Rare interview of Bangabandhu,pl share!
ধারণ করেছিলেন বাঙালি নামের এক জনগোষ্ঠীর প্রাণের আকাঙ্ক্ষা, তবে পরিণত হয়েছিলেন বিশ্বনেতায়। বিশ্বব্যাপী আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন টুঙ্গিপাড়ার সন্তান শেখ মুজিবুর রহমান। আমাদের এই ভূখণ্ডে বিশ্ব ইতিহাসের এক অনন্য রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল একটি প্রতিককে, একটি নামকে সঙ্গে নিয়ে। সেই নামটি শেখ মুজিবুর রহমান। রাষ্ট্রীয় পরিচয়ে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আর সেই একাত্তরের সাড়ে সাত কোটি মানুষের কাছে তিনি যেন একই মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া ভাই, মুজিব ভাই!
একটি জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে ভাষা দিয়ে শেখ মুজিব বিশ্বব্যাপী হয়ে ওঠেন মানুষের স্বাধীনতা আর মুক্তির এক প্রতিকি ব্যক্তিত্বে। সঙ্গতকারণেই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তিনি তখন একান্ত কাঙ্ক্ষিতজন। ৭২এর সূচনালগ্নে বিশ্বজনমতের চাপে পাকিস্তান যখন তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়, তার পরপরই বাঙালির এই অবিসংবাদিত নেতার সাক্ষাৎকার সমেত একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ। প্রতিনিধি পিটার জেনিংস এবং হাওয়ার্ড টাকনারের ‘বাংলাদেশ’ নামের ওই তথ্যচিত্রে স্বাধীনতা পরবর্তী বিধ্বস্ত বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জগুলো খুঁজে দেখার চেষ্টা করা হয়।ইংরেজী ভাষার ২৬ মিনিটের ওই তথ্যচিত্রের খণ্ড খণ্ড সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেন জানিয়ে দিতে চান মানুষের ভালোবাসার শক্তি দিয়েই উঠে দাঁড়াবে বিধ্বস্ত দেশ।
‘বাংলাদেশ’ নামের তথ্যচিত্রটি শুরু করা হয় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বলা হয়, বঙ্গবন্ধুই এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের মানুষের একমাত্র ভরসা।
এবিসি নিউজের কাছে বঙ্গবন্ধু ভালোবাসায় বিশ্বাসী ‘বাংলাদেশি জীবন দর্শন' তুলে ধরেন। জোর দিয়ে তিনি বলেন ‘আমরা মানুষ। আমরা কারও বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চাই না। আমরা বলতে চাই, একটি স্বাধীন ও মুক্ত দেশে আমরা মানুষের মত বাঁচতে চাই। আর বাংলাদেশ হল সেই বাস্তবতা। আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাসী না, আমরা বাংলাদেশি জীবন দর্শনে বিশ্বাসী। আর তাহল ভালোবাসা, ভালোবাসা এবং ভালোবাসা।’
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের বাস্তবতা উঠে এসেছে ওই তথ্যচিত্রে। চারদিকে যখন হাহাকার আর দেউলিয়াত্ব, তখনও চিরচেনা একটি বিষয় ছিলো অটুট। আর তাহল মনোবল। সেই মনোবলকে সঙ্গী করে আনন্দ জিইয়ে রেখেছিলো তারা। আর এবিসি নিউজের প্রতিনিধির কাছে বাংলাদেশের মানুষের সেই মনোবলকে সঙ্গী করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু । বলেছিলেন, ‘জনগণ আমাকে ভালোবাসে, আমাকে শ্রদ্ধা করে, আমার দলের ওপর আস্থা রাখে। আমি বিশ্বাস করি, দেশের জনগণ আমাকে তাদের সমর্থন যুগিয়ে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রীত্বের পাশাপাশি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছিলেন বঙ্গবন্ধু। একসঙ্গে এতগুলো দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তার অনুভূতি কী তা জানতে চাওয়া হয় এবিসি নিউজের তরফে। জবাবে দেশের জনগণের তার প্রতি অপরীসিম ভালোবাসার উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু। বলেন, ‘আমার ক্ষমতা হল দেশের জনগণের ভালোবাসা। দেশের জনগণ আমাকে ভালোবাসে এবং স্নেহ করে। আমি জানি না, বিশ্বের অন্য কোন নেতা জনগণের এত ভালোবাসা পেয়েছেন কিনা।’
তথ্যচিত্রে রয়েছে যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশের পরিস্থিতির অবর্ণনীয় বর্ণনা। এমন প্রেক্ষাপটে কীভাবে পুনর্বাসিত হবে বাংলাদেশের মানুষ? বঙ্গবন্ধু এবিসি নিউজকে বলেন, ‘প্রথমে জনগণের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। এরপর তাদের বাড়ি-ঘরের ব্যবস্থা করতে হবে কারণ সেগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। আমার দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে এ সমস্যাগুলোই প্রবল হয়ে উঠেছে।’
বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় শিল্পগুলোর কথা উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু। যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত সেইসব শিল্পকে পুনঃসংগঠিত করার উপর জোর দেন তিনি। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমাদের রপ্তানিযোগ্য অনেক পণ্য আছে। আমাদের পাট আছে, চা আছে, চামড়া আছে, মাছ আছে, বনজ সম্পদ আছে। এগুলো খুবই সম্ভাবনাময়। এর মধ্য দিয়ে আমরা বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। তবে এগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এগুলো পুনংসংগঠিত করতে হবে এবং শিগগিরই সে কাজ শুরু করতে হবে।’
১৯৭১ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের তরফে নিরাপত্তা পরিষদে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা, ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্য স্ব স্ব সীমান্তের ভিতরে ফিরিয়ে নেওয়া এবং সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ মহাসচিবকে ক্ষমতা প্রদান করার জন্য এক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সেসময় বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ওই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভেটো প্রদান করেছিল রাশিয়া। তথ্যচিত্রে বলা হয়, এরইমধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের তরফে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া হলেও এখনও (যেসময় তথ্যচিত্রটি নির্মিত হয়) অপ্রত্যাশিতভাবে স্বীকৃতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে উল্লেখ করে তথ্যচিত্রে বলা হয়, দিন দিন সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে ঋণী হয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র এখনও (যেসময় তথ্যচিত্রটি নির্মিত হয়) স্বীকৃতি দেয়নি; মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে তবে তাও সীমিত আকারে। রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে এবিসি নিউজের সঙ্গে কথা বলেন বঙ্গবন্ধু।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল, ভেটো দিয়েছিল, আমাদের সহায়তা দিয়েছিল। বাংলাদেশ-রাশিয়ার বন্ধুত্ব অটুট থাকবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমরা অন্য কোন দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলব না। কারণ আমি জোটবিহীন, নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন ধারার পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করি এবং আমি কোন কিছুর মূল্যেই আমার স্বাধীনতা বেচে দিতে পারি না। সে যেই হোক না কেন।’
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে পাকিস্তানের ভেতরকার দ্বন্দ্ব বলে উল্লেখ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশবিরোধী অবস্থানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানান বঙ্গবন্ধু।
তিনি বলেন, ‘অন্তত মানবতার খাতিরে যুক্তরাষ্ট্রের এগিয়ে আসা উচিত ছিল। আমার দেশের দুর্ভাগা জনগণকে রক্ষা করতে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংসতা থেকে আমার দেশের নিরস্ত্র মানুষকে বাঁচাতে তারা এগিয়ে আসতে পারত। আমরা আশা করেছিলাম সেটা। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে মানবতার খাতিরে তারা প্রতিবাদ করতে পারত। পাকিস্তানকে অন্তত বলতে পারত, মানবতার খাতিরে এমনটা করো না। বলতে কষ্ট হচ্ছে আমার। তারা এটা করেনি।’
যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, ‘তোমরা ক্ষমতাধর দেশ আমরা জানি। কিন্তু ক্ষমতা মূলত জনগণ থেকে আসে মনে রেখ। তোমাদের ভিয়েতনামে যথেষ্ট সৈন্য আছে। কিন্তু সেটা ভুল। আদতে তোমরা ভিয়েতনাম জয় করতে পারনি। কারণ জনগণ এর বিপক্ষে। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সমরাস্ত্র সুসজ্জিত সেনাবাহিনী কে তৈরি করতে পেরেছে। যুক্তরাষ্ট্র তো? ভিয়েতনাম জয় করতে সবকিছুই পাঠিয়েছো তোমরা। কিন্তু জয় পেয়েছ? পাওনিতো।’
ধারণ করেছিলেন বাঙালি নামের এক জনগোষ্ঠীর প্রাণের আকাঙ্ক্ষা, তবে পরিণত হয়েছিলেন বিশ্বনেতায়। বিশ্বব্যাপী আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন টুঙ্গিপাড়ার সন্তান শেখ মুজিবুর রহমান। আমাদের এই ভূখণ্ডে বিশ্ব ইতিহাসের এক অনন্য রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল একটি প্রতিককে, একটি নামকে সঙ্গে নিয়ে। সেই নামটি শেখ মুজিবুর রহমান। রাষ্ট্রীয় পরিচয়ে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আর সেই একাত্তরের সাড়ে সাত কোটি মানুষের কাছে তিনি যেন একই মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া ভাই, মুজিব ভাই!
