পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখে গ্রামোন্নয়ন খাতে বরাদ্দ হয়েছে ২,২৯০ কোটি টাকা। এছাড়াও এম্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নাম নথিভুক্ত আছে, এমন একলক্ষ বেকারকে ১৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী অর্থবর্ষে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে এক লক্ষ দশ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে, করবাবদ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় চল্লিশ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে।
বিধানসভায় আজ আট কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী।
এদিন বিধানসভায় ৮০০ কোটি টাকার ঘাটতি ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। রাজকোষে ঘাটতি ১৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। রাজস্ব ঘাটতি ২০ হাজার কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, রাজস্ববৃদ্ধির হার লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে গিয়েছে। এই অর্থবর্ষে রাজস্ববৃদ্ধির হার ৩০ শতাংশ। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি। তাঁর দাবি, এবার রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ ৩২ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে। স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি আবাসন এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বরাদ্দবৃদ্ধি হয়েছে।
সব পণ্যে বিক্রয়কর .৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সিগারেটের দামও বাড়ছে। শুল্ক বেড়েছে ২৫ শতাংশ। তবে প্রফেশনাল ট্যাক্সে ছাড় মিলছে। আগে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত ছাড় ছিল, যা এখন বেড়ে ৭,০০০ টাকা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যে শিল্পবৃদ্ধির হার ৬.২ শতাংশ। শিল্পখাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৫৪০ কোটি টাকা। কৃষিখাতে বরাদ্দ করা হয়েছে কৃষি খাতে বরাদ্দ ৫৮৫ কোটি টাকা। ক্রীড়া খাতে বরাদ্দ ১১৩ কোটি টাকা। স্কুল শিক্ষায় বরাদ্দ ৩,২০৩.৫২ কোটি টাকা এবং উচ্চশিক্ষায় বরাদ্দ ২৭০ কোটি টাকা। পঞ্চায়েত-গ্রামোন্নয়নে বরাদ্দ করা হয়েছে ২,৯৯০ কোটি টাকা। স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ১,২৬০ কোটি টাকা। পরিবহণে বরাদ্দ ৩৮০ কোটি টাকা।
সংখ্যালঘু উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ ৩৫০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৫৯ কোটি টাকা করা হয়েছে। তথ্য-সংস্কৃতি ১৫০ কোটি এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে ১১৩.১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। পুর ও নগরোন্নয়নে বরাদ্দ বেড়ে ২,০৪৪ কোটি টাকা হয়েছে। খাদ্য সরবরাহ খাতে বরাদ্দ ১১৮ কোটি টাকা। শ্রম দপ্তরে বরাদ্দ ২০০ কোটি টাকা।
রাজ্য বাজেট ২০১৩-১৪ |
আজ রাজ্যের ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরের সাধারণ বাজেট পেশ করলেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। এটি তাঁর দ্বিতীয় বাজেট পরিবেশন। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে বেশ কয়েকটি গ্রামীণ উন্নয়ণ প্রকল্পের ঘোষণা করলেন তিনি। শুরুর বক্তব্য • পশ্চিমবঙ্গে ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে শিল্প বৃদ্ধির হার ৬.২ শতাংশ। • ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১ হাজার কোটি টাকা। বছরের শেষে এই লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে যাবে। প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে বলে আশা। • এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নাম নথিভুক্ত করা ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ১ লক্ষ প্রার্থীদের মাসিক ১৫,০০ টাকা মাসিক ভাতা দেবে রাজ্য সরকার। • পঞ্চায়েত এলাকায় ৩ হাজার কিলোমিটার রাস্তা নির্মানের পরিকল্পনা। • রফতানিতে উত্সাহ দিতে কর ফেরতের ক্ষেত্রে পদ্ধতি সরল করা হচ্ছে। • অব্যবহৃত জমির বাণিজ্যিক ব্যবহারে উদ্যোগী হবে রাজ্য সরকার। • রাজ্যের মত্স্যজীবীদের বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। • ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর ছাড় দেওয়া হবে। • আগামী বছরে রাজ্যের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ লক্ষ। |
কোন খাতে কত বরাদ্দ হয়েছে— • কৃষি দফতর: ৮৮৫ কোটি টাকা। • কৃষি বিপণন: ১৮৫ কোটি টাকা। • ক্ষুদ্র শিল্প: ২২৬ কোটি টাকা। • বৃহত্ শিল্প: ৫৪০ কোটি টাকা। • তথ্য প্রযুক্তি: ১১৩ কোটি টাকা। • সংখ্যালঘু উন্নয়ণ: ৮৫৯ কোটি টাকা। • তপশিলি শিক্ষা খাত: ৩২০৩ কোটি টাকা। • উচ্চশিক্ষা: ২৭০ কোটি টাকা। • স্বাস্থ্য খাত: ১২৬০ কোটি টাকা। • গ্রামীণ উন্নয়ণ: ২৯৯০ কোটি টাকা। • ভূমি ও ভূমি সংস্কার: ৮০ কোটি টাকা। • পূর্ত দফতর: ৮৯৫.৪৩ কোটি টাকা। • পরিবহণ: ৩৮০ কোটি টাকা। বিভিন্ন খাতে আয় • বিক্রয় কর: ২২,৭৮৫ কোটি টাকা। • স্ট্যাম্প ডিউটি: ৪,৫০০ কোটি টাকা। • বিদ্যুত্ কর: ১,৩৮০ কোটি টাকা। • কেন্দ্রীয় কর: ২৫,২৭৯ কোটি টাকা। • আবগারি কর: ৩২০২ কোটি টাকা। • কেন্দ্রীয় অনুদান: ২১,৫৯৩ কোটি টাকা। • কর বহির্ভূত আয়: ১,৭৫৬ কোটি টাকা। • বিভিন্ন ঋণ: ২২,৫৯৬ কোটি টাকা। রাজ্যের মোট আয়: ১,১০,৭৯৯ কোটি টাকা। http://www.anandabazar.com/11sironam.html |
উর্দ্ধসীমা ১৪.৫ শতাংশ থেকে ১৫.৫ শতাংশ করা হয়েছে। যেহেতু সব জিনিসের ক্ষেত্রেই ভ্যাট প্রযোজ্য তাই এই এক শতাংশ বৃদ্ধির জেরে জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে বাড়বে। বাম ও কংগ্রেস রাজ্যের দুই বিরোধী শিবিরই ভ্যাট বৃদ্ধি নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছে।
উচ্চশিক্ষায় আসন সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) মানুষের উন্নয়নেও একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এই প্রথম ওবিসিদের জন্য রাজ্য সরকারের বাজেটে পৃথক অর্থ বরাদ্দ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি৷ সেই স্বাধীনতার পর থেকে এত কাল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উন্নয়ন তথা পরিকল্পনা বাজেটে তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য পৃথক অর্থ বরাদ্দ থাকছে৷ আগামী সোমবার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র যে বাজেট পেশ করতে চলেছেন তাতে অনগ্রসর সম্প্রদায় কল্যাণ দফতরের বাজেটে ওবিসিদের জন্য পৃথক অর্থ বরাদ্দের সংস্থান থাকছে৷ অর্থ দন্তর ইতিমধ্যেই অনগ্রসর সম্প্রদায় কল্যাণ দপ্তরের বাজেটে এ জন্য পৃথক খাত বা বাজেট হেড খোলার অনুমতি দিয়েছে৷ পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দন্তরের পরিকল্পনা খাতেও ওবিসিদের জন্য পৃথক বরাদ্দের সংস্থান করা হবে৷
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণ চালু করার মতোই বাজেটে পৃথক বরাদ্দের সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক তাত্পর্য অসীম৷ এর মাধ্যমে অত্যন্ত অনগ্রসর মানুষের বসবাসের এলাকায় উন্নয়নে বাড়তি অর্থ খরচ হবে, যার সুবিধা সবচেয়ে বেশি পাবে গরিব মুসলিম জনতা৷ পশ্চিমবঙ্গে এ পর্যন্ত যে ১৪৪টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের ৮৬টিই হল অনগ্রসর মুসলিম৷ ওবিসিদের জন্য বরাদ্দ অর্থ ওই সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের বসবাসের এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থের ঘাটতি পূরণে ব্যবহার করা হতে পারে৷ এ ছাড়া রাস্তাঘাট, পানীয় জলের মতো সম্পূর্ণ পৃথক প্রকল্পও হাতে নেওয়া যেতে পারে৷ জনসংখ্যার ২০ শতাংশের বেশি মুসলিম, এমন এলাকার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ দিয়ে থাকে৷ পরিকল্পনার অভাবে দীর্ঘদিন পশ্চিমবঙ্গ ওই প্রকল্পের টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে৷
বাজেট বরাদ্দ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম বারের জন্য হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে দলিতদের উন্নয়নে নয়া দিশা পেতে পারে৷ বদলে যেতে পারে রাজনৈতিক ও সামাজিক ভারসাম্যও৷ সমাজের এই অংশের মানুষের হয়ে রাজনীতি করার সুবাদেই উত্তরপ্রদেশের মুলায়ম-মায়াবতী, বিহারে লালু-নীতীশ, তামিলনাড়ুতে করুণানিধি-জয়ললিতা, কর্নাটকে দেবগৌড়া-ইয়েদুরাপ্পারা লম্বা রেসের ঘোড়া হতে পেরেছেন৷ শ্রেণি সংগ্রামের রাজনীতিতে অভ্যস্ত সিপিএম-সিপিআইসহ বামপন্থী দলগুলি দীর্ঘদিন পশ্চিমবঙ্গে জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আর্থিক ও সামাজিক অনগ্রসরতার বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে চলার চেষ্টা করেছে৷ এমনকী পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি বলে কিছু নেই, এমন দাবিও করা হয়েছিল বিগত বামফ্রন্ট সরকারের তরফে৷ তাদের ঘুম ভাঙে ২০০৮-এর পঞ্চায়েত ভোটে ধাক্কা খাওয়ার পর৷ ঘুরে দাঁড়াতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ওবিসিদের খুশি করতে গুচ্ছ পরিকল্পনা নিলেও হাওয়া ঘোরেনি৷ বুদ্ধদেববাবুর দেখানো পথকেই রাজ্য রাজনীতিতে দলের ভিত মজবুত করতে হাতিয়ার করেছেন তৃণমূল নেত্রী৷
মহাকরণ সূত্রের খবর, আগামী অর্থবর্ষের বাজেট নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনায় রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রকেই এই ব্যাপারে পথপ্রদর্শক হতে অনুরোধ করা হয়েছিল৷ কিন্ত্ত দিল্লি থেকে সাড়া না-মেলায় রাজ্য সরকার নিজেই দৃষ্টান্ত স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ রাজ্যের অনগ্রসর কল্যাণ দন্তরের সচিব সঞ্জয় থাড়ে বৃহস্পতিবার বলেন, 'কয়েকটি রাজ্যে ওবিসি'দের জন্য পৃথক দন্তর আছে৷ আমাদের রাজ্যে ওবিসি'দের নিয়ে ভাবনাচিন্তাই শুরু হয়েছে কয়েক বছর হল৷ তাই এখনই পৃথক দন্তর খোলার সুযোগ নেই৷ তাই ওবিসি'দের উন্নয়নে জোর দিতে বিভাগীয় বাজেটেই পৃথক বরাদ্দের সংস্থান করা হচ্ছে৷'
বাজেটে পৃথক অর্থ বরাদ্দ হলে কী ভাবে উপকৃত হতে পারেন ওবিসিভুক্ত মানুষেরা? অনগ্রসর কল্যাণ দন্তর সূত্রে বলা হচ্ছে, তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের মতো জনসংখ্যাকে মাপকাঠি করা হলে পশ্চিমবঙ্গে বাজেটের এক-চতুর্থাংশই ওবিসিদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে আগামী অর্থবর্ষেই উন্নয়ন খাতে ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হতে পারে৷ চলতি আর্থিক বছরের বাজেটে অনগ্রসর কল্যাণ দন্তরে ৪৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল৷ এ বছর তা বৃদ্ধি করে ৫০০ কোটি টাকা করা হচ্ছে৷ এখন উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের মাত্র ২৩ কোটি টাকা ওবিসিভুক্ত মানুষের কল্যাণে খরচ হয়ে থাকে৷ এর মধ্যে আছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রি ও পোস্টম্যাট্রিক বৃত্তিপ্রদান প্রকল্পে রাজ্যের দেয় ২১ কোটি টাকা৷ এ ছাড়া বছর কয়েক হল ওবিসি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথক হস্টেল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে৷ তিনটি ইতিমধ্যে হয়েও গিয়েছে৷ ন'টি নির্মীয়মাণ৷ এই খাতে বরাদ্দ আছে ২ কোটি টাকা৷ এ রাজ্যে প্রিম্যাট্রিক স্কলারশিপ পায় ১ লাখ ওবিসি ছাত্রছাত্রী৷ ৮০ হাজার ছাত্রছাত্রী পায় পোস্টম্যাট্রিক স্কলারশিপ৷
