত্র শিবিরের' প্রসঙ্গ তুলে সরব হন। তাই 'সন্ত্রাস' যে এই কেন্দ্রে বিরোধীদের প্রচারের মুখ্য বিষয়, তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই। 'সন্ত্রাস' প্রশ্নে বিরোধীদের যাবতীয় অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন সিপিএম প্রার্থী পূর্ণিমা বাগদি। তাঁর বক্তব্য, "চিরকালই কোতুলপুরে আমাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়। বাস্তবে এলাকায় ওদের কোনও সংগঠনই নেই। তাই সন্ত্রাসের ধুয়ো তুলে নিজেদের পরাজয়কে ঢাকা দিতে চায়।" একই সঙ্গে তাঁর প্রত্যয়ী দাবি, "বছরভর আমরা মানুষের পাশে থাকি। তাই মানুষই আমাদের জেতান। এ বারও বড় ব্যবধানে হাসতে হাসতে জিতব।" পূর্ণিমাদেবী এ কথা বলতেই পারেন। তার কারণ, এই কেন্দ্রে বামেদের ধারাবাহিক সাফল্যের ইতিহাস। ১৯৭৭ থেকে একটানা এই কেন্দ্রে ক্ষমতায় বামফ্রন্ট তথা সিপিএম। এই বিধানসভার অন্তর্গত ১৬টি পঞ্চায়েতই তাদের ঝুলিতে। জয়পুর ও কোতুলপুর পঞ্চায়েত সমিতিও সিপিএমেরই দখলে। জেলা পরিষদের সদস্যেরা সব বাম-শিবিরের। ২০০৬-এর বিধানসভা ভোটে সিপিএম প্রার্থী তৃণমূলকে হারিয়েছিলেন ৫৪ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে। ২০০৯-এর লোকসভা ভোটে ব্যবধান কমলেও তা ছিল প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার। এই ব্যবধান কমা এবং রাজ্যে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের পক্ষে 'পরিবর্তনের হাওয়া'তেই আশা খুঁজছেন সৌমিত্রবাবু। চাইছেন, তিন দশকের বাম শাসনের অবসান ঘটাতে। কিন্তু বামেদের এ হেন দুর্গে এই কাজ যে খুব সহজ নয়, তা তিনি নিজেও ভাল করেই জানেন। তার উপরে আছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কাঁটা, যার আঁচ ভাল ভাবেই টের পাচ্ছেন কংগ্রেস প্রার্থী। এমনিতেই কোতুলপুরে বিরোধীদের সংগঠন খুব একটা পোক্ত নয় বলে মানছেন স্থানীয় নেতারাই। তার উপর সাম্প্রতিক অতীতে এই অঞ্চলে গোষ্ঠী কোন্দলে জেরবার তৃণমূল। কোতুলপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি নিমাই ঘোষের সঙ্গে এলাকার এক সময়ের দাপুটে দলীয় নেতা সালাম খাঁয়ের বিবাদ দীর্ঘদিনের। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সভার দিনেও নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন এই দুই নেতার অনুগামীরা। আহত হন চার জন। সালাম-সহ ২১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জোটসঙ্গীর অভ্যন্তরীণ বিবাদ তাই চিন্তায় রেখেছে জোট-প্রার্থীকে। সৌমিত্রবাবু নিজে মানছেনও সে কথা। বলছেন, "সিপিএমের সন্ত্রাস নিয়ে আমরা এমনিতেই উদ্বিগ্ন। তার উপর আছে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব। দু'পক্ষকে এক সঙ্গে বসানোর চেষ্টা করেও পারিনি।" কংগ্রেস প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ। তবু, আশা ছাড়তে নারাজ তিনি। তাঁর কথায়, "এ সব সত্ত্বেও, গ্রামের মানুষ সিপিএমের সন্ত্রাসের ভয় উপেক্ষা করে আমাদের মিছিলে হাঁটছেন। আশা করছি ভোট যন্ত্রে তার প্রভাব পড়বে।" সৌমিত্রবাবুর এই দাবি ফুৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছেন পূর্ণিমাদেবী। বললেন, "কোন্দল তো চাপা দেওয়া যায় না। কোতুলপুরের মানুষ দেখেছেন, নিজেদের মধ্যে কোন্দলে কয়েক জনকে হাসপাতালেও যেতে হয়েছে। এর পরেও মানুষ কী করে ওদের উপর ভরসা করবেন?" প্রচারে এ নিয়ে বিরোধী শিবিরকে বিঁধতেও ছাড়ছেন না সিপিএম নেতা-কর্মীরা। এই রাজনৈতিক কাজিয়ার বাইরে অবশ্য অন্য ছবিও আছে। অনুন্নয়ন নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বিস্তর। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এলাকার এক বাসিন্দা বললেন, "ঢাকঢোল পিটিয়ে বছর কয়েক আগে অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত শিলান্যাস করেছিলেন দ্বারকেশ্বর নদীর উপর সামরোঘাট সেতুর। সেটি আজও অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।" তাঁদের দাবি, ওই সেতু হলে ইন্দাস ও বর্ধমানের সঙ্গে কোতুলপুরের ব্যবসায়িক যোগাযোগ বাড়বে। এলাকার কৃষিজীবীরা কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য সহজে বর্ধমানের মতো বড় শহরে নিয়ে যেতে পারবেন। ক্ষোভ রয়েছে দ্বারকেশ্বর নদীর ভাঙন নিয়েও। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, "ফি-বছর বর্ষায় বহু গ্রাম ভাঙনের কবলে পড়ছে। রাজনৈতিক নেতারা শুধু প্রতিশ্রুতি দেন। কাজের কাজ হয় না।" প্রচারে বেরিয়ে কংগ্রেস প্রার্থীও অনুন্নয়নের কথা তুলে ধরছেন। তাঁর কথায়, "এখানকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি বেহাল। প্রয়োজনীয় ওধুধ, চিকিৎসক নেই। চিকিৎসকের অভাবে বহু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার মুখে। রাস্তাঘাটের হালও তথৈবচ।" পূর্ণিমাদেবীর অবশ্য দাবি, "সামরোঘাট সেতুর কাজ চলছে। যথা সময়ে শেষ হবে। এই নিয়ে সমালোচনা অর্থহীন। ভাঙন রুখতে পাড় বাঁধানোর কাজও হচ্ছে।" এসআইকে গুলি করে জওয়ান আত্মঘাতী নিজস্ব সংবাদদাতা • মেজিয়া ও রানিগঞ্জ বচসার জেরে ঊর্ধ্বতন অফিসারকে গুলি করে আত্মঘাতী হলেন কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (সিআইএসএফ) এক জওয়ান। বুধবার সকাল ৯টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে বাঁকুড়ার মেজিয়ায়, ইসিএলের কালীদাসপুর কোলিয়ারির শীতলপুর সিআইএসএফ ক্যাম্পে। পুলিশ ও কোলিয়ারি সূত্রের খবর, রবিন দেওয়ানি (৪৯) নামে ওই সিআইএসএফ জওয়ান প্রথমে এক সাব-ইনস্পেক্টরকে গুলি করেন। পরে নিজের সার্ভিস রাইফেল দিয়ে আত্মঘাতী হন। তাঁর বাড়ি শিলিগুড়ি শহরে। অবস্থায় গুরুতর জখম পি কে ঘোষমল্লিক নামে ওই সাব-ইনস্পেক্টরকে প্রথমে রানিগঞ্জে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। জখম সাব-ইনস্পেক্টর পি কে ঘোষমল্লিক। — ওমপ্রকাশ সিংহ সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। রাত পর্যন্ত তাঁর অস্ত্রোপচার চলে। তাঁর শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক। ইসিএলের খনিগুলির নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে সিআইএসএফ। কোলিয়ারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই জওয়ান এ দিন এলোপাথাড়ি ভাবে ছ'রাউণ্ড গুলি চালান। হাতে ও পেটে গুলি লাগে ওই সাব-ইনস্পেক্টরের। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান সিআইএসএফের ডিআইজি অনিল কুমার এবং কমাডান্ট রাজেন্দ্র সিংহ। ডিআইজি পরে বলেন, "প্রাথমিক তদন্তে যতটুকু জানতে পেরেছি, ওই দু'জনের মধ্যে পুরনো কোনও বিবাদ ছিল না। বচসার জেরে এমন ঘটনা ঘটেছে। কী কারণে বচসা হয়েছিল, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।" কালীদাসপুর কোলিয়ারির এরিয়া ম্যানেজার দেবাশিস ভদ্র বলেন, "কী কারণে এমন ঘটনা ঘটল, তা জানা যায়নি।" বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বলেন, "তদন্ত শুরু হয়েছে।" স্থানীয় সূত্রে অবশ্য জানা যাচ্ছে, এ দিন রবিনবাবু ওই সাব-ইনস্পেক্টরের কাছে ছুটির আবেদন করেন। তা নিয়েই দু'জন বচসায় জড়িয়ে পড়েন। ছুটির আবেদন নামঞ্জুর হওয়ায় রবিনবাবু সাব ইনস্পেক্টরকে গুলি করেন। কেউ কিছু বোঝার আগেই নিজের বুকে গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হন। মাটি কম খুঁড়েই নলকূপ বসানোর অভিযোগ নিজস্ব সংবাদদাতা • খয়রাশোল বিধায়ক কোটায় গভীর নলকূপ বসাতে আসা একটি গাড়িকে আটকে রাখলেন খয়রাশোলের ছোড়া গ্রামের কিছু বাসিন্দা। ঘটনাটি মঙ্গলবার গভীর রাতের। বাসিন্দাদের অভিযোগ, যতটা বোরিং করার প্রয়োজন তা না করেই গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন কর্মীরা। তাঁদের দাবি ছিল, যতক্ষণ না ঠিক মতো কাজ হচ্ছে এবং পর্যাপ্ত পানীয় জল পাওয়া যাচ্ছে, গাড়ি আটকে রাখা হবে। ফলস্বরূপ মঙ্গলবার রাত ১টা থেকে বুধবার দিনভর একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল নলকূপ বসানোর গাড়িটি। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ নির্মাণ সহায়ক গিয়ে বোঝানোর পরে গাড়িটি ছেড়ে দেন বাসিন্দারা। স্থানীয় ও পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, খয়রাশোলের রূপসপুর পঞ্চায়েতের ওই গ্রামে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের বাস। গ্রামে দু'প্রান্তে দু'টি নলকূপ থাকলেও সেখান থেকে জল সংগ্রহ করতে রীতিমতো লাইনে দাঁড়াতে হয় বাসিন্দাদের। অবস্থাটা সবচেয়ে করুণ গ্রামের মধ্যবর্তী বেশ কয়েকটি পাড়ার প্রায় শ'দুয়েক পরিবারের। দীর্ঘ দিন ধরে ওই গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ পানীয় জলের জন্য পঞ্চায়েতে দরবার করে আসছেন। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত। শেষ পর্যন্ত সদ্য প্রাক্তন বিধায়ক ফরওয়ার্ড ব্লকের বিজয় বাগদি এলাকরার ছোড়া ও পাশের বড়ঘাটা এই দু'টি গ্রামের জন্য দু'টি নলকূপ বসাতে দু'লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছিলেন নির্বাচনের আগেই। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে ভেবে আনন্দিত হয়েছিলেন বাসিন্দারা, যখন নলকূপ বসানোর জন্য গ্রামে গাড়ি এসেছে। উৎসাহ নিয়ে নলকূপ বসানোর কাজ দেখার পাশাপাশি কেমন কাজ হচ্ছিল সেটাও খেয়াল রাখছিলেন বাসিন্দারা। মঙ্গলবার রাত তখন সাড়ে ১২টা হবে। হঠাৎ কাজ ফেলে গাড়িটি নিয়ে চলে যেতে চাইলে বাসিন্দারা বাধা দেন। স্থানীয় বাসিন্দা গৌরহরি ঘোষ, দিলীপ ঘোষরা বলেন, "শুধুমাত্র পানীয় জলের জন্য বহু বছর ধরে লড়াই করছি। কিন্তু না পঞ্চায়েত না পঞ্চায়েত সমিতি কেউ কথা শোনেনি। যদি বা বিধায়ক কোটায় নলকূপ বসানোর হল সেখানেও ফাঁকি।" তাঁদের ক্ষোভ, "যেখানে ১৮০ ফুট গভীর গর্ত করা করার কথা ছিল, সেখানে ১০০ ফুট খনন করেই চলে যাচ্ছিল গাড়িটি।" গ্রামের বধূ শীলা ঘোষ, ইলা ঘোষ, নমিতা মণ্ডলদের কথায়, "পানীয় জলের জন্য ভোর ৩টে থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়াতে হয়।" অভিযোগ অস্বীকার করেননি গত দু'দুবার ওই কেন্দ্র থেকে জেলা পঞ্চায়েত সদস্য ফরওয়ার্ডব্লকের মানিকরায় মাল। তিনি বলেন, "আমি এবং আমার স্ত্রী মোট চার বার নির্বাচিত সদস্য হলেও এলাকার উন্নয়ন হয়নি। তা ছাড়া, দায়সারা ভাবে কাজ করে যে ভাবে গাড়ইটি চলে যাচ্ছিল, তা অন্যায়।" কিন্তু এত বাবের নির্বাচিত সদস্য হলেও কেন জলের সমস্যা মেটাতে পারেননি? মানিকবাবুর জবাব, "ফব-র টিকিটে জিতলেও আমরা কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধী আসনে। তাই বলে পঞ্চায়েত প্রধানের কাছ থেকে প্রাপ্য আদায় করতে পারিনি।" গত পঞ্চায়েত ভোটে রূপসপুর পঞ্চায়েতের মোট ৯টি আসনের মধ্যে ৫টিতে ক্ষমতায় সিপিএম। ৩টি ফব ও ১টি কংগ্রেস পেয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করে রূপসপুর পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান নরেশ বাগদি বলেন, "গ্রামে উন্নয়ন হয়নি বা পানীয় জলের জন্য নলকূপ নেই সেটা ঠিক নয়। জলস্তর ঠিক মতো না পাওয়ায় অনেক নলকূপ অকেজো হয়ে আছে। ওখানে নলকূপ বসাতে গিয়ে একটা সমস্যা হয়েছে বলে শুনেছি। নির্মাণ সহায়ককে পাঠিয়ে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি।" দুবরাজপুরের বিদায়ী বিধায়ক, ফব-র বিজয় বাগদি বলেন, "নির্বাচনের আগেই দু'টি নলকূপের জন্য