একটি জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে ভাষা দিয়ে শেখ মুজিব বিশ্বব্যাপী হয়ে ওঠেন মানুষের স্বাধীনতা আর মুক্তির এক প্রতিকি ব্যক্তিত্বে। সঙ্গতকারণেই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তিনি তখন একান্ত কাঙ্ক্ষিতজন। ৭২এর সূচনালগ্নে বিশ্বজনমতের চাপে পাকিস্তান যখন তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়, তার পরপরই বাঙালির এই অবিসংবাদিত নেতার সাক্ষাৎকার সমেত একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ। প্রতিনিধি পিটার জেনিংস এবং হাওয়ার্ড টাকনারের ‘বাংলাদেশ’ নামের ওই তথ্যচিত্রে স্বাধীনতা পরবর্তী বিধ্বস্ত বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জগুলো খুঁজে দেখার চেষ্টা করা হয়।ইংরেজী ভাষার ২৬ মিনিটের ওই তথ্যচিত্রের খণ্ড খণ্ড সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেন জানিয়ে দিতে চান মানুষের ভালোবাসার শক্তি দিয়েই উঠে দাঁড়াবে বিধ্বস্ত দেশ।
‘বাংলাদেশ’ নামের তথ্যচিত্রটি শুরু করা হয় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বলা হয়, বঙ্গবন্ধুই এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের মানুষের একমাত্র ভরসা।
এবিসি নিউজের কাছে বঙ্গবন্ধু ভালোবাসায় বিশ্বাসী ‘বাংলাদেশি জীবন দর্শন' তুলে ধরেন। জোর দিয়ে তিনি বলেন ‘আমরা মানুষ। আমরা কারও বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চাই না। আমরা বলতে চাই, একটি স্বাধীন ও মুক্ত দেশে আমরা মানুষের মত বাঁচতে চাই। আর বাংলাদেশ হল সেই বাস্তবতা। আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাসী না, আমরা বাংলাদেশি জীবন দর্শনে বিশ্বাসী। আর তাহল ভালোবাসা, ভালোবাসা এবং ভালোবাসা।’
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের বাস্তবতা উঠে এসেছে ওই তথ্যচিত্রে। চারদিকে যখন হাহাকার আর দেউলিয়াত্ব, তখনও চিরচেনা একটি বিষয় ছিলো অটুট। আর তাহল মনোবল। সেই মনোবলকে সঙ্গী করে আনন্দ জিইয়ে রেখেছিলো তারা। আর এবিসি নিউজের প্রতিনিধির কাছে বাংলাদেশের মানুষের সেই মনোবলকে সঙ্গী করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু । বলেছিলেন, ‘জনগণ আমাকে ভালোবাসে, আমাকে শ্রদ্ধা করে, আমার দলের ওপর আস্থা রাখে। আমি বিশ্বাস করি, দেশের জনগণ আমাকে তাদের সমর্থন যুগিয়ে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রীত্বের পাশাপাশি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছিলেন বঙ্গবন্ধু। একসঙ্গে এতগুলো দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তার অনুভূতি কী তা জানতে চাওয়া হয় এবিসি নিউজের তরফে। জবাবে দেশের জনগণের তার প্রতি অপরীসিম ভালোবাসার উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু। বলেন, ‘আমার ক্ষমতা হল দেশের জনগণের ভালোবাসা। দেশের জনগণ আমাকে ভালোবাসে এবং স্নেহ করে। আমি জানি না, বিশ্বের অন্য কোন নেতা জনগণের এত ভালোবাসা পেয়েছেন কিনা।’
তথ্যচিত্রে রয়েছে যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশের পরিস্থিতির অবর্ণনীয় বর্ণনা। এমন প্রেক্ষাপটে কীভাবে পুনর্বাসিত হবে বাংলাদেশের মানুষ? বঙ্গবন্ধু এবিসি নিউজকে বলেন, ‘প্রথমে জনগণের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। এরপর তাদের বাড়ি-ঘরের ব্যবস্থা করতে হবে কারণ সেগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। আমার দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে এ সমস্যাগুলোই প্রবল হয়ে উঠেছে।’
বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় শিল্পগুলোর কথা উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু। যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত সেইসব শিল্পকে পুনঃসংগঠিত করার উপর জোর দেন তিনি। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমাদের রপ্তানিযোগ্য অনেক পণ্য আছে। আমাদের পাট আছে, চা আছে, চামড়া আছে, মাছ আছে, বনজ সম্পদ আছে। এগুলো খুবই সম্ভাবনাময়। এর মধ্য দিয়ে আমরা বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। তবে এগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এগুলো পুনংসংগঠিত করতে হবে এবং শিগগিরই সে কাজ শুরু করতে হবে।’
