Total Pageviews

THE HIMALAYAN DISASTER: TRANSNATIONAL DISASTER MANAGEMENT MECHANISM A MUST

We talked with Palash Biswas, an editor for Indian Express in Kolkata today also. He urged that there must a transnational disaster management mechanism to avert such scale disaster in the Himalayas. http://youtu.be/7IzWUpRECJM

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS TALKS AGAINST CASTEIST HEGEMONY IN SOUTH ASIA

THE HIMALAYAN TALK: PALASH BISWAS TALKS AGAINST CASTEIST HEGEMONY IN SOUTH ASIA

Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Wednesday, May 25, 2011

বাবাকে কুপিয়ে, ছেলেকে পুড়িয়ে খুন !এরমধ্যেই ১০জন খুন তৃণমূলের হাতে, তবু ‘হৃদয় দিয়ে’ শৃঙ্খলা রক্ষার নির্দেশ !

http://ganashakti.com/bengali/index.php

বাবাকে কুপিয়ে, ছেলেকে পুড়িয়ে খুন

কংগ্রেসের নৃশংসতা  
বেলডাঙায় কংগ্রেসের তাণ্ডবে খুন পার্টিকর্মী কমরেড মহবুল শেখের স্ত্রী ও পরিবারের লোকজন ভেঙে পড়েছেন কান্নায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর, ২৪শে মে— ছেলেকে ভোজালি দিয়ে কুপিয়ে মারা হলো। ১৮ বছরের তরতাজা কিশোর নাতিকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হলো ঘরে শিকল তুলে। সোমবার রাতে পঁচাত্তর বছরের বৃদ্ধ আমিরুদ্দিন শেখের চোখের সামনে এভাবেই তাঁর ছেলে মহবুল শেখ (৫৫) আর নাতি মোফাসের শেখ ওরফে নটবর শেখকে খুন করলো কংগ্রেসের দুর্বৃত্তবাহিনী। শুধুমাত্র সি পি আই (এম) সমর্থক হওয়ার জন্য গ্রামের এক কৃষক পরিবারের দুইজনকে জীবন দিতে হলো। 

'পরিবর্তনের' উল্লাসে কংগ্রেস কর্মীদের এমনই জান্তব তাণ্ডবের সাক্ষী থাকলো মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থানার কাপাসডাঙা দিঘিরপাড়া গ্রাম। হাঁস, মুরগি, ছাগলসুদ্ধু আমিরুদ্দিন শেখের গোটা বাড়িটাই পুড়িয়ে ছাই করে দিলো কংগ্রেসী দুর্বৃত্তরা। তাঁদের ছোঁড়া বোমার আঘাতে আর আগুনে পুড়ে জখম হলেন আমিরুদ্দিন শেখ, তার স্ত্রী সাহারবানু বিবি, নিহত মকবুল শেখের ৭ বছরের ছেলে সাহজামল শেখ এবং ১২বছরের মেয়ে নাজমা খাতুন। আহতদের মধ্যে আমিরুদ্দিন শেখকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও বাকি তিনজনকেই বেলডাঙা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেছেন মুর্শিদাবাদ জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক নৃপেন চৌধুরী। কংগ্রেসের এই বর্বর হামলার প্রতিবাদে বুধবার বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে ১২ঘণ্টার মুর্শিদাবাদ বন্‌ধও ডাকা হয়েছে। 

বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে মাত্র এই কদিনেই তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেসের হাতে সি পি আই (এম)-র ১০জন নেতা, কর্মী ও সমর্থক খুন হয়ে গেলেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় জিতেন নন্দী, বীরভূমের অজিত লোহার, বর্ধমানের রায়নার পূর্ণিমা ঘড়ুই, দুর্গাপুরের রামপ্রবেশ রায় ও মুন্দাকলা রায়, উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার দহিরুদ্দিন, বীরভূমের মাড়গ্রামের মহম্মদ খোদারাখা, দক্ষিণ ২৪পরগনার বারুইপুরের অমল সমাদ্দারের পর শহীদের তালিকায় যুক্ত হলো মহবুল শেখ এবং মোফাসের শেখের নাম।

কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজ্যে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের কোনো ঘটনাই ঘটছে না বলে সোমবার মহাকরণে সাংবাদিকদের কাছে দাবি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলেও একাধিকবার জোর গলায় ঘোষণা করেছেন তিনি। তৃণমূল কংগ্রেস-কংগ্রেস জোটের লাগামছাড়া সন্ত্রাসে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় যখন সি পি আই (এম)-র একের পর এক নেতা, কর্মী, সমর্থক খুন হচ্ছেন, ঘরছাড়া হচ্ছেন, লুট করা হচ্ছে সাধারণ গ্রামবাসীদের বাড়ি, কেড়ে নেওয়া হচ্ছে চাষের জমি, খেতের ফসল তখন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা ব্যানার্জি এই দাবি কীভাবে করছেন তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা ব্যানার্জি রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখছেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যেভাবে ঢাক বাজানো শুরু হয়েছে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে তার উদ্দেশ্য এবং সততা নিয়েও। 

সোমবার বিকেলে বেলডাঙার কাপাসডাঙা এলাকায় সি পি আই (এম)-র কর্মী সমর্থকদের হুমকি দিয়ে বিজয় মিছিল করে কংগ্রেস। এরপরেই ওই এলাকায় কংগ্রেসীদের তাণ্ডব শুরু হয়। মহবুলকে লক্ষ্য করে হুমকি দিতে থাকে কংগ্রেসীরা। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে সি পি আই (এম)-র স্থানীয় নেতৃত্ব পুলিসকে ঘটনার কথা জানান। কিন্তু সন্ধ্যার সময় একটি গাড়ি নিয়ে টহল দিয়ে পুলিস তার কর্তব্য সারে। এরপরেই কংগ্রেসী দুর্বৃত্তরা ওই এলাকায় প্রবল বোমাবাজি শুরু করে। সেই সময় বারবার পুলিসকে জানানো সত্ত্বেও তারা ঘটনাস্থলে যায়নি। একের পর এক বোমার শব্দে এলাকার মানুষ সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লে সেই সুযোগে কংগ্রেসীরা মহবুল শেখের বাড়ি ঘিরে ফেলে। মহবুল শেখকে ঘরের ভিতর থেকে টেনে বার করে উঠোনে ফেলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে কংগ্রেসীরা। কিশোর মোফাসের বাবাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাঁকেও মারধর করে বাড়ির একটি ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে শিকল আটকে দেওয়া হয়। মহবুলকে খুন করার পর পেট্রোল ঢেলে তাঁদের বাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয় কংগ্রেসীরা। আগুন ধরে যাওয়া ঘরের ভিতর থেকে জীবন ভিক্ষা চেয়ে কিশোর মোফাসের কাকুতি মিনতি করতে থাকলেও হামলাকারীরা ওই ঘরের দরজা খোলেনি। পাড়াপড়শিরা যাতে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে না আসে তার জন্য ক্রমাগত বোমা ছুঁড়তে থাকে তৃণমূলীরা। রাতের দিকে আগুন নিভে যাওয়ার পর পুলিস তিন ঘণ্টার চেষ্টায় ঘরের খাটের তলা থেকে আগুনে ঝলসে দলা পাকিয়ে যাওয়া মোফাসের দেহ উদ্ধার করে। পুলিস অনুমান, বন্ধ ঘরে আগুনের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত খাটের নিচে ঢুকেছিলো কিশোর মোফাসের। কিন্তু তৃণমূল সঙ্গী কংগ্রেসীদের সন্ত্রাসের আগুন তাকে তিল তিল করে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে। 

কৃষক পরিবারের ছেলে মোফাসের দক্ষিণ ভারতে কাজ করতো। মাত্র দিন দুয়েক আগে সেখান থেকে বাড়ি ফিরেছিলো সে। মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেলো আগুনে পোড়া ধ্বংসস্তূপ ঘিরে গ্রামের মানুষের হাহাকারের দৃশ্য। কংগ্রেসীদের এই বর্বর হামলায় ক্ষোভে ফুঁসছেন গ্রামের মানুষ। তাঁরা এই ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে কড়া শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিস সুপার দীপনারায়ণ গোস্বামী। 

এই হত্যাকাণ্ড ও হামলার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদ জেলাজুড়েই বামপন্থী কর্মী-সমর্থকরা ধিক্কার মিছিল করেন। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ সভাও হয়। কংগ্রেসীদের এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে সি পি আই (এম)-র জেলা সম্পাদক নৃপেন চৌধুরী বলেন, বুধবার ১২ঘণ্টার মুর্শিদাবাদ বন্‌ধের মধ্যে দিয়েও সাধারণ মানুষ কংগ্রেসীদের এই বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবেন। কংগ্রেস এবং কংগ্রেসের মদতপুষ্ট দুর্বৃত্তবাহিনী কীভাবে মুর্শিদাবাদ জেলাজুড়ে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে তাও মানুষের কাছে তুলে ধরবে বামপন্থীরা। তিনি আরো বলেন, শুধু বেলডাঙা নয়। জঙ্গীপুরের গিরিয়া, সেকেন্দ্রা, লালঘনে দিয়ার, ইসলামপুর থানার হুরসি লোচনপুর, রানীনগরের চর বাথানপাড়া এলাকা জুড়ে সন্ত্রাস চালাচ্ছে কংগ্রেস। চর বাথানপাড়ায় কংগ্রেসীরা ২০বছরের এক যুবতীকে ধর্ষণ করে খুনও করেছে।

নৃপেন চৌধুরী আরো বলেন, কংগ্রেসীরা তাদের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতী বাহিনীকে সাথে নিয়ে এই এলাকাগুলিতে ধারাবাহিকভাবে তাণ্ডব চালালেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। প্রশাসনের এই নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে মুর্শিদাবাদ জেলায় কংগ্রেসীরা গরিব মানুষের উপর ক্রমাগত আক্রমণ নামিয়ে আনছে। বর্গা আর খাস জমি পাওয়া মানুষের থেকে জমি ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বামপন্থী কর্মীদের জমির ধান, ফসল নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি অত্যাচার চালিয়ে জঙ্গীপুরে লিচুর বাগান থেকে লিচুও পাড়তে দিচ্ছে না কংগ্রেসীরা। এই সমস্ত বিষয় মানুষকে জানানোর জন্য বামপন্থীরা পথে নামবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন নৃপেন চৌধুরী।


মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় ঘরে ফিরেছিলেন, কারো আশ্বাসে
আর কখনও ফিরবেন না ডাক্তারবাবু

অনিল কুণ্ডু

বারুইপুর, ২৪শে মে—কিছুদিন আগে তৃণমূলী সন্ত্রাসে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল বারুইপুরের বেলেগাছি গ্রামের ডাক্তারবাবু বলে পরিচিত কমরেড অমল সমাদ্দারকে।

নতুন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির শান্তি রক্ষার আশ্বাস শুনে তিনি বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন।

কিন্তু রবিবার রাতের অন্ধকারে তৃণমূলীরা তাঁকে ঘর থেকে ডেকে বের করে নৃশংসভাবে পিটিয়ে খুন করেছে। আর কারো আশ্বাসেই কোনোদিন তিনি ফিরে আসবেন না। গ্রাম, পরিবার, সাথীদের ছেড়ে বরাবরের জন্য তিনি চলে গেলেন। মঙ্গলবার বারুইপুরের বেলেগাছি গ্রামের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ নেমে এসে শেষ বিদায় জানালেন কমরেড অমল সমাদ্দারকে। ঘরে ফিরে এসেও একটা মানুষের চিরকালের মত চলে যাওয়া চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের অসারতা। কমরেড সমাদ্দার একা নন, এইভাবেই নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে গত দশদিনে রাজ্যে ১০ জন বামপন্থী কর্মী-সমর্থক খুন হয়ে গিয়েছেন। যদিও মুখ্যমন্ত্রী বলে চলেছেন, 'রাজ্যে শান্তি বজায় আছে।'

বেলেগাছি গ্রামের রামকৃষ্ণ পল্লীর বাসিন্দা অমল সমাদ্দার পেশায় গ্রামীণ চিকিৎসক হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। সি পি আই (এম)-র বেলেগাছি শাখার সদস্য এবং বারুইপুর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য ছিলেন তিনি। রবিবার রাতে তাঁকে ঘর থেকে টেনে বের করে এনে পিটিয়ে খুন করেছে তৃণমূলীরা। আলিপুরে তাঁর মরদেহের ময়নাতদন্তের পরে মরদেহটি সোমবার রাতে রাখা ছিল কলকাতায় পিস হাভেন-এ। মঙ্গলবার সকালে কমরেড অমল সমাদ্দারের মরদেহ নিয়ে আসা হয় বারুইপুরের গ্রামে। তার আগে সকালেই পিস হাভেন থেকে মরদেহ বের করার সময় সেখানে মালা দিয়ে কমরেড সমাদ্দারের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সি পি আই (এম)-র রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু।

মঙ্গলবার সকাল ৯টা। বারুইপুরে সি পি আই (এম) জোনাল কমিটির দপ্তরে নিয়ে আসা হলো নিহত কমরেডের মরদেহ। কলকাতায় পিস হাভেন থেকে সি পি আই (এম) নেতা সঞ্জয় পূততুণ্ডসহ পার্টি নেতৃবৃন্দ, কলকাতা থেকে কমরেড অমল সমাদ্দারের মরদেহ নিয়ে বারুইপুরে এসে পৌঁছান, তখন উপস্থিত ছিলেন পার্টি নেতৃবৃন্দ, কর্মী-সমর্থকরা। সি পি আই (এম) দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী শহীদ কমরেডের মরদেহে রক্ত পতাকা, মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামলী গুপ্ত শ্রদ্ধা জানালেন। পার্টিনেতা অলোক ভট্টাচার্য, হেমেন মজুমদার, মৃণাল চক্রবর্তী, মুক্তি মজুমদারসহ বিভিন্ন গণ-সংগঠনের তরফেও শ্রদ্ধা জানানো হয়। বারুইপুর, সীতাকুণ্ডু, কুলতলা, উত্তরভাগ হয়ে মরদেহ এসে পৌঁছয় বেলেগাছি বাস মো‍‌ড়ে। কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত। শুরু হয় শহীদ কমরেডের মরদেহ নিয়ে শোক মিছিল। আন্তর্জাতিক সঙ্গীত সকলের মুখে। মরদেহ নিয়ে শোকযাত্রার মিছিল এগিয়ে চলেছে বেতবেড়িয়া রেল লাইন পেরিয়ে বেলেগাছির রামকৃষ্ণ পল্লীতে। তখন ঘড়িতে প্রায় ১১টা। ইটের রাস্তার দু'ধারে অগণিত মানুষের ভিড়। নিহত কমরেডের বাসভবনের সামনে যখন মরদেহ এসে পৌঁছয় তখন রামকৃষ্ণ পল্লীর রাস্তায় জনস্রোত। শোকযাত্রার সামনের সারিতে বামপন্থী নেতৃবৃন্দ। মিছিলে এসে পৌঁছন কান্তি গাঙ্গুলি, রাহুল ঘোষ, রুহুল আমিন গাজী সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ শহীদ কমরেড অমল সমাদ্দারের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানালেন।

শ্রদ্ধা জানালেন শহীদের স্ত্রী ভানু সমাদ্দার, তাঁদের দুই কন্যাসহ আত্মীয়পরিজনেরা। বুকফাটা কান্নার শব্দ বেলেগাছির বাতাসে সান্ত্বনা জানাবার ভাষা নেই কারও মুখে। নিহতের অসহায় পরিবার আত্মীয়পরিজন, পার্টি নেতৃবৃন্দ, অগণিত কর্মী-সমর্থকসহ সাধারণ মানুষ—সকলের চোখে জল। স্বজন হারানোর যন্ত্রণা সকলের চোখেমুখে। ঘাতক জল্লাদদের প্রতি তীব্র ঘৃণা জানালো রামকৃষ্ণ পল্লী। 'শহীদ কমরেড অমল সমাদ্দার লাল সেলাম' স্লোগানে গলা মেলালেন সকলেই। শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পরে মরদেহ নিয়ে শোক মিছিল এগিয়ে চললো শেষকৃত্যের জন্য। আকাশে কালো মেঘ। ‍‌ঝির‍‌ঝিরে কয়েক ফোটা বৃষ্টি। শহীদ কমরেডের স্ত্রীর চোখের জল মুছে দিচ্ছেন প্রতিবেশী মহিলারা। খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন সর্বস্তরের মানুষজন।

মঙ্গলবার কমরেড অমল সমাদ্দারের হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে বেলেগাছি অঞ্চলে সি পি আই (এম)-র ডাকা ১২ ঘণ্টা বন্‌ধ সর্বাত্মক সফল হয়েছে। সকাল থেকেই দোকানপাট বন্ধ ছিল। তৃণমূলীদের খুন, হিংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েই সি পি আই (এম)-র ডাকা বন্‌ধকে সর্বাত্মক করেছেন বেলেগাছির সর্বস্তরের মানুষজন।

অস্ত্র উদ্ধারে তৃণমূল
কেন, প্রশ্ন কংগ্রেসের

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ২৪শে মে — রাজ্যজুড়ে অস্ত্র উদ্ধারের নামে তৃণমূল এবং পুলিসের যোগসাজসের কথা তুললো প্রদেশ কংগ্রেসও। মঙ্গলবার কলকাতায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইঞা বলেন, অস্ত্র উদ্ধার করা প্রশাসনেরই কাজ। দেখতে হবে এই কাজের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দল যেন যুক্ত হয়ে না যায়। প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় তথাকথিত অস্ত্র খোঁজার অভিযান চলছে। সব ক্ষেত্রেই এই তল্লাশি চালাচ্ছে তৃণমূল কর্মীরা। পুকুর, ডোবা অথবা মাঠঘাট যেখান থেকেই পাওয়া যাচ্ছে, সবই সি পি আই (এম) দপ্তর থেকে মিলছে বলে প্রচার চালানো হচ্ছে। বাঁকুড়ার কোতুলপুরে এমন ঘটনাও ঘটেছে যে, তৃণমূল কর্মীরা সি পি আই (এম) কার্যালয়ের পাশে পুকুরে অস্ত্র ফেলে পুলিসকে খবর দেয়। পুলিসের একজন অফিসার 'পরিকল্পিত অভিযান' শুরুর আগে সংবাদমাধ্যমকে খবর দেয়। পুকুর থেকে অস্ত্র তুলে পার্টি অফিসের ভিতরে ঢুকিয়ে তার ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করে দেয় সেই পুলিস অফিসারটি। পরে গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় গোটা ষড়যন্ত্রটি ফাঁস হয়ে যায়। এদিন রাজ্যের বিভিন্ন জেলার দলের সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠকের পর মানস ভুঁইঞা বলেন, অস্ত্র উদ্ধারের কথা কংগ্রেস থেকে আমরাই বারবার বলে আসছিলাম। বলেছিলাম এ কাজে যেন দল-রঙ না দেখা হয়। এখন সেই কাজ শুরু হয়েছে। এটা প্রশাসনের কাজ, প্রশাসনকেই করতে হবে। দেখতে হবে যেন এর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দল যুক্ত হয়ে না যায়। ইঙ্গিত তৃণমূলের প্রতি। প্রসঙ্গত, এদিনের বৈঠকে কংগ্রেসের জেলা সভাপতিরাও অস্ত্র উদ্ধারের নামে বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে রীতিমতো সোচ্চার ছিলেন, এমনকি একথাও এসেছে যে, থানায় বসে তৃণমূল নেতারা আগে গোটা পরিকল্পনাটি সাজিয়ে নিচ্ছে, তারপর সেই মতো সংবাদমাধ্যমকে খবর দিয়ে পুলিস অভিযানে নামছে। বিশেষ করে ৫টি জেলা থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে যে, তৃণমূলের হাতে যে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র মজুত আছে সেই অস্ত্রভাণ্ডার এখনও অনেক জায়গায় অটুট। বদলি হয়ে যাওয়া বা শাস্তির ভয়ে পুলিস সেই অস্ত্রভাণ্ডারে হাত দিচ্ছে না।

মানস ভুঁইঞার বক্তব্য, সকলেই শান্তির কথা বলছেন। মুখ্যমন্ত্রীও (মমতা ব্যানার্জির নাম করেননি) বলেছেন শান্তি চাই। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজ্যে হিংসা বেড়েই চলেছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকুক কিন্তু প্রতিহিংসা নয়। শান্তির বাতাবরণ তৈরিতে প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে বলে মনে করে কংগ্রেস। শিলদার ঘটনা নিয়ে ইতোমধ্যেই সি আই ডি তার রিপোর্ট দিয়েছে। এখন না কি আবার সি আই ডি যাবে। আমরা দেখতে চাইছি এবার তারা কী রিপোর্ট দেয়!