তবে, দাম বাড়া ইস্যু নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ সরকারপক্ষ। নজিরবিহীনভাবে বাজেট পেশের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তার জায়গায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
পরিষদীয় মন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকারের কী বক্তব্য? প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেনননি পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক রাজ্য বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক
আটশো কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট পেশ
বাড়ল ভ্যাট, তাই সব জিনিসের দাম বাড়বে। ব্যতিক্রম শুধু সোনা ও রুপোর গয়না।
নিম্ন ও ঊধ্বসীমায় ভ্যাট বাড়ল ১ শতাংশ করে
সিগারেটে শুল্ক বাড়ল ২৫ শতাংশ
মাসিক ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়ে প্রফেশনাল ট্যাক্স ছাড় দেওয়া হল
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কী খাতে কত বরাদ্দ করা হল
পর্যটন শিল্পে বরাদ্দ ৩৯,৭৮৬ কোটি টাকা
গ্রামোন্নয়নখাতে বরাদ্দ ২৯৯০ কোটি টাকা
বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ ২৬ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা
শ্রম শিক্ষায় বরাদ্দ ২০০ কোটি টাকা
পঞ্চায়েত, জনস্বাস্থ্য ও স্বনির্ভর প্রকল্পে বরাদ্দ ছাঁটাই
সংখ্যালঘু উন্নয়নে বরাদ্দ ৩৫০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৮৫৯ কোটি টাকা
কৃষিক্ষেত্রে বাড়ল বাজেট বরাদ্দ
কন্যাশ্রী প্রকল্পে বার্ষিক বরাদ্দ ৭৫০ কোটি টাকা
ভূমি ও ভূমি সংস্কারে বরাদ্দ ৮০ কোটি টাকা
পুর ও নগরোন্নয়নে বরাদ্দ বেড়ে ২০৪৪ কোটি টাকা
খাদ্য সরবরাহ খাতে বরাদ্দ ১১৮ কোটি টাকা
শ্রম দফতরে বরাদ্দ ২০০ কোটি টাকা
সেচের খাতে বরাদ্দ ১৭২৭.৫০ কোটি টাকা
স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ১২৬০ কোটি টাকা
রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষমাত্রা রাখা হয়েছে ৩১ হাজার কোটি টাকা
উচ্চশিক্ষা খাতে বরাদ্দ ২৭০ কোটি টাকা
শ্রম দফতরে বরাদ্দ ২০০ কোটি টাকা
স্কুল খাতে বরাদ্দ ৩২০৩.৫২ কোটি টাকা
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ ১১৩ কোটি টাকা
কৃষিখাতে বরাদ্দ ৫৮৫ কোটি টাকা
পরিবহণ খাতে বরাদ্দ ৩৮০ কোটি টাকা
ক্রীড়াখাতে বরাদ্দ ১১৩ কোটি টাকা
কী কী ঘোষণা করলেন--
পঞ্চায়েত এলাকায় তিন হাজার কিমি রাস্তা হবে ঘোষণা অর্থমন্ত্রীর
১৩ লক্ষ ১৪ হাজার কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেও বেকার-ভাতা চালু করছে রাজ্য
আগামী এক বছরে ৩ হাজার কিলোমিটার সড়কপথ তৈরি করবে রাজ্য সরকার
বেলেঘাটা, বাগজোলা এবং টালিনালা খাল পুনরুজ্জীবনেরও উদ্যোগ
কী কী দাবি করলেন
কর্মসংস্থানে লক্ষ্যমাত্রা পেরনোর দাবি
রাজ্যে শিল্পবৃদ্ধির হার ৬.২ শতাংশ
রাজস্ববৃদ্ধির হার ছাপিয়ে গিয়েছে লক্ষ্যমাত্রা
আগামী এক বছরে ৩ হাজার কিলোমিটার সড়কপথ তৈরি
কর্মসংস্থানের কথা
বুজরুকি, বললো যুবরা
নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতা, ১১ই মার্চ— তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকার ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরের জন্য যে বাজেট সোমবার পেশ করেছে তা অন্তসারশূন্য, দিশাহীন বলে জানিয়েছে ডি ওয়াই এফ আই। সোমবার এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি আভাস রায়চৌধুরী এবং সম্পাদক জামির মোল্লা বলেন, বাজেটে ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে ১০লক্ষ ৪২ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে বলে ঘোষণা হয়েছে। কোন নির্দেশনামা এবং বিজ্ঞাপন ছাড়া এই কর্মসংস্থানের কথা বুজরুকি ছাড়া আর কিছু নয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এছাড়া চলতি আর্থিক বছরে ১লক্ষ কর্মপ্রার্থী বা বেকার যুবককে দেড় হাজার টাকা করে প্রতিমাসে অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা হয়েছে। কোন মাপকাঠিতে এই লক্ষ কর্মপ্রার্থী বা বেকারকে চিহ্নিত করা হবে তার কোন সুস্পষ্ট ধারণা নেই। বিবৃতিতে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে সাধারণ পণ্যের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়েছে। তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারও মূল্যযুক্তকর (ভ্যাট) এক শতাংশ বৃদ্ধি করে বাজারদাম আরও বাড়িয়ে দিলো। সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই এই বর্ধিত কর আদায় করা হবে।
এই মিথ্যা ও দিশাহীন বাজেটের বিরুদ্ধে যুবসমাজকে প্রচার আন্দোলন সংগঠিত করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনের রাজ্য কমিটি।
এই মুহূর্তে যদি আপনি কোনও বসতবাড়ির মালিক না হন তা হলে আগামী অর্থবর্ষে ঋণ নিয়ে বাড়ি কিনে আগের চেয়ে ঢের বেশি টাকা ছাড় পেতে পারেন৷ অর্থমন্ত্রী বাজেটে যে প্রস্তাব করেছেন তাতে নতুন এই ছাড়ের প্রস্তাব করেছেন৷ কর প্রসঙ্গে বলার সময় অর্থমন্ত্রী স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন আগে যে ছাড় ছিল তা থাকছেই, সঙ্গে অতিরিক্ত ছাড় হিসাবে এটি দেওয়ার প্রস্তাব তিনি করেছেন৷ ৮০ইই নামে নতুন একটা ধারা যোগ করে শর্তগুলিও পরিষ্কার করে দিয়েছেন৷
অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা শুনে মনে হতে পারে প্রথম বার বাড়ি কেনার ক্ষেত্রেই এই ছাড় মিলবে৷ কিন্তু বর্তমানে আপনি যদি কোনও বাড়ির মালিক হন এবং ব্যাঙ্কে যখন নতুন বাড়ির আবেদন করবেন তার আগে যদি সেটি বিক্রি করে দেন তা হলেও এই ঋণ পেতে পারেন৷ কারণ সেই মুহূর্তে আপনি কোনও বাড়ির মালিক নন৷
তবে বাড়ির দাম ৪০ লক্ষ টাকা বা তার কম হতে হবে এবং ঋণের পরিমাণ কখনই ২৫ লক্ষ টাকার বেশি হওয়া চলবে না৷ এই শর্ত মানলে তবেই ৮০ইই ধারায় ছাড় পাবেন৷
ছাড় পাওয়ার শর্ত যে দিন ঋণ নিচ্ছেন সে দিন কোনও বাড়ির মালিক নন বাড়ির দাম সর্বাধিক ৪০ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে পারেন সর্বাধিক ২৫ লক্ষ টাকা কোনও ব্যাঙ্ক বা গৃহঋণপ্রদানকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেই ঋণ নিতে হবে।
বাড়তি সুবিধা
এখনও নিজে যে বাড়িতে থাকেন সেটি ঋণ নিয়ে কেনা হয়ে থাকলে ২৪বি ধারায় সুদ পরিশোধের উপরে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত ও ৮০সি ধারায় আসল পরিশোধের উপরে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় পেতে পারেন৷
বাজেটে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'প্রথম বার বাড়ির জন্য কেউ যদি ব্যাঙ্ক বা কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১ এপ্রিল ২০১৩ থেকে ৩১ মার্চ ২০১৪-র মধ্যে ঋণ নেন তা হলে সুদের উপরে আরও ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাবেন৷'
কিন্তু কেউ যদি ফেব্রুয়ারি মাসে কোনও বাড়ি কেনেন? সে ক্ষেত্রে তো হতে থাকবে শুধু মার্চ মাস! অর্থমন্ত্রী পালানিয়াপ্পান চিদম্বরম বলেছেন, 'যদি এক বছরে পুরো টাকা দাবি করতে না পারেন তবে পরের বছর বাকি টাকার জন্য ছাড় দাবি করা যাবে৷' অর্থাত্ এই ছাড় ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষেও দাবি করতে পারেন যদি ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে সেটি কিনে থাকেন৷
এখন কত ছাড়?
৮০সি: ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত (আসল পরিশোধ) --- এখন আছে ২৪বি: ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত (সুদ পরিশোধের উপর) --- এখন আছে ৮০ ইই: ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত (সুদ পরিশোধর উপরে) --- শুধুমাত্র আগামী অর্থবর্ষের জন্যনতুন ধারা অনুযায়ী এই ছাড় পেতে হলে ঋণ নিতে হবে ব্যাঙ্ক বা হাউজিং ফিনান্স কোম্পানি থেকেই৷ অর্থাত্ কোনও ব্যক্তি বা কোঅপারেটিভ থেকে ঋণ নিলে এই সুবিধা পাওয়া যাবে না৷
কবে ঋণ নিতে হবে
ঋণ নিতে হবে ১ এপ্রিল ২০১৩ থেকে ৩১ মার্চ ২০১৪-র মধ্যে, পুরো ছাড় নেওয়ার জন্য সময় ৩১ মার্চ ২০১৫ পর্যন্ত।প্রশ্ন হল কারা পাবেন এই ছাড়, কতটা পাবেন৷ ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে হলে মাসে ২৪ হাজার থেকে ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ইএমআই দিতে হবে যদি ২০ বছরের জন্য ঋণ নেন৷ বিভিন্ন ব্যাঙ্কে সুদের হার পৃথক হওয়ার জন্যই ইএমআইয়ে পার্থক্য হয়৷
কোথায় কত সুদ
ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক৯.৯৫% এইচডিএফসি ১০.১৫% অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক১০.৭৫% আইডিবিআই ব্যাঙ্ক১০.৭৫% এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক১০.২০% ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া১০.২৫% ইউকো ব্যাঙ্ক১০.২০% ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অফ কমার্স১০.২৫% পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক১১.৫০% ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক১০.২৫% ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক১০.৫০%
ঋণ দেওয়ার আগে ব্যাঙ্ক দেখবে ইএমআই দেওয়ার ক্ষমতা আছে কিনা ঋণ গ্রহীতার৷ এ ক্ষেত্রে দু'টি উপায় ব্যাঙ্কগুলি দেখে নেয়৷ ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের রিজিওনাল অফিসের এক আধিকারিক বললেন, 'চার বছরের বার্ষিক আয় আমরা ঋণ হিসাবে দিতে পারি অন্য সব শর্ত পূরণ হলে ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ পেতে হলে বার্ষিক আয় ৬-৭ লক্ষ টাকা হতে হবে৷'
ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রধান কার্যালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার রঞ্জন রায় বললেন, 'অন্য সব শর্ত পূরণ করলে ইএমআই (ইকুয়াল মান্থলি ইনস্টলমেন্ট)-এর পরিমাণ গ্রস স্যালারির ৬০ শতাংশ পর্যন্ত হলে আমরা ঋণ দিতে পারি৷ তবে সাধারণত ৫০ শতাংশ পর্যন্তই হয়৷' যাঁদের বেতন বছরে ১০ লক্ষ টাকার বেশি তাঁরা শর্তসাপেক্ষে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পেতে পারেন৷ অনেক ব্যাঙ্ক ৬ বছরের বেতনও ঋণ হিসাবে দিতে পারে, নির্ভর করে আয়ের উপর৷
গত দুই আর্থিক বছরের মতোই, এবারও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের বাজেটে আয়ের অন্যতম মূল উত্স্য কেন্দ্রীয় অনুদান। কেন্দ্রীয় অনুদান নির্ভরশীল এই বাজেটের ভবিষ্যত নিয়ে সংশয়ে বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের ধারনা পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় অনুদান আর আগের মতো নিশ্চিত নয়। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ কমলেই রাজস্ব ঘাটতি আর অর্থমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।
কেন্দ্রীয় আনুকুল্য পাবেন। এমনটা ধরে নিয়েই বাজেট পেশ করলেন অমিত মিত্র। যদিও, বাজেট বক্তৃতায় একাধিকবার কেন্দ্রের সমালোচনায় মুখর হলেন তিনি। ইস্যু সেই একটাই। পশ্চিমবঙ্গকে বিশেষ প্যাকেজ না দেওয়া। কিন্তু, কেন্দ্রীয় বদান্যতা না পেলে আয় ও ব্যায়ের মধ্যে ভারসাম্য কীভাবে আনবেন, তার কোনও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তিনি। ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে রাজ্য বাজেটের অনেকটাই নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রান্টিং এডের ওপর।