১৯৭১ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের তরফে নিরাপত্তা পরিষদে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা, ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্য স্ব স্ব সীমান্তের ভিতরে ফিরিয়ে নেওয়া এবং সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ মহাসচিবকে ক্ষমতা প্রদান করার জন্য এক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সেসময় বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ওই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভেটো প্রদান করেছিল রাশিয়া। তথ্যচিত্রে বলা হয়, এরইমধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের তরফে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া হলেও এখনও (যেসময় তথ্যচিত্রটি নির্মিত হয়) অপ্রত্যাশিতভাবে স্বীকৃতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে উল্লেখ করে তথ্যচিত্রে বলা হয়, দিন দিন সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে ঋণী হয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র এখনও (যেসময় তথ্যচিত্রটি নির্মিত হয়) স্বীকৃতি দেয়নি; মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে তবে তাও সীমিত আকারে। রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে এবিসি নিউজের সঙ্গে কথা বলেন বঙ্গবন্ধু।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল, ভেটো দিয়েছিল, আমাদের সহায়তা দিয়েছিল। বাংলাদেশ-রাশিয়ার বন্ধুত্ব অটুট থাকবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমরা অন্য কোন দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলব না। কারণ আমি জোটবিহীন, নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন ধারার পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করি এবং আমি কোন কিছুর মূল্যেই আমার স্বাধীনতা বেচে দিতে পারি না। সে যেই হোক না কেন।’
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে পাকিস্তানের ভেতরকার দ্বন্দ্ব বলে উল্লেখ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশবিরোধী অবস্থানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানান বঙ্গবন্ধু।
তিনি বলেন, ‘অন্তত মানবতার খাতিরে যুক্তরাষ্ট্রের এগিয়ে আসা উচিত ছিল। আমার দেশের দুর্ভাগা জনগণকে রক্ষা করতে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংসতা থেকে আমার দেশের নিরস্ত্র মানুষকে বাঁচাতে তারা এগিয়ে আসতে পারত। আমরা আশা করেছিলাম সেটা। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে মানবতার খাতিরে তারা প্রতিবাদ করতে পারত। পাকিস্তানকে অন্তত বলতে পারত, মানবতার খাতিরে এমনটা করো না। বলতে কষ্ট হচ্ছে আমার। তারা এটা করেনি।’
যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, ‘তোমরা ক্ষমতাধর দেশ আমরা জানি। কিন্তু ক্ষমতা মূলত জনগণ থেকে আসে মনে রেখ। তোমাদের ভিয়েতনামে যথেষ্ট সৈন্য আছে। কিন্তু সেটা ভুল। আদতে তোমরা ভিয়েতনাম জয় করতে পারনি। কারণ জনগণ এর বিপক্ষে। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সমরাস্ত্র সুসজ্জিত সেনাবাহিনী কে তৈরি করতে পেরেছে। যুক্তরাষ্ট্র তো? ভিয়েতনাম জয় করতে সবকিছুই পাঠিয়েছো তোমরা। কিন্তু জয় পেয়েছ? পাওনিতো।’
এবিসি নিউজের তথ্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর বিরল সাক্ষাৎকার
ধারণ করেছিলেন বাঙালি নামের এক জনগোষ্ঠীর প্রাণের আকাঙ্ক্ষা, তবে পরিণত হয়েছিলেন বিশ্বনেতায়। বিশ্বব্যাপী আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন টুঙ্গিপাড়ার সন্তান শেখ মুজিবুর রহমান। আমাদের এই ভূখণ্ডে বিশ্ব ইতিহাসের এক অনন্য রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল একটি প্রতিককে, একটি নামকে সঙ্গে নিয়ে। সেই নামটি শেখ মুজিবুর রহমান। রাষ্ট্রীয় পরিচয়ে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আর সেই একাত্তরের সাড়ে সাত কোটি মানুষের কাছে তিনি যেন একই মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া ভাই, মুজিব ভাই!