এদিন জেলা সভাপতিদের বৈঠকে এদিন মুর্শিদাবাদ এবং জলপাইগুড়ির কোন প্রতিনিধি ছিলেন না। বেলডাঙায় একটি ঘটনার জন্য অধীর চৌধুরী আসতে পারেননি বলে জানান মানস ভুঁইঞা, সভায় মালদহ জেলার সভাপতি আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু) বলেন, কংগ্রেস থেকে যে ২ জন পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন তাঁরা দু'জনেই দক্ষিণবঙ্গ থেকে নির্বাচিত। ফলে বাকি ৫ জন রাষ্ট্রমন্ত্রী পদে যেন উত্তরবঙ্গের প্রতিনিধিত্ব বেশি থাকে। এদিনের সভায় জেলা সভাপতিরা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মানস ভুঁইঞাই যেন আগামী লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত প্রদেশ সভাপতি পদে থেকে যান। তাঁদের এই সিদ্ধান্তের কথা দিল্লিতে এ আই সি সি-কে জানানো হচ্ছে।

অন্যদিকে, কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের যে প্রকল্পগুলি আছে যেমন বিধবাভাতা, বার্ধক্যভাতা, একশো দিনের কাজ ইত্যাদি নিয়ে জেলায় জেলায় প্রচারে নামা হবে। সমাবেশও হবে। বিশেষ করে যে ৪২টি কেন্দ্রে কংগ্রেস জিতেছে তার প্রত্যেকটিতে সভা হবে। ২৯শে জুন কলকাতায় রানী রাসমণি রোডে হবে বিজয় সমাবেশ। বুধবার রাজ্যের সেচ দপ্তরের সচিবকে নিয়ে মানস ভুঁইঞা দিল্লিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির সঙ্গে কথা বলতে।

এরমধ্যেই ১০জন খুন তৃণমূলের হাতে,
তবু 'হৃদয় দিয়ে' শৃঙ্খলা রক্ষার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি

কোষাগার মন্দ নয়, তাই পয়লায় বেতন শিক্ষকদের





কলকাতা, ২৪শে মে — রাজ্যের কোষাগারের অবস্থা মন্দ নয়। তাই রাজ্যের শিক্ষকদের মাইনে মাসের ১তারিখেই দিয়ে দেওয়া সম্ভব বলে মনে করছে রাজ্যের নতুন সরকার। মঙ্গলবার মহাকরণে সেই সিদ্ধান্ত ঘোষণাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। একই সঙ্গে জেলাশাসক, পুলিস সুপার, বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠকে বিগত সরকারের আমলে চালু প্রকল্পগুলির কাজেই এদিন মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ জোর দিয়েছেন। পাশাপাশি পুলিসের পরিকাঠামো উন্নয়নে প্রতিটি জেলা থেকে নতুন প্রস্তাব চেয়ে পাঠিয়েছেন ব্যানার্জি। যেগুলি বাস্তবায়নেও বেশ কয়েক কোটি টাকা লাগবে। এদিন ঐ বৈঠকের প্রসঙ্গে রাজ্যের শিল্প বাণিজ্য মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি জানান, রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা যে কোনো মূল্যে রক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, লাঠি গুলি দিয়ে নয়, হৃদয় দিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। 

প্রসঙ্গত, তাঁরা যখন এই কথা বলছেন, তখন তাঁদেরই দলের কর্মীদের হাতে গত কয়েকদিনে ১০জন বামপন্থী কর্মী খুন হয়েছেন। খোদ কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। তৃণমূল কর্মীরা দখল করেছে অথবা ভেঙেছে অনেকগুলি পার্টি কিংবা ইউনিয়ন অফিস। অবশ্য সেই বিষয়ে প্রশ্ন করার কোনো সুযোগই দেননি পার্থ চ্যাটার্জি। নিজের কথা বলে তিনি কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে চলে যান।

এদিন দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, 'আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি রাজ্যের সব স্কুলের শিক্ষকরা মাসের ১তারিখে মাইনে পাবেন। প্যারা টিচার এবং পার্ট টাইম টিচারদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম চালু হবে। আগামী জুলাই থেকে, সম্ভব হলে জুন থেকেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকরী করবে রাজ্য সরকার।' অর্থাৎ, যে আশঙ্কার কথা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে মমতা ব্যানার্জি প্রচার করেছিলেন সেই টাকার অভাবে মাইনে আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সরকারী কর্মী এবং শিক্ষকরা বেতন পাবেন যথারীতি। রাজ্যের বর্তমান সরকার মাসের ১লা তারিখে সেই বেতন দিয়ে দিতে পারবে। এই বিষয়ে রাজ্যের প্রাক্তন বিদ্যালয় শিক্ষামন্ত্রী কান্তি বিশ্বাস জানিয়েছেন, '১৯৭৭-এ বামফ্রন্টের সরকার গঠিত হওয়ার পরই সরকারী কর্মচারীদের মতো শিক্ষকদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়েছিল। দেশের মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত সেটিই প্রথম। প্রতিমাসের নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে শিক্ষকদের মাইনে দেওয়ার সিদ্ধান্তও কার্যকরী হয়। মাসের ১তারিখে শিক্ষকদের মাইনে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নতুন সরকার ঘোষণা করেছে তাকে স্বাগত।'

রাজ্যের কোষাগারের অবস্থা যে মোটেই সঙিন নয়, তা এদিন মুখ্যমন্ত্রীর একটি বৈঠকের আলোচনা, সিদ্ধান্ত থেকেও স্পষ্ট হয়েছে। এদিন বিকেলে মহাকরণের রোটান্ডায় রাজ্যের প্রতিটি জেলার পুলিস সুপার, জেলাশাসক, গ্রামোন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য কারিগরি, খাদ্য, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ দপ্তরের আধিকারিক এবং মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা ব্যানার্জি। বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ, ডি জি নপরাজিত মুখার্জি, এ ডি জি (আইন শৃঙ্খলা) সুরজিৎ করপুরকায়স্থ হাজির ছিলেন। সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী পুলিস সুপার এবং জেলাশাসকদের বিভিন্ন নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিসের পক্ষ থেকে মূলত থানার অভাব সহ অন্যান্য পরিকাঠামোর ঘাটতির কথা ঐ বৈঠকে বলা হয়েছে। কলকাতা, দুই ২৪পরগনার পুলিসের পক্ষ থেকে ট্রাফিক সমস্যার কথা বলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিটি জেলার পুলিস সুপারদের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য নির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠাতে বলেছেন। বলাবাহুল্য, পুলিস বাহিনীর পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বেশ কয়েকশ' কোটি টাকার প্রস্তাব আসবে বলেই রাজ্য পুলিসের উচ্চপদস্থদের অনুমান। রাজ্য পুলিসের এক উচ্চপদস্থ অফিসার এদিন মহাকরণে জানান, 'মুখ্যমন্ত্রী যে মুডে প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন, তা থেকে আমাদের ধারনা পুলিস বাহিনীর পরিকাঠামো ঢেলে সাজানো হবে।' চমকপ্রদ ঘটনা হলো এদিন রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী মুকুল রায়। সারাদিনই তিনি আজ কাটিয়েছেন মহাকরণে, যেমন গত দু'দিনের মতো কলকাতার মেয়রওছিলেন মহাকরণেই।

আর জি কর হাসপাতাল
থেকে নিখোঁজ চিকিৎসক

নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতা, ২৪শে মে— আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে গেলেন ডাঃ মাসুদ রানা বিশ্বাস। তাঁর বাড়ি নদীয়া জেলার নাকাশিপাড়ায়। কলকাতার এই হাসপাতালেই তিনি পোস্ট ডক্টরেট অর্থাৎ চিকিৎসায় উচ্চতর বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। সহপাঠীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিস মঙ্গলবার তাঁর খোঁজ খবর শুরু করে। তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে কি না সবার মনে সেই সন্দেহই দেখা দিয়েছে। এদিন দুপুরেই তল্লাশি চালানো হয় তাঁর ঘরে। ঘর থেকে তাঁর হাতে লেখা একটি চিঠি পাওয়া যায়। নিজেকে মানসিক অবসাদগ্রস্ত বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন তিনি। এদিক ওদিক চলে যাওয়ারও ইঙ্গিত পাওয়া যায় ওই চিঠিতে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস।

ছেলেকে বেদম মার তৃণমূলের,
হৃদরোগে আক্রান্ত বৃদ্ধার মৃত্যু

নিজস্ব সংবাদদাতা

বারাসত, ২৪শে মে — তৃণমূলীদের নির্মম অত্যাচারের সাক্ষী হয়ে রইলো বারাসতের চক আমিনপুর গ্রাম। বারাসতের ২নং ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে এখনো চলছে তৃণমূলীদের নৃশংস অত্যাচার। সেই আক্রমণের বীভৎসতা সহ্য করতে না পেরে মঙ্গলবার সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন নাসিমন বিবি। তাঁর চোখের সামনে তাঁর ছেলে জিয়ারুলকে বাড়িতে এসে বেধড়ক মারধর করে একদল সশস্ত্র তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী। আমিনপুর গ্রামে ১৭ই মে প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। প্রাক্তন প্রধানের ছেলে জিয়ারুলকে খুন করাই ছিল তৃণমূলীদের লক্ষ্য। মায়ের চোখের সামনে তাঁর ছেলের উপর হিংস্র অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নাসিমন বিবি প্রতিবাদ করতে থাকেন। কিন্তু মায়ের কান্নায় মন ভেজেনি তৃণমূলী জল্লাদদের। বরং বেড়ে যায় অত্যাচারের মাত্রা। এরপরই জিয়ারুলের মা হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তাঁকে বারাসত হাসপাতালে নিয়ে গেলেও পরে স্থানান্তরিত করা হয় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এদিন সকালে সেখানেই তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তৃণমূলী জল্লাদরা থানায় অভিযোগ জানাতেও দেয়নি।

এছাড়া বামফ্রন্ট কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে মধ্যমগ্রাম এলাকায়। নেতাজীনগর পেয়ারাবাগানে বামফ্রন্ট নেতা সনৎ বিশ্বাস এবং দিগবেড়িয়া নদীভাগ মোল্লাপাড়ায় বামফ্রন্ট নেতা আহম্মদ আলিখানকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে তৃণমূলী জল্লাদরা। নাহলে খুন করা হবে বলে শাসিয়ে গেছে। তৃণমূলীরা কয়েকদিন আগে স্থানীয় ২নং ওয়ার্ডে বামফ্রন্ট কর্মী বক্তার আলিকে মারধর করে। সারদাপল্লীতে ডি ওয়াই এফ আই কর্মী সঞ্জীব সেনের নিজের অফিসঘর ভেঙে দেয়। এর বিরুদ্ধে স্থানীয় বহু মানুষ মধ্যমগ্রাম তদন্ত কেন্দ্রে গিয়ে পুলিসের কাছে অভিযোগ করলেও বন্ধ হয়নি অত্যাচার। তৃণমূলী বাহিনী গোটা দেবীগড় অঞ্চল জুড়ে ৯নং রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এদিকে সোমবার মছলন্দপুর সি পি আই (এম) ও ডি ওয়াই এফ আই অফিস জোর করে দখল করে নেয় তৃণমূলীরা। এছাড়াও হাড়োয়া, মিনাখাঁ ও স্বরূপনগর বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন গ্রামে বেছে বেছে বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে তৃণমূলীরা। আমডাঙ্গা বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলীদের ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে গ্রামবাসীদের।

বাঁকুড়ায় 'অস্ত্র খোঁজার' অভিযানে
নেতৃত্ব দিচ্ছে দাগী দুষ্কৃতীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া, ২৪শে মে—১৯৯৫ সালের ১২ই জানুয়ারি কোতুলপুর থানার আশ্বিন কোটা গ্রামের দুই খেতমজুর অলোক কোটাল ও তারাপদ কোটালের হত্যাকারী শেখর সিং ফের কোতুলপুরে এসে দাপিয়ে ‍বেড়াচ্ছে তৃণমূলের ঝাণ্ডা হাতে। তথাকথিত অস্ত্র খোঁজার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। শুধু শেখর সিং-ই নয়, ১৯৯৮-২০০০ কোতুলপুরের বুকে যারা ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস নামিয়ে ‍‌ এনেছিল যাদের নামে একাধিক খুন, লুঠতরাজের মামলা ঝুলছে তারাই এখন গুজব ছড়িয়ে সি পি আই (এম) নেতা- কর্মীদের বাড়িতে চড়াও হয়ে 'অস্ত্র খোঁজার' অভিযানে নেমেছে জয়পুর, কোতুলপুর এলাকায়।

১৯৯৮-২০০০ সময়পর্বে কোতুলপুরের সিহড়, গোপীনাথপুর, জয়রামবাটি, লেগো, রামডিহা এলাকায় সন্ত্রাসের নায়ক ছিল আশিস পাত্র, দেবাশিস পাত্র, খোকন পাঠান, বিশ্বজিৎ সেন, সুজয় বায়েন, লেগোর ‍ অশোক মান্না। এদের বিরুদ্ধে রামপ্রসাদ প্রতিহার, বাবলু দাসকে খুনের অভিযোগসহ একাধিক খুন-জখমের মামলা রয়েছে। ২০০০ সাল থেকে কিছুদিনের জন্য এরা পালিয়েছিলো। পরে তারা ফের এলাকায় আসে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত তারা চুপচাপই ছিল। তারপর থেকে একটু একটু করে স্বমূর্তি ধারণ করতে থাকে। বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন থেকেই কোতুলপুর থানার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আক্রমণ শুরু করে তৃণমূলবাহিনী। শুরু হয় নতুন কায়দায় অস্ত্র খোঁজার নামে হামলা। যেকটি জায়গায় অস্ত্র মিলেছে বলে জানানো হয়েছে, লক্ষ্যণীয়ভাবে সেই সব এলাকা থেকে সি পি আই (এম) কর্মীরা ১৩ই মে থেকেই ঘরছাড়া। পার্টি অফিসগুলিও তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। আর যা অস্ত্র পাওয়া যাচ্ছে দেখা যাচ্ছে তার বেশির ভাগটাই পুকুরপাড়ে পাওয়া যাচ্ছে। এলাকার সাধারণ মানুষের প্রশ্ন পুকুরপাড়ে সকাল‍‌ থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষ কাজ‍ করেন। স্নান, কাপড় কাচা ছাড়াও, নিয়মিত ‍শিশুরা খেলাধুলা করে, গোরুর জন্য ঘাসকাটা হয়, সারাদিন মানুষ কিছু দেখতে পাচ্ছেন না। ভোরের আলো ‍ফোটার আগেই তৃণমূলীরা সেই পাড়ে দাঁড়িয়ে কোথায় অস্ত্র আছে, তা দেখিয়ে দিচ্ছে! আবার যারা অস্ত্র দেখাতে আসছে, পুলিসকে খবর দিচ্ছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বহিরাগত। অস্ত্র কোথায়, বহিরাগতরাই যেন অন্যদের থেকে বেশি জানে। যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা চলছে তারাই থাকছে সামনের সারিতে।

পুকুরপাড় থেকে অস্ত্র তুলে নিয়ে এসে ৭-১০ দিন ধরে বন্ধ থাকা সি পি আই (এম) অফিসের সামনে তা জড়ো করে ছবি তোলা হচ্ছে। পুলিস পৌঁছানোর আগেই অস্ত্র উদ্ধারের ঠিক নির্দিষ্ট জায়গাতেই আলোকচিত্রীরা পৌঁছে যাচ্ছে। নাটকের মতো পরপর ঘটছে এইসব। এসব নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন মানুষজন। সাধারণ মানুষ আতঙ্কের মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন কোতুলপুরের এই এলাকাগুলিতে।

এই আতঙ্কের মধ্যেও প্রকৃত তথ্য জানিয়ে নাম গোপন করে এলাকায় মানুষজন পুলিসে খবর দিচ্ছেন। কোতুলপুরের চাতরা গ্রামের ঘটনাই তা প্রমাণ করে। পুকুর থেকে তোলা পাইপগান কী করে সি পি আই (এম) কার্যালয়ের সামনে হাজির করা হলো পুলিসের উচ্চকর্তারা প্রশ্ন করলে কোতুলপুরের বিডিও এবং থানার মেজবাবু নীরব থাকে।