টাকা বরাদ্দ করে সেই দায়িত্ব স্থানীয় পঞ্চায়েতকে দিয়েছি। এও বলা হয়েছিল যদি বেশি খুঁড়তে হয় সে জন্য টাকাও দেওয়া হবে।" কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার তরফে শিবা নন্দন বলেন, "শাল নদীর পার্শবর্তী গ্রাম হওয়ায় বোরিং করতে সমস্যা হচ্ছে। তাই কাজ করা সম্ভব হয়নি।" ফ্রন্টের বিক্ষোভ বোলপুরে নিজস্ব সংবাদদাতা • বোলপুর পুলিশ প্রশাসনের একাংশের 'সহযোগিতায়' বোলপুর মহকুমা এলাকায় তৃণমূলের সন্ত্রাস বন্ধ করা, দলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা-সহ কয়েক দফা দাবিতে এসডিপিও-কে স্মারকলিপি দিলেন বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। বুধবার বোলপুর মহকুমার বোলপুর, নানুর, ইলামবাজার, লাভপুর ও পাড়ুই থানা এলকার শতাধিক বামফ্রন্ট কর্মী-সমর্থক ওই সব দাবিতে এসডিপিও দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান। পরে তাঁরা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারহাত আব্বাসের কাছেও স্মারকলিপি দেন। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সমীর ভট্টাচার্য বলেন, "তৃণমূলের সন্ত্রাসে গ্রামছাড়াদের ঘরে ফেরানো, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো বন্ধ করা-সহ একাধিক দাবি জানানো হয়েছে। আমরা ১৫ দিন সময় দিয়েছি।" সন্ত্রাসের অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল পাল্টা বলেন, "বামফ্রন্টের সন্ত্রাসেই সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। আমাদের হয়ে নয়, ওঁদের হয়েই পুলিশ প্রশাসনের একাংশ কাজ করছে।" পুলিশ সুপার নিশাদ পারভেজ বলেন, "সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দু'দলই একই অভিযোগ করছে। ভোটের আগে ঘরছাড়াদের ফেরানো হয়েছে। তালিকা দিলে ফেরানো হবে।" শহরে বহিরাগতদেরই ভয় পাচ্ছে সিপিএম রানা সেনগুপ্ত • বর্ধমান 'বামফ্রন্ট'-এর বিকল্প 'উন্নততর বামফ্রন্ট'— গত বিধানসভা নির্বাচনে এই স্লোগানে ভর করেছিল সিপিএম। কিন্তু বর্ধমান শহরে সেই 'উন্নয়ন' শব্দটাই এখন কপালে ভাঁজ ফেলেছে নেতাদের। সার্বিক উন্নয়ন নয়। মূলত রিয়েল এস্টেট ব্যবসার হাত ধরে শহর জুড়ে একের পর এক গজিয়ে ওঠা বহুতল, যার বাসিন্দাদের বেশির ভাগই 'বহিরাগত' এবং অবশ্যই 'স্বচ্ছল'। এঁদের একটা বড় অংশ ঐতিহাসিক কারণেই বামবিরোধী হতে পারেন বলে বাম শিবিরের আশঙ্কা। অন্য দিকে, এঁদের জায়গা ছেড়ে দিয়ে যে ছাপোষা ও নিম্নবিত্ত জনতা শহরতলি বা গ্রামের দিকে সরে গিয়েছেন, ভোটের পর ভোটে তাঁরা 'সর্বহারার পার্টি'র প্রতি অখণ্ড আনুগত্য প্রকাশ করে এসেছেন। ফলে, বিপদটা দ্বিমুখী। জনবিন্যাসের এই বদলের কথাটা বিরোধীরা জানুক বা না জানুক, সিপিএম তা সম্যক জানে। দল সূত্রের খবর, গত পাঁচ-দশ বছরের মধ্যে বর্ধমান শহরের বাবুরবাগ, সুভাষপল্লি, পাওয়ার হাউস, জেলখানা, ছোট ও বড় নীলপুরের মতো এলাকা থেকে কয়েক হাজার মানুষকে সরে যেতে হয়েছে। কোনও ক্ষেত্রে পরিবার বড় হওয়ায় ছোট বাড়িতে স্থান সংকুলান না হওয়ার কারণে, কোনও ক্ষেত্রে শপিং মল বা আবাসনের জন্য জায়গা ছাড়তে হওয়ায়। তাঁদের বদলে গ্রামের অবস্থাপন্ন চাষি, স্বচ্ছল চাকুরিজীবীরা নাগরিক সুবিধা ভোগ করতে এগিয়ে এসেছেন। হিসেবটা একেবারে ভুল নয়। বড় নীলপুরের এক নির্মাণ ব্যবসায়ীর কথায়, "এই এলাকায় আবাসনের জন্য হাজার খানেক মানুষকে জায়গা ছাড়তে হয়েছে। অনেকে ছোট বাড়ি বিক্রি করে গ্রামের দিকে চলে গিয়েছেন। নতুন আবাসনে এসেছেন গ্রামের শিক্ষক, চাকুরে, জমির মালিকেরা।" শহরের রামকৃষ্ণ রোডের এক প্রোমোটারের মতে, "এখানকার আবাসনগুলিতে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের প্রায় সকলেই বিত্তশালী। এঁদের অনেকে শহরে বিনিয়োগ করতে চান। এঁদের ভোট সিপিএমের দিকে না পড়ারই সম্ভবনা প্রবল। কেননা অনেকে সিপিএমকে বিনিয়োগের বাধা বলে ভাবছেন।" শহরের টাউনহল এলাকায় নতুন বাড়ি করেছেন রায়নার খালেরপুল এলাকার চাষি সুবিমান সরকার। তাঁর দাবি, "গ্রামে সিপিএমের অত্যাচার দিন দিন মাত্রা ছাড়াচ্ছিল। দলের সভার নাম করে নিয়মিত মোটা চাঁদা আদায় করত। না দিলেই ধোপা, নাপিত, মুনিষ, রাখালের কাজ বন্ধ। শহরে অন্তত সেই অত্যাচার নেই।" তাঁর মতো গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসা অনেকেই সিপিএমের বিরুদ্ধে রায় দেবেন বলে সুবিমান দাবি। বিবেকানন্দ কলেজের প্রাক্তন ছাত্র, বাজে প্রতাপপুরের বাসিন্দা দেবাশিস সুকুলের কথায়, "আমরাও হালে গ্রাম থেকে শহরে এসেছি। কিন্তু বাস্তব হল, গ্রামে বলুন বা শহরে, সিপিএম উন্নয়নের কোনও দিশা দেখাতে পারেনি। তাই এদের ভোট দেওয়ার আগে অনেককেই দু'বার ভাবতে হবে।" এঁদের উল্টো দিকে রয়েছেন এককালে গোলাহাটের বাসিন্দা মহম্মদ ইয়াসিন। নিজের বাড়ি বিক্রি করে শহর ছেড়ে তিনি সরাইটিকর পঞ্চায়েতের খগড়ার গড় গ্রামে চলে গিয়েছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, "পুরনো এলাকায় বেঁচে থাকার রসদ মিলছিল না। আমার ছোট দোকান ছিল। কিন্তু সেখানে যে ধরনের কম দামের বা মানের জিনিস রাখতাম, তা কেনার মতো লোক জুটছিল না। বাধ্য হয়ে শহর ছেড়েছি।'' তাঁরও ধারণা, গোলাহাট-সহ শহরের নতুন বাসিন্দারা বামেদের বিরুদ্ধেই রায় দেবেন। বর্ধমান শহরের এক সিপিএম নেতা মেনে নেন, "আমাদের কয়েক হাজার নিশ্চিত ভোটার শহর ছেড়ে পঞ্চায়েত এলাকায় চলে গিয়েছেন। শহরে অন্তত ১০টি বড় আবাসন গড়ে উঠেছে। সেখানকার বহিরাগত মানুষদের মেজাজমর্জি বোঝা আমাদের পক্ষে এখনও সম্ভব হয়নি।" সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য আব্দুল মালেকের মতে, এঁদের বেশির ভাগই 'সামন্ততান্ত্রিক