একটি জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে ভাষা দিয়ে শেখ মুজিব বিশ্বব্যাপী হয়ে ওঠেন মানুষের স্বাধীনতা আর মুক্তির এক প্রতিকি ব্যক্তিত্বে। সঙ্গতকারণেই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তিনি তখন একান্ত কাঙ্ক্ষিতজন। ৭২এর সূচনালগ্নে বিশ্বজনমতের চাপে পাকিস্তান যখন তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়, তার পরপরই বাঙালির এই অবিসংবাদিত নেতার সাক্ষাৎকার সমেত একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ। প্রতিনিধি পিটার জেনিংস এবং হাওয়ার্ড টাকনারের ‘বাংলাদেশ’ নামের ওই তথ্যচিত্রে স্বাধীনতা পরবর্তী বিধ্বস্ত বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জগুলো খুঁজে দেখার চেষ্টা করা হয়।ইংরেজী ভাষার ২৬ মিনিটের ওই তথ্যচিত্রের খণ্ড খণ্ড সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেন জানিয়ে দিতে চান মানুষের ভালোবাসার শক্তি দিয়েই উঠে দাঁড়াবে বিধ্বস্ত দেশ।
‘বাংলাদেশ’ নামের তথ্যচিত্রটি শুরু করা হয় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বলা হয়, বঙ্গবন্ধুই এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের মানুষের একমাত্র ভরসা।
এবিসি নিউজের কাছে বঙ্গবন্ধু ভালোবাসায় বিশ্বাসী ‘বাংলাদেশি জীবন দর্শন' তুলে ধরেন। জোর দিয়ে তিনি বলেন ‘আমরা মানুষ। আমরা কারও বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চাই না। আমরা বলতে চাই, একটি স্বাধীন ও মুক্ত দেশে আমরা মানুষের মত বাঁচতে চাই। আর বাংলাদেশ হল সেই বাস্তবতা। আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাসী না, আমরা বাংলাদেশি জীবন দর্শনে বিশ্বাসী। আর তাহল ভালোবাসা, ভালোবাসা এবং ভালোবাসা।’
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের বাস্তবতা উঠে এসেছে ওই তথ্যচিত্রে। চারদিকে যখন হাহাকার আর দেউলিয়াত্ব, তখনও চিরচেনা একটি বিষয় ছিলো অটুট। আর তাহল মনোবল। সেই মনোবলকে সঙ্গী করে আনন্দ জিইয়ে রেখেছিলো তারা। আর এবিসি নিউজের প্রতিনিধির কাছে বাংলাদেশের মানুষের সেই মনোবলকে সঙ্গী করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু । বলেছিলেন, ‘জনগণ আমাকে ভালোবাসে, আমাকে শ্রদ্ধা করে, আমার দলের ওপর আস্থা রাখে। আমি বিশ্বাস করি, দেশের জনগণ আমাকে তাদের সমর্থন যুগিয়ে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রীত্বের পাশাপাশি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছিলেন বঙ্গবন্ধু। একসঙ্গে এতগুলো দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তার অনুভূতি কী তা জানতে চাওয়া হয় এবিসি নিউজের তরফে। জবাবে দেশের জনগণের তার প্রতি অপরীসিম ভালোবাসার উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু। বলেন, ‘আমার ক্ষমতা হল দেশের জনগণের ভালোবাসা। দেশের জনগণ আমাকে ভালোবাসে এবং স্নেহ করে। আমি জানি না, বিশ্বের অন্য কোন নেতা জনগণের এত ভালোবাসা পেয়েছেন কিনা।’
তথ্যচিত্রে রয়েছে যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশের পরিস্থিতির অবর্ণনীয় বর্ণনা। এমন প্রেক্ষাপটে কীভাবে পুনর্বাসিত হবে বাংলাদেশের মানুষ? বঙ্গবন্ধু এবিসি নিউজকে বলেন, ‘প্রথমে জনগণের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। এরপর তাদের বাড়ি-ঘরের ব্যবস্থা করতে হবে কারণ সেগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। আমার দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে এ সমস্যাগুলোই প্রবল হয়ে উঠেছে।’
বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় শিল্পগুলোর কথা উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু। যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত সেইসব শিল্পকে পুনঃসংগঠিত করার উপর জোর দেন তিনি। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমাদের রপ্তানিযোগ্য অনেক পণ্য আছে। আমাদের পাট আছে, চা আছে, চামড়া আছে, মাছ আছে, বনজ সম্পদ আছে। এগুলো খুবই সম্ভাবনাময়। এর মধ্য দিয়ে আমরা বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। তবে এগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এগুলো পুনংসংগঠিত করতে হবে এবং শিগগিরই সে কাজ শুরু করতে হবে।’