মঙ্গলবার দেশজুড়ে অস্ত্র পাওয়া গেছে বলে পুলিসকে ডেকে নিয়ে আসে তৃণমূলবাহিনী। দেখা যায়, কয়েকটি বোমা পড়ে আছে তৃণমূল কংগ্রেসেরই দেশড়া কার্যালয়ের পূর্বদিকের মাঠে। সেগুলি উদ্ধার করে বলা হলো সি পি আই (এম) নেতার বাড়ি থেকে অস্ত্র পাওয়া গেছে। যেখানে অস্ত্র পাওয়া যাচ্ছে না সেখানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে হয় আত্মসমর্পণ ক‍‌রো, না হলে ঠিকানা হবে হাসপাতাল। মানুষ প্রতিবাদ শুরু করেছেন। যে হারে অত্যাচার বাড়ানো হচ্ছে তাতে শঙ্কিত।

রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে
বাস্তবের মিল নেই, বললেন বিমান বসু

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ২৪শে মে— মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি রাজ্যের শান্তি শৃঙ্খলা নিয়ে যা বলছেন বাস্তবের সঙ্গে তার কোনো মিলই নেই বলে মন্তব্য করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী বলছেন রাজ্যে শান্তি বজায় আছে, অথচ রোজই খুন হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে। দুটো একই সঙ্গে কী করে ঠিক হয়! বসু দাবি করেছেন, রাজ্যের শান্তি ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার দায় সরকার ও প্রশাসনের। তাদেরকেই এই সব হামলা ও আক্রমণ বন্ধ করতে হবে। 

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বারুইপুর বেলগাছির সি পি আই (এম) কর্মী জনপ্রিয় গ্রামীণ চিকিৎসক কমরেড অমল সমাদ্দার (৫৪) খুন হয়েছেন রবিবার রাতে। তাঁকে শেষ বিদায় জানাতে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটায় কলকাতায় পিস হাভেনে যান বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান তথা সি পি আই (এম) রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। এখানে কমরেড অমল সমাদ্দারের মরদেহে মালা দিয়ে বিমান বসু প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন সব ঠিক আছে। আর প্রতিদিনই শবদেহের মিছিল বাড়ছে। এই দুটো বিষয় তো একই সঙ্গে ঠিক নয়! রাজ্যে একটা সরকার বদল হয়েছে। কিন্তু সরকার বদল হলেও রাজ্য তথা দেশের সংবিধান তো বদলে যায়নি। সেই সংবিধান মোতাবেক রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা, গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষা, মানুষের নিরাপত্তা এসব দেখার দায় প্রশাসনের। প্রশাসনকে সেই বিষয়গুলির প্রতি সঠিকভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। আর সরকারে রয়েছে যে দল তাদের পক্ষ থেকে হিংসার পথে যেসব আক্রমণ ও হামলাগুলো হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। তাহলেই এই মৃত্যু মিছিল, শবযাত্রা বন্ধ হয়। 

উল্লেখ্য, গত ২৩শে মে রবিবার রাতে বারুইপুরের বেলগাছি অঞ্চলের রামকৃষ্ণপল্লী গ্রামের বাড়ি থেকে কমরেড অমল সমাদ্দারকে টেনে বের করে এনে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে তৃণমূলীরা। এরপর সোমবার দুপুরে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল থেকে কমরেড অমল সমাদ্দারের মরদেহ আলিপুরে পাঠানো হয় ময়না তদন্তের জন্য। ময়না তদন্তের পর মরদেহ ঐ রাতে রাখা ছিল কলকাতায় সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার সংলগ্ন পিস হাভেনে। সেখান থেকে শহীদ কমরেড অমল সমাদ্দারের মরদেহ নিয়ে পার্টি নেতৃবৃন্দ সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ বারুইপুরের পথে রওনা দেন। তার আগে মরদেহে মালা দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান বিমান বসু, পার্টির দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঞ্জয় পূততুণ্ড, কলকাতা জেলা কমিটির পক্ষে মহম্মদ নিজামুদ্দিন, বাবুন ঘোষ, শহীদ কমরেডের জামাতা সুশান্ত ঘরামি প্রমুখ। মঙ্গলবার সি পি আই (এম) র পক্ষে এই হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বেলগাছি অঞ্চলে সকাল ৬টা থেকে বারো ঘন্টার বন‌্ধ পালন করা হয়েছে।

পার্টি অফিস দখলের উসকানি
এবার তৃণমূলের মুখপত্রেই

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ২৪শে মে — রাজ্যে তৃণমূলের সরকার গঠনের পর পরিবর্তনের জমানায় জেলায় জেলায় সি পি আই (এম)-সহ ছাত্র-যুব-ট্রেড ইউনিয়নগুলির কার্যালয়ে তৃণমূলের সশস্ত্র হামলা চলছেই। কোথাও ভাঙচুর, দখলদারিও হয়ে গিয়েছে। এবার সেই কাজ করার জন্য তৃণমূলের খোদ শীর্ষস্থান থেকেই প্রকাশ্যে নির্দেশ দেওয়া হলো তৃণমূলী কর্মীদের কাছে।

তৃণমূলের মুখপত্রে (২০শে মে '১১ সংখ্যা) সম্পাদকীয় পাতায় পরিশীলিত কায়দায় সি পি আই (এম)-র কার্যালয় দখলের জন্য যে উসকানি দেওয়া হয়েছে, তার বয়ান এইরকম, ''নিশ্চিত করুন — যেন জেলায় জেলায় প্রাসাদোপম পার্টি অফিসগুলিকে জনগণের কল্যাণব্রতে ব্যবহার করা যায়।'' তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির অনুমতি ছাড়া এমন নির্দেশ যে ছাপা হতে পারে না দলের মুখপত্রে, তা বলাইবাহুল্য। একই লেখাতে তা মনে করিয়ে দিয়ে তৃণমূলের মুখপত্রে বলা হয়েছে, ''যেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ সর্বস্তরে অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়।'' বোঝা যাচ্ছে, তৃণমূলীরা সি পি আই (এম)-র কার্যালয়ে হামলার যে লাগাতার কর্মসূচী শুরু করেছে ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর, এবার সেই হামলাকে নিন্দা করা তো দূরের কথা, তাকে বৈধতাই দেওয়া হচ্ছে তৃণমূলের রাজ্যস্তর থেকেই এবং একাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবারও বাঁকুড়াসহ বিভিন্ন জেলায় সি পি আই (এম)-র কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে তৃণমূল। কোথাও কংগ্রেস, কোথাও তৃণমূল দখল করছে ট্রেড ইউনিয়ন কার্যালয়, তালা ঝুলিয়ে দিচ্ছে। লালঝাণ্ডা নামিয়ে তেরঙ্গা দলীয় ঝাণ্ডা তুলে দিচ্ছে। এমনকি ‍‌কোথাও কোথাও সি পি আই (এম)-র কার্যালয় দখল করে সবুজ রঙ করে দেওয়া হচ্ছে। লাল শহীদবেদী সবুজ রঙ করে দলীয় শহীদবেদী বানাচ্ছে তৃণমূল। ভোটের ফল প্রকাশের পর ১১ দিনে ১০ জন বামপন্থী কর্মীও খুন হয়ে গিয়েছেন। এসব কাজকেই যেন স্বীকৃতি দিয়ে তৃণমূলের মুখপত্রে ওই লেখায় বরং একাজে উৎসাহ দিতে লেখা হয়েছে, ''নির্বাচনে জয় গন্তব্যে নয়, পথিমধ্যে একটা স্টেশনে পৌঁছানো। সেকথা যেন আমরা কেউ ভুলে না যাই।'' বলা হয়েছে, চরম বলে ধর্মে কিছু যেন না থাকে।

ঘটনা হলো, তৃণমূলী ইশ্‌তেহারে এর আগে ১৯৯৮-৯৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও লিখিতভাবে সি পি আই (এম) অফিস দখল, গণশক্তি ভবন দখলের কথা বলে 'হাসপাতাল' বানাবার ঘোষণা করা হয়েছিল। গত বছর পৌর নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের পর তৃণমূলের সঙ্গী একটি দৈনিক পত্রিকায় জুন মাসে কয়েকদিন ধরে সি পি আই (এম)-র কার্যালয় নিয়ে প্ররোচনামূলক খবর লেখা হয়েছিল। এবার বিধানসভায় জয়ের পর হামলার সঙ্গেই তৃণমূলের মুখপত্রেও সি পি আই (এম)-র কার্যালয় দখলের উসকানিকে বৈধতা দেওয়া হলো।

অস্ত্র খোঁজার নামে হামলা
চালাচ্ছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর, ২৪শে মে— নাশকতায় যুক্ত, অস্ত্র চালানোয় পারদর্শী তৃণমূলী দুষ্কৃতীরাই এখন সরাসরি 'অস্ত্র তল্লাশি' অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছে। পুলিস তৃণমূলী বাহিনীর সহযোগী হিসাবেই এই অভিযানে অংশ নিচ্ছে। কী অস্ত্র রয়েছে, কোথায় অস্ত্র রয়েছে, কবে সেই অস্ত্র উদ্ধার অভিযান করতে হবে— সবই ঠিক হচ্ছে তৃণমূল নেতাদের ইচ্ছায়। এমনকি একই অস্ত্র তিন কিলোমিটার দূরত্বে দুটি জায়গা থেকে দুদিন অন্তর উদ্ধার হয়েছে— এ ঘটনারও সাক্ষী থাকছেন গ্রামবাসীরা। 

তৃণমূলের নেতৃত্বে এই অস্ত্র তল্লাশির নাটক আরো একবার বেআব্রু হলো সোমবার রাতে শালবনীতে। তৃণমূলের জেলা নেত্রী উত্তরা সিং, স্থানীয় তৃণমূল নেতা একাধিক হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত সুদীপ সিংহ, গণেশ মাহাতোর নেতৃত্বে সোমবার রাতে সি পি আই (এম) শালবনী জোনাল কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। যদিও তৃণমূলের দাবি পার্টি অফিসে অস্ত্র আছে কিনা, তা দেখতেই যাওয়া হয়েছিলো। সোমবার সন্ধ্যা থেকেই তৃণমূলীরা জড়ো হতে থাকে শালবনীতে পার্টির জোনাল কার্যালয় তুষার ভবনের সামনে। মণ্ডল কুপি, পিড়াকাটা, ভীমপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সশস্ত্র তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা জড়ো হয়েছিলো। জোর করে পার্টি অফিসে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়ে নিজেরাই অস্ত্র রেখে সংবাদমাধ্যমেকে দিয়ে ছবি তোলানোর উদ্দেশ্যেই এই হামলা চালানো হয়। যদিও সেসময় পার্টি অফিসের ভিতরে থাকা কর্মীদের বাধায় প্রথমে তৃণমূলীরা ভিতরে ঢুকতে পারেনি। বাইরে থেকেই নির্বিচারে ইট, পাথর ছুঁড়তে থাকে। এতে জখম হন তিনজন পার্টি কর্মী।

প্রায় টানা আধ ঘণ্টা ধরে তৃণমূলীরা হামলা চালায়। তবুও ভিতরে ঢুকতে না পেরে এরপর গোটা এলাকায় গুজব ছড়িয়ে তৃণমূলীরা পুলিসকে খবর দেয় সি পি আই (এম) অফিসে অস্ত্র রয়েছে, তল্লাশি চালাতে হবে। তৃণমূলী হামলার সময় পুলিস না এলেও তৃণমূলের দাবি মেনে এরপর সঙ্গে সঙ্গেই চলে আসে বিশাল পুলিস বাহিনী। প্রশাসনিক কোন অনুমতি ছাড়াই তল্লাশি চালাতে পার্টি অফিসের ভিতরে ঢোকে পুলিস। তৃণমূলও তখন দাবি জানাতে থাকে 'শুধু পুলিস গেলে হবে না, আমরা তল্লাশি চালাবো'। রাজি হয় পুলিস। এরপর পুলিস-তৃণমূল যৌথভাবে তল্লাশি চালানো শুরু করে পার্টি অফিসে, নেতৃত্বে তৃণমূল নেত্রী চন্দ্রকোনা রোডের বাসিন্দা তৃণমূল নেত্রী উত্তরা সিং। দীর্ঘক্ষণ তল্লাশি চালালেও মার্কসীয় সাহিত্যের বই, পার্টির প্রচার পুস্তিকা ছাড়া মেলেনি কিছুই। এরপরে সি পি আই (এম)-র তরফে দাবি করা হয় সিজার লিস্ট লিখতে হবে এবং তাতে তল্লাশিতে অংশ নেওয়া সকলেই স্বাক্ষর করতে হবে। এতেই বেঁকে বসে তৃণমূলীরা। তৃণমূলের তরফে সিজার লিস্টে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করা হয়। যদিও পরবর্তীতে উত্তরা সিং বাদে বাকি দুই তৃণমূল নেতা সিজার লিস্টে সই করে। তৃণমূলীদের এই হামলার প্রতিবাদে রাতেই হাজারো মানুষ শালবনীতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। 

এই ঘটনার পরে ফের উঠছে প্রশ্ন, কীভাবে দিনের পর দিন পুলিসকে নিষ্ক্রিয় রেখে তৃণমূলের তরফে অস্ত্র তল্লাশির অভিযান চালানো হচ্ছে? অস্ত্র তল্লাশির নামে একের পর এক পার্টি অফিসে পুলিসের সামনেই কীভাবে হামলা চালাচ্ছে তৃণমূল ? এমনকি এদিনই মমতা ব্যানার্জির সরকারের ক্যাবিনেট মন্ত্রী ও প্রদেশ কংগ্রসে সভাপতি মানস ভুঁইঞা সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, 'প্রশাসনের অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান চালানোর সময় দেখতে হবে যাতে অন্য কোন দল এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে না পড়ে, অস্ত্র উদ্ধার করতে গেলে প্রশাসনকেই করতে হবে। সঙ্গে অন্যরা থাকবে কেন?' গত ১১দিনে রাজ্যে ১০জন বামপন্থী কর্মী, সমর্থক খুন হয়ে যাওয়ার পরেও মুখ্যমন্ত্রী যখন প্রকাশ্যেই বলেন 'রাজ্যে কোন রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে না, শান্তি বজায় রাখার জন্য মানুষকে ধন্যবাদ', তখন যে তলার স্তরের তৃণমূল কর্মীরা সি পি আই (এম) বিরোধী হিংসায় নতুন করে উৎসাহ পাচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। 

সোমবার রাতে শালবনীর ঘটনার পরে ফের মঙ্গলবার দাঁতনে তৃণমূলীদের আরো এক দফা অস্ত্র খোঁজার নাটক চলে। এবার আর পার্টি অফিস নয়, সরাসরি রসুলপুরের পার্টির শাখা সম্পাদক হৃষীকেশ দে'র বাড়িতে চড়াও হয় তৃণমূলীরা। নিজেরাই হৃষীকেশ দে'র বাড়ির সামনে পুকুরে দুটি পুরানো মাস্কেট ফেলে রাখে আগের রাতে। এরপর তৃণমূলীরাই এদিন পুলিসকে খবর দিয়ে মাস্টেক উদ্ধারের নাটক মঞ্চস্থ করে। পুকুরের জলের নিচে কোথায় মাস্কেট রাখা আছে তা একবারেই বলে দেয় তৃণমূলীরা। এরপর পুলিস এই অভিযোগে পার্টিনেতা হৃষীকেশ দে-সহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারও করে। 

এদিকে গোটা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাজুড়েই তৃণমূলী সন্ত্রাস অব্যাহত। সোমবার রাতে পার্টির জেলা কমিটির সদস্য কানাই রায়ের উপর তৃণমূলীরা হামলা চালায়। কানাই রায়ের বাড়ি দাঁতনের পলাশী গ্রামে। গ্রামেই পার্টি অফিসে তখন চলছিলো পার্টিকর্মীদের সভা। আচমকাই সশস্ত্র তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা হামলা চালায়। কানাই রায়কে পার্টি অফিস থেকে মারতে মারতে তুলে নিয়ে যায় বালিপুরে। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক পরে পুলিস গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে।

ইতোমধ্যে গোটা জেলার প্রায় সাড়ে তিন হাজার বামপন্থী কর্মী, সমর্থক ঘরছাড়া হয়েছেন। কয়েকশো পার্টি অফিসে হামলা চালানো হয়েছে। একাধিক পার্টি অফিসে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে দখল করে তৃণমূলী পতাকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শেখ ইজরায়েল, পার্টির জেলা কমিটির সদস্য বাদল রানার উপরেও হামলা চালানো হয়েছে। এদিন নয়াগ্রাম ব্লকের মলম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ছোট ঝরিয়া গ্রামে পার্টিনেতা স্বদেশ কুইল্যা, সুব্রত কুইল্যা এবং গৌর কুইল্যাকে বেধড়ক মারধর করে তৃণমূলী বাহিনী। বাখরাবাদে তৃণমূলী বিজয় মিছিল থেকে হামলা চালানো হয় পার্টি অফিসেও। সদর ব্লকের চাঁদরাতেও একাধিক পার্টিকর্মীর ওপর হামলা চালানো হয়। এর সঙ্গেই চলছে সি পি আই (এম) কর্মী, সমর্থকদের কাছ থেকে দেদার জরিমান আদায়।


http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy

হস্তক্ষেপ হলে আমায় জানান

দলদাস প্রশাসন নয়, স্পষ্ট বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে পর পর দু'টি কাজ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনের কাজে হস্তক্ষেপ না-করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন নিজের দলের বিধায়কদের। পাশাপাশি নিজেদের হাতে আইন তুলে না-নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন সাধারণ মানুষকে। আর মঙ্গলবার বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকে করে বার্তা পৌঁছে দিলেন যে, তিনি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ভাবে প্রশাসনকে কাজ করতে দিতে চান।

এ দিন মহাকরণে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে সাড়ে তিন ঘণ্টা বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি বলেন, "দলের নিচুতলার কোনও নেতাও যদি কাজে হস্তক্ষেপ করেন, তা হলে আপনারা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।" বামফ্রন্ট আমলে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রেই পুরোপুরি শাসক দলের নির্দেশে কাজ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে বার বার। কিন্তু প্রশাসনকে 'দলদাস'-এর ভূমিকায় যে আর তিনি দেখতে চান না, তা এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন নতুন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক রং না-দেখার নির্দেশে যথেষ্ট ভরসা পেয়েছেন জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। বৈঠকের পরে অনেকে সে কথা কবুলও করেছেন।