পরিবার' থেকে এসেছেন। পাশাপাশি, তাঁর সাফ কথা, "এঁরা কোনও দিনই আমাদের সঙ্গে ছিলেন না।" শুধু আবাসন নয়, সিপিএমের আধাখ্যাঁচড়া 'উন্নয়ন পরিকল্পনা'ও তাদের বিপদ ডেকে এনেছে। যেমন, গোদা এলাকায় স্বাস্থ্যনগরী গড়তে জমি দিয়েছেন অনেকে। ওই জমিই ছিল তাঁদের রোজগারের প্রধান উৎস। রোজগার হারিয়ে অনেকে টিকে থাকার জন্য গ্রামে চলে গিয়েছেন। জেলা সভাপধিপতি তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উদয় সরকার বলেন, "জমিহারাদের স্বনিযুক্তির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যে ভাবে কাজ হবে বলে আমরা ভেবেছিলাম, সেই গতি অর্জন করা যায়নি।" প্রত্যাশা ছিল, স্বাস্থ্যনগরী তৈরি হলে অনেকে এখানে কাজ পাবেন। ফলে প্রশিক্ষণ নিয়েও তরুণ-তরুণীদের বড় অংশই এখনও কাজ পাননি। এই জমিহারা, রোজগার-হারাদের রায় কোন দিকে যাবে, সিপিএম নিশ্চিত নয়। সব মিলিয়ে এই ভোট হয়তো বিপুল নয়। কিন্তু বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে নিরুপম সেনের ভাগ্য যে রকম সরু সুতোয় ঝুলছে, তাতে যে প্রতিটি ভোটই মূল্যবান তা সিপিএম বিলক্ষণ জানে। গোদের উপর বিষফোঁড়া, সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরে এই কেন্দ্র এখন বর্ধমান পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। কোনও গ্রামাঞ্চল নেই যে, আগের মতো সেখান থেকে বড় ব্যবধান পেতে পারে সিপিএম। তৃণমূল প্রার্থী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের মতে, "নতুন-পুরনো নির্বিশেষে শহরের অনেকেই মনে করছেন, তাঁদের হাত-পা বাঁধা। ভাল যা কিছু, সিপিএম নেতাদের বাড়ির লোকেরাই ভোগ করেন। এই দশা কাটাতে তাঁরা পরিবর্তনের পক্ষে রায় দেবেন বলে আমাদের আশা।" আর কেউ না হোক, শহরের নতুন আগন্তুকেরা সম্ভবততাঁকে ফেরাবেন না। ইভিএম পরীক্ষা নিয়ে বিভ্রাট, কমিশনের দ্বারস্থ হল তৃণমূল নিজস্ব সংবাদদাতা • বর্ধমান বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র পরীক্ষায় কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়ায় বর্ধমান (উত্তর) মহকুমাশাসককে নির্বাচনের কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাল তৃণমূল। বুধবার বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রের ভোট পর্যবেক্ষক এ কে ছেত্রীর কাছে এই দাবি জানানো হয়। যদিও জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনার মতে, ভুল বোঝাবুঝি থেকেই পুরো বিষয়টি ঘটেছে। আগামী ৩ মে জেলার আরও বেশ কিছু কেন্দ্রের সঙ্গে ভোট বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রেও। মঙ্গলবার ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ইভিএম পরীক্ষার সময়ে কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়ে। একটি ইভিএমে প্রথম রাউণ্ডের 'ছদ্মভোট' নেওয়ার পরে দেখা যায়, সেটি ঠিক মতো কাজ করছে না। তৃণমূল প্রার্থী প্রার্থী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, সেটি বাতিল করা হবে বলে মহকুমাশাসক তথা কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার প্রশান্তকুমার অধিকারী আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু ষষ্ঠ রাউণ্ডের পরে সেটি 'ষ্ট্রং রুমে' পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বুধবার ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে চলছে ভোটযন্ত্র পরীক্ষা। নিজস্ব চিত্র। তৃণমূল সূত্রের খবর, রবিরঞ্জনবাবুরা নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। মুখ্য ও রাজ্যের নির্বাচন কমিশনারের কাছে তার প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার তাঁরা এমন ছ'টি ইভিএম যন্ত্রের খোঁজ পেয়েছেন, যার ব্যালট নম্বর ও কন্ট্রোল নম্বর হয় দেখা যাচ্ছে না অথবা নষ্ট করা হয়েছে। ছ'টি এমন যন্ত্র মিলেছে, যেগুলির নম্বর রিটার্নিং অফিসারের আগে দেওয়া নম্বরের সঙ্গে মিলছে না। অরুণবাবুর অভিযোগ, "যে ৫০২৫৯ নম্বরের একটি কন্ট্রোল ইউনিট (সিইউ) প্রথম বার পরীক্ষার পরে নির্ভুল ফল জানাচ্ছিল না। সেটি বাতিল করা হবে বলে প্রশান্তবাবু কথা দেন। কিন্তু পরীক্ষা চলতেই থাকে। ষষ্ঠ রাউণ্ডের পরে সেটিকে ষ্ট্রং রুমে পাঠিয়ে দেন মহকুমাশাসক। আমাদের ইভিএম সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগে তিনি কর্ণপাত করেননি। বরং সিপিএম অনুগামীর মতো আচরণ করছেন। তাই আমরা পর্যবেক্ষকের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে ভোটের কাজ থেকে সরানোর দাবি জানিয়েছি।" তাঁর দাবি, পর্যবেক্ষক বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। অনিল বসুকে কারণ দর্শাতে নোটিস দিল কমিশন নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা পশ্চিমবঙ্গে ভোটের প্রভাব ভিন্ রাজ্যের ব্যবসাতেও 'পরিবর্তন' বনাম 'প্রত্যাবর্তন'-এর ব্যালট যুদ্ধের জেরে কর্মী নিয়ে টানাটানি সুরাতের হিরে ব্যবসায়। ঝাঁপ বন্ধ মুম্বইয়ে বহু দোকানের। এ রাজ্যের ভোটের গরম বাজার প্রভাব ফেলছে অন্য রাজ্যের ব্যবসাতেও। সুরাতে হিরে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের অধিকাংশই বাঙালি। তাই বিধানসভা নির্বাচনের জন্য দফায় দফায় রাজ্যে আসছেন তাঁদের অনেকেই। ফলে, স্বাভাবিক ভাবেই যথেষ্ট সংখ্যায় কর্মী পেতে অসুবিধায় পড়ছে গুজরাতের ওই ব্যবসা। সুরাতের হিরে ব্যবসায়ী অমিত শাহ বলেন, ভোটের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে ছুটি মঞ্জুর না-করে উপায় নেই। তবে দফায় দফায় ভোট হওয়ায়, একসঙ্গে অনেক কর্মী ছাড়তে হচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। কিছুটা একই চিত্র