২০১১ ও ১২ ওই খাতে ১৫,৭৯৫ কোটি টাকা পাওয়া যাবে ধরে নিয়ে বাজেট তৈরি করা হয়েছিল। যদিও, আর্থিক বছরের শেষে সেই প্রাপ্তি তিন হাজার কোটি টাকা কমে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরেও গ্রান্টিং এড খাতে ২০ হাজার ২৮২ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে ধরেছিলেন অমিতবাবু। পাওয়া গেল ১৬,৮৮৪ কোটি টাকা। এবার ২১,৫৯৩ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় আনুকুল্য পাবেন। এমনটা ধরে নিয়েই বাজেট পেশ করলেন অমিত মিত্র। যদিও, বাজেট বক্তৃতায় একাধিকবার কেন্দ্রের সমালোচনায় মুখর হলেন তিনি। ইস্যু সেই একটাই। পশ্চিমবঙ্গকে বিশেষ প্যাকেজ না দেওয়া। কিন্তু, কেন্দ্রীয় বদান্যতা না পেলে আয় ও ব্যায়ের মধ্যে ভারসাম্য কীভাবে আনবেন, তার কোনও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তিনি। দুহাজার তেরো-চোদ্দ আর্থিক বছরে রাজ্য বাজেটের অনেকটাই নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রান্টিং এডের ওপর।
২০১১-১২`তে ওই খাতে ১৫ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা পাওয়া যাবে ধরে নিয়ে বাজেট তৈরি করা হয়েছিল। যদিও, আর্থিক বছরের শেষে সেই প্রাপ্তি তিন হাজার কোটি টাকা কমে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরেও গ্রান্টিং এড খাতে ২০ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে ধরেছিলেন অমিতবাবু। পাওয়া গেল ১৬ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। এবার ২১ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা গ্রান্টিং এড পাওয়া যাবে বলে ধরে নিয়েছেন অমিতবাবু।
তাই কথায় কথায় কেন্দ্রের বিরোধিতা করলেও, মনমোহন-চিদম্বরমের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে আছে অমিত মিত্রের এবারের বাজেটের ভবিষ্যত। গ্রান্টিং এড খাতে আদৌ উদ্বৃত্ত পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজ্য সরকার পাবে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সংশয় রয়েছে।
২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে রাজস্ব ঘাটতি ৩ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা হবে বলে দেখিয়েছেন অমিতবাবু। গত আর্থিক বছরের তুলনায় এই পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কম।
এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারলে অমিতবাবু একধাক্কায় রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ, প্রায় সত্তর শতাংশ কমাতে সক্ষম হবেন। কিন্তু, সেখানেও সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কারণ রাজস্ব আয়ের মধ্যে রাজ্যের আদায়ী কর ও কর বহির্ভুত আয় ছাড়া দুটি বড় বিষয়ই হল, কেন্দ্রীয় কর ও শুল্ক বাবদ প্রাপ্য রাজ্যের অংশ। ও কেন্দ্রীয় গ্রান্টিং এড। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ কমে গেলেই রাজস্ব ঘাটতি আর অমিত মিত্রের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।
রাজ্য সরকারের ভাঁড়ে মা ভবানী। অথচ ব্যয় সংঙ্কোচনের কোনও প্রচেষ্টাই নেই। মুখ্যমন্ত্রী সংখ্যালঘু ও অনগ্রসর শ্রেণীর মনজয়ের জন্য উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণ সহ একের পর এক প্রকল্প ঘোষণা করে চলেছেন। অথচ আর্থিক বরাদ্দ প্রয়োজন অনুযায়ী না বাড়ানো হলে কীভাবে সেগুলি রূপায়ণ হবে, ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষের বাজেটে পাওয়া গেল না তার দিশা। কোষাগারের বেহাল দশা সামলাতে বাড়ল ভ্যাট। ভ্যাটের নিম্ন ও উর্ধসীমা উভয়ই বাড়ল ১ শতাংশ করে।
পেট্রপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বারবার সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ইউপিএ সরকারে থাকাকালীন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদও করেছেন৷ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বারবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপও দেগে চলেছেন৷ কিন্তু এবার তাঁর সরকারের বাজেটের জেরেই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়তে চলেছে৷ সোমবার রাজ্য বাজেটে ভ্যাট বাড়ানোর পথে হাঁটলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র৷ রাজ্য বাজেটে ১ শতাংশ হারে ভ্যাট বাড়ল৷ যার জেরে সোনা-রূপো বাদে দাম বাড়ছে সমস্ত জিনিসপত্রের৷ ফলে ইতিমধ্যেই চড়া বাজার দরে নাজেহাল সাধারণ মানুষের ওপর মূল্যবৃদ্ধির বোঝা আরও বাড়তে চলেছে৷
অর্থমন্ত্রী বাজেট ভাষণে বলেছেন, আমি প্রস্তাব করছি, ভ্যাটের উতস-হারে শুধু ১ শতাংশ বৃদ্ধি। এর ফলে যে উদ্বৃত্ত রাজস্ব আসবে, তা দিয়ে আমরা সার্বিক পরিকাঠামো তৈরি করতে পারব৷ ।
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবেরও স্পষ্ট দাবি, ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তের ফলে সব জিনিসপত্রের দাম বাড়বে৷ যদিও অর্থমন্ত্রী এই দাবি মানতে নারাজ৷ তাঁর মন্তব্য, এই বাজেট চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্যের বাজেট৷ এই বাজেটে উত্পাদনে এত উত্সাহ দেওয়া হয়েছে যা সরবরাহকে ছাপিয়ে যাবে৷ এর জেরে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে৷
কিন্তু নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে, বারবার জনসাধারণের ওপর বোঝা না চাপানোর পক্ষে সওয়াল করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই পথে হাঁটলেন কেন? একাংশের ব্যাখ্যা, মুখে দাম না বাড়ানোর কথা বললেও মুখ্যমন্ত্রী নিজেও জানেন এ ছাড়া উপায় নেই৷ সেজন্যই তাঁর সরকারের আমলে এ রাজ্যে ঘুরপথে দুধের দাম বেড়েছে, বিদ্যুতের মাসুল চারবার বেড়েছে, না না করেও বাস-ট্যাক্সির ভাড়াবৃদ্ধিতে অনুমোদন দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ কিন্তু রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন, তাহলে কি এটা মুখ্যমন্ত্রীর দ্বিচারিতা নয়? সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষার যুক্তি দিয়ে তিনি কেন্দ্রের সংস্কারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান, রেলের ভাড়া বাড়ানোর শাস্তিস্বরূপ দীনেশ ত্রিবেদীকে সরিয়ে দেন, ফেসবুকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন, কিন্তু সেই তিনিই আবার ভ্যাট বাড়ান, বিদ্যুতের মাশুল বাড়ান৷ তাহলে কি তাঁর বিরোধিতা নিছকই রাজনৈতিক স্বার্থে?
এই প্রশ্ন তোলার আরও কারণ, অর্থমন্ত্রীর ভোট অন অ্যাকাউন্ট বাজেট ভাষণেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তোলা বন্ধ হল না। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বাজেট পেশ করতে গিয়ে রাজ্যের বেহাল আর্থিক দশার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে সরব হন। ঋণ প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে আক্রমণ করে অর্থমন্ত্রী বললেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১০ বার বৈঠক করেও লাভ হয়নি৷এদিন বিধানসভায় ৮০০ কোটি টাকার ঘাটতি ভোট অন অ্যাকাউন্ট বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। বাজেটে রাজকোষ ঘাটতি ১৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
রাজস্বে ঘাটতি ২০ হাজার কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রীর দাবি, রাজস্ববৃদ্ধির হার ছাপিয়ে গিয়েছে লক্ষ্যমাত্রা৷ এই অর্থবর্ষে রাজস্ববৃদ্ধি হয়েছে ৩০ শতাংশ৷ যা ধার্য লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি৷ বাজেটে বললেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র৷ এবার রাজস্ব সংগ্রহ ৩২ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে বলেও দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী। স্বাস্থ্য-আবাসন-তথ্যপ্রযুক্তিতে বরাদ্দ বেড়েছে।সমবায়ে বরাদ্দ কমে ১৬৯ কোটি টাকা।
সব পণ্যে বিক্রয়কর বেড়েছে ০.৫ শতাংশ। সিগারেটে শুল্ক বাড়ল ২৫ শতাংশ। যদিও মাসিক ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়ে প্রফেশনাল ট্যাক্স ছাড় দেওয়া হয়েছে। আগে এই ছাড় ছিল ৫০০০ টাকা পর্যন্ত।
রাজ্যে শিল্পবৃদ্ধির হার ৬.২ শতাংশ। কৃষি খাতে বরাদ্দ ৫৮৫ কোটি টাকা। ক্রীড়া খাতে বরাদ্দ ১১৩ কোটি টাকা। স্কুল শিক্ষায় বরাদ্দ ৩২০৩.৫২ কোটি টাকা।উচ্চ শিক্ষায় বরাদ্দ ২৭০ কোটি টাকা। শিল্প খাতে বরাদ্দ ৫৪০ কোটি টাকা। পঞ্চায়েত, জনস্বাস্থ্য ও স্বনির্ভর প্রকল্পে বরাদ্দ ছাঁটাই। পঞ্চায়েত-গ্রামোন্নয়নে বরাদ্দ ২৯৯০ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ১২৬০ কোটি টাকা। পরিবহণে বরাদ্দ ৩৮০ কোটি টাকা। সংখ্যালঘু উন্নয়নে বরাদ্দ ৩৫০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৮৫৯ কোটি টাকা। তথ্য-সংস্কৃতি বরাদ্দ ১৫০ কোটি টাকা। তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ ১১৩.১৩ কোটি টাকা। পুর ও নগরোন্নয়নে বরাদ্দ বেড়ে ২০৪৪ কোটি টাকা। খাদ্য সরবরাহ খাতে বরাদ্দ ১১৮ কোটি টাকা।শ্রম দফতরে বরাদ্দ ২০০ কোটি টাকা।
কর্মসংস্থানে লক্ষ্যমাত্রা পেরনো গিয়েছে বলে দাবি করে অর্থমন্ত্রী তথ্য দিয়েছেন, কর্মসংস্থান হয়েছে ১০ লক্ষ ২৪ হাজারেরও বেশি। ১৩ লক্ষ ১৪ হাজার কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেও বেকার-ভাতা চালু করছে রাজ্য৷ 'যুব উত্সাহ প্রকল্প' নথিভূক্তদের জন্য মাসে মিলবে ১৫০০ টাকা৷ আগামী এক বছরে ৩ হাজার কিলোমিটার সড়কপথ তৈরি করবে রাজ্য সরকার৷ বাজেটে বললেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র৷ পাশাপাশি, বেলেঘাটা, বাগজোলা এবং টালিনালা খাল পুনরুজ্জীবনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/34458-2013-03-11-11-45-02
কলকাতা:বাজেটে উত্সাহিত হওয়ার মতো কিছু দেখছে না শিল্পমহল৷ যা বরাদ্দ হয়েছে তাতে শিল্পায়ন গতি পাবে না৷ বড় শিল্পের জন্য কিছু নেই৷ সড়ক পরিকাঠামোয় বরাদ্দ কমানো শিল্পের পক্ষে শুভ নয়৷ মন্তব্য বণিকসভাগুলির৷ অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের অবশ্য দাবি, ২০১৪-র মধ্যে তিনহাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হবে৷ তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজ্যে শিল্পায়নের গতি কার্যত স্তব্ধ৷ রাজ্যের শিল্পবান্ধব ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্য রাজ্য সরকার ঘটা করে বেঙ্গল লিডস বা একাধিক শিল্প সম্মেলন করলেও বিনিয়োগকারীদের থেকে সদর্থক কোনও সাড়া মেলেনি৷ এমনটাই মত বণিক মহলের একাংশের৷ তাদের মতে, শিল্প টানতে হলে আগে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে৷ কিন্তু, জমি জটে ইতিমধ্যেই রাজ্যের একাধিক পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্প বিশ বাঁও জলে৷ এই পরিস্থিতিতে, এ দিনের বাজেটে সড়ক পরিকাঠামো ক্ষেত্রে জোর দেওয়া তো দূরের কথা বরাদ্দই গতবারের থেকে কমিয়ে দেওয়া হল৷
গতবারের বাজেটে সড়ক পরিকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ করা হয়েছিলে প্রায় ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা৷ এবার তা কমিয়ে করা হয়েছে প্রায় আটশো পঁচনাব্বই কোটি টাকা৷ অথচ অর্থমন্ত্রী দাবি করলেন, ২০১৪-এর মধ্যে তিন হাজার কিলোমিটার সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা করবেন৷
বিভিন্ন মহলের তাই প্রশ্ন, যেখানে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হল, সেখানে কী ভাবে রাজ্য সরকার, আগামী এক বছরের মধ্যে তিন হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করবে?
অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহত্ শিল্পে যে পরিমাণ ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে, তাতে কার্যত হতাশ বণিক মহল৷ এবারের বাজেটে অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় তিনশো ছাব্বিশ কোটি টাকা৷ গতবার এই খাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল প্রায় ২৮৬ কোটি টাকা৷
মাঝারি ও বৃহত্ শিল্পে এ বার বরাদ্দ ৪০ কোটি বাড়িয়ে ৫৪০ কোটি টাকা করা হয়েছে৷ বণিক মহলের মত, এই পরিমাণ বরাদ্দ বৃদ্ধিতে রাজ্যের শিল্পায়ন গতি পাবে না৷ বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সচিব ডিপি নাগ ও বেঙ্গল চেম্বার্স কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সভাপতি কল্লোল দত্তের বক্তব্য, শিল্পায়নের জন্য যা বরাদ্দ হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়৷ পরিকাঠামোয় বরাদ্দ বাড়বে বলে প্রত্যাশা ছিল ৷ তা হয়নি, বরং একটু কমেছে ৷ এটা আশার কথা নয় ৷
এমনিতেই রাজ্যের শিল্পের বেহাল অবস্থা৷ এই পরিস্থিতিতে এ দিনের বাজেটে উত্সাহিত নয় শিল্পমহল৷ যা রাজ্যের শিল্পায়নের ভবিষ্যত নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/34476-2013-03-11-16-42-05
রোজকার কাছা টানতে কোঁচা খুলে যাওয়ার অবস্থা কি বদলাবে
গুগলি বটে ছেড়েছে একটা চিদম্বরম৷ কুস্তির ভাষায় ধোবি-পট্টাং! সবাই 'ফিলাট' হয়ে গেছে! উচ্ছসিত প্রশংসাও কুড়িয়েছেন যেমন চিদম্বরম, কম-বেশি নিন্দাও শুনেছেন তিনি৷ কেউ বললেন, 'আহা! মরি মরি...কে ভেবেছিল যে এই কঠিন পরিস্থিতিতে এরকম একটা বাজেট পেশ করবেন!' আবার কেউ বললেন, 'এটা একটা বাজেট হল নাকি?' আবার কেউ বললেন, 'না, খুব খারাপ করেননি বোধহয় চিদম্বরম, বিশেষ করে যদি এটা ধরে নেওয়া যায় যে তাঁর উপর বিস্তর চাপ ছিল ২০১৪-র নির্বাচন মাথায় রেখে একটি জনপ্রিয় বাজেট পেশ করার৷ উনি অতটাও জনপ্রিয় হতে চাননি, আবার মূল যে অর্থনৈতিক সমস্যাগুলি সেগুলির একটু সমাধান করার চেষ্টা করেছেন৷'
এই জন্য সেই চিরপরিচিত রবি ঠাকুর:
ত্র্যম্বকের ত্রিনয়ন ত্রিকাল ত্রিগুণ শক্তিভেদে ব্যক্তিভেদে দ্বিগুণ বিগুণ৷ বিবর্তন আবর্তন সম্বর্তন আদি জীবশক্তি শিবশক্তি করে বিসম্বাদী৷ আকর্ষণ বিকর্ষণ পুরুষ প্রকৃতি৷ আণব চৌম্বক বলে আকৃতি বিকৃতি৷ কুশাগ্রে প্রবহমান জীবাত্মবিদ্যুত্ ধারণা পরমা শক্তি সেথায় উদ্ভুত৷ ত্রয়ী শক্তি ত্রিস্বরূপে প্রপঞ্চে প্রকট, সংক্ষেপে বলিতে গেলে - হিং টিং ছট্
বোঝা যাক বা না যাক, সেটা বড় কথা নয়৷ বাজেট যখন, তখন এটা ধরে নিতেই হয় যে অনেক বুদ্ধি, অনেক বিবেচনা, অনেক অঙ্ক কষে তবে এটি তৈরি হয়েছে৷ বাংলার এক নামী অর্থনীতিবিদ বন্ধু সহাস্যে বললেন: 'দেখুন আমাকে জিজ্ঞেস করলে বলব যে, চিদম্বরম সাহেবের বাজেট না বোঝার কোনোও কারণ নেই৷ আপনি যে অমর পংক্তিগুলি তুলে ধরলেন, তারই খেই ধরে বলি: নিতান্ত সরল অর্থ, অতি পরিষ্কার/বহু পুরাতন ভাব, নব আবিষ্কার...এক কথায় বলতে গেলে, একটি অর্ধেক ভর্তী জলের গেলাসের মতো! পুরো খালি বলা যাবে না, আবার পুরো ভর্তীও না৷ কখনও সখনও অর্থমন্ত্রীরা এই পথ ধরে থাকেন৷ অনেকটা মেডেন ওভার গোছের বাজেট-উইকেট ও পায়নি, রানও দেয়নি৷'
শেয়ার বাজারের প্রধান সূচকটি কিন্ত্ত পড়েছে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ হওয়ার সাথে সাথেই৷ ২৭ ফেব্রুয়ারি বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সেনসেক্স বন্ধ হয়েছিল ১৯১৫২.৪১ পয়েন্টে৷ চিদম্বরম বাজেট পড়াকালীনই সেনসেক্স নেমে যায় ২৯১ পয়েন্ট, এবং বন্ধ হয় সেদিন ১৮৮৬১.৫৪ পয়েন্টে৷ ৪ মার্চ-এ সেনসেক্স পৌঁছল ১৮৭৬০.৪১ পয়েন্টে! পরের দিন অর্থাত্ মঙ্গলবার, সেনসেক্স একটু সতেজ হল বটে, কিন্ত্ত বাজারময় এখন সংশয় যে এই টালমাটাল অবস্থা চলবে কতদিন! বাজেট কে ঘিরে শেয়ার বাজার বরাবরই একটা খেল দেখায়৷ এমন নয় যে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ হলেই শেয়ার বাজারের সূচকগুলি হুহু করে বাড় প্রতিবার৷ সেরকম হয় কখনও সখনও৷ কিন্ত্ত বাজেটের পর শেয়ার বাজার অনেক সময়েই পড়ে যায়৷ এবারও পড়েছে৷ বোধহয় সেই জন্যই, অর্থনীতিবিদরা একটু নাক সিঁটকান বরাবর, শেয়ার বাজার সম্বন্ধে৷ প্রকাশ্যেই বলেন, যে বহু সময় শেয়ার বাজার বুঝতেই পারে না বাজেটকে৷ বা, বুঝলেও বাজার চলে নিজের ছন্দে যেটার সঙ্গে তালে তাল মেলানো সম্ভব নয় কোনও অর্থমন্ত্রীরই৷
কথাটা একেবারে অমূলক নয়৷ তবু, চিন্তার নানা কারণ আছেই বাজার মহলে৷ হ্যাঁ, জনপ্রিয় হবার জন্য কৃষিঋণ মকুব করেননি, বা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ধন-সম্পত্তির উপর কর বসাননি, কিন্ত্ত তেমনি GAAR (সাধারণ কর ফাঁকি আটকানো বিধি) বাতিলও করেননি, জমি অধিগ্রহণ বিলের ব্যাপারে বাড়তি কিছু বলেননি, যে সব প্রকল্প আটকে আছে সেগুলি ত্বরাণ্বিত করার জন্যে কোনও প্রস্তাব রাখেননি৷ এসব অর্থনীতিবিদদেরই কথা এবং এনাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন যে আন্তর্জাতিক মহলে বিরাট কিছু আলোড়ন না হলে, আগামী মাসগুলিতে ভারতের শেয়ার বাজার ওই একটা গণ্ডির মধ্যেই ঘোরাফেরা করবে৷
আন্তর্জাতিক আবহাওয়াও খুব আশাব্যঞ্জক নয়৷ চিনদেশে ঘরবাড়ি নির্মাণের যেমন ঋণ দেওয়ার ওপর কড়াকড়ি আসতেই, ৪ মার্চ সকল শেয়ার বাজার নামতে শুরু করে, কারণ এটা ভাবা হয় যে এই পদক্ষেপ চিনের অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে উঠবে৷ কিন্ত্ত, পরের দিনই চিনের নেতৃবৃন্দ এটা পরিষ্কার করে দেন যে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার অক্ষুন্ন থাকবে ৭.৫ শতাংশে, যেমনটি ওদের পঞ্চবার্ষিকী যোজনায় বলা হয়েছে, এবং সেই লক্ষ্যের দিকে এগোনোর জন্য যা যা করার তা করা হবে৷ এই আশ্বাস পাওয়া মাত্রই আবার ঘুরে যায় সব শেয়ার বাজার৷ সূচকগুলি পৃথিবীব্যাপী বাড়তে থাকে৷ আমাদের এখানেও বম্বে শেয়ার বাজারের সূচক শুক্রবার বন্ধ হয়েছে ১৯৬৮৩ পয়েন্টে৷
তবে, এও সাময়িক৷ কারণ, মার্কিন দেশে অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভালো এখনও নয়৷ ইউরোপীয় দেশগুলিও বেশ বেকায়দায়৷ কিছুদিন আগেও ভাবা হচ্ছিল যে মন্দার কবল থেকে বোধহয় ইউরোপীয় দেশগুলি শেষমেশ বের হতে পারবে! কিন্ত্ত, সর্বশেষ ইঙ্গিতটা বলছে, না৷ হতে পারে স্পেন বা ফ্রান্স আবার হোঁচট খেতে চলেছে! শুধু সময়ই বলতে পারবে কী হবে! মুশকিল হল এই যে যদি ইউরোপীয় দেশগুলি আবার গভীর অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে, তার প্রভাব অবশ্যাম্ভাবী গিয়ে পড়বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও৷ তাই এই দেশের শেয়ার বাজার কিঞ্চিত্ ভয়ে ভয়ে তো থাকবেই৷ তার উপর আছে দিল্লির রাজনৈতিক আবহাওয়া, সামনেই নির্বাচন...কত কী!
সে যা হবার তা হবে৷ এই মুহূর্তে কিন্ত্ত চিদম্বরম বা শেয়ার বাজারের উপর নয়, কলকাতা শহরে অন্তত সবার নজর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রর উপর৷ বেচারি! গত বছর অর্থাত্ ২০১২-১৩র বাজেট শেষ করেছিলেন একটি বানী দিয়ে: প্রবল বিশ্বাসে বড় বড় কার্যের জনক এগিয়ে যাও, এগিয়ে যাও৷ দরিদ্র ও পদদলিতদের আমরণ সহানুভূতি ও সহায়তা করিতে হইবে - ইহাই আমাদের মূলমন্ত্র৷ এগিয়ে যাও, বীর হৃদয় যুবকবৃন্দ!
লাইনগুলি স্বামীজির৷ মহামানব এই সন্ন্যাসী একদা ভারতভূমীর কোটি কোটি পদদলিত মানুষকে উদ্ধারের পথ দেখিয়েছিলেন, উদ্বুদ্ধ করেছিলেন মাহযজ্ঞের জন্য, কুণ্ডলিনী জাগরণের মতো জাগিয়ে তুলেছিলেন লক্ষ লক্ষ দেশবাসীর সুন্ত সূক্ষ অনুভূতিগুলিকে৷ অমিত মিত্র বিচক্ষণ মানুষ৷ একান্ত মমতাপন্থী এই তৃণমূল সেবকের একটু বুঝতে দেরি হয়নি যে স্বামীজির এই কথাগুলির মধ্যে লুকিয়ে আছে নিজের দলনেত্রীকে খুশি করার বীজমন্ত্রটাও৷ দরিদ্র ও পদদলিতদের আমরণ সহানুভূতিই কী তৃণমূল ও মমতার কাম্য নয়? এদের উপরেই তো নির্ভর করছে মহাকরণে থাকা না থাকা৷ সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না৷ দলের কথাও বলা হল, দলনেত্রী কেও খুশি করা হল, আবার ধর্মভীরু বাঙালির মার্জিত রুচিবোধ কেও একটু সুড়সুড়ি দেওয়া হল!
বাঙালির কতগুলি মজার ব্যাপার আছে! অনেক কিছুতেই তিনটের একটা সেট বানিয়ে নেয় মনে মনে৷ যেমন, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর, চুনি-পিকে-বলরাম, রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ-সারদামা...এই রকম৷ সেটটার যে কোনও একজন একবার ছুঁয়ে গেলেই, বাঙালি খুশি৷ অব্যর্থ কাজ করে৷ আর মিত্র মশাই তো ২০১২-১৩র বাজেট পেশ করার সময় কোনও ফাঁক-ফোকর রাখেননি৷ শেষ যদি করে থাকেন বিবেকানন্দে, শুরু করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ দিয়ে! ওই একটি নাম যেটা বাঙালি কে সম্মোহিত করে রেখেছে ৭২ বছর ধরে৷ ওই নামেই যাদু আছে! স্বরলিপি জানুক ছাই না জানুক, এক পিস্ রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে না পারলে আজও বাঙালি মেয়ের বিয়ে হয় না৷ তাই, অমিত মিত্র বেছেছিলেন, 'বাংলার মাটি, বাংলার জল...৷' বাঙালির কানে বাজতে শুরু করল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুললিত কণ্ঠ, ভরে গেল মন রবীন্দ্রনাথে! আরে, শ্যামবাজারের পাঁচ মাথার মোড়ে বা গড়িয়া হাটের মোড়ে অত গাড়ি-ঘোড়ার শব্দের মধ্যে যদি দিদির আদেশে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজতে পারে, তাহলে অমিত মিত্রই বা ভুল কী করলেন? আর তাছাড়া, বাজেট-বক্তৃতায় তো আজকাল এই সব উল্লেখ করা খুব ফ্যাশন হয়েছে৷ এই তো চিদম্বরম সাহেবই এবার পড়ে শোনালেন প্রাচীন তামিল কবি ও দার্শনিক তিরুভাল্লুভার থেকে৷
কিন্ত্ত প্রশ্ন হল এবার ২০১৩-১৪র রাজ্য বাজেট পেশ করার সময় অমিত মিত্র কী করবেন, কোন মহিষীর বানীর আশ্রয় নেবেন? পশ্চিম বাংলা তো কপর্দকশূূন্য প্রায়৷ অনেকটা বিধাননগরের উড়ালপুলের মতো, কোনদিন দড়াস করে খসে পড়লেই হল? কোষাগারের কথাও বা বল্টু ঢিলে, কোথাও বা স্তম্ভ নড়বড়ে৷ মাইনে পত্তর হবে কিনা বোধহয় মিত্র মশাই নিজেও সঠিক জানেন না৷ দেশোদ্ধারের কাজ তো দূর-অস্ত৷ আগের বছরের কথা মতো, স্বামীজির বানী অবলম্বন করে হতাশ বাঙালি 'প্রবল বিশ্বাস' নিয়েই এত দূর এসেছে! এবার প্রবল প্রবলেমের সন্মুখীন হতে হচ্ছে যে!