এ দিন পুলিশ সুপারদের কী বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী? তাঁর পরামর্শ, "প্রশাসন চালাতে রাজনৈতিক রং দেখার দরকার নেই। যেটা যথার্থ মনে হবে, করতে হবে। যদি মনে হয় কোনও তথ্য চটজলদি জানাতে হবে, সরাসরি আমার অফিসে যোগাযোগ করবেন।" তিনি আরও বলেন, "তদন্ত দ্রুত শেষ করতে আরও সক্রিয় হতে হবে। সুবিচারের আশা নিয়েই মানুষ পুলিশের কাছে যায়। সেই চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।" কলকাতার পুলিশ কমিশনার ও রাজ্য পুলিশের ডিজি-র উদ্দেশে মমতার স্পষ্ট নির্দেশ, যে কোনও মূল্যে যান চলাচল সচল রাখতে হবে। সেই লক্ষ্য পূরণে পুলিশকর্তারা সরকারের কাছে কী আশা করেন, তা লিখিত ভাবে জানাতে বলেন সকলকে।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশিকা
রাজনৈতিক র দেখবেন না 
দলীয় হস্তক্ষেপ হলেই নালিশ

উন্নয়ন নিয়ে 'স্ট্যাটাস পেপার'

অব্যবহৃত জমির তালিকা

গড়া হবে ল্যাণ্ড-ব্যাঙ্ক 
চা-বাগানের জন্য পৃথক 'সেল' 
১০০ দিনের কাজের পরিধি বৃদ্ধি
এসসি-এসটি-ওবিসি শংসাপত্র প্রদান

মহাকরণের রোটাণ্ডায় দুপুর তিনটেয় বৈঠক শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও কয়েক জন মন্ত্রী বৈঠকে ছিলেন। এ ছাড়া রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং ডিজি আগাগোড়া উপস্থিত থেকে আলোচনা শুনেছেন, প্রয়োজনীয় 'নোট' নিয়েছেন। বৈঠকে ছিলেন বিভিন্ন দফতরের সচিবরাও। মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক কর্তাদের বলেন, "আপনাদের যাঁর যে বিষয়টি দেখার, তা দেখবেন। আইনমাফিক যা করার, তা করবেন।" দীর্ঘ আলোচনা অনেকটাই কথোপকথনের ভঙ্গিতে হয়েছে। কখনও মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন। কখনও আবার বাধ্য ছাত্রীর মতো জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কাছ থেকে নানা অভাব-অভিযোগের কথা শুনেছেন।

বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি। সরকারের তরফে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আইনশৃঙ্খলা ও উন্নয়ন নিয়ে প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে 'স্ট্যাটাস পেপার' তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জঙ্গলমহলের হতদরিদ্র মানুষদের কাছে দ্রুত পানীয় জল, চাল ও চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা নিয়মিত খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।"

গোটা রাজ্যেই বিপিএল কার্ড এবং ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প নিয়ে বহু অভিযোগ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এই সব কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির কাজ ভাল ভাবে করতে হবে। তার আরও ব্যাপ্তি ঘটাতে হবে। পার্থবাবু জানান, সরকারের বিভিন্ন দফতরের হাতে জমি রয়েছে। সেই জমির পরিমাণ কত, কত জমি অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে— সে ব্যাপারে একটি রিপোর্ট জরুরি ভিত্তিতে তৈরি করতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই অব্যবহৃত জমি নিয়েই 'ল্যাণ্ড ব্যাঙ্ক' তৈরি করা হবে।

সরকারি কর্মীদের বিভিন্ন আর্থিক সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে বাম সরকার 'নিষেধাজ্ঞা' জারি করেছিল। পার্থবাবু জানান, এর মধ্যে যেগুলো জরুরি, সেগুলোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বলা হয়েছে অর্থমন্ত্রীকে। তাঁর কথায়, "রাজকোষের অবস্থা দেখে নিয়ে নিষেধাজ্ঞা যতটা সম্ভব মুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।" কোন কোন আর্থিক সুবিধা বিবেচনা করা হবে, তা জানাননি শিল্পমন্ত্রী। তবে প্রশাসন সূত্রে খবর, অবসরকালীন সুবিধার কথাই মূলত ভাবা হচ্ছে।

এ দিন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তফসিলি জাতি-উপজাতি এবং ওবিসি সার্টিফিকেট বিলি করতে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। চা-বাগান ও চা-শিল্পের জন্য পৃথক একটি 'সেল' তৈরি করতে বলা হয়েছে মুখ্যসচিবকে। চা-শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার দিকে নজর দিতেই সেল তৈরির প্রস্তাব বলে জানান পার্থবাবু।

এ দিনের বৈঠকে পুলিশ সুপারদের কেউ গাড়ির অভাব, কেউ ব্যারাকের দীর্ণ অবস্থা, কেউ আবার জেলার সামগ্রিক পুলিশি পরিকাঠামোয় খামতির দিকগুলো তুলে ধরেন। একাধিক এসপি জানান, জেলার পুলিশ হাসপাতালগুলির অবস্থা খুবই করুণ। চিকিৎসার পরিকাঠামো তো নেই-ই, নেই ওষুধ, নার্স, এমনকী, ডাক্তারও। স্বাস্থ্য দফতরকে বারবার বলেও ডাক্তার মেলে না। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বলেন, "রেল কিংবা সেনা বিভাগ যেমন নিজেরাই ডাক্তার নিয়োগ করে, এ ক্ষেত্রে পুলিশও ডাক্তার নিয়োগ করবে। স্বাস্থ্য দফতরের উপরে নির্ভর করার দরকার নেই।"

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, পুলিশকে উন্নয়নে অংশ নিতে হবে।

এসপি-রা যদি মনে করেন অনুন্নয়নের কারণে কোথাও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, সঙ্গে সঙ্গে জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। জেলা প্রশাসনের দুই সর্বোচ্চ কর্তার উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে। না হলে উন্নয়ন ধাক্কা খাবে। মমতা বলেন, "নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে ভাবে কাজ হয়েছে, সেই জের-ই বজায় রাখতে হবে। তা হলে কম সময়ে অনেক বেশি কাজ পাওয়া যাবে। মানুষও পুলিশি নিরপেক্ষতার সুফল পাবে।"

এ দিনের বৈঠকে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরে এক জন এডিজি স্তরের আইপিএস অফিসার রাখার প্রস্তাব ওঠে। বলা হয়, সেটা হলে পুলিশ ও প্রশাসনের মধ্যে বোঝাপড়া অনেক জোরদার হবে। মুখ্যমন্ত্রী প্রস্তাবটি লিখে নিতে বলেন মুখ্যসচিবকে।

মাস পয়লায় বেতন সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতেও, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলির শিক্ষকদের মতো সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলির শিক্ষকেরাও এ বার থেকে মাস ফুরোলেই বেতন পাবেন। মঙ্গলবার মহাকরণে এ কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তিনি বলেন, "জুন মাস থেকেই রাজ্যের সব স্কুলের শিক্ষককে মাসের ১ তারিখে বেতন দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কোনও কারণে সম্ভব না হলে জুলাই থেকে তা চালু হবে।" সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলির শিক্ষকের পাশাপাশি স্কুলের পার্শ্বশিক্ষক ও আংশিক সময়ের শিক্ষকরাও এই সুবিধা পাবেন।

বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী রাজ্যে সরকারি স্কুলশিক্ষকের সংখ্যা ১৪০০। তাঁরা মাসের শেষ দিনেই বেতন পেয়ে যান। কিন্তু সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ স্কুলশিক্ষক ও প্রায় এক লক্ষ অশিক্ষক কর্মচারীর বেতন ও মহার্ঘ ভাতা পেতে মাসের অর্ধেক গড়িয়ে যায়। সরকারি স্কুল শিক্ষকদের মতো সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষকদেরও যাতে মাস পয়লায় বেতন দেওয়া হয়, সে জন্য আগের বামফ্রন্ট সরকারের কাছে আবেদন জানায় শিক্ষক সংগঠনগুলি। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি।

দেরি করে বেতন পাওয়ার ফলে শিক্ষকদের যে অসুবিধায় পড়তে হয়, তা স্বীকার করে এ দিন মমতা বলেন, "অর্থ দফতরের সঙ্গে কথা বলে মাসের ১ তারিখেই তাঁদের বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্কুলশিক্ষা দফতরকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।" প্রসঙ্গত, ভোটপ্রচারে তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যের কোষাগারকে দেউলিয়া করে দিয়েছে। সেই অবস্থায় এত তাড়াতাড়ি কী ভাবে স্কুলশিক্ষকদের মাস পয়লা বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলা সম্ভব হল, তার ব্যাখ্যা মুখ্যমন্ত্রী দেননি। তবে অর্থ দফতর থেকে জানানো হয়, টাকার ব্যবস্থা তারা করে ফেলেছে।

স্কুলশিক্ষকদের মাস পয়লায় বেতন দেওয়ার পথে যেটুকু জট রয়েছে তা ছাড়ানোর জন্য আজ, বুধবার স্কুলশিক্ষা দফতরের সচিব বিক্রম সেন ও অধিকর্তা দিব্যেন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন অর্থসচিব চন্দ্রমোহন বাচাওয়াত। বৈঠকে হাজির থাকবেন স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইণ্ডিয়ার কর্তারাও। এর পরে বিষয়টি নিয়ে আর কোনও জটিলতা থাকবে না বলে আশা করেছে অর্থ দফতর।

নতুন সরকার যা সাত দিনে পারল, সেই কাজ বামফ্রন্ট সরকার কেন করতে পারেনি তার ব্যাখ্যা এ দিন দেননি রাজ্যের সদ্য প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তও। তিনি বলেন, "আমি পুরোটা জেনে নিয়ে কিছু দিন পরে এ ব্যাপারে যা বলার বলব।"

মাস পয়লায় বেতনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে শিক্ষক সংগঠনগুলি। তাদের অনেকেই আরও আগে এই সিদ্ধান্ত না হওয়ার জন্য বামফ্রন্ট সরকারকে দায়ী করেছে। যেমন, প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নীহারেন্দু চৌধুরী বলেন, "বহু দিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আগের সরকারের সদিচ্ছার অভাব ছিল। সদিচ্ছার জন্যই নতুন সরকার এক সপ্তাহের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে।" একই বক্তব্য মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "দীর্ঘ দিনই মাস পয়লায় বেতন দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নতুন সরকার দেখিয়ে দিল, আগের সরকার সদিচ্ছার অভাবে এই কাজটা করেনি।"

নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক উৎপল রায় আবার বলেন, "শুনেছিলাম আগের সরকার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন দেওয়ার টাকা রেখে যায়নি। উদ্বেগে ছিলাম। কিন্তু এত দ্রুত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হল দেখে বুঝতে পারছি, শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ টাকাটা রেখে গিয়েছিল আগের সরকার। উদ্বেগ কাটল।"

বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কার্তিক সাহা বলেন, "মাসের ১৫-১৬ তারিখ, এমনকী দু'মাস কেটে যাওয়ার পরেও মাইনে পাওয়ার নজির রয়েছে। আশা করব বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবে রূপায়িত হবে।" সরকারের সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়েছে সরকারি স্কুলশিক্ষক সমিতিও।

মমতার মুখ্যমন্ত্রিত্ব চেয়েছেন
মানুষই, ব্যাখ্যা সিপিআইয়ের

নিজস্ব সংবাদবাদা • নয়াদিল্লি

সিপিএম যাই বলুক, তৃণমূল কংগ্রেস শুধু নেতিবাচক ভোটে পশ্চিমবঙ্গে সরকার দখল করেছে বলে মনে করে না সিপিআই। তাদের মতে, রাজ্যের একটা বড় সংখ্যক মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চেয়েই ভোট দিয়েছেন। আপাতত সঙ্ঘাতে না গিয়ে রাজ্য সরকারের কাজকর্মের উপরে নজর রেখেই চলতে চায় বামফ্রন্টের এই মেজো শরিক।

পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে হারের কারণ খুঁজতে আজ থেকে দিল্লিতে সিপিআইয়ের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক বসেছে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের তরফে রিপোর্ট দিয়েছেন সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার। রাজ্য নেতৃত্ব মনে করছে, শুধুই বাম-বিরোধী ভোট পেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনে জিতে এসেছেন, এমনটা ভাবা ভুল। বামেদের বিরোধিতা করার পাশাপাশি তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে দেখতে চেয়েও বহু মানুষ ভোট দিয়েছেন। কাজেই মমতার পক্ষে সবটাই নেতিবাচক ভোট গিয়েছে বলে সিপিএমের কিছু নেতা বোঝানোর চেষ্টা করলেও, তা ঠিক নয়। আবার কিছু দিনের মধ্যেই মমতা সরকারের পতন হবে, এমনটা ভাবাও ঠিক নয়। সিপিআই-নেতাদের ব্যাখ্যা, সমস্ত 'বুর্জোয়া শক্তি' যে ভাবে বামেদের হটাতে সক্রিয় হয়েছিল, ঠিক সেই ভাবেই তারা মমতাকে ক্ষমতায় রাখতে সচেষ্ট হবে। প্রথম দিকে মমতা বেশ কিছু জনমুখী সিদ্ধান্তও নিতে পারেন। এর ফলে সাধারণ মানুষের সহানুভূতিও তাঁর সঙ্গে থাকবে।

লোকসভা নির্বাচনে বামেদের ভরাডুবির পরেই সিপিআই বড় শরিক সিপিএমের দাদাগিরি ওএবং তাদের ক্যাডারদের দম্ভ ও ঔদ্ধত্যের দিকে আঙুল তুলেছিল। বিধানসভা নির্বাচনের পরেও একই অভিযোগ তুলছে সিপিআই। তাই আগামী দিনে 'আরও স্বাধীন ভাবে' পথ চলতে চাইছেন সিপিআই-নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, ক্ষমতায় না থাকায় বামফ্রন্টের মধ্যে এত গোপনীয়তা বজায় রাখার দায় নেই। বড় শরিকের সঙ্গে কোনও নীতিগত পার্থক্য দেখা দিলে প্রকাশ্যেই মুখ খুলতে হবে বলে মনে করছেন সিপিআই নেতৃত্ব।

মঞ্জুবাবুর সঙ্গে গুরুদাস দাশগুপ্ত, পল্লব সেনগুপ্তের মতো নেতারাও আজ পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছেন। অসুস্থ নন্দগোপাল ভট্টাচার্য দিল্লি আসতে পারেননি। দলের নেতাদের বড় অংশের মত, প্রথম দিকে অন্তত বছর খানেক রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বড়সড় আন্দোলনে নামা উচিত হবে না। বরং মমতার কোনও প্রশাসনিক ভুল বা জনবিরোধী সিদ্ধান্তের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। ২০০৬-এ বিপুল আসনে জিতে আসার পর বামফ্রন্ট সরকার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিল বলে মনে করছেন সিপিআই নেতৃত্ব। সিপিআই-এর এক নেতার কথায়, "আমরা তখন বলেছিলাম, প্রথমেই ভারি শিল্পে না গিয়ে কৃষিভিত্তিক শিল্প বা মাঝারি শিল্প গড়ে তুলতে হবে। বন্ধ কলকারখানা ফের খোলারও চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু সিপিএম তখন কোনও শরিকের কথায় কান দেয়নি। ২৩৫টি আসনে জয়ের আনন্দে বিভোর হয়ে থাকার ফলেই সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে ধাক্কা খেতে হয়েছে।"

সিপিআই নেতারা অবশ্য বলছেন, এমন নয় যে এখন হারের পরে সমস্ত দোষ সিপিএমের ঘাড়েই ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সিপিআইয়েরও সাংগঠনিক ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল।

সেগুলি নিয়েও আলোচনা করে শোধরানোর চেষ্টা হবে। দলের জনভিত্তি বাড়াতে স্বাধীন আন্দোলনের কর্মসূচিও নেওয়া হবে।

উপাচার্য নিয়েও ভাবনা

উচ্চশিক্ষা থেকে 'দলতন্ত্র' সাফ করতে অভিযান

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

চ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে কার্যত 'সাফাই অভিযান' চালাতে চায় রাজ্য সরকার। তবে এখনই আগাপাশতলা পরিবর্তন করতে গেলে জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে, এই আশঙ্কায় এ ব্যাপারে 'ধীরে চলো' নীতি নিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস-তৃণমূল জোট সরকার।

রাজ্যের নতুন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু মঙ্গলবার বিকাশ ভবনে এক বৈঠক করেন। উচ্চশিক্ষার নানা স্তরে কী ভাবে দলতন্ত্র কায়েম করা হয়েছে, কী ভাবে সিপিএম সব কমিটি কুক্ষিগত করার বন্দোবস্ত করেছে— বৈঠকে তা নিয়ে মত বিনিময় হয়। কেউ কেউ প্রস্তাব দেন, রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যদের সরিয়ে দেওয়া হোক। পাশাপাশি, নতুন যে-সব বিশ্ববিদ্যালয় এখনও ইউজিসি-র অনুমোদন পায়নি, সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া হোক। প্রেসিডেন্সির ক্ষেত্রে সরকার অবশ্য পৃথক ভাবে ভাবনাচিন্তার পক্ষপাতী। উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী আগেই জানিয়েছেন, এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রেসিডেন্সির জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ছে রাজ্য সরকার।

বাম জমানায় কার্যত আলিমুদ্দিন ষ্ট্রিট থেকেই রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ হত। তৃণমূলও এই ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ জানিয়ে এসেছে। তাই রাজ্য-রাজনীতিতে পালাবদলের পরে বর্তমান উপাচার্যদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শিক্ষাজগতে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত কারও কারও মতে, শুধু উপাচার্যদের সরানোই যথেষ্ট নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট, সিণ্ডিকেট, কাউন্সিলগুলিও ভেঙে দেওয়া প্রয়োজন। ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পরে তৎকালীন সেনেট, সিণ্ডিকেট, কাউন্সিল ভেঙে দিয়ে তার জায়গায় মনোনীত কমিটি গঠন করা হয়। কংগ্রেস-তৃণমূল জোট সরকারেরও তা-ই করা উচিত। ভেঙে দেওয়া দরকার কলেজ পরিচালন সমিতিগুলিও।

ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের সব কমিটি ভেঙে দিলে শিক্ষাজগতে বা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে কি না, সেই প্রসঙ্গও ওঠে। কেউ কেউ উল্লেখ করেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মনে করেন, এই ব্যাপারে তড়িঘড়ি করা ঠিক হবে না। মতপার্থক্য না-থাকলেও শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়, রাজ্য সরকার এই ব্যাপারে ধীরেসুস্থে এগোবে। বরং সরকার এই ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করুক। কোন উপাচার্যের কার্যকাল কবে শেষ হচ্ছে, কোন কলেজে পরিচালন সমিতির মেয়াদ ফুরোচ্ছে কবে, তার একটি তালিকা তৈরি করা হোক। বৈঠকে উপস্থিত উচ্চশিক্ষা সচিবকে সেই নির্দেশই দেন ব্রাত্যবাবু।

রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আইন অনুযায়ী মেয়াদ ফুরোনোর আগে উপাচার্যদের সরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। উচ্চশিক্ষা দফতরের এক সূত্রের দাবি, বামফ্রন্ট ক্ষমতায় এসে সব কমিটি ভেঙে দেওয়ায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অরবিন্দ বসু পদত্যাগ করেন। কিন্তু কলকাতা এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত কাজ করেছেন যথাক্রমে সুশীল মুখোপাধ্যায় এবং অম্লান দত্ত। সেই কারণে উপাচার্যদের সরানোর জন্য আইন সংশোধনের প্রয়োজন নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকের শেষে উচ্চশিক্ষা মন্ত্রীও ইঙ্গিত দেন, মেয়াদ ফুরোনোর আগেই রাজ্যের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে সরাতে হলে প্রয়োজনে আইন সংশোধন করবে নতুন সরকার। এ ব্যাপারে তিনি যে আইনি পরামর্শ নেবেন, তা-ও জানান ব্রাত্যবাবু।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের কার্যকাল শেষ হওয়ার কথা আগামী বছর মে মাসে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রদীপনারায়ণ ঘোষের অবসর নেওয়ার কথা চলতি বছরের অক্টোবরে। রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্যের কাজের মেয়াদ ফুরোনোর কথা আগামী জুলাইয়ে। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোপা দত্ত, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী সেনগুপ্ত এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুব্রত পালের কার্যকাল শেষ হওয়ার কথা আগামী বছর। প্রেসিডেন্সি এবং সিধো-কানহু-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই উপাচার্য, যথাক্রমে অমিতা চট্টোপাধ্যায় এবং তপতী মুখোপাধ্যায় নিযুক্ত হয়েছেন এক বছরের জন্য। চলতি বছরের অক্টোবরেই তাঁদের কার্যকাল শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। এই উপাচার্যদের মধ্যে কারা দায়িত্বে বহাল থাকবেন, কাদেরই বা অব্যাহতি দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে, ব্রাত্যবাবু এ দিন সেই ব্যাপারে কোনও ইঙ্গিত দেননি। তিনি বলেন, "কোনও উপাচার্যকে সরাতে হবে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হবে। এর জন্য প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনও বদলানো হতে পারে। তবে যা করার, সেটা আইনি পরামর্শ নিয়েই করব।" এ দিন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রীর বৈঠকে ছিলেন সুনন্দ সান্যাল, অভিরূপ সরকার, কল্যাণ সান্যাল, কল্যাণ রুদ্র, অভীক মজুমদার এবং দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।

'অস্ত্র-নাটক' নিয়ে উদ্বেগ

'গঠনমূলক' বিরোধিতাই, বোঝালেন সূর্য-সুশান্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

স্ত্র উদ্ধারের নামে দলের কর্মীদের 'ফাঁসানো' এবং 'সন্ত্রাসে'র ঘটনায় উদ্বিগ্ন হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে প্রাথমিক ভাবে সহযোগিতার রাস্তাতেই হাঁটতে চাইছে সিপিএম। বিধায়ক হিসেবে শপথ নেওয়ার পরে ভাবী বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র গঠনমূলক বিরোধিতা'র উপরেই জোর দিয়েছেন। সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি মেনে আলাপ-আলোচনার পথেই সমস্যা সমাধানের রাস্তা বেরোবে তিনি আশাবাদী।

বিরোধী হিসেবে নিজেদের ভূমিকা প্রসঙ্গে সূর্যবাবু মঙ্গলবার বলেন, "আমরা সরকারকে সময় দেব। ভাল কাজ করলে সমর্থন করব। জনবিরোধী কাজ হলে বিরোধিতা করব। বিধানসভার বাজেট অধিবেশন আসবে। তখন বিষয় ধরে ধরে আলোচনা হবে।" নতুন সরকারকে কাজ করার জন্য সাধারণ ভাবে ৬ মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় দেওয়ার কথা বলছে সিপিএম। তবে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সূর্যবাবু এ দিন একই সঙ্গে বলেছেন, "সরকারকে সময় আমরা দেব। তবে অস্ত্র উদ্ধার বা দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উপরে আক্রমণ নিয়ে বাড়াবাড়ি হলে তো ৬ মাস বসে থাকা যায় না! তখন ৬ দিনেও মীমাংসার কথা আসতে পারে। তবে আমরা গঠনমূলক বিরোধীর ভূমিকাই পালন করব।"

সূর্যবাবুর মতোই সিপিএমের আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ডাকসাইটে নেতা সুশান্ত ঘোষের কথা থেকেও সরকারের প্রতি প্রাথমিক সহযোগিতার মনোভাবই স্পষ্ট হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্তবাবু এ দিন বলেছেন, "নতুন মন্ত্রী (পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন) চাইলে সাহায্য করতে চেষ্টা করব।" নারায়ণগড়ের সূর্যবাবু, গড়বেতার সুশান্তবাবুর পাশাপাশিই পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম-সহ বেশ কয়েকটি জেলার বিধায়কেরা এ দিন শপথ নেন। প্রথম দিন হাজির থাকতে না-পারায় এ দিন শপথ নিয়েছেন দুই মন্ত্রী, তৃণমূলের অমিত মিত্র এবং সাধন পাণ্ডেও।

সার্বিক ভাবে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার কথা বললেও অস্ত্র উদ্ধারের 'নাটক' নিয়ে সিপিএম নেতৃত্ব যথেষ্টই চিন্তিত। এ দিন বিধানসভার লবিতে সূর্যবাবু বলেন, "পশ্চিম মেদিনীপুরে এমন ঘটনা ঘটেছে যে, পুলিশ তল্লাশি করে অস্ত্র পায়নি। নথি আমাদের কাছে আছে যেখানে পুলিশ বলছে, অস্ত্র পাওয়া যায়নি। পরে সেখানে অস্ত্র রেখে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে!" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "সাধারণ ভাবে কিছু কিছু অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। তবে এলাকাগুলো মাওবাদী প্রভাবিত ছিল বলে ওই অস্ত্রের সূত্র নির্ণয় করা মুশকিল। কিন্তু অস্ত্র উদ্ধারকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে দলীয় কার্যালয় ও কর্মীদের উপরে আক্রমণ মেনে নেওয়া যায় না।"

জঙ্গলমহলে সিপিএমের 'সশস্ত্র শিবির' চালানোর ক্ষেত্রে যাঁকে বারেবারেই কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে, সেই সুশান্তবাবু অবশ্য অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। সুশান্তবাবুর কথায়, "অস্ত্র নিয়ে কোনও কথা বলব না। কারণ আমি যা-ই বলি, সেটা নিয়ে অন্য গল্প হবে! এই বিষয়ে যা বলার, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বলবেন।" সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও এ দিন পিস হেভ্‌ন-এ নিহত এক কর্মীর মরদেহে মালা দিতে গিয়ে শান্তি রক্ষার ব্যাপারে রাজ্য সরকারকেই উদ্যোগী হতে বলেছেন।

রাজনৈতিক হিংসা বন্ধের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে কথা বলেছেন জোট-শরিক কংগ্রেসের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও। তিনি বলেন, "যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক ও দুঃখজনক। নির্বাচনোত্তর পর্বে যাঁরা নিহত হয়েছেন, আমরা তাঁদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহানুভূতি জানাচ্ছি। কিন্তু ৬ জন মারা গিয়েছেন। সিপিএম ক্ষমতায় এলে ৬০০, এমমকী, ৬ হাজার লোক মারা যেতেন!"

পিছিয়ে গেল কংগ্রেসের পাঁচ মন্ত্রীর নাম ঘোষণা

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

ংগ্রেসের পাঁচ মন্ত্রীর নামের তালিকা নিয়ে জটিলতা অব্যাহত! প্রাথমিক ভাবে মঙ্গলবারের মধ্যে তালিকা চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও কংগ্রেস হাইকম্যাণ্ড তা করে উঠতে পারেনি। পশ্চিমবঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ জানিয়েছেন, কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর অনুমোদন পেলেই তালিকা চূড়ান্ত হবে। কিন্তু সনিয়া কাশ্মীরে থাকায় তাঁর সঙ্গে শাকিল ও প্রণব মুখোপাধ্যায় তালিকা নিয়ে আলোচনাই করতে পারেননি। সনিয়ার আজ, বুধবার দিল্লি ফেরার কথা। তার পরেই তাঁর সঙ্গে আলোচনা হবে জানিয়ে শাকিল বলেন, "আমরা আশা করছি, বৃহস্পতিবারের মধ্যে তালিকা চূড়ান্ত করা যাবে এবং এ সপ্তাহের মধ্যেই আমাদের পাঁচ মন্ত্রী শপথ নেবেন।"

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়াও এ দিন সন্ধ্যায় দিল্লি গিয়েছেন। তালিকা নিয়ে দলের সভানেত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে শাকিল, প্রণববাবুর সঙ্গে মানসবাবুর আলোচনা হবে। কবে পাঁচ মন্ত্রীর নাম চূড়ান্ত হবে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী হিসাবে তাঁরা শপথ নেবেন, তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এ দিন দিল্লি যাওয়ার আগে মানসবাবু বলেন, "দু-এক দিনের মধ্যে তালিকা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে তাঁরা শপথ নেবেন বলে আশা করছি।"

কংগ্রেসের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে সভানেত্রীর সঙ্গে আলোচনার অবকাশ না-মেলার ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও দলের অন্দরের খবর, পাঁচ মন্ত্রীর নাম নিয়ে দলে সমস্যা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই পূর্ণমন্ত্রী হিসাবে মানসবাবু ও আবু হেনা শপথ নিয়ে নিয়েছেন। বাকি যে পাঁচ মন্ত্রী হবেন, তাঁদের কেউই পূর্ণমন্ত্রী হবেন না। সকলেই প্রতিমন্ত্রী হবেন। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী হওয়ার জন্য যে ৬-৭ জনের তালিকা শাকিলেরা দিল্লিতে নিয়ে গিয়েছেন, তার কিছু নাম নিয়েও সমস্যা তৈরি হয়েছে। তালিকায় নাম আছে, এমন দু-এক জন বর্ষীয়ান নেতা প্রতিমন্ত্রী হয়ে কাজ করতে রাজি নন। উত্তেরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারের বর্ষীয়ান বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়ের নামও তালিকায় আছে। দিল্লিতে কংগ্রেসের সংগঠনে তাঁর যথেষ্ট 'প্রভাব-প্রতিপত্তি' আছে।

রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ এবং দু'বারের বিধায়ক দেবপ্রসাদবাবু প্রতিমন্ত্রী হতে আগ্রহী নন। তিনি যে প্রতিমন্ত্রী হতে চান না, দিল্লি গিয়ে তা এ দিন শাকিলকে জানিয়েও দিয়েছেন দেবপ্রসাদবাবু। তাঁর কথায়, "আমার প্রতিমন্ত্রী হতে না-চাওয়াটা কোনও অভিমান বা অভিযোগে নয়। আমার মনে হয়েছে, জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমি মানুষের জন্য কোনও কাজ করতে চাইলে বাংলায় যে নতুন সরকার এসেছে, সেই সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা পাব। তা ছাড়া, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল। ফলে, কাজ করার জন্য আমার মন্ত্রী হওয়ার দরকার নেই!" দেবপ্রসাদবাবু শেষ পর্যন্ত মন্ত্রী হতে না-চাইলে তাঁর জায়গায় নতুন করে অন্য নাম তালিকায় আনতে হবে। সেই নাম কার হবে, তা নিয়েও দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব আলোচনা শুরু করেছেন। গোটা পরিস্থিতিতে তালিকায় অন্য যে সব বিধায়কের নাম আছে, তাঁদের অনেকেও প্রচণ্ড 'টানাপোড়েনে'র মধ্যে রয়েছেন।

'মাদ্রাসা-সেরা' ছাত্রীকে পড়াবে রাজ্য

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় প্রথম স্থানাধিকারী বলে এক ছাত্রীকে চিহ্নিত করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, রাজ্য সরকার ওই ছাত্রীর পরবর্তী পড়াশোনার সব দায়িত্ব বহন করবে।

সাহিদার বাড়ি মালদহের গাজল থানা এলাকার রামনগরে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র মঙ্গলবার ওই ছাত্রী, তার বাবা মতিউর রহমান এবং মা মাসতারা খাতুনকে নিয়ে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে যান। সাহিদার পরীক্ষার ফল দেখে মুখ্যমন্ত্রী খুব খুশি হন। পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "মাদ্রাসা পরীক্ষায় সাহিদা প্রথম হয়েছে। ওর বাবা শ্রমিকের কাজ করেন। কষ্ট করে ওঁদের সংসার চলে। আমি ওঁদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। রাজ্য সরকার সাহিদার পড়াশোনার সব খরচ বহন করবে।" রামনগর হাই মাদ্রাসার ছাত্রী সাহিদা জানায়, কলকাতায় ছাত্রাবাসে থেকে সে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চায়।

মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রের খবর, এ বছরের সিবিএসই এবং মাদ্রাসা পরীক্ষায় যাঁরা ভাল ফল করেছেন, অফিসারদের কাছে এ দিন তাঁদের নামের তালিকা চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আধিকারিকেরা মনে করছেন, রাজ্য সরকার সম্ভবত ওই সব পড়ুয়াকেও আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহী।

মাদ্রাসার কৃতী ছাত্রী সাহিদা খাতুনের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। মহাকরণে মঙ্গলবার রাজীব বসুর তোলা ছবি।

এ দিকে, দিল্লির বোর্ডগুলির মতো রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদও ইতিমধ্যে মেধা-তালিকা প্রকাশ বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের যুক্তি ছিল, দীর্ঘদিন ধরে চলে এলেও এ ভাবে মেধা-তালিকা তৈরি করা শিক্ষাবিজ্ঞান-সম্মত নয়। দিল্লির বোর্ডগুলি অনেক আগেই ওই তালিকা প্রকাশ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদও একই পথে হাঁটে।

দুঃস্থ পরিবারের মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে সহায়তা করা সরকারের পক্ষে অবশ্যই প্রশংসনীয় কাজ। কিন্তু সংশ্লিষ্ট পর্ষদ মেধা-তালিকা প্রকাশ বন্ধ করে দেওয়ার পরেও এ ভাবে কোনও পড়ুয়াকে পরীক্ষায় 'প্রথম' বলে চিহ্নিত করায় শিক্ষাজগতে ভুল বার্তা যাবে বলে অনেক শিক্ষক মনে করছেন।

রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ সূত্রের খবর, প্রথম স্থানাধিকারী বলে কোনও পড়ুয়ার নাম সেখান থেকে মহাকরণে যায়নি। পর্ষদের এক কর্তা বলেন, "পর্ষদ নিজেরাই বলতে পারবে না, কে প্রথম বা কে দ্বিতীয়। হয়তো অন্য কোনও মাধ্যম থেকে মুখ্যমন্ত্রী ওই ছাত্রীর নাম পেয়ে থাকবেন।"

সন্দেহ সিআইডির

ঝাড়খণ্ড পুলিশের রাইফেলও কি এনায়েতপুরে

নিজস্ব প্রতিবেদন

শ্চিম মেদিনীপুরের এনায়েতপুরে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ের অদূরে রবিবার ইনস্যাসের সঙ্গেই উদ্ধার হওয়া একে-৫৬ রাইফেলটি সম্ভবত ঝাড়খণ্ড পুলিশের। আর একই সঙ্গে মেলা আগ্নেয়াস্ত্রগুলির মধ্যে একটি রিভলভার ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরিতে তৈরি বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে মনে করছেন সিআইডি অফিসারেরা। ইনস্যাসটি শিলদার ইএফআর ক্যাম্পে মাওবাদী হামলার সময়ে লুঠ হয়েছিল বলে আগেই নিশ্চিত হয়েছিল পুলিশ।

একে-৫৬টির ব্যাপারে ব্যাপারে ঝাড়খণ্ড পুলিশ এবং রিভলভারটির জন্য ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দিচ্ছে সিআইডি। কিন্তু কী ভাবে ওই অস্ত্র এনায়েতপুরে পৌঁছল, তা নিয়ে এখনও কিছুটা ধোঁয়াশায় তদন্তকারীরা অফিসারেরা। সাম্প্রতিক এই 'উদ্ধার-অভিযান' ছাড়াও গত এক বছরে যৌথ বাহিনীর তল্লাশিতে বিনপুর, শালবনি, গোয়ালতোড় ও মেদিনীপুর সদর থানা এলাকা থেকে শিলদা-কাণ্ডে লুঠ ৩টি একে-৪৭ এবং ২টি এসএলআর উদ্ধার হয়েছে বলে মঙ্গলবারই ঝাড়গ্রাম আদালতে জানিয়েছে সিআইডি।

এ দিনও পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর, দাঁতন, গড়বেতা, গোয়ালতোড়, শালবনির বিভিন্ন এলাকায় সিপিএম কার্যালয় বা কর্মীদের বাড়ির আশপাশ থেকে বেশ কিছু অস্ত্র-কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে। কেশপুরের ছুতারগেড়িয়ায় সিপিএম কার্যালয় থেকেই ৫ রাউণ্ড গুলি উদ্ধার হয়। আটক করা হয় দুই সিপিএম কর্মীকে। গড়বেতার ফুলবেড়িয়ায় সিপিএমের শাখা কার্যালয়ের পাশ থেকে ৬টি মাস্কেট, দাঁতনের রসুলপুরে এক শাখা সম্পাদকের বাড়ির পুকুর থেকে একনলা দু'টি বন্দুক উদ্ধার হয়েছে। রসুলপুর থেকে ৫ সিপিএম কর্মীকে গ্রেফতারও করা হয়।

হুগলির গোঘাটে অস্ত্র-উদ্ধারের নামে কয়েক জন সিপিএম নেতা-কর্মীর বাড়ি ঘেরাও করে তৃণমূলের লোকজন হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আরামবাগের মহকুমাশাসকের কাছে প্রতিবাদে স্মারকলিপি দিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব। বাঁকুড়ার কোতুলপুরের দেশড়া থেকেও বন্দুক, হাতকামান, গুলি, হাতবোমা উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে।

অন্য দিকে, লালগড়ের ধরমপুরে সোমবার দলের একাংশ 'বিজয় উৎসব'-এর নামে যে ভাবে সিপিএম নেতা অনুজ পাণ্ডের বাড়িতে, স্থানীয় পঞ্চায়েত কার্যালয়ে এবং সিপিএম কার্যালয়ে তেরঙা পতাকা টাঙিয়ে দিয়েছেন, তাতে বিরক্ত তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্ব।

দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় স্থানীয় নেতৃত্বের কাছে কৈফিয়ৎ তলব করেছেন বলে তৃণমূল সূত্রেই খবর। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি প্রণব বসুর বক্তব্য, "সোমবার ধরমপুরের ঘটনা দল অনুমোদন করছে না।"

টুকরো খবর

জঙ্গলমহলে রাতে ফের ট্রেন নিয়ে বৈঠকে মমতা
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে নাশকতার পর থেকে জঙ্গলমহলে রাতে ট্রেন চলাচল বন্ধই আছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের রাতের বেশির ভাগ ট্রেনই এখন চলছে ভোরে। ওই সব ট্রেন ফের রাতেই চালানো যায় কি না, সেই ব্যাপারে রেল রক্ষী বাহিনী (আরপিএফ)-র ডিজি পি কে মেটা মঙ্গলবার মহাকরণে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়ের সঙ্গে আলোচনা করেন। বৈঠকে ছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার বিনয় মিত্তলও। তবে জঙ্গলমহলে কবে ফের রাতে ট্রেন চলবে, সেই সিদ্ধান্ত হয়নি। রেল সূত্রের খবর, মেটা দুপুরে প্রথমে মহাকরণে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। পরে তিনি বৈঠক করেন রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। সেখানেও এই নিয়ে আলোচনা হয়। ঠিক হয়েছে, ২৬ মে মেদিনীপুরের পুলিশকর্তাদের সঙ্গে রেলের নিরাপত্তা বিভাগের কর্তারা বৈঠক করবেন। তার পরেই জঙ্গলমহলে রাতে ফের ট্রেন চালানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।


নিজের অফিসের ছয় সচিবকে সরালেন মমতা
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় নিজের অফিসের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ছাড়া সব সচিবকে সরিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার এই মর্মে নির্দেশ বার করেছে রাজ্য স্বরাষ্ট্র (কর্মিবর্গ) দফতর। ওই নির্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের ছয় সচিবকে 'কম্পালসারি ওয়েটিং'-এ পাঠানো হয়েছে। অর্থাৎ এখন তাঁদের কার্যত কোনও কাজ রইল না। তাঁরা সকলেই বিগত সরকারের আমলে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে নিযুক্ত হয়েছিলেন। যে-ছ'জনকে এ দিন সরানো হয়েছে, তাঁরা হলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব, বিশেষ সচিব, প্রেস সচিব, যুগ্মসচিব, উপসচিব এবং অতিরিক্ত ব্যক্তিগত সচিব। তাঁরা সকলেই এ দিন স্বরাষ্ট্র (কর্মিবর্গ) দফতরে যোগ দিয়েছেন।

প্রবন্ধ ১...