বাণিজ্য-নগরী মুম্বইয়ে। সেখানেও দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে ভোট দিতে ঘরমুখো হয়েছেন অনেক বাঙালি। যেমন সান্তাক্রুজে বাঙালি খাবারের দোকান প্রতাপ কেটারিং। প্রায় বিশ বছরের জমজমাট ব্যবসা। মুম্বইয়ে প্রবল বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার পরেও যা এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। জঙ্গি হামলার পরেও ছেদ পড়েনি দোকান খোলার রুটিনে। এ বার কিন্তু তা বন্ধ থাকছে ৩০ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত। সৌজন্যে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন। রুজি-রুটি সংস্থানের লক্ষ্যে মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন নন্দীগ্রামের প্রতাপ পড়ুয়া। তৈরি করেন প্রতাপ কেটারিং। অফিস ও বাড়িতে ভাত-ডাল-সব্জি-মাছের 'ডাব্বা' পাঠানোর ব্যবসা জমে উঠতেই নিজের গ্রামের ও আশপাশের এলাকার বেশ কিছু ছেলেকে নিয়ে গিয়েছেন বলিউডের শহরে। আগামী ৩ মে ভোটপর্ব সেই নন্দীগ্রামেই। দোকানের ম্যানেজার শঙ্কর সামন্ত জানাচ্ছেন, ভোট দিতে দু'এক দিনের মধ্যেই নন্দীগ্রাম ফিরে যাবেন দশ জন কর্মী। এঁরা সবাই শিমূলকুণ্ড গ্রামের বাসিন্দা। এ ছাড়া, কলকাতা ও তার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা জনা বারো কর্মী ছুটি নিয়ে চলে গিয়েছেন ইতিমধ্যেই। তাই যথেষ্ট কর্মী না থাকায় বন্ধ থাকবে দোকান। এবং এর ফলে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০-১২ হাজার টাকার ব্যবসা মার খাবে বলে শঙ্করবাবুর দাবি। অথচ অনেকটা এর উল্টো ছবি কলকাতাতেই। বুধবার ভোটকে কেন্দ্র করে প্রায় ছুটির মেজাজ শহরে। অনেক রেস্তোরাঁয় 'হোম ডেলিভারি'র চাহিদা তুঙ্গে। খাবারের অর্ডারের চাপ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন 'সিরাজ', 'রহমানিয়া', 'আরসালান'-এর কর্মীরা। তাই ভোট দিয়ে আসার সময় পেলেও ছুটি নেওয়ার ফুরসত পাননি তাঁরা। টুকরো খবর হিরেও এ বার নির্দিষ্ট দামে সোনা ও রুপোর মতোই এ বার হিরের দামও দাম বেঁধে দিতে চাইছে অল ইণ্ডিয়া জেমস অ্যাণ্ড জুয়েলারি ট্রেড ফেডারেশন। ডায়ামণ্ড রিটেল বেঞ্চমার্ক (ডিআরবি) নামে এই প্রকল্প চালু করার কথা জানান সংগঠনের চেয়ারম্যান বাচরাজ বামালওয়া। ইজরায়েলের একটি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তৈরি হয়েছে এই নতুন দামের তালিকা। দেশ জুড়ে হিরে বিক্রির ক্ষেত্রে এই তালিকা প্রযোজ্য। কোন হিরের দাম কী হবে, তার দিশা দেবে এই ডায়মণ্ড রিটেল বেঞ্চমার্ক। সংগঠনের দাবি, এর ফলে হিরের ব্যবসা অনেকটা স্বচ্ছ হবে। প্রতি ত্রৈমাসিকে ডিআরবি প্রকাশিত হবে। বুধবারও কিছুটা পড়ল শেয়ার বাজার। এ দিন সেনসেক্স পড়েছে ৯৬.৬৬ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময় তা থিতু হয়েছে ১৯,৪৪৮.৬৯ অঙ্কে। পতনের পরিমাণ কম হলেও, এই নিয়ে টানা ৩ দিনে সেনসেক্স মোট পড়েছে ১৫৪ পয়েন্ট। এ পর্যন্ত প্রকাশিত বিভিন্ন শিল্প ও বাণিজ্যিক সংস্থার আর্থিক ফলাফলে লগ্নিকারীরা তেমন খুশি না-হওয়াই এর অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ দিন ভারত ছাড়া অন্যান্য এশীয় সূচকের মুখও ছিল নীচের দিকেই। ভোটের শহরে 'অচল' পরিবহণ, যাত্রী-দুর্ভোগ নিজস্ব সংবাদদাতা মনে হচ্ছিল রাজনৈতিক দলের বন্ধ। ভোটের দিন, বুধবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কলকাতা ও তার লাগোয়া তিন জেলা হাওড়া, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় চলাচল করল হাতে গোনা কয়েকটি যানবাহন। জরুরি কাজে রাস্তায় বেরিয়ে নাকাল হলেন মানুষ। অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বিপদে পড়লেন পরিজনেরা। ভোটের জন্য জেলা প্রশাসন ও পুলিশ অর্ধেকেরও বেশি যানবাহন হুকুম-দখল করায় রাস্তায় গাড়ি কম দেখা গিয়েছে এ দিন। কিন্তু যে সব যানবাহন হুকুম-দখল হয়নি, সেগুলিও চলেনি যাত্রী কম থাকার আশঙ্কায়। লোকাল ট্রেন সময়ে চললেও হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন থেকে কলকাতা বা আশপাশের এলাকায় পৌঁছতে দুর্ভোগে পড়েন অনেকেই। কিছু বেসরকারি বাস ও মিনিবাস চললেও, সরকারি বাস চোখে পড়েনি। অধিকাংশ মেট্রোই ছিল ফাঁকা। সকালে অফিসপাড়ার নিকটবর্তী স্টেশনগুলিতে জনা দশেক যাত্রীকে নামতে দেখা যায়। কলকাতা ও হাওড়ায় দূরপাল্লার বাসের দেখা মেলেনি। উত্তর হাওড়া, বালিতে সরকারি বাস না চলায় বাসিন্দাদের বেসরকারি বাসের উপরে নির্ভর করতে হয়। কিন্তু কলকাতায় ভোটের জন্য হাতেগোনা কিছু বেসরকারি বাস ও মিনিবাস চলেছে। বিকেলের পর থেকে সেগুলিও রাস্তায় আর দেখা যায়নি। ফলে সমস্যায় পড়েন উত্তর হাওড়া এবং বালির লোকজনেরা। মহানগরী ও সংলগ্ন অঞ্চলের যানবাহনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ অটো। কিন্তু গিরিশ পার্ক, বেলেঘাটা, শিয়ালদহ, বড়বাজার, দমদম, গড়িয়াহাট ইত্যাদি এলাকায় অটোরিকশা প্রায় দেখাই যায়নি। অথচ এই অঞ্চলগুলিতেই বছরের অন্য দিনে অটোর দাপটে চলাচল মুশকিল হয়ে ওঠে বলে এলাকার বাসিন্দারাই জানিয়েছেন। এ দিন মানিকতলার বাড়ি থেকে গিরিশ পার্কে যাবেন বলে বেরিয়েছিলেন পার্থ প্রামাণিক। প্রায় আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে তবে অটোর দেখা পান। একই অভিজ্ঞতা ফেরার সময়েও। সকাল থেকেই রাস্তামুখো হননি কলকাতার বাসিন্দারা। তবে ভোটের লাইনে বেশ ভাল ভিড় নজরে এসেছে। রাস্তাগুলিতেও বিভিন্ন সময়ে বাসিন্দাদের লাইন দিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে দেখা গিয়েছে। তবে ভোট সত্ত্বেও যাঁরা জরুরি কাজে বেরিয়েছেন, বাস-অটোর অভাবে তাঁদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। হাওড়া স্টেশন বা ধর্মতলা চত্বরে দূরপাল্লার গাড়ির দেখা পাওয়া যায়নি। পথচারীরা জানান, বেসরকারি বাসের দেখা যা-ও বা মিলেছে, সকাল থেকে সরকারি বাস একটিও চোখে পড়েনি। বন্ধ ছিল রাস্তার ধারের অধিকাংশ দোকানও। যে দু'-একটি পান-সিগারেটের দোকান খোলা ছিল, সেগুলি ঘিরেই জমেছিল রাজনৈতিক কর্মী ও ভোটদাতাদের জটলা। এয়ার ইণ্ডিয়ায় ছাঁটাই ধর্মঘটী ৬ পাইলট নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ধর্মঘট করার জন্য ছ'জন পাইলটকে ছাঁটাই করল এয়ার ইণ্ডিয়া। সাসপেণ্ড করা হয়েছে দু'জনকে। বরখাস্তদের মধ্যে রয়েছেন ধর্মঘটী পাইলট সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতা। সাসপেণ্ড হওয়া দুই পাইলটের এক জন কলকাতার বলে জানা গিয়েছে। ছাঁটাই-সাসপেনশনের মতো ব্যবস্থার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট 'ইণ্ডিয়ান কমার্শিয়াল পাইলট অ্যাসোসিয়েশন' (আইসিপিএ)-এর স্বীকৃতি বাতিল করে দিল্লি-মুম্বই-কলকাতা সহ বিভিন্ন শহরে ইউনিয়ন অফিসে তালাও ঝুলিয়ে দিয়েছেন এয়ার ইণ্ডিয়া কর্তৃপক্ষ। সংস্থার সিএমডি অরবিন্দ যাদব এই ধর্মঘটকে 'বেআইনি' অভিহিত করে খোলা চিঠি দিয়েছেন সমস্ত কর্মীকে। উল্লেখ্য, ধর্মঘট করায় গত বছরই দু'টি ইউনিয়নের স্বীকৃতি বাতিল করে বেশ কিছু ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মী-নেতাকে ছাঁটাই-সাসপেণ্ড করে এয়ার ইণ্ডিয়া। পরে অবশ্য কয়েক জনকে ফের চাকরিতে বহাল করা হয়। আর বুধবার আইসিপিএ-র সভাপতি এএস ভিন্দর ও সাধারণ সম্পাদক রিষভ কপূর-সহ ছয় পাইলটকে ছাঁটাই করে ধর্মঘটীদের উদ্দেশে 'কড়া' বার্তাই দিতে চেয়েছেন এয়ার ইণ্ডিয়া কর্তৃপক্ষ। সংস্থার সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশনের মামলা চলছে যে আদালতে, সেই দিল্লি হাইকোর্টও এ দিন ধর্মঘট প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছে। তা সত্ত্বেও ৬০০ পাইলট অনড়। বরং এয়ার ইণ্ডিয়ার লোকসানে কর্তৃপক্ষের 'গাফিলতি'র ভূমিকা খতিয়ে দেখতে তাঁরা সিবিআই-তদন্ত চেয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। এ দিন সন্ধ্যায় ইউনিয়নের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, ধর্মঘট চলবে। ওঁদের ক্ষোভের কারণ কী? সরকারি বিমানসংস্থা এয়ার ইণ্ডিয়ার (যারা আন্তর্জাতিক উড়ান চালাত) সঙ্গে আর এক সরকারি বিমানসংস্থা ইণ্ডিয়ান এয়ারলাইন্স (যারা অভ্যন্তরীণ উড়ান চালাত)-কে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল সাড়ে তিন বছর আগে। ধর্মঘটী পাইলটরা সকলে পূর্বতন ইণ্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের। তাঁদের প্রধান অভিযোগ: সংযুক্তিকরণের সময়ে সকলকে সমান সুযোগ-সুবিধার যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, সাড়ে তিন বছরেও তা কার্যকর হয়নি। মূল এয়ার ইণ্ডিয়ার পাইলটেরা তাঁদের চেয়ে বেশি বেতন ও সুযোগ-সুবিধা পান। এই 'বৈষম্যের' বিরুদ্ধেই ওঁদের প্রতিবাদ। প্রতিবাদীদের ধর্মঘট সামাল দিতে ইউনিয়ন-বহির্ভূত পাইলটদের দিয়ে নিয়মিত উড়ান চালানোর চেষ্টা করেছে এয়ার ইণ্ডিয়া। এগ্জিকিউটিভ পদে উন্নীত পাইলটদেরও কাজে লাগানো হয়। বুধবার সন্ধে পর্যন্ত কলকাতা থেকে একটা উড়ান বাতিল করতে হয়েছে। দিল্লির চারটে উড়ানের জায়গায় গিয়েছে দু'টো। দিল্লি ও মুম্বই থেকে বাতিল হয়েছে যথাক্রমে ২০ ও ১০টির বেশি উড়ান। আরও সমস্যা, 'বিকল্প' পাইলটদের মোট সংখ্যা সারা দেশে দু'শোর বেশি নয়। কলকাতায় তো সাকুল্যে ৯ জন! ফলে নিয়মিত পাইলটেরা কাজে না-এলে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে কী অবস্থা হবে, তা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যাঁরা টিকিট বাতিল করতে বা উড়ানের দিন বদলাতে চাইবেন, তাঁদের কোনও আর্থিক ক্ষতি হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছে এয়ার ইণ্ডিয়া। পাইলটদের অভিযোগ সম্পর্কে সংস্থা কী বলছে? সিএমডি অরবিন্দ যাদবের পাল্টা অভিযোগ, "বেতন বৈষম্য দূর করতে গড়া কমিটি এই সপ্তাহে কাজ শুরু করেছে। পাইলটেরা তো সেখানে ক্ষোভ জানাতে পারতেন! এয়ার ইণ্ডিয়া যখন ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে, ঠিক তখনই এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপ কেন?" সিএমডি'র মন্তব্য, "আলোচনা যখন চলছে, কর্তৃপক্ষ যখন সচেষ্ট, তখন ধর্মঘট পুরোপুরি অবৈধ।" অন্য দিকে আইসিপিএ-র বক্তব্য: মঙ্গলবার রাতে মুখ্য শ্রম কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পরেই ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত। ফলে এটা কিছুতেই বেআইনি নয়। যার উত্তরে সিএমডি'র পাল্টা যুক্তি, "হাইকোর্টে পাইলটেরা জানিয়েছিলেন, সংস্থার ক্ষতি হয় এমন কাজ তাঁরা করবেন না। সে মামলার তো নিষ্পত্তি হয়নি। ওঁদের ধর্মঘট অবশ্যই বেআইনি।" বস্তুত এই ধর্মঘট-আন্দোলনে এয়ার ইণ্ডিয়া কর্তৃপক্ষ এতটাই ক্ষুব্ধ যে, কো-পাইলট এবং কম্যাণ্ডার পাইলটেরা প্রতি মাসে কত বেতন পান, তা-ও এ বার লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। যা অভূতপূর্ব ঘটনা! উচ্ছেদ অভিযানে সংঘর্ষ জনতা-পুলিশে, হত ৩ সুশান্ত বণিক • আসানসোল অবৈধ দখলদার হঠাতে গিয়ে আজ রণক্ষেত্রের চেহারা নিল ধানবাদের মাটকুড়িয়া ও কুসুন্দা অঞ্চল। পুলিশ ও দখলদারদের মধ্যে সংঘর্ষে, পুলিশের গুলিতে তিন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। অন্য দিকে, দখলদার ছোড়া বোমা ও ইট-পাথরের ঘায়ে আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী। আহত হয়েছেন ধানবাদের পুলিশ সুপার আর