সবাই এক্কেবারে 'ইসে' আর কী!! কত ভাই ভাই করে, সোনা ভাই, লক্ষ্মী ভাই করে কোলেপিঠে চড়ানো হল, এখন সেই বিমল গুরুংও উল্টো সুরে গাইছে? তাও তৃতীয় সুর ষষ্ঠ সুর হলেও বা একটা কথা ছিল! তা না, সরাসরি উল্টোসুর গাইছে? আবার আজকাল জন ওয়েনের মতো মাথায় একটা টুপি দিয়ে ঘুরে বেড়ায়!
এতো করে বামফ্রন্টকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হল, সেই একটা বাই-ইলেকশন জিতে বেরিয়ে গেল! আরে এই 'কামবখত্' ফ্লাইওভারটাও দেখ! দিব্বি দাঁড়িয়ে ছিল, হঠাত্ হুড়মুড় করে ভেঙে পড়লি? কারও উপর কি একটু ভরসা করা যাবে না? ওদিকে দেখ, দুধ-কলা খাইয়ে কী লাভ হল তাহলে? আরে বাবা, মারলি তো মারলি ইউনিফর্ম পরা পুলিশ মারলি? তোদের কি বিন্দুমাত্র কোনও আক্কেল নেই গা?
একের পর এক বিপর্যয়! তার উপর তো এই কেন্দ্রীয় সরকার রয়েইছে একজন৷ কিছুতেই টাকা ছাড়বে না, মোরাটোরিয়াম দেবে না৷ আরে ভাই, রাজনীতিতে একটু আধটু গরম দেখাতে হয়, সব্বাই দেখায়! ও মা! এই ভবি ভোলার নয়৷ 'দেখ কেমন লাগে' বলে অর্থের কলটি বন্ধ করে রেখে চুপ করে বসে আছে প্রতিশোধ নিতে!
এইসবের মধ্যে চিদম্বরমের থেকে সহস্রগুণ কঠিন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কিন্ত্ত অমিত মিত্র৷ এবং আজ দুপুরেই তিনি পেশ করবেন পশ্চিম বাংলার বাজেট ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষের জন্য৷ কাজটা শক্ত৷ ভেতরে ভেতরে কান্না পেলেও, বাইরে হাসিখুশি থাকতেই হবে মিত্র মশাইকে!
আয়বৃদ্ধির কিছু পথ তো বার করতেই হয়, কিন্ত্ত উপায়ই বা কই? সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন, পরের বছরেই লোকসভার ভোট৷ 'গরীব ও পদদলিত'দের তো ছোঁয়া যাবে না৷ তারাই তো ভোট দেবেন, জেতাবেন৷ রইল পড়ে মধ্যবিত্ত ও শিল্পমহল৷ মধ্যবিত্ত মরছেই, আরও মরবে হয়ত৷ আর শিল্পমহল পালাই পালাই করছে এমনিতেই, আরও চাপ সৃষ্টি করলে পালাবার তাগিদ জোরদার হবে!
অবস্থা ভয়ানক! শুধুমাত্র মাইনে দিতে, পেনশন দিতে, ঋণের সুদ ও আসলের কিস্তি জোগাতে, খরচ হয় প্রতি বছর আনুমানিক ৬৭,০০০ কোটি টাকা - অর্থাত্, মাসপিছু ৫,৬০০ কোটি টাকার মতো৷ মাথার উপর হিমালয় পর্বতের ন্যায় ঋণের বোঝা৷ তার উপর আছে দলনেত্রীর নানান রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত আবদার৷ ওকে এতো দাও, তাকে এতো দাও৷ টাকা আসবে কোথা থেকে? সেটা কেউ জানে না৷ গত বাজেটে নতুন ট্যাক্স বাবদ বাড়তি আয় অনুমান করা হয়েছিল মাত্র ২০০ কোটি টাকা৷ কর বসানোর জায়গাই বা কোথায়? দামি গাড়ি, মোবাইল ফোন, এয়ার কন্ডিশনার, ঘড়ি, দেশি মদ, রোড ট্যাক্স-এইরকম কিছু কিছু জিনিস আছে যার উপর কর চাপে৷ সবাই জানে সেটা৷ কিন্ত্ত, এইসবে বিন্দুমাত্র সুরাহা কিছু হবে কি? আর তার চেয়েও বড় কথা-রোজই তো কাছা টানতে কোছা খুলে যাচ্ছে! এই অসম্ভব অবস্থাকে কতদিন আর জোড়াতাপ্পি দিয়ে চালানো যায়?
নেতাজির বংশজাত এই বর্ষীয়ান বাঙালি ভদ্রলোকের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল এক রাজনৈতিক নেতার কথায়: 'ওতো বিচক্ষণ ব্যক্তি, বোঝা উচিত ছিল কী ঝুঁকি নিতে চলেছেন! খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে, কাল হল এঁড়ে গরু কিনে'! তবু, মিত্র মশাইয়ের এই দুরূহ প্রচেষ্টার সাফল্য কামনা করে বলি, কালিঘাটে মন্দিরবাসিনী বিশ্ব মাতার স্মরণাপন্ন হন৷ বলুন: বিপদে মোরে রক্ষা কর এ নহে মোর প্রার্থনা - বিপদে আমি না যেন করি ভয়৷ দুঃখতাপে ব্যথিত চিতে নাই বা দিলে স্বান্তনা দুঃখে যেন করিতে পারি জয়৷৷ সহায় মোর না যদি জুটে, নিজের বল না যেন টুটে৷ সংসারেতে ঘটিলে ক্ষতি, লভিলে শুধু বঞ্চনা, নিজের মনে না যেন করি ক্ষয়৷৷
অঙ্ক ঠিকঠাকই থাকবে৷ ৯ নম্বর ভগবতী লেনেরও আশীর্বাদ পাবেন, ৩০-বি হরিশ চ্যাটার্জী স্ট্রিটের অরিজিনাল মাতৃস্বরূপিনী দিদিরও! আমরাও দেখি একটা ভালো বাজেট৷
মাত্র দশ মাসে ৬৩২টি শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা
কলকাতা:বাজেট বক্তৃতাতেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ করলেন অমিত মিত্র৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই বিধানসভায় দাঁড়িয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগে সরব হলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী৷ তিনি একদিকে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার জন্য যেমন বিগত বাম সরকারকে কাঠগড়ায় তুললেন, তেমনই কংগ্রেস শাসিত কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সিপিএমকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও করলেন৷ বারবার দাবি জানিয়েও কেন্দ্রের কাছ থেকে আর্থিক দাবি দাওয়া ব্যর্থ হয়ে রাজ্য সরকার যে হতাশ, তার স্পষ্ট ছাপ লক্ষ্য করা গেল অর্থমন্ত্রীর গলায়৷ তিনি বলেছেন, রাজ্যের ঘাড়ে চেপে বসা ঋণের বোঝার হাত থেকে উদ্ধার পাওয়ার রাস্তা বের করতে তিনি এবং মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বের সঙ্গে অন্তত দশবার বৈঠক করেছেন, কিন্তু কিছুই করা যায়নি৷
যদিও প্রত্যাশিতভাবেই অমিত মিত্রর বঞ্চনার অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে রাজি হয়নি কংগ্রেস৷ পাল্টা বাম অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে অমিত মিত্রকেও এক সারিতে দাঁড় করিয়ে কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার দাবি, কেন্দ্র সব ধরনের সহযোগিতা করছে৷ কিন্তু রাজ্য সরকারই এখনও পর্যন্ত আয় বাড়ানোর কোনও রূপরেখা তৈরি করে উঠতে পারেনি৷ অমিত মিত্রর দাবি অযৌক্তিক৷ ফলে অমিত মিত্রর বাজেট ভাষণেও কেন্দ্র-রাজ্য তিক্ত সম্পর্কের স্পষ্ট ছাপ ধরা পড়ল৷
সব মিলিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ঋণ মকুব নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য যে চাপানউতোর চলছে, তা যে আগামী দিনেও চলবে এবং রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বারবার তা মানুষের সামনে তুলে ধরার কৌশল জারি রাখবেন, তা এদিন অমিত মিত্রর বাজেট ভাষণ থেকেই স্পষ্ট হয়ে গেল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/34466-2013-03-11-13-34-46
কলকাতা: ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে রাজ্যে কমপক্ষে ১০ লক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে বলে দাবি করলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র৷ তাঁর এই দাবিকে ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে৷ প্রশ্ন উঠছে, কীসের ভিত্তিতে ১০ লক্ষ কর্মসংস্থানের দাবি করছেন অর্থমন্ত্রী? এই কর্মসংস্থান কি শুধু সরকারি ক্ষেত্রে না কি বেসরকারি ক্ষেত্রকেও হিসেবের মধ্যে ধরছে রাজ্য সরকার? কেন বাজেটে তার স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হল না? আগামী অর্থবর্ষে আরও ১৩ কর্মসংস্থান হবে বলেও বাজেট ভাষণে জানান অর্থমন্ত্রী৷ স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে বাড়তি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে অর্থমন্ত্রীর এই দাবি ঘিরেও প্রশ্ন উঠছে৷ জমি-নীতির জটে অনিশ্চয়তার মুখে রাজ্যের একাধিক প্রকল্প৷ বড় শিল্প আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ৷ এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, তাহলে কি করে হবে এই ১৩ লক্ষ কর্মসংস্থান? সরকারি ক্ষেত্রে নিশ্চয় এমনটা সম্ভব নয়? এদিকে বাজেটে কর্মসংস্থানের ইস্যুতে বিভ্রান্তির প্রশ্ন এদিন সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ তাঁর মন্তব্য, এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন অর্থমন্ত্রীই৷
কর্মসংস্থানের দাবি নিয়ে রাজ্য সরকারকে রীতিমতো তুলোধোনা করেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র ৷
দাবি আর আশ্বাসের জোড়া পরিসংখ্যান জন্ম দিল একাধিক প্রশ্নের৷ কিন্তু উত্তর মিলল না অমিত মিত্রের বাজেটে৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/34473-2013-03-11-16-11-14
১২ ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচে দুষ্কৃতীর গুলিতে কলকাতা পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর তাপস চৌধুরী খুনের ঘটনার পরের দিনই ইকবাল তৃণমূলের অফিসে বসে কথা বলেছিলেন জনৈক আকবরের সঙ্গে৷ ফিরহাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্দর এলাকায় তৃণমূলের দাপুটে নেতা ইকবাল ফোনে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কয়েক দিনের জন্য কি গা ঢাকা দেব? এবিপি আনন্দের ক্যামেরায় ধরা পড়ে, ইকবালকে ফোনে ঘনিষ্ঠ কাউকে বলছেন, তিনি ফিরহাদের পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। তিনি ফোনে বলছেন, ফিরহাদ হাকিম সাব কো বোলিয়ে অব কেয়া করে? তারপর থেকেই ইকবাল বেপাত্তা৷ ফিরহাদ অবশ্য এর মধ্যেই ইকবালকে ক্লিনচিট দিয়ে দেন৷ মহাকরণে দাঁড়িয়ে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন না, ঘটনার সঙ্গে ইকবাল জড়িত৷ এ থেকে ধারণা করা যায়, পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী সঙ্গে ইকবালের বোঝাপড়া কতটা গভীর।
গ্রেফতারির পর এবিপি আনন্দকে দেওয়া প্রথম প্রতিক্রিয়ায় মুন্না জানিয়েছেন, তিনি গার্ডেনরিচে অশান্তির পর ওপরের মহলের নির্দেশেই চলেছেন। তিনি বলেছেন, খুনের ঘটনার পর আমি পালাইনি৷ ২-৪ দিন লুকিয়ে থাকুন, এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল উপর মহল থেকে৷ তৃণমূলের নেতারাই ওই নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ আত্মসমর্পণ করতেই কলকাতায় ফিরছিলাম আমি৷
রাজনৈতিক মহলের একাংশ ইকবালের এই বক্তব্যের পর নানা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে৷ বিহার জিআরপির গারদে দাঁড়িয়ে ইকবাল জানিয়েছেন, ঘটনার পর চার-পাঁচ দিন তিনি এলাকাতেই ছিলেন৷১২ ঘটনাটি ঘটে৷ ১৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতা পুলিশের হাত থেকে তদন্তভার কেড়ে মুখ্যমন্ত্রী তা তুলে দেন সিআইডির হাতে৷ বিভিন্ন মহল প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে, ঘটনার পর চার-পাঁচদিন এলাকাতেই থাকলেন ইকবাল৷ অথচ সিআইডি তাঁর টিকিই ছুঁতে পারল না?
তাহলে কি ইকবালকে ওই চাঁর-পাঁচদিন ইচ্ছে করেই গ্রেফতার করা হয়নি? বা গ্রেফতারের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগই নেওয়া হয়নি? যে উপরওয়ালারা ইকবালকে গাঁ ঢাকা দিতে বলেছিল, তাদের নির্দেশেই কি পুলিশ ইকবালকে গ্রেফতার করতে তত্পর হল না? বিভিন্ন মহল প্রশ্ন তুলছে, ইকবালকে পালানোর সুযোগ করে দিতেই কী সিআইডির হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে?