মতাদর্শের বিরুদ্ধে নয়, ভোট অ-শাসনের বিরুদ্ধে

নতুন সরকারের শপথগ্রহণের দিন যে জনতার ঢল নেমেছিল, তারা শ্রেণিসংগ্রাম চায় না,
শিক্ষা-স্বাস্থ্য-চাকরির ব্যবস্থা করতে পারার মতো একটা সরকার চায়। বামফ্রন্ট যা দিতে পারেনি।

রংগন চক্রবর্তী

ত শুক্রবার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রাজভবনে শপথ নিলেন, তখন আমরা দেখলাম, রাজপথে মানুষের ঢল নেমেছে। ৩৪ বছর আগের স্মৃতি সবার সমান ভাবে মনে থাকে না। তবে যত দূর মনে পড়ে, ইমারজেন্সি পেরিয়ে আসা সাতাত্তরেও মানুষের ঢল নেমেছিল। বামফ্রন্ট সরকারকে নিয়ে একটা আবেগের উৎসব ছিল। কিন্তু ১৯৭৭ আর ২০১১ সালে জড়ো হওয়া মানুষের আবেগ, বিশ্বাস, প্রত্যাশার চরিত্রে একটা তফাত আছে, যে তফাতটা বোধহয় আমাদের রাজনীতি বোঝার ক্ষেত্রে জরুরি। রাজনীতিকে নানা দলের সমর্থক মানুষদের শ্রেণিচরিত্র দিয়ে বোঝার একটা পুরনো অভ্যাস আমাদের আছে। আমার মনে হয় না, অন্তত তৃণমূল আর সি পি এম সমর্থকদের মধ্যেকার পার্থক্যকে বোঝার জন্য শ্রেণিকে ব্যবহার করে কোনও লাভ আছে। আমার এ কথাও মনে হয় না যে, রাজনীতির সঙ্গে একটা দলের মতাদর্শ বলতে যা বুঝি, তাই দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেও খুব ফল হবে।

যা কিছু চাওয়ার আছে। শপথগ্রহণের দিন। কলকাতা।

২০০৪ সালের ব্যর্থতা থেকে ২০১১ সালের বিপুল জয়ের রাস্তায় এগিয়েছেন মমতা ও তৃণমূল। এই গোটা সময় ধরে মমতা যে প্রচার করেছেন, তাঁর রাজনীতি যে ভাবে নানান রকমের মানুষকে স্থান করে দিয়ে এগিয়েছে, তাতে একটা জিনিস পরিষ্কার— তাঁর এই যাত্রাকে একটা মতাদর্শের জনপ্রিয় হয়ে ওঠার থেকে বামফ্রন্ট সরকারের ব্যর্থতা বিরোধী অভিযোগ দানা বেঁধে ওঠা হিসাবেই আমরা দেখতে পারি। মমতার বক্তব্যগুলো ধারাবাহিক ভাবে বিশ্লেষণ করলেও আমরা দেখব, তার মূল কথা হল একটি সাধারণ মানুষের স্বার্থবিরোধী দলের হাতে ব্যর্থ সরকারি ব্যবস্থার সমালোচনা। অর্থাৎ মূল দ্বন্দ্বটা গভর্নেন্স নিয়ে। ২০ মে যে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাজপথে ঢল নামিয়েছিলেন, তাঁরা কিন্তু একটা বিশাল নতুন মতাদর্শ, শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের সংগ্রাম, বিপ্লব, সর্বহারার একনায়কত্ব এই সব মাথায় নিয়ে আসেননি। তাঁরা চান, সরকার শান্তি, চাকরি, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি নিশ্চিত করতে পারবে। মমতা তাঁদের কাছে সেই আশার প্রতীক।


'শাসন' বনাম 'পরিচালন'

অভিধানে 'গভর্নেন্স' কথাটার বাংলা দেখছি 'শাসন পদ্ধতি'। আবার গভর্নিং বডি কথাটার অনুষঙ্গে 'পরিচালন সমিতি' কথাটা আসছে। 'শাসন' আর 'পরিচালন', এই দুটো কথার মধ্যে কিন্তু ক্ষমতার ভূমিকাকে আমরা কী ভাবে দেখব, সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তফাত আছে। ইংরেজিতে মানুষের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে আর একটি যে কথা আমরা এখন ব্যবহার করছি, সেটা হল 'এজেন্সি'। 'শাসন' কথাটার ধারণায় কিন্তু সাধারণ নাগরিকদের এজেন্সি বা নিজস্ব ক্ষমতার কোনও স্বীকৃতি থাকে না। সেখানে ক্ষমতাসীন সরকার বা বিশেষ করে তার শাসক দল সবজান্তা বাবাজি হয়ে লাঠি চালানোর অধিকার পায়। নাগরিক যেন ক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে নিজের ভালমন্দ বোধটাকে সরকার বা সেই দলের হাতে তুুলে দিতে বাধ্য হয়। এর ফলে, একটা মেরুকরণ তৈরি হয়, যাতে পরস্পরের প্রতি সম্মান, সহযোগিতা, সর্বজনীনতার কোনও জায়গা থাকা দুষ্কর হয়ে ওঠে। অন্য দিকে 'পরিচালন' কথাটা কিন্তু তুলনামূলক ভাবে মৃদু। ভেবে দেখবেন, 'শাসন'-এর তুলনায় 'পরিচালন' কথাটায় লোকাল কমিটির লাঠিয়াল কম, পুলিশ কম, আলোচনা বেশি, সহযোগিতার ধারণা বেশি।

প্রশ্ন হল, আমাদের চার পাশের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে কি আমরা একেবারে ভিন্ন মতাদর্শের শ্রেণি সংঘাত হিসেবে না দেখে অনেক বেশি করে এই শাসন আর পরিচালন ধারণার পার্থক্য হিসেবে দেখতে পারি? রাজতন্ত্র পেরিয়ে আসা, সামন্ততন্ত্র থেকেও অনেক অংশে দূরে সরে আসা নাগরিকের কাছে কি এই পার্থক্যটা খুব বড় হয়ে উঠছে? আর বাম দল তাদের শ্রেণি প্রাধান্যের ধারণা নিয়ে কি এই বদলগুলোকে বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছেন, বা তার রাজনীতিতে কেবল শাসনই সম্ভব, পরিচালন সম্ভব নয়!

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাম বিরোধিতায় আছেন বহু দিন। কিন্তু তাঁর দিকে হাওয়া ঘুরেছে গত তিন চার বছরে। এ কথা এখন মোটামুটি স্বীকৃত যে, এই হাওয়া ঘোরার পেছনে যে কয়েকটি ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে— সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম ও রাজনৈতিক ভাবে একটু অন্য রকম হলেও রিজওয়ানুরের মৃত্যু। এই তিনটি ঘটনাকেই কি আমরা গভর্নেন্স-এর ব্যর্থতা হিসেবে দেখতে পারি না? সিঙ্গুরে চাষিদের মত না নিয়ে জমি নেওয়া, নন্দীগ্রামে জমি দখলের নোটিস টাঙিয়ে দেওয়া ও গুলিচালনা, রিজওয়ানুরের ক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থার ওপর ক্ষমতাশালী ব্যবসায়ীর অবাঞ্ছিত প্রভাব, তিনটির মূলেই কিন্তু মতাদর্শের চেয়ে শাসন ক্ষমতার অপব্যবহারের পরিচয় বেশি।

মমতা তাঁর বিরোধিতার প্রচারে এই তিনটি ঘটনার ওপরে জোর দিয়েছিলেন। এখন মুখ্যমন্ত্রী হয়ে প্রথমেই তিনি বলেছেন, অনিচ্ছুক কৃষকদের ৪০০ একর জমি ফেরত দিয়ে বাকি জমিতে কারখানা হবে। টাটারা করলেও তাঁর আপত্তি নেই। এই গোটা ব্যাপারটা কি একটা বড় মতাদর্শগত সংঘাতের প্রশ্ন, নাকি প্রশ্নটা সরকার চালানোর ক্ষেত্রে কৃষক-নাগরিকদের স্বাধীন ইচ্ছাকে সম্মান জানানোর প্রশ্ন? সেই প্রশ্ন কি আবার আমাদের গভর্নেন্স-এর প্রশ্নে ফিরিয়ে আনে না?


'ইডিয়োলজি ইজ ডেড?'

তবে কি 'ইডিয়োলজি ইজ ডেড, লং লিভ গভর্নেন্স'? না। তা বলছি না। যদিও আমাদের চার পাশের আবহাওয়ায় এখন 'গভর্নেন্স' কথাটার ওপর দারুণ জোর দেখতে পাচ্ছি। একটা ধারণা ক্রমশই চার পাশে তৈরি হচ্ছে যে, ইডিয়োলজির সঙ্গে গভর্নেন্স-এর কোনও সম্পর্ক না থাকাই ভাল। বামফ্রন্টের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে এসে বহু মানুষ ইডিয়োলজিকে দলীয় অপশাসনের জন্য ব্যবহৃত একটা ভাঁওতার বাইরে কিছু ভাবতে রাজি নন। আমাদের নির্বাচনেও এই ধারণার জয় হয়েছে বলাটা বোধ হয় ভুল হবে না। তার পিছনে কিন্তু কতকগুলো কারণ আছে। সমাজের নীচের দিকে যেখানে মানুষকে নানান ভাবে এখনও সরকারি ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করতে হয়, তাঁরা দেখেছেন কী ভাবে সরকারি সুবিধাগুলো দলীয় আনুগত্যের মধ্যে দিয়ে পেতে হয়েছে। ফলে মনে হতেই পারে ইডিয়োলজির মানে হল কেবল একটা রাজনৈতিক দলের লোকেদের পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি, সবার জন্যে নয়। আবার সমাজের ওপরের দিকে মানুষ বেশি বেশি করে বাজার অর্থনীতির ভেতরে ঢুকে পড়ে ভাবছে সরকার তাদের আর দরকার নেই, বামেরা বাজার সম্পর্কে কোনও পরিষ্কার মতাদর্শ তৈরি করতে না পারার ফলে, ইডিয়োলজি মানে হয়ে উঠেছে অপ্রাসঙ্গিক সমাজ ধারণার বোঝা।


উল্টা বুঝলি বাম

এই ভাবে 'ইডিয়োলজি' কথাটাই যেন আমাদের চার পাশে একটা খারাপ কথা হয়ে উঠেছে। নানান দিকেই। এমনকী শাসক দলের নিজের মধ্যেও যেন ইডিয়োলজি আর গভর্নেন্স-এর মধ্যে সেতুবন্ধন সম্ভব নয়, এই ঘটনার প্রসার ঘটেছে। প্রকাশ কারাটের ইডিয়োলজিক্যাল গোঁড়ামি, বুদ্ধবাবুকে গভর্নেন্স করতে দিল না— এই রকম একটা কথাও আমরা শুনেছি। সমস্যাটা বোধ হয় আসলে তা নয়। বামেদের গভর্নেন্স-এর ব্যর্থতা বুদ্ধবাবুর একার দায় নয়, পশ্চিমবাংলার ইতিহাসের গল্পও শুধু নয়। গভর্নেন্স মানে শাসন, পরিচালন নয়, এই বোধ কিন্তু স্তালিন জমানা, মাও জমানাতেও আমরা বারবার দেখব। এই গল্প ভেঙে যাওয়া সোভিয়েতের গল্প। এই গল্প আজকের চিনেরও গল্প। সিঙ্গুরে চাষির মত নেওয়ার প্রয়োজন বোধ না করা, জমির প্রতি চাষির মায়াকে বিপ্লবী চেতনার পরিপন্থী হিসেবে দেখার গল্প রাশিয়ানরা জানে। নন্দীগ্রামে নোটিস টাঙিয়ে দেওয়ার ঔদ্ধত্য চিনের লক্ষ লক্ষ মানুষের চেনা। এই ব্যর্থতার কারণ যদি খুঁজতেই হয়, যদি সেই ইচ্ছা বা ক্ষমতা আমাদের কমিউনিস্টদের থাকে, তবে 'হেলে ধরতে পারে না কেউটে ধরতে যায়' জাতীয় সংলাপের চেয়ে গভীরতর স্তরে গিয়ে লেনিন-স্তালিন রচিত বাইবেলের বাইরে বেরিয়ে রাজনীতি-নাগরিক-দলের গঠন-ক্ষমতার ধারণার পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-রিজওয়ানুর থেকে শুরু করে মমতার নামে 'মেয়ে' বলে অবমাননাকর নানান উক্তির পেছনে যে ভয়াবহ মানসিকতা দেখা যাচ্ছে, যে মানসিকতা নিয়ে আর যা-ই হোক, অধিকাংশ মানুষের জন্য স্বাধীনতা আর সম্মানের রাজনীতি করা যায় না, সেই নিয়ে ভাবতে হবে। হবে কি না জানি না।


মমতা ও ক্ষমতা

অসীম আশা ও উৎসাহের জোয়ারে মমতা ক্ষমতায় এসেছেন। আমরা তাঁর দিকে অধীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে। জানি না তো উনি কী করতে পারবেন। তবে জীবনমুখী গান নিয়ে একটা কথা মনে পড়ে যায়। জীবনমুখী গান যখন প্রথম এসেছিল, অনেকে বলেছিলেন, ভাল, কিন্তু টিকবে তো? তাই শুনে এক গায়কের মনে হয়েছিল, আচ্ছা, বাচ্চা হলে কেউ কি বলে, 'বাঃ সুন্দর বাচ্চা। কিন্তু বাঁচবে তো?' তাই মমতাকে আমাদের সময় দিতেই হবে। দেখতে হবে উনি কী করতে চাইছেন, কী ভাবে করতে চাইছেন। মমতার অবশ্যই কিছু সুবিধে-অসুবিধে আছে। অসুবিধেগুলোর মধ্যে প্রধান হল ওঁর পুরনো কংগ্রেসি পরিচয়, ওঁর চার পাশে এখনও কিছু মানুষ দলে বেশ প্রধান ভূমিকায় আছেন, যাঁদের বিশ্বাস করতে আমাদের অনেকের অসুবিধে হয়। বিশেষ করে আমরা যারা ১৯৭২-১৯৭৫ দেখেছি। এ বার ভোটে যদি পরিবর্তনের দিকে একটা সুইং হয়ে থাকে, তবে তার একটা অংশ যে মতাদর্শ পেরিয়ে পরিচালনের জন্য ভোট দিয়েছেন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।

মমতার কয়েকটা বড় সুবিধেও আছে। কোনও অনড় বিস্তারিত মতাদর্শের লটবহর তাঁকে বয়ে বেড়াতে হয় না। গত কয়েক বছরে তিনি তাঁর সমর্থনে যে নানান মানুষকে জড়ো করেছেন, তাঁদের মধ্যে শঙ্কর গুহনিয়োগীর আন্দোলনে কাজ করে আসা রাজনৈতিক কর্মীও আছেন, আবার অমিত মিত্রও আছেন। বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ব্যক্তিগত বা দলগত স্বাধীনতা অনেক বেশি। এ ছাড়া ব্যক্তিগত স্তরে তাঁর একটা সংক্রামক উদ্দীপনা আছে, সেটাকে যদি কিছু বাস্তব প্রকল্পের দিকে নিয়ে আসতে পারেন, কাজ হতেও পারে।

কিন্তু মতাদর্শ আর সুশাসনের জটিল সম্পর্কটাতে আমাদের ফিরে আসতেই হবে। একটা উদাহরণ দিয়ে শেষ করি। গত লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় প্রশাসনিক ব্যর্থতার পাশাপাশি দিল্লিতে প্রকাশ কারাটের মতাদর্শগত গোঁড়ামিও আপাতদৃষ্টিতে বামেদের ব্যর্থতার কারণ হয়েছিল। বিপুল প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে নির্বাচনী প্রচারে বামেরা মিনমিন করে পেনশন সঞ্চয় ইত্যাদিকে বাজারের হাতে তুলে দেওয়ার সরকারি পদক্ষেপের মতাদর্শগত বিরোধিতার কথা বলতে চেয়েছিলেন। ভোটের বাজারে তেমন দাগ কাটেনি। মতাদর্শ ব্যাপারটাকে তাঁরা এতই সুশাসন বিরোধী করে তুলে ফেলেছিলেন যে, তাঁদের কোনও আদর্শ যে মানুষের স্বার্থে কাজ করতে পারে, এটাই কেউ মানতে চাইছিল না। আজকেও চাইছে না।

বামেরা যদি এই কথাগুলো নতুন করে ভেবে উঠতে পারে, তবে আমাদের সবার, এমনকী মমতারও ভাল। কারণ, যথাযথ বিরোধিতা সমাজে পরিমিতি আর ভারসাম্য আনে।

প্রবন্ধ ২...