কে ধান। জনা কুড়ি উচ্ছেদ-বিরোধীও আহত হয়েছেন। পুলিশ জানায়, এ দিনের ঘটনায় মৃতদের নাম বিকাশ সিংহ (৩৬), দীনেশ কুমার (৪০)। এক জন মৃতের নাম পরিচয় জানা যায়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা সংস্থা, ভারত কোকিং কোল লিমিটেডে (বিসিসিএল)-এর জমি অবৈধ ভাবে দখল করে দীর্ঘদিন ধরেই এখানে এক দল মানুষ বসবাস করছিলেন। সম্প্রতি রাঁচি হাইকোর্টেকর নির্দেশে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে দখলদার-বিরোধী অভিযান শুরু করেছে সরকার। এই অভিযান চলছে রাঁচি, জামশেদপুরেও। এমনই এক অভিযান আজ শুরু হয়েছিল ধানবাদ জেলার মাটকুড়িয়া ও কুসুন্দা এলাকায়। ঘটনার পর এলাকায় চরম উত্তেজনা রয়েছে। প্রচুর পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার জেরে ধানবাদ পুরসভা এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্ফু জারি করা হয়েছে। পুলিশকে লাঠিপেটা। ধানবাদে বুধবার। 'নিরীহ মানুষ'-এর উপরে গুলি চালানোর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ধানবাদ জেলা জুড়ে বন্ধ ডেকেছে সিপিআই(এমএল)। বন্ধে সামিল হয়েছে অন্য দলগুলিও। দোষী পুলিশদের শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। এই ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন ধানবাদের বিধায়ক মান্না মল্লিক। বিসিসিএল কর্তৃপক্ষের দাবি, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাঁরা দখলদার উচ্ছেদে গেলে বাসিন্দারাই প্রথম আক্রমণ করে। ধানবাদ রেঞ্জের ডিআইজি উমেশ সিংহ জানিয়েছেন, উত্তেজিত, মারমুখী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ প্রথমে জল-কামান ও লাঠি ব্যবহার করেছিল। কিন্তু হঠাৎ মারমুখী জনতা পুলিশের উপর বোমা ছুড়তে থাকে। দেশি বন্দুক থেকে গুলিও চালাতে থাকে। এরপরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বিসিসিএল কর্তৃপক্ষ সিআইএসএফ বাহিনী ও পুলিশ নিয়ে মাটকুড়িয়া এলাকায় যায়। সেখানে কোলিয়ারি আবাসন দখল করে বসবাস করা বাসিন্দাদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়। এর পরেই বাসিন্দারা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসা শুরু করে। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে ঝামেলা চলার পরে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা-ইট ছোড়া শুরু হয়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে কুসুন্দা এলাকাতেও। ক্ষিপ্ত জনতা রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাঙচুর করে। সরকারি, বেসরকারি গাড়ির পাশাপাশি পুলিশের জিপেও আগুন লাগানো হয়। ভাঙচুর করে পোড়ানো হয় বিসিসিএলের গাড়িও। বিসিসিএলের কয়েকটি অফিসেও আগুন লাগায় জনতা। খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছয় দমকলের গাড়ি। কিন্তু দমকলের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। প্রাণ বাঁচাতে আগুন না নিভিয়েই ঘটনাস্থল ছেড়ে যায় দমকলকর্মীরা। জখম পুলিশ সুপার। জনতার ছোড়া ইটে জখম হন ধানবাদের পুলিশ সুপার আর কে ধান। আহত হন আরও কয়েক জন পুলিশ কর্মী। এলাকার বাসিন্দা তথা সিপিআইএমএল নেতা রাধেরামমোহন সিংহের অভিযোগ, "পুলিশ কোনও প্ররোচনা ছাড়াই নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। আমরা বৃহস্পতিবার ধানবাদ জেলা বন্ধ ডেকেছি।" তিনি দাবি করেন, পুলিশ কমপক্ষে ৮০ রাউণ্ড গুলি চালিয়েছে পুলিশ। গুলি চালানোর ঘটনা স্বীকার করেন পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, "জনতাই পুলিশকে লক্ষ্য করে প্রথমে গুলি, বোমা, ইট ছোড়ে। আমরা তার মোকাবিলা করেছি।" জখমদের ধানবাদের পাটলিপুত্র মেডিক্যাল কলেজ-হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। বিসিসিএলের জনসংযোগ আধিকারিক আর আর প্রসাদ জানান, আদালতের নির্দেশেই তাঁরা দখলদারদের উচ্ছেদ করতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, "পুলিশের গুলিতে হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। উত্তেজিত জনতা আমাদের অনেক সম্পত্তি নষ্ট করেছে।" তিনি জানান, এক দল বহিরাগত বহু দিন ধরে কোলিয়ারির আবাসন ও জমি দখল করে রেখেছিল। তাদের বারবার উঠে যেতে বলা হয়। আদালাতের নির্দেশের কথাও জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা তা আমল দেয়নি বলেই অভিযান চালাতে হয়। ছবি— চন্দন পাল |
Total Pageviews
THE HIMALAYAN DISASTER: TRANSNATIONAL DISASTER MANAGEMENT MECHANISM A MUST
We talked with Palash Biswas, an editor for Indian Express in Kolkata today also. He urged that there must a transnational disaster management mechanism to avert such scale disaster in the Himalayas.
http://youtu.be/7IzWUpRECJM
Unique
THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS TALKS AGAINST CASTEIST HEGEMONY IN SOUTH ASIA
THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS TALKS AGAINST CASTEIST HEGEMONY IN SOUTH ASIA
My Blog List
Hits
Thursday, April 28, 2011
কোটি টাকার বেশি নগদে ড্রাফ্ট, তৃণমূলের জবাব চাইল কমিশন http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy?p=28raj1.htm
http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy?p=28raj1.htm
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
PalahBiswas On Unique Identity No1.mpg
Tweeter
issuesonline_worldwide
Visit Us
Traffic
Blog Archive
-
▼
2011
(7909)
-
▼
April
(550)
- Fwd: Fw: No British Queen on Irish soil.