ঘটনার পরের দিনই ইকবালকে ফোনে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তিনি যেন মুখ না খোলেন৷ গ্রেফতারের পর অবশ্য মুখ খুলেছেন ইকবাল৷ আর তাতেই বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল ও সরকার৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/34345-2013-03-08-07-14-44
আমি থাকি না থাকি আমার স্বপ্ন পূরণ হবে৷ রবিবার দমদমে সেতুর শিলান্যাস অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করে নয়া জল্পনা উস্কে দিলেন খোদ তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায়৷ মুখ্যমন্ত্রীর শিল্প উপদেষ্টা পদ ছাড়ার পরে এবার কি তা হলে দল ছাড়তে চলেছেন? না কি রাজনীতি থেকেই সন্ন্যাস? জল্পনা তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে৷
শিল্প উপদেষ্টা পদ থেকে তাঁর ইস্তফার কারণ নিয়ে যখন ধোঁয়াশা অব্যাহত, তখন রবিবার নিজের লোকসভা কেন্দ্র দমদমের বেদিয়াপাড়ায় একটি সেতুর শিলান্যাস অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করে নয়া জল্পনা উস্কে দিলেন খোদ সৌগত রায়ই৷ বিশেষ করে মনের ভাব প্রকাশে পদার্থবিদ্যার এই প্রাক্তন অধ্যাপক যেভাবে কবিগুরুর সাহায্য নিলেন তা যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ রবীন্দ্রনাথের যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন – আবৃত্তি করে সৌগত কি বার্তা দিতে চাইলেন তা স্পষ্ট না হলেও রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশেষ কোনও প্রেক্ষাপট না থাকলেও মূলত মৃত্যু-ভাবনা থেকেই এই গান লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ৷ তাহলে কি সৌগত রায়ের মনে এবার তৃণমূল বা রাজনীতি থেকে বিদায় ভাবনা? রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, যেভাবে শিল্পনীতি প্রণয়ন করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে সংঘাতের জেরে উপদেষ্টার পদ ছাড়তে হয়েছে তাঁকে, হতে পারে তাতে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ দমদমের এই তৃণমূল সাংসদ৷ আবার অপর একটি অংশের মতে, বরাবর মাথাউঁচু করে রাজনীতি করে চলা সৌগত রায়ের মনে হয়ত এবার দীর্ঘদিনের এই মঞ্চ ছাড়ার ভাবনা তৈরি হয়েছে৷ হতে পারে, এর পেছনে রয়েছে দলের বর্তমান অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট৷ একসময় যেভাবে তৃণমূলের প্রথম সারির মুখ হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে পুরোপুরি গুটিয়ে নিয়ে অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়, সেভাবেই কি এবার রাজনীতিকে বিদায় জানাতে চাইছেন সৌগত রায়? নাকি শুরু করবেন নয়া ইনিংস, অন্য শিবির থেকে? জল্পনা রাজনৈতিক মহলে৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/34435-2013-03-11-05-43-41
দিনেদুপুরে স্বাস্থ্য দফতরে পুকুর চুরি৷ স্বাস্থ্য দফতরের গাড়ির মাইলেজের ভুয়ো বিল তৈরি করে লক্ষ লক্ষ টাকা দুর্নীতির অভিযোগ৷ এখনও ব্যবস্থা নেয়নি সরকার৷ অথচ সেই খবর করতে স্বাস্থ্য দফতরে ঢুকতে বাধা আমাদের প্রতিনিধিকে৷ তাহলে কি রাঘব-বোয়ালদের পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি ধামাচাপা দিতেই সাংবাদিক প্রবেশে বাধা? উঠছে প্রশ্ন
খোদ মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা স্বাস্থ্য দফতরেই গাড়ির ভুয়ো বিল তৈরি করে লক্ষ লক্ষ টাকা দুর্নীতির অভিযোগ৷ বৃহস্পতিবারই সেই খবর সম্প্রচারিত হয়েছে এবিপি আনন্দে৷ কিন্তু দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, উল্টে স্বাস্থ্য দফতরে সাংবাদিক ঢোকার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হল৷
এনআরএস হাসপাতালের পাশে রাজ্য স্বাস্থ্য পরিবহণ সংস্থার গ্যারেজ৷ এই বিভাগই স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন কাজের জন্য গাড়ি দিয়ে থাকে৷ এখান থেকেই প্রতিদিন কলকাতা ও জেলার উদ্দেশে গাড়ি রওনা দেয়৷ কত কিলোমিটার গাড়ি যাবে, সেই হিসাব মতো তেল ভরে দেওয়া হয়৷ তারপর কিলোমিটারের হিসাবে রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ থাকে৷ আর এই কিলোমিটারের হিসাবেই ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে৷ শিয়ালদা স্টেশন থেকে ঢিল ছুঁড়লে যেখানে এনআরএসে এসে পড়ে, সেখানে তার পাশের এই গ্যারেজ থেকেই শিয়ালদা স্টেশনের আসা-যাওয়ার দূরত্ব দেখানো হয়েছে ২০ কিলোমিটার৷ কলকাতা থেকে বারাসতের আসা-যাওয়ার দূরত্ব দেখানো হয়েছে প্রায় ২৩০ কিলোমিটার৷ এরকম একাধিক গরমিল ধরা পড়েছে৷ দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, তা জানতে শুক্রবার ফের স্বাস্থ্য দফতরে যান এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি৷ কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূর অস্ত, উল্টে আমাদের প্রতিনিধিকে ঢুকতে বাধা দেওয়া হল স্বাস্থ্য দফতরের গেটেই৷ অযুহাত? বলা হল, সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷
পরে, নিরাপত্তা রক্ষীরা কার্যত গার্ড করে এবিপি আনন্দর প্রতিনিধিকে স্বাস্থ্য ভবনের ভেতরে নিয়ে যান৷ সেখানে স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাসের আশ্বাস, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷
কিন্তু নানা মহলে প্রশ্ন, স্বাস্থ্য দফতেরর মুখপাত্র এ কথা বললেও প্রথমে কেন এবিপি আনন্দর সাংবাদিককে ঢুকতে বাধা দেওয়া হল৷ তাহলে কি কিছু লোকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে? ত্রিফলাকাণ্ডের পরও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখে কোনওরকম দুর্নীতি ধরা পড়েনি৷ মাদ্রাসার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার পরও মাদ্রাসা শিক্ষামন্ত্রীর চোখে তা ধরা পড়েনি, তাহলে কি এবার স্বাস্থ্য দফতরে দুর্নীতির অভিযোগও না দেখার চেষ্টা? অভিযুক্তদের প্রশ্রয়? উঠছে প্রশ্ন৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/34375-2013-03-09-04-43-46
কলকাতা: রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের বিরুদ্ধে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় সিপিএম-ঘনিষ্ঠতার যে অভিযোগ এনেছেন, কার্যত তার নিন্দা করলেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন৷ সাংবিধানিক পদের মর্যাদা রক্ষায় তিনি মীরাদেবীর পাশে দাঁড়ালেন৷ বললেন, সাংবিধানিক পদে যাঁরা আছেন, তাঁদের সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক৷
পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে যখন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নজিরবিহীন সংঘাত চলছে রাজ্য সরকারের, তখন রবিবারই আরও একধাপ এগিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডেকে আক্রমণ করেন মুকুল রায়৷ কমিশনের সচিবের সঙ্গেও সিপিএম সখ্যতার অভিযোগ করেন তিনি৷ বলেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার বিগত বাম জমানায় নিযুক্ত হয়েছিলেন, সেজন্যই হয়ত তিনি সিপিএমের হয়ে কাজ করছেন৷। সিপিএমের সম্ভাব্য পরাজয় এড়াতে পঞ্চায়েত ভোট পিছিয়ে দিতে চাইছেন৷।তাছাড়া কমিশনের সচিবকে সিপিএম নেতা রবীন দেব, সুজন চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা যাচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন৷।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে শাসক দলের এহেন আচরণের সমালোচনায় সরব হয়েছে বিভিন্ন মহল৷ আর এই প্রেক্ষাপটেই সোমবার মীরা পাণ্ডের পাশে দাঁড়ালেন রাজ্যপাল৷ আরও একবার রাজ্য সরকারকে চরম বিড়ম্বনায় ফেলে তাঁর সাফ কথা, আমি যেটা বলতে চাই, সেটা হল, যিনি সাংবিধানিকে পদে রয়েছেন, তাঁর সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক৷এ ধরনের মন্তব্য থেকে বিরত থাকা উচিত৷
রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে মুকুল রায়ের আক্রমণের প্রেক্ষিতে রাজ্যপালের এই মন্তব্য সরকার ও শাসক দলকে অস্বস্তি ফেলল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ এর আগেও নানা সময় সরকারের নানা ভূমিকার প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন রাজ্যপাল৷ গার্ডেনরিচকাণ্ডে পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ইকবালের পাশে দাঁড়ানোর সময়ও রাজ্যপালের মন্তব্য অস্বস্তিতে ফেলেছিল সরকারকে, যা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে অসন্তোষও তৈরি হয়েছে৷ রাজ্যপালের এক্তিয়ার নিয়ে নানা সময় তৃণমূলের অন্দরমহল থেকে প্রশ্নও তোলা হয়েছে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও এই প্রাক্তন আইপিএস অফিসার যে নিজের ভূমিকা থেকে বিন্দুমাত্র সরতে নারাজ, তা কমিশন-সরকার সংঘাত প্রসঙ্গে তাঁর খোলাখুলি মতপ্রকাশ থেকেই স্পষ্ট বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/34472-2013-03-11-15-32-41
কলকাতা: উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যক্রমে শাঁওলি মিত্রর নাটক 'নাথবতী-অনাথবত্'-এর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বিতর্ক মাথাচাড়া দিল৷ শাঁওলি কি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে 'ঘনিষ্ঠতা'র পুরস্কার পেলেন? নাট্যমহলেই এই প্রশ্ন উঠছে৷ সমকালীন নাট্যকারদের মধ্যে শুধু শাঁওলি কেন, বাকিরা নন কেন, এই প্রশ্নও উস্কে দিচ্ছে বিতর্ক৷
আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে খোলনলচে পাল্টাচ্ছে উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যক্রম৷ ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত হয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা৷ সেখানেই বাংলা-খ পাঠ্যক্রমে ঠাঁই পেয়েছে নাথবতী-অনাথবত্-এর প্রথম পর্ব৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, উত্পল দত্ত থেকে বাদল সরকার, মনোজ মিত্রদের পাশে সমকালীনতার মাপকাঠিতে অন্তর্ভুক্তি হল শাঁওলির৷ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, নাথবতী-অনাথবত্ মঞ্চস্থ হওয়ার সময় সাড়া ফেলেছিল৷ সেই গুণের জোরেই পাঠ্যক্রমে শাঁওলির নাটকটিকে রাখা হয়েছে৷
কিন্ত সংসদ সভাপতির এই যুক্তি মনঃপুত নয় নাট্যমহলের৷ নাট্যব্যক্তিত্ব কৌশিক সেন মনে করছেন, প্রয়োজনা ও অভিনয়ে নাথবতী-অনাথবত্ অনন্য৷ কিন্তু নাট্যকার শাঁওলি পাঠ্যে এলে সুবিচার হবে না৷ আরও একধাপ এগিয়ে নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত প্রশ্ন তুলেছেন, শাঁওলি ছাড়া আর কেউ নয় কেন? রাজনৈতিক কারণে নাট্যকারের অন্তর্ভুক্তির অভিযোগেও আপত্তি দেখছেন না রুদ্রপ্রসাদ৷
শাঁওলি একদা পরিবর্তনপন্থী, অধুনা মমতাপন্থী৷ সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদ্বজ্জন-ব্রিগেডের অন্যতম মুখ৷ রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, সেই আনুগত্যেরই স্বীকৃতি শাঁওলির বাংলার অ্যাকাডেমির সভাপতির পদ পাওয়া৷ এ হেন শাঁওলির নাটক পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক৷ প্রশ্ন উঠেছে, এবার কি পাঠ্যক্রমেও ঘুরপথে সেই দলতন্ত্রের প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে?