বিপন্ন সুন্দরবন
শুধু টাকা ঢাললে হবে না

তুষার কাঞ্জিলাল

সুন্দরবন আমার যৌবনের উপবন এবং বার্ধক্যের বারাণসী। জীবনের প্রথম পঁয়ত্রিশটি বছর শহরেই কাটিয়েছি। তাই শহুরে রক্ত আমার শিরায়। ষাটের দশকের শেষ দিকে শহর ছেড়ে সুন্দরবনের অনেক গভীরে বাদা জঙ্গলের পাশে মানুষ বাস করেন এমন একটা দ্বীপে আশ্রয় পেয়েছিলাম। রবীন্দ্র প্রভাবে স্থায়ী ভাবে বসবাস করার প্রতিজ্ঞা নিয়েই একটা সম্পূর্ণ নাই-রাজ্যের দেশে আদিবাসীদের পাড়ায় একটা ছোট কুঁড়েঘরে সপরিবার ভিত গেড়ে বসে পড়েছিলাম। তার পরে প্রায় পঞ্চাশ বছর সুন্দরবনের মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে এখনও পুরো বনছাড়া হতে পারিনি।

এই দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর আমি অনেক কাছ থেকে সুন্দরবনের প্রকৃতি, মানুষ এবং তার অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বিবর্তনের প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে অনেক কিছু জানার এবং বোঝার সুযোগ যেমন পেয়েছি, তেমনই হতদরিদ্র ভূমি-কাঙাল লক্ষ লক্ষ মানুষের বেঁচে থাকার এবং টিকে থাকার লড়াইয়ে শামিল হতে পেরেছি। হালফিল সুন্দরবন নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা, গবেষণা হয়েছে, অনেক গবেষণাপত্র এবং নানা প্রাসঙ্গিক বিষয়ে অনেক পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে। হঠাৎ গত দু'দশক সুন্দরবনের উন্নয়নে নানা ধরনের সরকারি ও বেসরকারি প্রচেষ্টা প্রত্যক্ষ করছি। যাঁরা এ-সব বিষয়ে গবেষণা করছেন বা লিখছেন, সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করার এবং সমাধানের পথ বাতলাবার চেষ্টা করছেন, তাঁদের মতো বিজ্ঞ মানুষ আমি নই। নানান সমস্যার মধ্যে থেকে খোলা চোখ ও মন নিয়ে চার দিকটাকে বুঝতে চেষ্টা করলে কিছুটা জ্ঞান সঞ্চিত হয়; আমার সুন্দরবন সম্পর্কে কিছু বলার দাবি একমাত্র সেই কারণেই।

পশ্চিমবাংলায় অতি সম্প্রতি একটা রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে। কোনও দলীয় রাজনীতির সঙ্গে আমার গত পাঁচ দশক কোনও সম্পর্ক নেই। তবে সমাজ সচেতন মানুষ হিসেবে আমার বিশ্বাস, মানুষই এই পরিবর্তন চেয়েছেন এবং ঘটিয়েছেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এই বিরুদ্ধ রাজনৈতিক শক্তি অভাবনীয় সাফল্য নিয়ে ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন। এঁদের কাছে মানুষের প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। প্রসঙ্গত একটা ঘটনার কথা বলি। গাঁধীজির এক পুত্র মণিলাল গাঁধী দক্ষিণ আফ্রিকায় থেকে গিয়েছিলেন। তাঁর কন্যা শ্রীমতী এলা গাঁধী দক্ষিণ আফ্রিকায় নেলসন ম্যাণ্ডেলার মুক্তির পর পরিবর্তনের জোয়ারে দক্ষিণ আফ্রিকার পার্লামেন্টের সদস্য হন। আমার দীর্ঘকালের পরিচিত পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় ভূতপূর্ব রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধীর পরামর্শে তিনি আমার ডেরা রাঙাবেলিয়ায় হাজির হয়েছিলেন। কথায় কথায় বলছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় যাঁরা আমাকে ভোট দিয়েছেন, তাঁরা রোজ নানা অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে শ'য়ে শ'য়ে দাবি নিয়ে উপস্থিত হন। তাঁদের সব প্রত্যাশা পূরণ অসম্ভব, কিন্তু এই জাগ্রত জনমত আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। এঁরা দীর্ঘকাল নানা শোষণ, বঞ্চনা এবং অত্যাচারের শিকার, আজ মুক্তির স্বাদ ভোগ করতে চান। আমরাই সে স্বপ্ন দেখিয়েছি। তাই আমরা এঁদের কাছে দায়বদ্ধ। এই কাহিনির সূত্রে বলি, পশ্চিমবাংলাতেও যাঁরা ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁরা মানুষের বিক্ষোভ, আবেগ, প্রত্যাশা এবং প্রতিশ্রুতির জোয়ারে ক্ষমতাসীন। তাই তাঁদের দায়বদ্ধতা এই মানুষগুলির কাছে অনেক বেশি।

সুন্দরবনের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। এই বিলুপ্তির সম্ভাবনা নানা কারণে দেখা দিয়েছে এবং শুধুমাত্র স্থানীয় ভাবে এই সমস্যাগুলি দূর করার কোনও পথ নেই। প্রথমত, সারা বিশ্বময় যে প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে, তার প্রভাব সুন্দরবনের মতো দুর্বলতম অংশগুলিকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা দেখছি অসংখ্য নদী বেষ্টিত সুন্দরবনে জোয়ারে বেশি পরিমাণ জল ঢুকে জলস্তর ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠছে। ফলে বিশেষ করে সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে দ্বীপগুলি সমুদ্র গ্রাস করে নিচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, সুন্দরবন ঝড়ঝঞ্ঝাপ্রবণ এলাকা। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে এবং সেটা সাইক্লোন হয়ে উপকূলবর্তী অঞ্চলে ভয়াবহ রূপ নিয়ে তা আছড়ে পড়ছে। যত দিন যাচ্ছে, ঝড়ের গতিবেগ এবং ঝড়ের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। ২০০৯ সালে আয়লার দগদগে ক্ষত এখনও দৃশ্যমান। দরিদ্র মানুষ দ্বীপ ছেড়ে পালাচ্ছেন। যাঁরা পড়ে আছেন, তাঁরা ধুঁকে ধুঁকে বাঁচছেন।

তৃতীয়ত, সুন্দরবন কতকগুলি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের সমষ্টি। পশ্চিমবঙ্গে এমন দ্বীপের সংখ্যা ১০২টি। এর মধ্যে ৫৪টি দ্বীপে বন কেটে বসত গড়ে উঠেছে। তার জন্য জঙ্গল পুরো ধ্বংস করে দিতে হয়েছে। আজ প্রকৃতি প্রত্যাঘাত করায় সুন্দরবনকে বার-বার আঘাত খেতে হচ্ছে।

সুন্দরবনে বসত গড়ার একটা পূর্বশর্ত ছিল ভরা জোয়ারে জলের উচ্চতা দ্বীপের উচ্চতা থেকে ২/৩ ফুট উপরে থাকবে। কারণ, পলি জমে দ্বীপ যতটুকু উঁচু হলে মানুষের বসতি গড়া উচিত ছিল, তার অনেক আগেই মানুষ সেখানে বসতি গড়ে তুলেছে। সে কারণে জোয়ারের এই বাড়তি জল আটকাবার জন্য দ্বীপগুলিকে মাটির বাঁধ দিয়ে ঘিরে ফেলতে হয়েছিল। যে ৫৪টা দ্বীপে মানুষের বসতি গড়ে উঠেছে, সেই দ্বীপগুলিকে ঘিরে ৩৫০০০ কিলোমিটার বাঁধ জমিদারদের তৈরি করতে হয়েছিল। এই নদীবাঁধ সুন্দরবনের জীবনরেখা, যা জন্মলগ্ন থেকেই দুর্বল। এই বাঁধের অবস্থা দুুর্বলতর হতে হতে এখন যে-কোনও মুহূর্তে যে-কোনও জায়গায় ভাঙন ধরে নদীর লোনা জল ঢুকে প্লাবন ঘটাতে পারে। আয়লার ঝড়ে ৭৬৭ কিলোমিটার নদীবাঁধ সম্পূর্ণ উড়ে গিয়েছিল। বাঁধের অন্য অংশের অবস্থাও প্রায় একই রকম।

এই সমস্যাগুলি সুন্দরবনকে চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন করে তুলতে পারে। তাই আশা করব, অসামান্য সৌন্দর্যের আধার সুন্দরবন এবং তার প্রায় ৪৫ লক্ষ মানুষের প্রাণ, জীবন ও জীবিকায় নিশ্চয়তা আনার চেষ্টা এই সরকার করবে। তা করতে গেলে অনেক গভীর ভাবে সুন্দরবনের সমস্যা ও সম্ভাবনার দিকগুলি তথ্য-ভিত্তিক জানতে হবে। সরকারকে সুন্দরবনবাসীদের সর্বস্তরে যুক্ত করে সমাধানের অভিমুখগুলি ঠিক করতে হবে। ওপর ওপর কিছু দফতর-ভিত্তিক কার্যসূচি নিয়ে চেষ্টা করলে অঢেল টাকা খরচ হবে, দুর্নীতি প্রশ্রয় পাবে, কিন্তু কাজটা হবে না।

তথ্য এবং বিজ্ঞান-ভিত্তিক একটা সামগ্রিক পরিকল্পনা তৈরি করে তার সৎ এবং স্বচ্ছ রূপায়ণ হয়তো সুন্দরবনকে বাঁচানোর প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে। এই সরকার রাজ্য, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের মেধা এবং সম্পদকে সমন্বিত করে গোটা বিশ্বের সম্পদ সুন্দরবনকে রক্ষা করার কাজে ব্রতী হবে, এটাই সুন্দরবনবাসীর প্রত্যাশা।

'অস্ত্র-নাটক' নিয়ে উদ্বেগ

'গঠনমূলক' বিরোধিতাই, বোঝালেন সূর্য-সুশান্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

স্ত্র উদ্ধারের নামে দলের কর্মীদের 'ফাঁসানো' এবং 'সন্ত্রাসে'র ঘটনায় উদ্বিগ্ন হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে প্রাথমিক ভাবে সহযোগিতার রাস্তাতেই হাঁটতে চাইছে সিপিএম। বিধায়ক হিসেবে শপথ নেওয়ার পরে ভাবী বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র গঠনমূলক বিরোধিতা'র উপরেই জোর দিয়েছেন। সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি মেনে আলাপ-আলোচনার পথেই সমস্যা সমাধানের রাস্তা বেরোবে তিনি আশাবাদী।

বিরোধী হিসেবে নিজেদের ভূমিকা প্রসঙ্গে সূর্যবাবু মঙ্গলবার বলেন, "আমরা সরকারকে সময় দেব। ভাল কাজ করলে সমর্থন করব। জনবিরোধী কাজ হলে বিরোধিতা করব। বিধানসভার বাজেট অধিবেশন আসবে। তখন বিষয় ধরে ধরে আলোচনা হবে।" নতুন সরকারকে কাজ করার জন্য সাধারণ ভাবে ৬ মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় দেওয়ার কথা বলছে সিপিএম। তবে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সূর্যবাবু এ দিন একই সঙ্গে বলেছেন, "সরকারকে সময় আমরা দেব। তবে অস্ত্র উদ্ধার বা দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উপরে আক্রমণ নিয়ে বাড়াবাড়ি হলে তো ৬ মাস বসে থাকা যায় না! তখন ৬ দিনেও মীমাংসার কথা আসতে পারে। তবে আমরা গঠনমূলক বিরোধীর ভূমিকাই পালন করব।"

সূর্যবাবুর মতোই সিপিএমের আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ডাকসাইটে নেতা সুশান্ত ঘোষের কথা থেকেও সরকারের প্রতি প্রাথমিক সহযোগিতার মনোভাবই স্পষ্ট হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্তবাবু এ দিন বলেছেন, "নতুন মন্ত্রী (পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন) চাইলে সাহায্য করতে চেষ্টা করব।" নারায়ণগড়ের সূর্যবাবু, গড়বেতার সুশান্তবাবুর পাশাপাশিই পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম-সহ বেশ কয়েকটি জেলার বিধায়কেরা এ দিন শপথ নেন। প্রথম দিন হাজির থাকতে না-পারায় এ দিন শপথ নিয়েছেন দুই মন্ত্রী, তৃণমূলের অমিত মিত্র এবং সাধন পাণ্ডেও।

সার্বিক ভাবে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার কথা বললেও অস্ত্র উদ্ধারের 'নাটক' নিয়ে সিপিএম নেতৃত্ব যথেষ্টই চিন্তিত। এ দিন বিধানসভার লবিতে সূর্যবাবু বলেন, "পশ্চিম মেদিনীপুরে এমন ঘটনা ঘটেছে যে, পুলিশ তল্লাশি করে অস্ত্র পায়নি। নথি আমাদের কাছে আছে যেখানে পুলিশ বলছে, অস্ত্র পাওয়া যায়নি। পরে সেখানে অস্ত্র রেখে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে!" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "সাধারণ ভাবে কিছু কিছু অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। তবে এলাকাগুলো মাওবাদী প্রভাবিত ছিল বলে ওই অস্ত্রের সূত্র নির্ণয় করা মুশকিল। কিন্তু অস্ত্র উদ্ধারকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে দলীয় কার্যালয় ও কর্মীদের উপরে আক্রমণ মেনে নেওয়া যায় না।"

জঙ্গলমহলে সিপিএমের 'সশস্ত্র শিবির' চালানোর ক্ষেত্রে যাঁকে বারেবারেই কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে, সেই সুশান্তবাবু অবশ্য অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। সুশান্তবাবুর কথায়, "অস্ত্র নিয়ে কোনও কথা বলব না। কারণ আমি যা-ই বলি, সেটা নিয়ে অন্য গল্প হবে! এই বিষয়ে যা বলার, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বলবেন।" সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও এ দিন পিস হেভ্‌ন-এ নিহত এক কর্মীর মরদেহে মালা দিতে গিয়ে শান্তি রক্ষার ব্যাপারে রাজ্য সরকারকেই উদ্যোগী হতে বলেছেন।

রাজনৈতিক হিংসা বন্ধের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে কথা বলেছেন জোট-শরিক কংগ্রেসের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও। তিনি বলেন, "যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক ও দুঃখজনক। নির্বাচনোত্তর পর্বে যাঁরা নিহত হয়েছেন, আমরা তাঁদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহানুভূতি জানাচ্ছি। কিন্তু ৬ জন মারা গিয়েছেন। সিপিএম ক্ষমতায় এলে ৬০০, এমমকী, ৬ হাজার লোক মারা যেতেন!"

সন্ত্রাসের অভিযোগে জগদ্দলে গ্রেফতার তৃণমূল নেতা

নিজস্ব সংবাদদাতা • ব্যারাকপুর

লাকায় সন্ত্রাস করার অভিযোগে জগদ্দলের এক তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করছ পুলিশ। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকে বেশ কিছুক্ষণ কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ও ঘোষপাড়া রোড অবরোধ করে রাখেন ওই নেতার অনুগামীরা। পুলিশ জানিয়েছে, শ্যামনগর আঁতপুর অঞ্চলের যুব তৃণমূল নেতা অরুণ ব্রহ্মকে সোমবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। এলাকারই বেশ কয়েকটি নির্মীয়মাণ বাড়ি থেকে তোলা আদায়ের অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। সোমবার স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জয় শূর জগদ্দল থানায় অরুণবাবুর বিরুদ্ধে বাড়িতে হামলা চালানোর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

এদিকে, এলাকায় প্রতিবাদী নেতা হিসাবে পরিচিত অরুণবাবু তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার বলে দাবি করেছেন তাঁর অনুগামীরা। যদিও জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক পরশ দত্ত বলেন, "ওই অভিযোগ ঠিক নয়। কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নয়, একজন সাধারণ নাগরিক আমাদের দলের ওই কর্মীর বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ে হামলার অভিযোগ করেন।" তিনি জানান, এ জন্য দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করবে কি না তা বুধবার দলীয় বৈঠকে ঠিক হবে। তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি তথা পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ অবশ্য এই গ্রেফতারের বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, "অরুণ ভাল ছেলে বলে এলাকায় পরিচিত। তবে আইন মেনেই যা করার করা হবে।" ব্যারাকপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধ্রুবজ্যোতি দে বলেন, "এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। মারধরের অভিযোগে ওই নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।"

প্রশাসনকে নিয়ে তল্লাশি না চালালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে

হামলার নালিশ, মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ সিপিএম

নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ

বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে নেমে মঙ্গলবারও গোঘাটে সিপিএম নেতা-কর্মীদের বাড়ি ঘেরাও করল তৃণমূল। মারধরের ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ। কিছু বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।

সেখানে কারও বাড়ি থেকে অস্ত্র না পাওয়া গেলেও তৃণমূলের দেওয়া সূত্র ধরে সোমবার রাতে আরামবাগের বাছানরী এবং খানাকুলের হায়াতপুর থেকে কিছু অস্ত্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। বাছানরী গ্রামের ঘোলপুকুর-সংলগ্ন একটি পরিত্যক্ত জায়গা থেকে ২টি মিনি কামান, ৭টি তরোয়াল এবং ১৩টি বোমা উদ্ধার হয়। হায়াতপুরে একটি পুরনো মন্দিরে লুকোনো ড্রাম থেকে একটি পাইপগান ও ২৬টি বোমা বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার সকাল থেকে উত্তেজনা ছিল আরামবাগের মধুরপুরের পশ্চিমপাড়ায়. সেখানে একটি পুকুর থেকে একটি মিনি কামান এবং কয়েকটি বারুদের গোলা মিলেছে। পুইন, হরিণখোলা, কেশবপুর, রসুলপুর ছাড়াও গোঘাটের শ্যাওড়া, মান্দারন, খানাকুলের ঘোষপুর, রাজহাটি গ্রামেও অস্ত্রের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে জনতা।

আরামবাগে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রশস্ত্র। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