- Fwd: [bangla-vision] No stone-pelting: Geelani
- Fwd: [wvns] Armed US Drones Start Libya Missions
- Fwd: [wvns] A great day for Palestine
- Fwd: [bangla-vision] GOOD READ: The Libyan War, Am...
- Fwd: [wvns] AMERICA IS ON THE WRONG SIDE
- Fwd: [bangla-vision] Bangladesh and the ‘Islamic R...
- Fwd: [bangla-vision] Discovering Islaam Lecture 07...
- Fwd: [** MAOIST_REVOLUTION **] A new Revolutionary...
- Fwd: [Right to Health Care] GOOD NEWS - FREE BEDS ...
- Fwd: [bangla-vision] The Islamic Perspective on th...
- Fwd: [Right to Education] ALL INDIA PARENTS ASSOCI...
- Fwd: [Right to Education] Please watch LOK SABHA T...
- Fwd: TaxGuru.in : Legal & Tax Updates
- Fwd: [Right to Education] मैं बिहार से हूँ , नितीश...
- Fwd: [Say No to UID] COERCION AT ITS BEST .......
- Fwd: [Say No to UID] TO GETA LICNESE I NEEDUID, TO...
- Fwd: Weekly Updates - Osian's new promise, Erosion...
- Fwd: Fw: Bahrain 'torture service' official to att...
- Fwd: Fw: New Israeli plan to build 386 settlement ...
- Fwd: Fw: Settlers Torch Palestinian Stores In Hebron
- Fwd: Fw: Israel rejects Gaza war compensation
- Fwd: ["ശ്രുതിലയം" Shruthilayam] മനസ്സില് നിറയെ ഓര...
- http://outlookindia.com/ GODMEN God On A Phone Lin...
- JITENDER GUPTA INTERVIEW ‘We Had Lost Touch With P...
- Investigate New Revelations on Purulia Arms Drop
- অস্ত্রবর্ষণের রহস্য
- Historical MUSLIM Nad OBC Convention in JALGAON, M...
- US Zionist Weapon Economy is Banking on INDO US Nu...
- Fwd: Infosys is hiring Fresh BCA/B.Sc graduates.. ...
- Fwd: Ross Mirkarimi the Next Sheriff in Town?
- Fwd: [bangla-vision] Bangladesh to combine defense...
- Fwd: CC News Letter, 28 April - Crowdsourcing Japa...
- Fwd: Fw: Palestinian unity could end Israel's 'rut...
- Fwd: [bangla-vision] Of Tea and Snow Leopards: Bal...
- Fwd: [** MAOIST_REVOLUTION **] Joint May Day State...
- Fwd: TaxGuru.in : Legal & Tax Updates
- Fwd: Anna Badnaam ho rahe hain bhusan ke kiye
- Fwd: [initiative-india] REMINDER : Invitation to N...
- Fwd: [Marxistindia] Investigate New Revelations on...
- Fwd: Fw: Bahrainis picket Saudi London embassy
- Fwd: Fw: Iran raps Western media bias, monopoly
- Fwd: [bangla-vision] BREAKING NEWS: 'Egypt to perm...
- Fwd: Fw: Barack Obama - Bush 2.0 - Syria is Next, ...
- Fwd: Press Release from Power-Publishers
- Fwd: [bangla-vision] Twenty-five Years after Chern...
- Fwd: [bangla-vision] Fwd: Drift in Indo-US Relatio...
- Fwd: [bangla-vision] Nuclear Power Can Never Be Ma...
- Fwd: [bangla-vision] The Mystery of Purulia Arms D...
- Fwd: Why are Millions of Hindus becoming Christian...
- Fwd: [bangla-vision] Colonial aggression on Libya ...
- Fwd: [bangla-vision] Issue 631 - Moral Code, Path ...
- Fwd: Today's Exclusives - Equity funds may have su...
- Fwd: [bangla-vision] Book Review: Understanding th...
- Fwd: Fw: Putin says NATO after oil in Libya
- Fwd: [bangla-vision] The state of Bangladesh judic...
- Fwd: [bangla-vision] Cairo students demonstrate ag...
- Fwd: [bangla-vision] The NLRB Shows Its Fangs
- The Royal Wedding!Prince William and Kate Middleto...
- PAC Observations And Recommendations For The Recor...
- SWISS Bank Accounts Owned by Indians are MOST in N...
- Purulia armsdrop case: 'Indian Government involved...
- Fwd: CC News Letter, 27 April - The Hidden Horrors...
- Fwd: Watch the documentary 'The Death of Merit' o...
- Fwd: अँधेरी शाम
- Fwd: TaxGuru.in : Legal & Tax Updates
- Fwd: [Right to Education] JOIN US AT JANTAR MANTAR...
- Fwd: [bangla-vision] NATO: War Based on Lies, Trip...
- Fwd: [Marxistindia] Purulia Arms Drop
- Fwd: Fw: Cairo holds massive anti-Israel rally
- Fwd: Fw: German MP blames Israel for Mer, Arrigoni...
- Fwd: Fw: Turkish FM warns Israel not to repeat flo...
- Fwd: Play - SONS OF BABUR - *ing Tom Alter on May 8
- Fwd: नेरुदा की कविताएं, मूल स्पेनिश से हिंदी में
- Fwd: [bangla-vision] Rebel Newsflash - Thursday, 2...
- Fwd: Today's Exclusives - Osian's new promise: Wil...
- কোটি টাকার বেশি নগদে ড্রাফ্ট, তৃণমূলের জবাব চাইল ...
- OPINION A Porn Called T20 Cricket’s buffet is now ...
- MULNIVASI NAYAK Reports on the VOLCAVIC Mass Movem...
- Fwd: Is Anna Hazare brahmin?
- Political violence claims 24 lives in West Bengal!...
- Political violence claims 24 lives in West Bengal!...
- Political violence claims 24 lives in West Bengal!...
- Fwd: CC News Letter, 25 April - The Guantánamo Leaks
- Fwd: TaxGuru.in : Legal & Tax Updates
- Fwd: [PUCL] Letter sent to Annaji by Social Activi...
- Fwd: Fw: Tehran will not ban British publishers
- Fwd: Fw: Iraqis demand end to US military stay
- Fwd: Fw: Egyptians want to end deal with Israel
- Fwd: Fw: UK reserves used in wars than services
- Fwd: Fw: International activists harvest on Gaza b...
- Fwd: Fw: Manchester United fan killed by Bahrain f...
- Fwd: Fw: Democracy on the march everywhere
- Fwd: Fw: Wikiweasel 4, “Wikilieaks-Goes-Whacky”
- Fwd: Fw: Anti-monarchs to protest on wedding day
- Fwd: what education means in Hindustan
- Fwd: [PUCL] Letter sent in reply by Social Activis...
- Fwd: Today's Exclusives - How Kalmadi reached Delh...
- Fwd: CC News Letter, 26 April - Living Economies: ...
- Fwd: [bangla-vision] Army, Home Minister rule Kash...
-
▼
April
(550)
No comments:
Post a Comment