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/34468-2013-03-11-14-00-16
কলকাতা: মহাকরণে গার্ডেনরিচকাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট পেশ করল সিআইডি৷
ঘটনার দিন মহম্মদ ইকবালের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশকর্মীদের জবানবন্দি রেকর্ড করবেন গোয়েন্দারা৷ আজ ভবানী ভবনে ইকবালের সঙ্গে দেখা করতে গেলেও তাঁর মেয়ে সাবাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়৷ এদিকে, ইকবাল-কন্যার অভিযোগ আজ খারিজ করে দিয়েছেন তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জিত্ শীল৷ গার্ডেনরিচকাণ্ডে ইকবাল ধরা পড়ার পর থেকেই তাঁর ও তাঁর মেয়ের দাবি, তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জিত শীলই ঘটনার দিন তাঁকে হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনে ডেকেছিলেন৷ ইকবাল নিজে থেকে যাননি৷ কিন্তু সোমবার সেই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন খোদ রঞ্জিত শীলই৷ যদিও এর বেশি এ প্রসঙ্গে কিছু বলতে চাননি তিনি৷
যদিও সিআইডি সূত্রে খবর, রঞ্জিতবাবুকে এবিষয়ে জেরা করা হতে পারে৷ এদিকে, গার্ডেনরিচকাণ্ডের সঙ্গে ইকবাল কতটা সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন, তার উত্তর খুঁজতে ঘটনার দিন হরিমোহন ঘোষ কলেজে মোতায়েন প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশকর্মীদের জবানবন্দি রেকর্ড করবে সিআইডি৷ পাশাপাশি এসআই তাপস চৌধুরী খুনের মামলায় অভিযোগকারী পুলিশ কনস্টেবল মিলনকুমার দামকে দিয়ে ইকবালকে শনাক্ত করানো হবে বলে সিআইডি সূত্রে খবর৷
যদিও এদিন সিআইডির ম্যারাথন জেরার হাত থেকে রক্ষা পান ইকবাল৷ বিকেলে ঘন্টা দুয়েক জেরা করা হয় তাঁকে৷ এদিন সন্ধে ইকবালের সঙ্গে দেখা করতে আইনজীবীকে নিয়ে ভবানী ভবনে যান তাঁর মেয়ে সাবা৷ সিআইডি সূত্রে খবর, ইকবালের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি সাবাকে৷ যদিও মুন্নার শারীরিক অবস্থার কথা তাঁর মেয়েকে জানানো হয়েছে৷ এদিকে নিরাপত্তার কথা ভেবে ইকবালকে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য এখনও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি৷ ভবানী ভবনেই চিকিত্সক এনে পরীক্ষা করানো হয়৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/34475-2013-03-11-16-34-18
`মমতা বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন`
ফের প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অভিযোগ। ঘোষিত জমিনীতি থেকে ১৮০ ডিগ্রি সরে এসে চাষের জমি অধিগ্রহনের নোটিস পাঠাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। আবাসন প্রকল্পের জন্য সম্প্রতি রাজারহাটের ছ`টি মৌজার বাসিন্দাদের কাছে জমি অধিগ্রহণের নোটিস পাঠিয়েছে হিডকো কর্তৃপক্ষ। গোটা ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের সাফ কথা প্রাণ থাকতে জমি দেবেন না তাঁরা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন ছিলেন বিরোধী নেত্রী। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী। স্থানীয় মানুষরা বলছেন, "মমতা বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।" রাজারহাটে আবাসন প্রকল্পের জন্য পাথুরিঘাটা, ছাপনা, আকাশবেড়িয়া, কদমপুর, যাত্রাগাছি, বালিগুড়ি সহ কয়েকটি মৌজার জমি অধিগ্রহণের নোটিস দিয়েছে হিডকো কর্তৃপক্ষ।
বাম আমলে আবাসন প্রকল্পের জন্য জমি দিতে আপত্তি করেন এলাকার বাসিন্দারা। জমি অধিগ্রহণ করা হবে না বলে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল হিডকো কর্তৃপক্ষ। হয়েছিল লিজ চুক্তিও। পালাবদলের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সেই জমিই অধিগ্রহণ করতে চাইছে।
এক সময় বাসিন্দারা ভরসা করেছিলেন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর। এখন তাঁদেরই তাড়া করছে বিশ্বাসভঙ্গের যন্ত্রণা। জমি ছাড়তে রাজি নয় স্থানীয় মানুষরা। এক স্থানীয়ের কথায়, "আমরা ছাড়ব না, প্রাণ থাকতে জমি দেব না।"
বসিরহাট থেকে কাঁথি, শ্লীলতাহানি চলছেই
রাজ্য জুড়ে শ্লীলতাহানি চলছেই। যাদবপুর, বাসিরহাট,কাঁথি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছে ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির খবর।
এক ছাত্রীর শ্লীলতাহনির চেষ্টা, প্রতিবাদ করায় তার দাদা এবং এক দম্পতিকে মারধরের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল এক যুবককে। গতকাল রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বসিরহাটে। অন্যদিকে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে এক মহিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে এক শিক্ষককে।
ফের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বসিরহাটে। রবিবার রাতে টিউশন সেরে দাদার সঙ্গে বাড়ি ফিরছিল একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী। পথে আচমকা তাদের ঘিরে ধরে পাঁচ-ছজন যুবক। সাইকেল আটকে প্রথমে ছাত্রীর উদ্দেশে কটুক্তি, তারপর তাঁকে টানা হেঁচড়া করা হয় বলে অভিযোগ। বোনকে বাঁচাতে গেলে ওই ছাত্রীর দাদাকে মারধর করা হয়।
ঘটনার প্রতিবাদ করেন স্থানীয় এক দম্পতি। অভিযোগ তাদেরও মারধর করে দুষ্কৃতীরা। পুলিসে অভিযোগ না জানানোর জন্য হুমকিও দেওয়া হয়। সোমবার সকালে বসিরহাট থানায় অভিযোগ জানান ওই দম্পতি। এরপরই একজনকে গ্রেফতার করা হয়।
অন্যদিকে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে এক মহিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগে কাঠগড়ায় এক শিক্ষক। অভিযুক্ত শিক্ষক কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে ঠিকাদারির কাজ করেন। এই সংক্রান্ত ব্যাপারে ওই শিক্ষকের কাছে পাওনা টাকা চাইতে গিয়েছিলেন ওই মহিলা। সেসময় তাঁকে নিগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ। পরে ঘটনাস্থল থেকে নিগৃহীতাকে উদ্ধার করে পুলিস। সোমবার সকালে নিগৃহীতার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়।
যাদবপুর গণধর্ষণ কাণ্ডে ধৃত ৫
পূর্ব যাদবপুরে গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচজনকেই গ্রেফতার করল পুলিস। সন্ধেয় গ্রেফতার করা হয় সন্টু হালদার, রাজেশ হালদার এবং প্রীতম নস্করকে। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হওয়া সুরজিত্ দাসকে বাইশ মার্চ পর্যন্ত পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ধৃত নাবালক সুজয় ডাকুয়াকে বয়সের প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত হোমে রাখা হবে। রবিবার রাতে পুজো দিতে যাওয়ার পথে এক কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় ওই পাঁচজনকে।
এর আগে পূর্ব যাদবপুর থানা এলাকায় ধর্ষণের ঘটনার থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিস তা নিতে অস্বীকার করে বলে অভিযোগ। ঘটনার প্রতিবাদে পূর্ব যাদবপুর থানায় আজ বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। বেশ কিছুক্ষণ পরে অভিযোগ নেয় পুলিস।
রাজনৈতিক রং না দেখে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করা উচিত বলে জানিয়েছেন কান্তি গাঙ্গুলি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার না করা হলে থানা ঘেরাও করা বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি।
দীপার নিশানায় মুখ্যমন্ত্রী
ফের কংগ্রেসের কটাক্ষের মুখে তৃণমূল। নিশানায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কীসের ভিত্তিতে রেলমন্ত্রক ফিরে পাওয়ার দাবি করছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি। দিনতিনেক আগেই মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেন, আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে লোকসভা ভোট হবে। এবং এরপর রেলমন্ত্রক ফের তৃণমূলের হাতে ফিরে আসবে।
বিতর্কের শুরুটা মুখ্যমন্ত্রী করেছিলেন গত আটই মার্চ নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সেমিনারে। শনিবার এল তারই জবাব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেলমন্ত্রক ফিরে পাওয়ার দাবি নিয়ে তাঁকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি দীপা দাশমুন্সি।
ইউপিএ না এনডিএ? কার হাত ধরে মুখ্যমন্ত্রী লোকসভা ভোটের পর রেলমন্ত্র্রক আবার নিজের দলের হেফাজতে আনার কথা বলছেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা জিইয়ে রেখেছেন তিনি। কংগ্রেস-তৃণমূল ফের জোট গড়ার আশু সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন এআইসিসি নেতা অস্কার ফার্নান্ডেজ। কোন রাজনৈতিক অঙ্ক মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রী রেলমন্ত্রক ফিরে পাওয়ার দাবি করছেন তা নিয়ে এখন রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে আমল দিতে কংগ্রেস যে রাজি নয় তা একরকম স্পষ্ট।
সরকার বিরোধী কুত্সার জবাব দিন, শিক্ষকদের পরামর্শ শুভেন্দু
উপলক্ষ ছিল, পুর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির প্রথম সম্মেলন৷ নিমতৌড়িতে সেই সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন ওই জেলায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতা শুভেন্দুবাবু৷ সেখানেই তিনি রবিবার বলেন, 'বাম আমলে শিক্ষকদের কাছ থেকে তোলা আদায় করত সিপিএম৷ আমরা রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর তা বন্ধ হয়েছে৷ প্রাথমিক শিক্ষায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আর হয় না৷ শিক্ষাকে কোমা থেকে টেনে বার করে সুস্থ পরিবেশ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে৷ শিক্ষকদের এখন তাই উচিত নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়া৷'
কি সেই দায়িত্ব? নিজেই ব্যাখা করেছেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি৷ তিনি বলেন, 'উন্নয়নের খতিয়ান উপেক্ষা করে এক শ্রেণির লোক ও শক্তি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার কুত্সা চালিয়ে যাচ্ছে৷ এমন ভান করছে যেন, রাজ্যে পালাবদলের পর সব শেষ হয়ে গিয়েছে৷ এরা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে৷ তাই এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার জন্য প্রাথমিক শিক্ষকদেরই এগিয়ে আসতে হবে৷'
সিপিএম আমলে অধিকাংশ প্রাথমিক শিক্ষকই সক্রিয় ভাবে দল করতেন৷ বিভিন্ন নির্বাচনে এরা সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করার দায়িত্ব নিতেন৷ ভোট সংগ্রাহক হিসেবে এরা সিপিএমের হয়ে কাজ করতেন৷ তৃণমূলও যে সেই কৌশলই গ্রহণ করছে, রবিবার শুভেন্দুবাবু তার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ এদিনের সম্মেলনে পুর্ব মেদিনীপুর জেলায় সর্বশিক্ষা মিশনের সাড়ে তিন কোটি টাকা বরাদ্দে প্রাথমিক স্কুলগুলির জন্য অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে৷ তদন্তও দাবি করা হয়েছে৷
এ ব্যাপারে পুর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি মামুদ হোসেন বলেন, 'অভিযোগটি নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হবে৷'
রেশনে দুর্নীতি রোধে চা বাগানে সমীক্ষা করবে সরকার
চা-বাগান খুলছে, বন্ধ হচ্ছে৷ কিন্ত্ত সরকারি সাহায্যপ্রাপক চা শ্রমিকের সংখ্যা কমছে না, বাড়ছেও না৷ বর্তমানে রাজ্যে বন্ধ চা-বাগানের সংখ্যা মাত্র ৪৷ ওই বাগান চারটিতে রেশন দেওয়ার যোগ্য ১৮ হাজার মানুষের বাস থাকলেও, উত্তরবঙ্গে এখনও ওই রেশন পাচ্ছেন ৯১ হাজার মানুষ৷ আসলে ২০০৪-এর হিসাবেই এখনও রেশন দিয়ে চলেছে রাজ্য সরকার৷ ফলে প্রচুর পরিমাণ রেশন সামগ্রী অযথা গুণাগার দিতে হচ্ছে সরকারকে৷ ওই সামগ্রী কোথায় যাচ্ছে, কারা পাচ্ছেন, তার কোনও হদিশ নেই সরকারের কাছে৷
রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, উল্লিখিত পরিসংখ্যানটি হিমশৈলের চড়া মাত্র৷ শুধু বন্ধ বাগান নয়, চালু বাগানের শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা নিয়েও বিস্তর অসঙ্গতি রয়েছে৷ যার জন্য বছরে সরকারি কোষাগার থেকে অন্তত ৪০ কোটি টাকা জলে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী৷ এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের সমস্ত চা বাগানের বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার৷
একক ভাবে নয়, যৌথভাবে সমীক্ষাটি করবে রাজ্যের খাদ্য, শ্রম এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দন্তর৷ সমীক্ষা করার পদ্ধতি আলোচনা করতে তিন দন্তরের প্রাথমিক একটি বৈঠকও হয়েছে৷ এখনই তা শুরু করার প্রাথমিক পরিকল্পনা থাকলেও, পঞ্চায়েত নির্বাচন দোরগোড়ায় এসে পড়ায় বাধা পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷ তাই ভোটপর্ব মিটলেই ওই কাজে হাত দিতে চাইছে রাজ্য৷ পাহাড়, তরাই এবং ডুয়ার্সের ২৭৮টি চা-বাগানেই ওই সমীক্ষা করা হবে বলে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন৷
২০০২ থেকে ২০০৪-এর মধ্যে বিশেষ সমস্যার মুখোমুখি হয় চা-বাগানগুলি৷ জলপাইগুড়ি জেলারই ২২টি চা-বাগান সে সময় হয় বন্ধ ছিল, না হয় পরিত্যক্ত অথবা রুগ্ন হয়ে পড়ে৷ ওই ২২টি বাগানের ১৫টি ২০০৫-এর সেপ্টেম্বরে খুলে যায়৷ ২০১০-এর তথ্য অনুযায়ী, সে সময় সারা দেশে বন্ধ ছিল মোট ৩৩টি চা-বাগান, যার মধ্যে এ রাজ্যে ছিল ১৪টি৷ পরে সেগুলির ১০টি চালু হয়৷ পরবর্তী কালেও কোনও কোনও বাগান বন্ধ হয়েছে, খুলেছেও কোনও কোনও বাগান৷ বর্তমানে রাজ্যে বন্ধ চা বাগানের সংখ্যা চারটি৷ এর মধ্যে দার্জিলিং জেলায় রয়েছে ২টি, বাকি ২টি জলপাইগুড়ি জেলায়৷ দার্জিলিং জেলায় বন্ধ রয়েছে রিংটন এবং কাঞ্চনভিউ চা বাগান আর জলপাইগুড়িতে বন্ধ রয়েছে দলমোর এবং ঢেকলাপাড়া চা বাগান৷ ওই বাগানগুলি বন্ধ বলে, সেখানে চালু রয়েছে অন্ত্যোদয় যোজনা প্রকল্প৷ যাতে ২ টাকা কেজি দরে চাল এবং গম দেওয়া হয় শ্রমিক পরিবারগুলিকে৷
রাজ্যের খাদ্য দন্তরের হিসাব, ২০০৪ থেকেই চা বাদানের ৯১ হাজার জনকে অন্ত্যোদয় যোজনায় খাদ্য দেওয়া হচ্ছে৷ অথচ, এখন যে ৪টি বাগান বন্ধ রয়েছে, প্রাথমিক হিসাব তাতে ১৮ হাজার বাসিন্দা ওই রেশন পাওয়ার যোগ্য৷ বন্ধ চা-বাগানে অন্ত্যোদয় যোজনা ছাড়াও চালু রয়েছে সাধারণ রেশনিং ব্যবস্থাও৷ কিন্ত্ত সেখানেও চাল-গম বিলি নিয়ে রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ৷ এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, 'রেশনের সামগ্রী যে বাইরে খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে, দপ্তরের মন্ত্রী হিসাবে আমি তা অস্বীকার করি কি করে?'