১৯৭১ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের তরফে নিরাপত্তা পরিষদে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা, ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্য স্ব স্ব সীমান্তের ভিতরে ফিরিয়ে নেওয়া এবং সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ মহাসচিবকে ক্ষমতা প্রদান করার জন্য এক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সেসময় বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ওই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভেটো প্রদান করেছিল রাশিয়া। তথ্যচিত্রে বলা হয়, এরইমধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের তরফে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া হলেও এখনও (যেসময় তথ্যচিত্রটি নির্মিত হয়) অপ্রত্যাশিতভাবে স্বীকৃতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে উল্লেখ করে তথ্যচিত্রে বলা হয়, দিন দিন সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে ঋণী হয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র এখনও (যেসময় তথ্যচিত্রটি নির্মিত হয়) স্বীকৃতি দেয়নি; মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে তবে তাও সীমিত আকারে। রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে এবিসি নিউজের সঙ্গে কথা বলেন বঙ্গবন্ধু।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল, ভেটো দিয়েছিল, আমাদের সহায়তা দিয়েছিল। বাংলাদেশ-রাশিয়ার বন্ধুত্ব অটুট থাকবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমরা অন্য কোন দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলব না। কারণ আমি জোটবিহীন, নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন ধারার পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করি এবং আমি কোন কিছুর মূল্যেই আমার স্বাধীনতা বেচে দিতে পারি না। সে যেই হোক না কেন।’
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে পাকিস্তানের ভেতরকার দ্বন্দ্ব বলে উল্লেখ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশবিরোধী অবস্থানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানান বঙ্গবন্ধু।
তিনি বলেন, ‘অন্তত মানবতার খাতিরে যুক্তরাষ্ট্রের এগিয়ে আসা উচিত ছিল। আমার দেশের দুর্ভাগা জনগণকে রক্ষা করতে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংসতা থেকে আমার দেশের নিরস্ত্র মানুষকে বাঁচাতে তারা এগিয়ে আসতে পারত। আমরা আশা করেছিলাম সেটা। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে মানবতার খাতিরে তারা প্রতিবাদ করতে পারত। পাকিস্তানকে অন্তত বলতে পারত, মানবতার খাতিরে এমনটা করো না। বলতে কষ্ট হচ্ছে আমার। তারা এটা করেনি।’
যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, ‘তোমরা ক্ষমতাধর দেশ আমরা জানি। কিন্তু ক্ষমতা মূলত জনগণ থেকে আসে মনে রেখ। তোমাদের ভিয়েতনামে যথেষ্ট সৈন্য আছে। কিন্তু সেটা ভুল। আদতে তোমরা ভিয়েতনাম জয় করতে পারনি। কারণ জনগণ এর বিপক্ষে। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সমরাস্ত্র সুসজ্জিত সেনাবাহিনী কে তৈরি করতে পেরেছে। যুক্তরাষ্ট্র তো? ভিয়েতনাম জয় করতে সবকিছুই পাঠিয়েছো তোমরা। কিন্তু জয় পেয়েছ? পাওনিতো।’
ধারণ করেছিলেন বাঙালি নামের এক জনগোষ্ঠীর প্রাণের আকাঙ্ক্ষা, তবে পরিণত হয়েছিলেন বিশ্বনেতায়। বিশ্বব্যাপী আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন টুঙ্গিপাড়ার সন্তান শেখ মুজিবুর রহমান। আমাদের এই ভূখণ্ডে বিশ্ব ইতিহাসের এক অনন্য রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল একটি প্রতিককে, একটি নামকে সঙ্গে নিয়ে। সেই নামটি শেখ মুজিবুর রহমান। রাষ্ট্রীয় পরিচয়ে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আর সেই একাত্তরের সাড়ে সাত কোটি মানুষের কাছে তিনি যেন একই মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া ভাই, মুজিব ভাই!