পুড়শুড়ায় আবার ছিল উল্টো চিত্র। সেখানে ডিহিবাতপুরের বেনেপুকুরে তৃণমূলের একটি পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। রাতের ঘটনার কথা জানাজানি হয় মঙ্গলবার সকালে। ৪ জন সিপিএম কর্মীকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় তৃণমূলের লোকজন। তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

এ দিন খানাকুল এবং গোঘাটে ঘেরাও-পর্ব বেশি ক্ষণ চলেনি। তবে আরামবাগের গ্রামগুলিতে অশান্তির মাত্রা বাড়ে। মধুরপুরে সিপিএম নেতা তথা আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ নিতাই মাণ্ডি-সহ দলের কর্মী বিজয় কোলে ও উত্তম কোলের বাড়িতে অস্ত্র আছে বলে দাবি তুলে তাঁদের মারধর করা হয়। সকলকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাঁদের আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুইন গ্রামে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাতে গিয়ে ৫ মহিলা-সহ জনা কুড়ি সিপিএম কর্মীকে চড়-থাপ্পড় মারার অভিযোগ উঠেছে। রসুলপুর গ্রামে ইন্দ্র সাল এবং প্রভাত ঘোষ নামে দুই সিপিএম কর্মীকেও মারধর করা হয়। পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে। কেশবপুর গ্রামে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক স্বপন বাগের বাড়িতে অস্ত্র আছে এই অভিযোগে তাঁর বাড়িতে চড়াও হয় কিছু লোক। ভাঙচুর চালানো হয়। অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া না গেলেও তাঁকে স্কুলে যেতে বারণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার তিনি থানায় অভিযোগ জানান। বিকেলে মধুরপুরে কয়েকটি বাড়িতে অস্ত্রের খোঁজে গিয়ে কয়েক জনকে মারধর, বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

তৃণমূলের বিরুদ্ধে লাগাতার হামলার নালিশ জানিয়ে এ দিনই ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক শুভঙ্কর সরকারের দ্বারস্থ হয় সিপিএম। হাজির ছিলেন দলের নেতা বিনয় দত্ত, সাংসদ শক্তিমোহন মালিক। বিনয়বাবুর বক্তব্য, "মানুষ বোকা নয়। তাঁরা সব দেখছেন। তাঁরাই বিচার করবেন।" মহকুমা প্রশাসনের কাছে সিপিএমের দাবি, অস্ত্রের তল্লাশি চলুক। কিন্তু তা হোক প্রশাসনের তদারকিতে। তৃণমূলের 'গুণ্ডামিতে' তাঁরা অতিষ্ঠ। ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক জানান, আরামবাগে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের ক্ষেত্রে একজিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট হিসাবে আরামবাগের বিডিও মৃণালকান্তি গুঁইকে দায়িত্ব দেওয়া হল। তাঁর নির্দেশ এবং পরিচালনাতেই অভিযান চলবে। বাইরের কেউ সংবাদ দিতে পারেন। কিন্তু নিজেরা তল্লাশি চালাতে গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

মানিকচকে তৃণমূল কর্মীর কব্জি কেটে নিল দুষ্কৃতীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা • মালদহ

হাঁসুয়ার কোপে এক তৃণমূল কর্মীর কব্জি কেটে নিল দুষ্কৃতীরা। সোমবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে মালদহের মানিকচক থানার জোতপাট্টা গ্রামে। বিশ্বজিৎ মণ্ডল নামে ওই তৃণমূল কর্মীকে রাতে দুষ্কৃতীরা বকেয়া টাকা দেওয়ার নাম করে ডেকে নিয়ে গিয়ে হাঁসুয়া দিয়ে কোপায় বলে অভিযোগ। জখম যুবককে মালদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হামলাকারীরা সিপিএমের আশ্রিত দুষ্কৃতী বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল। রাজ্যের শিশু, নারী ও সমাজ কল্যাণমন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের অভিযোগ, "নির্বাচনে আমার হয়ে কাজ করাতেই সিপিএম বিশ্বজিতের উপরে হামলা চালায়। পুলিশকে বলেছি, অবিলম্বে গ্রেফতার করুক দুষ্কৃতীদের।"

সিপিএম অবশ্য দাবি করেছে, ওই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। দলের জেলা সম্পাদক জীবন মৈত্র বলেন, "এটা কোনও রাজনৈতিক সংঘর্ষ নয়। কারা ওই যুবকের উপরে হামলা করেছে সেটা গ্রামের লোকেরা দেখেছেন। হামলাকারীদের সঙ্গে আমাদের দলের কোনও যোগাযোগ নেই।" রাজনৈতিক কারণে ওই যুবকের উপরে হামলা হয়েছে কি না, সেই ব্যাপারে সন্দিহান পুলিশও। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, "জখম যুবক তৃণমূল কর্মী হলেও হামলার পিছনে রাজনীতি রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। জেনারেটর ভাড়ার টাকাপয়সা নিয়ে গোলমালের জেরে ওই হামলার ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে।"

হাসপাতালে জখম তৃণমূল কর্মী।— মনোজ মুখোপাধ্যায়

জখম যুবক পেশায় জেনারেটর মিস্ত্রি। সম্প্রতি তিনি রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় পাশ করেন। মৌখিক পরীক্ষার জন্য কলকাতায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এলাকার অখিল মণ্ডল নামে এক যুবকের জেনারেটর দেখভাল করতেন তিনি। সম্প্রতি গ্রামের এক যুবক ওই জেনারেটরটি ভাড়া নেন। কিন্তু বকেয়া টাকা মেটাচ্ছিলেন না। ইতিমধ্যে বিধানসভা নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যায়। মানিকচক কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সাবিত্রী মিত্রের হয়ে বিশ্বজিৎও প্রচারে নামেন। বিশ্বজিতের দিদি নিভাদেবীর অভিযোগ, "তৃণমূলের হয়ে প্রচারে নামতেই মিঠুন মণ্ডল-সহ কয়েকজন ভাইকে রাস্তায় ডেকে শাসায়। ভাই কারও কথা শোনেনি। তার জেরেই হামলা বলে মনে হচ্ছে।"

এ দিন মালদহ সদর হাসপাতালে শুয়ে জখম যুবক বলেন, "রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ ওরা ফোন করে বকেয়া টাকা নিয়ে যেতে বলে। মোটর সাইকেলে চড়ে আমি ওই এলাকায় পৌঁছতেই মিঠুন মণ্ডল-সহ ৪-৫ জন আমাকে হাঁসুয়া দিয়ে কোপাতে থাকে। কেন আমি তৃণমূলের হয়ে কাজ করেছি, তা তারা জানতে চায়। মিঠুনই আমার হাতে কোপ দেয়।"

পালাবদলে দলবদলের হিড়িক সব দলেই

অরিন্দম সাহা • কোচবিহার

কেউ আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কেউ বামফ্রন্টের প্রধানের বিরুদ্ধে তৃণমূলের সদস্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অনাস্থার আবেদন জানিয়েছেন। কোথাও সিপিএমের টিকিটে নির্বাচিত হয়েও তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে লিখিত ভাবে আবেদন করেছেন জনপ্রতিনিধিরা। সব মিলিয়ে রাজনীতির উল্টো পুরাণের আবহে বাম-বিজেপির নিচুতলার জনপ্রতিনিধিদের শিবির বদলে তৃণমূলে যাওয়ার যেন হিড়িক পড়েছে কোচবিহারে। বিভিন্ন এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দলে রাখা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে বাম-বিজেপি শিবিরে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার-১ এবং তুফানগঞ্জ ২ ব্লকে বাম-বিজেপি'র নিচু তলার জনপ্রতিনিধিদের শিবির বদলে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার একাধিক উদাহরণ প্রকাশ্যে এসেছে। সোমবার কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের পানিশালা গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য আনোয়ারা বিবি অনুগামীদের নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মজিবর রহমান তাদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন। তাতে পঞ্চায়েতে তৃণমূল সদস্য সংখ্যা বেড়ে ৯ জন হল। ওই ব্লকেরই ফলিমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭ জন সিপিএম সদস্য এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের ১ জন সদস্যও তৃণমূলে যোগ দিয়ে বামফ্রন্ট প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন বিডিওকে। গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম দলনেতা দ্বিজেন দাস বলেন, "পরিস্থিতি বিচার করেই দলের অন্য ছয় সদস্যের সঙ্গে আমিও তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। অনাস্থাও আনা হয়েছে। সিদ্ধান্তের কথা শীঘ্রই আনুষ্ঠানিক ভাবে দলের নেতৃত্বকে জানিয়ে দেব।" বামফ্রন্টের সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক সদস্যদের একাংশের সমর্থনে তাদেরই দখলে থাকা ঘুঘুমারি এবং খোয়ামারি গ্রাম পঞ্চায়েতেও অনাস্থা এনেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তার মধ্যে ১৭ সদস্যের ঘুঘুমারি গ্রাম পঞ্চায়েতে অনাস্থায় সাক্ষরকারী ১০ জনের মধ্যে বাম শিবিরের ৫ জন। মোয়ামারি গ্রাম পঞ্চায়েতে অনাস্থা প্রস্তাবে সই করা ৬ জনের মধ্যে ৪ জনই বামেদের টিকিটে জিতেছিলেন। কোচবিহার ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি খোকন মিঁয়া বলেছেন, "তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে দুর্নীতি, স্বজনপোষণে বীতশ্রদ্ধ সকলেই। বাম প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থায় সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লকের একটা বড় অংশ তাই আমাদের সমর্থন করছেন। অনেকেই ইতিমধ্যে তৃণমূলে যোগও দিয়েছেন।" তুফানগঞ্জ ২ ব্লকেও সিপিএম-বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আবেদন বাড়ছে। ভানুকুমারী ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান অনন্ত বর্মা, উপপ্রধান ভজন আর্য-সহ ফলিমারি এবং বারকোদালি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তত ১৪ জন সদস্য রয়েছেন। তুফানগঞ্জ ২ পঞ্চায়েত সমিতির ৩ জন বিজেপি, ২ জন সিপিএম সদস্যও আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের ব্লক কার্যকরি সভাপতি স্বপন সাহা। আলাদা ভাবে হলেও ভানুকুমারী-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান দু'জনেই বলেন, "মানুষের পরিবর্তিত রায় দেখেই উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলে যোগ দিতে লিখিত আবেদন জানিয়েছি।" সিপিএম ফরওয়ার্ড ব্লক এবং বিজেপি নেতৃত্বও তাদের টিকিটে জয়ী জনপ্রতিনিধিদের এমন দল বদলের কথা উড়িয়ে দিতে পারছেন না। কোচবিহার দক্ষিণ জোনাল সিপিএম সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য বঙ্কিম পাল বলেন, "পানিশালায় দলীয় পঞ্চায়েত সদস্য আনোয়ারাবিবি চাপের মুখে বাধ্য হয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ফলিমারির ৭ জন, ঘুঘুমারির ২ জন দলীয় পঞ্চায়েত সদস্য সন্ত্রাসে নিরুপায় হয়ে তৃণমূলের আনা অনাস্থায় সই করেন। তবে ঘুঘুমারির ২ জন সদস্য নিজেদের ইচ্ছায় শিবির বদল করেছেন বলেও খবর পেয়েছি। দলীয় প্রতীকে জিতে আমাদের পঞ্চায়েত সদস্য যাঁরা অনাস্থায় সই করে আত্মসমর্পণ করছেন তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" সিপিএমের বক্সিরহাট জোনাল কমিটির সম্পাদক ধনঞ্জয় রাভা জানান, ভানুকুমারী ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান-সহ আরও কিছু পঞ্চায়েত সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তৃণমূল নিজের দলে টানতে চাইছে। গোটা ব্লকে সন্ত্রাসের যা পরিস্থিতি তাতে কত জন জনপ্রতিনিধিদের শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারব তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। ফরওয়ার্ড ব্লক কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, "সন্ত্রাস, হুমকি-সহ নানাভাবে চাপ দিয়ে কোচবিহার-১ ব্লকের তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে অনাস্থায় দলীয় সদস্যদের সই করানো হচ্ছে। প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।" বিজেপি'র কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিল রঞ্জন দে জানান, জেলা জুড়ে সন্ত্রাস, জনপ্রতিনিধিদের যে ভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে তাতে তাঁদের ধরে রাখা কঠিন। দলবদলের হিড়িক মেখলিগঞ্জ, মাথাভাঙায়ও। সোমবারই মেখলিগঞ্জ পুরসভার বাম প্রভাবিত সংগঠন ছেড়ে ১১ সদস্য কংগ্রেস সংগঠনে যোগ দেন বলে জানিয়েছেন মহকুমা কংগ্রেস সভাপতি মায়াশঙ্কর সিংহ। মাথাভাঙায় সিটু ছেড়ে শতাধিক সমর্থক তৃণমূলে এসেছেন।

অভিযুক্ত কংগ্রেস

মুর্শিদাবাদে সিপিএম সমর্থক বাবা-ছেলে খুন, ধৃত ২

নির্বাচন-উত্তর পর্বে রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার পক্ষে বার বার সওয়াল করেছেন বাম-বিরোধী জোটের নেত্রী, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই পরিস্থিতিতে সিপিএম সমর্থক পিতা-পুত্রকে ঘরে আগুন লাগিয়ে এবং কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলেরই জোট-সঙ্গী কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।

নিহতদের নাম মহিবুল শেখ (৫৫) ও মোফাজ্জুল শেখ (১৮)। বাড়ি মুর্শিদাবাদের রেজিনগরের কাপাসডাঙায়। সোমবার গভীর রাতের এই ঘটনায় আহত হন মহিবুলের বৃদ্ধা মা সারবানু বিবি, মেয়ে রকিয়া খাতুন এবং নাতি শাহজামাল। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে স্থানীয় কংগ্রেস কর্মী মঞ্জুর হোসেন-সহ দু'জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সিপিএম আজ, বুধবার জেলা জুড়ে ১২ ঘণ্টা বন্‌ধের ডাক দিয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক নৃপেন চৌধুরী বলেন, "মহিবুল আমাদের কট্টর সমর্থক ছিলেন। কংগ্রেস মানুষ খুন করে বিজয় উৎসব পালন করছে।" কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অধীর চৌধুরী অবশ্য দাবি করেন, "কাপাসডাঙায় দীর্ঘ দিন ধরেই সিপিএমের অন্তর্দ্বন্দ্ব রয়েছে। তার জেরেই এই খুন। তবে যে-ই খুন করুক না কেন, পুলিশের উচিত তাদের দ্রুত গ্রেফতার করা।"

হিংসা অবিরাম আগুনে ধসে গিয়েছে মহিবুল শেখের বাড়ির ছাদ।
রেজিনগরের কাপাসডাঙায়। —গৌতম প্রামাণিক

রেজিনগরে কংগ্রেসের সদ্য জয়ী বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের বিজয় মিছিল ছিল সোমবার। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই রাতে কিছু কংগ্রেস কর্মী মহিবুল শেখের বাড়িতে বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ। মহিবুল তখন ছেলে মোফাজ্জুলকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে রাগারাগি করায় হামলাকারীরা পালায়। কিন্তু রাত ১১টা নাগাদ তারা ফের দলবল নিয়ে ফিরে আসে।

কাপাসডাঙা পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান সাজিবুর রহমানের দাবি, "এলোপাথাড়ি বোমায় মহিবুলের বাড়ির এক মহিলা আহত হন। তাঁকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে, তখনই কংগ্রেস কর্মীরা আবার ওই বাড়ি আক্রমণ করে।"

মহিবুল তখন ছেলেকে নিয়ে একটি ঘরে ঢুকে ভিতর থেকে খিল আটকে দেন। সাজিবুরের অভিযোগ, "কংগ্রেস কর্মীরা বাইরে থেকে সেই ঘরের চার দিকে পাটকাঠিতে পেট্রোল জ্বেলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। ঘরের দরজাটা পুড়ে ভেঙে পড়লে মহিবুল সেখান থেকে বেরোনোর চেষ্টা করেন। তাঁকে সেখানেই কুপিয়ে মারা হয়। মোফাজ্জুল অগ্নিদগ্ধ হয়ে ওই ঘরেই মারা যান।" রাত ২টো নাগাদ পুলিশ পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। কাদামাটির রাস্তা পেরিয়ে দমকল পৌঁছতে ৩টে বেজে যায়। ততক্ষণে ওই বাড়ির ছ'টি ঘর পুড়ে গিয়েছে। ধসে গিয়েছে ছাদ। আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছে বাড়ির একটি গরু ও বেশ কিছু মুরগিও।

মহিবুল কৃষিজীবী। মোফাজ্জুল মুম্বইতে দিনমজুরি করেন। সিপিএমের বেলডাঙা লোকাল কমিটির সম্পাদক আবুল কাশেমের দাবি, "রাজনৈতিক কারণে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবেই এই খুন করা হয়েছে।" তবে মহিবুলের মেয়ে মনিফা বিবি বলেন, "ভাই মাত্র কয়েক দিন হল বাড়ি এসেছে। ও রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্তও নয়। বাবারও সে ভাবে কোনও শত্রু নেই। কেন তাঁদের এই ভাবে খুন করা হল জানি না।" মঙ্গলবার কাপাসডাঙাই ছিল থমথমে। সিপিএম বড়ুয়া মোড়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। এলাকায় ছিল পুলিশের কড়া নজরদারি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপনারায়ণ গোস্বামী বলেন, "২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ৭ জনকে আটক করা হয়। পরে দু'জনকে ধরা হয়েছে।"

এ দিনই স্থানীয় নাজিরপুরে আর একটি বিজয় মিছিলে কংগ্রেস কর্মীদের হাতে রেজিনগর থানার এক এএসআই-সহ দুই পুলিশ জখম হন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, "বিজয় মিছিল থেকে কিছু মদ্যপ যুবক পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে। তাদের মারধরে দুই পুলিশকর্মী জখম হন, গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে।" বিধায়ক হুমায়ুন কবীর অবশ্য বলেন, "বিজয় মিছিলকে ঘিরে একটু বিশৃঙ্খলা হয়। পুলিশের উচিত ছিল আরও সতর্ক থাকা। কিছু কংগ্রেস কর্মী পুলিশের লাঠিতে আহত হয়েছেন।"

--
Palash Biswas
Pl Read:
http://nandigramunited-banga.blogspot.com/

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

PalahBiswas On Unique Identity No1.mpg

Tweeter

Blog Archive

Welcome Friends

Election 2008

MoneyControl Watch List

Google Finance Market Summary

Einstein Quote of the Day

Phone Arena

Computor

News Reel

Cricket

CNN

Google News

Al Jazeera

BBC

France 24

Market News

NASA

National Geographic

Wild Life

NBC

Sky TV