১৫ই আগস্ট : আনোয়ার হোসেন মঞ্জু
[ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ১৯৭২-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত 'দৈনিক ইত্তেফাক'-এর সম্পাদক ছিলেন। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের মাননীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রী। ১৫ই আগস্ট বিপ্লবের পর তিনি দৈনিক ইত্তেফাকে "প্রসঙ্গ: দেশ ও জাতি" শিরোনামে এই উপসম্পাদকীয় রচনা ও প্রকাশ করেন। ]
"... প্রথমেই বলিতে হয় দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের কথা। এই পরিবর্তন (১৫ই আগস্ট) আকস্মিক, তবে অস্বাভাবিক নয়। প্রকৃতির যে নিয়ম, সে নিয়মের বাইরে কেউ যাইতে পারে না। নদীর স্বাভাবিক গতিপথকে যদি রুদ্ধ করিয়া দেওয়া হয়, তবে নদীর জলরাশি অস্বাভাবিক উপায়ে হইলেও উহার গতিপথ সৃষ্টি করিয়া নিবে। ইহাই প্রকৃতিদত্ত নিয়ম। পৃথিবীতে এই নিয়মের ব্যত্যয় কখনো ঘটে নাই, ঘটিতেও পারে না।
বাংলাদেশে মানুষের কল্যাণ ও মঙ্গলের নাম করিয়া যে ব্যবস্থাটি দাঁড় করানো হইতেছিল, আপামর দেশবাসীর মৌলিক অধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতার গোটা ব্যবস্থাটি সেখানে মুষ্টিমেয় দ্বারা কুক্ষিগত করা হইয়াছিল। বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছিল গণ মানুষের নিয়মতান্ত্রিক আত্মপ্রকাশের পথ। এই সর্বগ্রাসী ব্যবস্থার দ্বারা মানুষ নিষ্পেষিত হইতেছিল, ভাঙ্গা বুকের যাতনা ও হতাশা তীব্র হইতে তীব্রতর হইতেছিল। এর যে কোথায় শেষ, কেহ ভাবিয়া পাইতেছিল না। এই অবস্থায় প্রকৃতির নিয়মেই একটা পথ সৃষ্টি হইয়াছে। বলা যায়, মুষ্টিমেয় কিছু লোকের দ্বারা কুক্ষিগত সেই সর্বগ্রাসী ব্যবস্থার ফলেই বর্তমানের রাজনৈতিক পরিবর্তনটি দেশের সর্বাত্মক পরিস্থিতির দু:সহ অবস্থায় অবধারিত হইয়া উঠিয়াছিল।
এই নূতন রাজনৈতিক পরিবর্তনটি সাধিত হইয়াছে প্রবীন রাজনৈতিক নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে, সেনাবাহিনীর দ্বারা। এই পরিবর্তন সাধনে তরুন সামরিক অফিসারদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বলা যায়, দেশের একটা অসম্ভব দুঃসহ অবস্থার বিলোপ ঘটাইয়াছেন তাঁরা এবং জাতির সামনে সৃষ্টি করিয়াছেন চলার উপযোগী পথ ও সুযোগ। এই কাজের জন্য তাঁরা গোটা জাতিরই অভিনন্দন লাভের যোগ্য। গোটা জাতি যে সময় দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য অবস্থায় শুধু নিচের দিকে তলাইয়া যাইতেছিল, সেই সময় তাঁরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়া এই পরিবর্তন সাধন করিয়াছেন। ব্যক্তি পর্যায়ে কাহারো জন্য দুঃখ শোক বা সহানুভূতি প্রকাশের চাইতেও জাতীয় স্বার্থের দিকটা বড় করিয়া দেখার যে আবশ্যকতা, সেই বিবেচনায় এই নতুন রাজনৈতিক পরিবর্তনকে স্বাগত জানাইতে হইবে।
... এই বিশ্বাসও আমাদের আছে যে, বাঙ্গালি জাতি সব পর্যায়ে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নের একটা সুযোগ লাভ করিয়াছে। জাতিকে এখন সংহতি ও একতার দিকে পরিচালিত করিতে হইবে। স্মরণ রাখিতে হইবে এই রূঢ় বাস্তবতা যে, জাতিকে সুপরিকল্পিতভাবে টুকরা টুকরা করার চেষ্টা চলিতেছিল। নব পর্যায়ে দূর করিতে হইবে এই অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলা। অবিশ্বাসের দৃষ্টিকে পরিহার করিয়া সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রাণের সুরকে ঐক্যবদ্ধ করিতে হইবে। দেশের মানুষের মনে স্বস্তি ও শান্তির ভাব ফিরাইয়া আনার যে সূচনা করা হইয়াছে, উহা সফল ও স্থায়ী হউক, এই প্র্ত্যাশাই করিতেছি॥"
তথ্যসূত্র : ফ্যাক্টস এন্ড ডকুমেন্টস : বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড / অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ॥ [ চারুলিপি - জুলাই, ২০১০ । পৃ: ২০১-২০৪ ]
__._,_.___
Pl see my blogs;
Feel free -- and I request you -- to forward this newsletter to your lists and friends!
No comments:
Post a Comment