| |
এবার পশ্চিমবঙ্গ ? জামাত-রাজাকারদের শাস্তি নিয়ে যখন সবাক হয়েছে শহবাগ,জেগে উঠছে গোটা বাংলাদেশ, মৌলবাদীদের মূল সুদ্দ উপড়ে ফেলার অনমনীয় আবেগে যখন প্রজন্ম চত্তর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ; ঠিক সেই সময়েই বেড়ার এপারে শুরু হল ভ্রাতৃঘাতি দাঙ্গার প্রস্তুতি। মুল্লাবাদী আর মনুবাদীদের শিরা ফুলানো ম্যাৎকার। চমৎকার এই খেলা। মুল্লাবাদ আর মনুবাদ। একই অঙ্গের দুই রূপ। একটির অস্তিত্ব অনায়াশে জায়গা করে দেয় অন্যটিকে। এদের টিকি আর দাড়ি নড়তে শুরু করলেই মূলনিবাসীর ঘর ভাঙ্গে। পুড়ে ছাই হয়ে যায় SC/ST,OBC ও Minority'স্থাবর অস্থাবর। রাস্তায় পড়ে থাকে আদিবাসী-দলিতদের লাশ। সম্প্রতি ক্যানিংয়ের জীবনতলা থানার অন্তর্গত নোলিয়াখালিতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সংঘাত,গুপ্ত ঘাতকদের হাতে মৌলবি রুহুল কুদ্দুসের মৃত্যু,প্রতিক্রিয়ায় ১১০টির ও বেশি দলিত ঘরে অগ্নি সংযোগ,সহস্রাধিক মানুষের ভিটে মাটি ছেড়ে ত্রান শিবিরে আশ্রয় নেওয়া, প্রমান করলো যে বেড়ার এপারে এরা কতটা অবাধ বিচরণশীল ও শাসক শ্রেণির মদত পুষ্ট। একই কৌশল,একই উদ্দেশ্য। সময় সুযোগ বুঝে সম্প্রদায়ীক তাসের ট্রাম কার্ড খেলে দেওয়া। যাতে মূলনিবাসীরা স্থায়ী বিভাজন ও বিদ্বেষের শিকার হয়ে মুল্লাবাদী আর মনুবাদীদের হাতে জীবন মরণ সপে দেয় এবং উচ্ছিষ্ট খেয়ে স্বর্গ বা জান্নাত পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকে। সিপিএমের মধ্যে ব্রাহ্মন্যবাদী শক্তির প্রভাব যে কত প্রবল তা বুদ্ধ ভট্টাচার্যের শেষ দুই বছরের কাজকর্ম দেখে বোঝা যাচ্ছিল। ইউপিএ-১ সরকারকে সমর্থন। SEZ মেনে নেওয়া। বাজারি অর্থনীতিকে দেশের উন্নয়নের আদর্শ মডেল হিসেবে গ্রহণ করা এবং শিল্পের জন্য মূলনিবাসীদের হাত থেকে তাদের শেষ সম্বল চাষযোগ্য জমি কেড়ে নেবার নীতিকে বাস্তবায়িত করার মধ্য দিয়েই এই লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে। কলকাতার কাছে শিল্প তালুকের জন্য জমি থাকা সত্ত্বেও(যদিও এই সব জমি সবর্ণ সমাজের হস্তগত) সেই সব জমিই অধিগ্রহণের জন্য টার্গেট করা হয় যেখানে SC/ST,OBC ও Minorityরা সংখ্যাধিক। বামফ্রন্টের মনুবাদী রেজিমেন্ট ধরে নিয়েছিল যে মূলনিবাসীরা এই নীতি রূপানের পথে কোন অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে না। বরং বরাবরের মতই প্রভুদের উপর বিশ্বাস রেখে নিজেদের জীবন জীবিকার দায় ছেড়ে দেবে। কিন্তু বাঁধ সাধল সিঙ্গুর,নন্দীগ্রাম ও লালগড়। জল-জঙ্গল-জমি রক্ষার আন্দোলন। এক বগ্গা হয়ে রুখে দাঁড়ানো। রাজনৈতিক পতাকা নামিয়ে রেখে মূলনিবাসীদের সমান্তরাল গণঅভ্যুত্থান। না,শেষ রক্ষা হয়নি। মনুবাদীরা বুঝতে পেরেছিল বামফ্রন্টকে মানুষ আর বিশ্বাস করবেনা। তাই "বিড়াল মারতে হলে প্রথম রাতেই মারো"র আদলে নামিয়ে আনা হয় দমন-পীড়ন-সন্ত্রাস ও বিভাজনের নীতি। মাওবাদের নামে ভাড়াটে খুনিদের আমদানি। পথে ঘাটে মানুষের লাশ। ধর্ষিতা তাপসী মালিকের দগ্ধ দেহ। তসলিমা নাসরিনকে তাড়ানোর নাম করে সাম্প্রদায়ীক দাঙ্গাকে উসকে দেওয়া। এবং সর্বশেষ উদ্দেশ্য হল মমতা ব্যনার্জির মত অস্থির মস্তিস্ক এক শাসককে ক্ষমতাসীন করা যে সাম্প্রদায়িক তাস খুল্লাম খুল্লা খেলতে পারে এবং বিভাজনের প্রক্রিয়াকে স্থায়ী রূপ দিতে পারে। শেষ দেড় বছর বুদ্ধ ভট্টাচার্যেরা দলিত নিধন করে তসলিমাকে তাড়িয়ে মমতা ব্যনার্জিকে দলিত ও মুসলমান প্রেমী হিসেবে প্রজেক্ট করেতে সক্ষম হয়েছিলেন। বুদ্ধবাবুর হাতের শেষ তাসই এখন মমতার ট্রাম কার্ড। যার প্রচ্ছদ মুল্লাবাদ, ভিতরে মনুবাদ। উভয় শক্তি এখন সমান ভাবে ক্রিয়াশীল। টিকি আর দাড়ি সমান ভাবেই সচল। সাম্প্রতি সংঘটিত কিছু ঘটনার পারম্পরা অবসম্ভাবী এই পরিণতির দিকই ইঙ্গিত করছে। গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে হিন্দু সংহতির প্রকাশ্য জনসভা। মুল্লাতন্ত্রের বিরুদ্ধে চরম হুসিয়ারি। ১৯শে ফেব্রুয়ারী জীবনতলায় মিলাদের আসরে হিন্দুদের বিরুদ্ধে জিগির। "পাকিস্তান জিন্দাবাদ"ধ্বনি। কাকতালীয় ভাবে রাত ৩টের সময় গুপ্ত ঘাতকদের হাতে মিলাদের অন্যতম মৌলবি রুহুল কুদ্দুসের মৃত্যু। এবং পরিণতিতে ২০শে ফেব্রুয়ারী ১১০টির ও বেশি দলিত ঘরে অগ্নি সংযোগ,সহস্রাধিক মানুষের ভিটে মাটি ছেড়ে ত্রান শিবিরে আশ্রয় নেওয়া। পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে গাড়ি গাড়ি মৌলবাদীরা এসে নোলিয়াখালিতে তান্ডব করে যাওয়া এবং প্রশাসনকে ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে রাখা। এ সবই একটি ইঙ্গিত বহন করে যে উড়িষ্যা ও আসামের পর এবার পশ্চিমবঙ্গই মৌলবাদী দের টার্গেট। ক্যানিয়ের নোলিয়াখালির এই জিঘাংসা মনুবাদীদের দ্বারা প্রকল্পিত মহাপ্রলয়ের এক খন্ড চিত্র। |
No comments:
Post a Comment