একটি জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে ভাষা দিয়ে শেখ মুজিব বিশ্বব্যাপী হয়ে ওঠেন মানুষের স্বাধীনতা আর মুক্তির এক প্রতিকি ব্যক্তিত্বে। সঙ্গতকারণেই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তিনি তখন একান্ত কাঙ্ক্ষিতজন। ৭২এর সূচনালগ্নে বিশ্বজনমতের চাপে পাকিস্তান যখন তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়, তার পরপরই বাঙালির এই অবিসংবাদিত নেতার সাক্ষাৎকার সমেত একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ। প্রতিনিধি পিটার জেনিংস এবং হাওয়ার্ড টাকনারের ‘বাংলাদেশ’ নামের ওই তথ্যচিত্রে স্বাধীনতা পরবর্তী বিধ্বস্ত বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জগুলো খুঁজে দেখার চেষ্টা করা হয়।ইংরেজী ভাষার ২৬ মিনিটের ওই তথ্যচিত্রের খণ্ড খণ্ড সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেন জানিয়ে দিতে চান মানুষের ভালোবাসার শক্তি দিয়েই উঠে দাঁড়াবে বিধ্বস্ত দেশ।
‘বাংলাদেশ’ নামের তথ্যচিত্রটি শুরু করা হয় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বলা হয়, বঙ্গবন্ধুই এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের মানুষের একমাত্র ভরসা।
এবিসি নিউজের কাছে বঙ্গবন্ধু ভালোবাসায় বিশ্বাসী ‘বাংলাদেশি জীবন দর্শন' তুলে ধরেন। জোর দিয়ে তিনি বলেন ‘আমরা মানুষ। আমরা কারও বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চাই না। আমরা বলতে চাই, একটি স্বাধীন ও মুক্ত দেশে আমরা মানুষের মত বাঁচতে চাই। আর বাংলাদেশ হল সেই বাস্তবতা। আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাসী না, আমরা বাংলাদেশি জীবন দর্শনে বিশ্বাসী। আর তাহল ভালোবাসা, ভালোবাসা এবং ভালোবাসা।’
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের বাস্তবতা উঠে এসেছে ওই তথ্যচিত্রে। চারদিকে যখন হাহাকার আর দেউলিয়াত্ব, তখনও চিরচেনা একটি বিষয় ছিলো অটুট। আর তাহল মনোবল। সেই মনোবলকে সঙ্গী করে আনন্দ জিইয়ে রেখেছিলো তারা। আর এবিসি নিউজের প্রতিনিধির কাছে বাংলাদেশের মানুষের সেই মনোবলকে সঙ্গী করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু । বলেছিলেন, ‘জনগণ আমাকে ভালোবাসে, আমাকে শ্রদ্ধা করে, আমার দলের ওপর আস্থা রাখে। আমি বিশ্বাস করি, দেশের জনগণ আমাকে তাদের সমর্থন যুগিয়ে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রীত্বের পাশাপাশি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছিলেন বঙ্গবন্ধু। একসঙ্গে এতগুলো দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তার অনুভূতি কী তা জানতে চাওয়া হয় এবিসি নিউজের তরফে। জবাবে দেশের জনগণের তার প্রতি অপরীসিম ভালোবাসার উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু। বলেন, ‘আমার ক্ষমতা হল দেশের জনগণের ভালোবাসা। দেশের জনগণ আমাকে ভালোবাসে এবং স্নেহ করে। আমি জানি না, বিশ্বের অন্য কোন নেতা জনগণের এত ভালোবাসা পেয়েছেন কিনা।’
তথ্যচিত্রে রয়েছে যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশের পরিস্থিতির অবর্ণনীয় বর্ণনা। এমন প্রেক্ষাপটে কীভাবে পুনর্বাসিত হবে বাংলাদেশের মানুষ? বঙ্গবন্ধু এবিসি নিউজকে বলেন, ‘প্রথমে জনগণের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। এরপর তাদের বাড়ি-ঘরের ব্যবস্থা করতে হবে কারণ সেগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। আমার দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে এ সমস্যাগুলোই প্রবল হয়ে উঠেছে।’
বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় শিল্পগুলোর কথা উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু। যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত সেইসব শিল্পকে পুনঃসংগঠিত করার উপর জোর দেন তিনি। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমাদের রপ্তানিযোগ্য অনেক পণ্য আছে। আমাদের পাট আছে, চা আছে, চামড়া আছে, মাছ আছে, বনজ সম্পদ আছে। এগুলো খুবই সম্ভাবনাময়। এর মধ্য দিয়ে আমরা বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। তবে এগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এগুলো পুনংসংগঠিত করতে হবে এবং শিগগিরই সে কাজ শুরু করতে হবে।’
১৯৭১ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের তরফে নিরাপত্তা পরিষদে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা, ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্য স্ব স্ব সীমান্তের ভিতরে ফিরিয়ে নেওয়া এবং সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ মহাসচিবকে ক্ষমতা প্রদান করার জন্য এক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সেসময় বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ওই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভেটো প্রদান করেছিল রাশিয়া। তথ্যচিত্রে বলা হয়, এরইমধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের তরফে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া হলেও এখনও (যেসময় তথ্যচিত্রটি নির্মিত হয়) অপ্রত্যাশিতভাবে স্বীকৃতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে উল্লেখ করে তথ্যচিত্রে বলা হয়, দিন দিন সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে ঋণী হয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র এখনও (যেসময় তথ্যচিত্রটি নির্মিত হয়) স্বীকৃতি দেয়নি; মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে তবে তাও সীমিত আকারে। রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে এবিসি নিউজের সঙ্গে কথা বলেন বঙ্গবন্ধু।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল, ভেটো দিয়েছিল, আমাদের সহায়তা দিয়েছিল। বাংলাদেশ-রাশিয়ার বন্ধুত্ব অটুট থাকবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমরা অন্য কোন দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলব না। কারণ আমি জোটবিহীন, নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন ধারার পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করি এবং আমি কোন কিছুর মূল্যেই আমার স্বাধীনতা বেচে দিতে পারি না। সে যেই হোক না কেন।’
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে পাকিস্তানের ভেতরকার দ্বন্দ্ব বলে উল্লেখ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশবিরোধী অবস্থানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানান বঙ্গবন্ধু।
তিনি বলেন, ‘অন্তত মানবতার খাতিরে যুক্তরাষ্ট্রের এগিয়ে আসা উচিত ছিল। আমার দেশের দুর্ভাগা জনগণকে রক্ষা করতে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংসতা থেকে আমার দেশের নিরস্ত্র মানুষকে বাঁচাতে তারা এগিয়ে আসতে পারত। আমরা আশা করেছিলাম সেটা। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে মানবতার খাতিরে তারা প্রতিবাদ করতে পারত। পাকিস্তানকে অন্তত বলতে পারত, মানবতার খাতিরে এমনটা করো না। বলতে কষ্ট হচ্ছে আমার। তারা এটা করেনি।’
যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, ‘তোমরা ক্ষমতাধর দেশ আমরা জানি। কিন্তু ক্ষমতা মূলত জনগণ থেকে আসে মনে রেখ। তোমাদের ভিয়েতনামে যথেষ্ট সৈন্য আছে। কিন্তু সেটা ভুল। আদতে তোমরা ভিয়েতনাম জয় করতে পারনি। কারণ জনগণ এর বিপক্ষে। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সমরাস্ত্র সুসজ্জিত সেনাবাহিনী কে তৈরি করতে পেরেছে। যুক্তরাষ্ট্র তো? ভিয়েতনাম জয় করতে সবকিছুই পাঠিয়েছো তোমরা। কিন্তু জয় পেয়েছ? পাওনিতো।’
No comments:
Post a Comment