ডিপিএলে নিয়োগে বেনিয়ম, আপত্তি অডিট রিপোর্টে
আসানসোল: রাজ্য সরকারের তাপ-বিদ্যুত্ কেন্দ্র ডিপিএলে নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগে নিয়ম ভাঙার অভিযোগ তুলেছে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস্ দপ্তরই৷ তৃণমূল ঘনিষ্ঠ একটি সংস্থা থেকে নিয়োগ করতে গিয়ে ওই নিয়ম ভাঙা হয়েছে বলে অভিযোগ৷ এর জন্য সরকারি তহবিল থেকে যে অর্থ খরচ করা হয়েছে, তা 'আনজাস্টিফায়েড' বলে অডিটে মন্তব্য করা হয়েছে৷ বিপাকে পড়ে ডিপিএল কর্তৃপক্ষ মুখে কুলুপ এঁটেছে৷
নিয়ম অনুযায়ী সরকারি এই তাপ-বিদ্যুত্ কেন্দ্রে শুধু মাত্র প্রাক্তন সেনাকর্মী 'গানম্যান'দেরই নিরাপত্তা কর্মী পদে নিয়োগ করার কথা৷ ১৯৯৫ থেকে ওই নিয়ম অনুসরণ করে আসা হয়েছে৷ কেন্দ্রটিতে নিরাপত্তা কর্মীদের স্থায়ী পদের সংখ্যা ৪২৪ হলেও, বর্তমানে আছেন মাত্র ৯৮ জন৷ বাকি কর্মী চুক্তির ভিত্তিতে নেওয়া হলেও, তাঁদের নিয়োগেও ১৯৯৫-এর নিয়ম মেনে চলা হয়েছে এতদিন৷ কিন্ত্ত ব্যাতিক্রম ঘটেছে গত বছর৷
দু'টি সংস্থা থেকে ওই নিয়ম মেনে নিরাপত্তা কর্মী চাওয়ার পরদিনই সুমনা এন্টারপ্রাইজ নামে অপর একটি সংস্থা থেকে ৬০ জন কর্মী নিয়োগ করা হয়৷ যাদের কেউ প্রাক্তন সেনাকর্মী বা গানম্যান নয় বলে অডিটে উল্লেখ করা হয়েছে৷ অথচ ২০১২-র ১৫ ও ১৯ সেপ্টেম্বর ক্লিসফোর্ড প্রাইভেট লিমিটেড ও অবোধ সিকিউরিটি সার্ভিস নামে যে সংস্থা দু'টির কাছে নিরাপত্তা কর্মী চাওয়া হয়েছিল, তাঁরা কখনও জানায়নি যে, প্রাক্তন সেনা দিতে পারবেন না তাঁরা৷ তা সত্ত্বেও, ২০ সেপ্টেম্বর সুমনা এন্টারপ্রাইজ থেকে কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল৷
এতে ওই সংস্থাকে যে ৩৭ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে সরকারি কোষাগার থেকে, তাতে আপত্তি জানানো হয়েছে অডিট রিপোর্টে৷ ইন্ডিয়ান অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস্ দন্তরের ইকনমিক অ্যান্ড রেভিনিউ সেকশনের পশ্চিমবঙ্গ শাখার ওই রিপোর্টের ৭ ও ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে ওই আপত্তির ব্যাখা দেওয়া হয়েছে বিস্তারিত ভাবে৷ সিকিউরিটি বাজেট (কোড ৯৪৬১০০০৯) খাত থেকে ওই টাকা খরচ সম্পর্কে ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, 'দিস ইজ নট অ্যাট অল জাস্টিফায়েড৷' এত বড় অনিয়মের হদিশ অডিট রিপোর্টে দেওয়া হলেও ডিপিএলের কর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন৷ ম্যানেজিং ডিরেক্টর মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, 'বিষয়টি সংস্থার ঘরোয়া৷ এ নিয়ে বাইরে কিছু বলা যাবে না৷' অন্য দিকে যে সুমনা এন্টারপ্রাইজ থেকে অদক্ষ নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে, সেই সংস্থার পক্ষে শিবেশ পণ্ডিত বলেন, 'আমাদের কাছে ডিপিএল কর্মী চেয়েছিল৷ তাই আমরা দিয়েছি৷ তাঁদের কোথায়, কি কাজ দেওয়া হবে, তা সংস্থার বিবেচ্য বিষয়৷'
তৃণমূলের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনও দুর্নীতি হয়নি বলে জানানো হয়েছে৷ ডিপিএলে তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মজুমদার বলেন, 'কোনও দুর্নীতি হয়নি৷ যা হয়েছে, আইন মেনে করা হয়েছে৷' কিন্ত্ত ডিপিএলের নিয়ম ও অডিট রিপোর্টের প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি৷ সিটুর অভিযোগ, রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পর ৯০ জন কর্মীকে ডিপিএলের নিরাপত্তা বিভাগ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল অদক্ষ বলে৷ বাম শ্রমিক সংগঠনটির দুর্গাপুর কমিটির আহ্বায়ক পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, 'ওঁদের অপরাধ ছিল ওরা সিটুর সদস্য ছিলেন৷ আর এখন তৃণমূলের সমর্থকদের নিতে নিয়ম ভাঙা হয়েছে৷'
পিপিপি মডেলে উড়ালপুল অনিশ্চিত
বজবজ ট্রাঙ্ক রোডে জিঞ্জিরা বাজার থেকে বাটানগর পর্যন্ত প্রস্তাবিত উড়ালপুলের ভবিষ্যত্ অনিশ্চিত৷ জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের আওতায় পিপিপি মডেলে কেএমডিএ-র প্রস্তাবিত এই উড়ালপুল তৈরিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না কোনও বেসরকারি সংস্থাই৷ আগ্রহী সংস্থার কাছ থেকে ছ'মাস আগে দরপত্র আহ্বান করা হলেও, কোনও আবেদনকারী না আসায় দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন এখনও পর্যন্ত চার বার বাড়ানো হয়েছে৷
দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন আপাতত ধার্য হয়েছে আগামী ২৯ এপ্রিল৷ কিন্তু তাতেও কেউ আসবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নয় কেএমডিএ৷ পরিকাঠামো গড়ে তুলতে যেখান রাজ্য সরকার পিপিপি মডেলকে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার প্রেক্ষিতে এই ঘটনা মহাকরণের কর্তাদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে৷ রাজ্যে যে নতুন স্টেট হাইওয়েজ অথরিটি তৈরি হয়েছে, তারা পিপিপি মডেলে স্টেট হাইওয়েগুলির রক্ষণাবেক্ষণ ও সম্প্রসারণ করবে৷ কর্তাদের আশঙ্কা, এর পর স্টেট হাইওয়েগুলির জন্যও কোনও বেসরকারি সংস্থা আগ্রহ দেখাবে না৷
কেএমডিএ-এর মুখ্য কার্যকরী আধিকারিক অরূপ সাহা জানান, 'বজবজ ট্রাঙ্ক রোডের ফ্লাইওভার তৈরি করতে কেউ এগিয়ে আসছে না বলেই তো দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন বারে বারে পিছতে হচ্ছে৷ জানি না, ২৯ এপ্রিলের মধ্যে কোনও দরপত্র জমা না পড়লে প্রকল্পটির কী হবে৷'
কেএমডিএ-এর প্রস্তাব অনুযায়ী, ফ্লাইওভার তৈরি করার পর সেখানে টোল বসিয়ে খরচ তুলে নিতে পারবে বিনিয়োগকারী বেসরকারি সংস্থা৷ কোন গাড়িতে কত টোল হবে, তাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু, তা সত্ত্বেও কেন উত্সাহ দেখাচ্ছে না কোনও সংস্থা? পিপিপি প্রকল্প ও রিয়্যাল এস্টেট বিশেষজ্ঞ অভিজিত্ দাসের কথায়, 'আমাদের রাজ্যে জাতীয় সড়কের অনেক জায়গায় টোল প্লাজা থাকলেও, রাজনৈতিক নেতাদের বাধায় বেশ কয়েকটি জায়গায় টোল আদায় করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট সংস্থা৷ ফলে লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের৷ আমার মনে হয় এই উড়ালপুলের ক্ষেত্রেও বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছে, হয়তো পরবর্তীকালে কোনও বাধার কারণে টোল আদায় করা যাবে না৷ সেই আশঙ্কা কারণেই বোধহয় কেউ এগিয়ে আসছে না৷' শাসক দলের জুলুমে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর একটি টোল প্লাজা দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ৷
কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক ২০১১-১২ সালে জেএনএনইউআরএম-এর আওতায় এই উড়ালপুলটি গড়ার অনুমোদন দেয়৷ প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এই উড়ালপুল গড়ার প্রস্তাবিত খরচ ২৪৮ কোটি টাকা৷ মোট খরচের ৩৫ শতাংশ অর্থ কেন্দ্র অনুদান হিসাবে দেবে৷ ১৮ মাসের মধ্যে এই উড়ালপুল তৈরির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও কোনও বেসরকারি সংস্থা আগ্রহ না দেখানোয় আপাতত প্রকল্পের ভবিষ্যত্ বিশ বাঁও জলে৷ প্রকল্পের ভবিষ্যত্ নিয়ে কিছু বলতে পারছেন না নগরোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব দেবাশিস সেনও৷ যদি কোনও বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে না আসে, তাহলে প্রকল্পটির কী হবে? দেবাশিসবাবুর জবাব, 'এখনই কিছু বলতে পারছি না৷ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে হবে৷'
বিধায়ক তহবিলে বরাদ্দ বাড়াতে একমত বাম-তৃণমূল
'আমরা-ওরা' বিভাজনের রাজনীতি থেকে সরে এসে অন্তত একটি বিষয়ে রাজ্যের যুযুধান শাসক ও বিরোধীপক্ষে বিরল ঐকমত্যের ছবি দেখা গেল৷ উন্নয়ন তহবিলে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিতে একসুরে আওয়াজ তুললেন রাজ্যের বাম-ডান বিধায়করা৷ সোমবারের বাজেটে বিধায়ক তহবিলে বরাদ্দ বাড়ানো নিয়ে এখন রাজ্য বিধানসভার সদস্যরা একজোট৷
গত তিন বছরে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে৷ সেই মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাংসদ তহবিলের বরাদ্দ বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ কিন্ত্ত বরাদ্দ বাড়েনি বিধায়ক তহবিলে৷ এ বার রাজ্য বাজেটে সেই খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য ফের সর্বসম্মত প্রস্তাব নিল বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন সংক্রান্ত বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটি (বিইইউপি)৷ পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দন্তরের মন্ত্রী রচপাল সিংহের উপস্থিতিতে গত ৬ মার্চ এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে৷ বিধায়কদের এই দাবি যাতে পূরণ হয় তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার আশ্বাসও দিয়েছেন রচপাল৷ সোমবার রাজ্য বাজেটে বিধায়কদের এই বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে মনে করছে শাসক দলের বিধায়কদের একাংশ৷
বিধায়ক এলাকার বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের জন্য এখন বছরে ৬০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়৷ এই টাকায় বিধায়করা তাঁদের এলাকার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ক্রয় করা থেকে রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার, স্কুল বাড়ি নির্মাণ ও সংস্কার, সেতু নির্মাণ ও সংস্কারের মতো বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ করেন৷ বিধায়করা তাঁদের প্রকল্প-প্রস্তাব জমা দেন জেলাশাসকের দন্তরে৷ সেখান থেকে প্রস্তাব অনুমোদিত হওয়ার পর টেন্ডার হয়৷ বিধায়কদের তহবিলের বরাদ্দ বৃদ্ধি শেষবার হয়েছিল ২০১০ সালে৷ কিন্ত্ত পরবর্তী সময়ে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে বহুগুণ৷ এই কারণে সাংসদ তহবিলের অর্থ বরাদ্দ প্রায় আড়াই গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এই অবস্থায় বিধায়ক তহবিলের বরাদ্দ বার্ষিক ৬০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড় কোটি টাকা করার প্রস্তাব নিয়েছে বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটি৷ এই মর্মে বিধানসভার কাছে একটি রিপোর্টও পেশ করেছে এই কমিটি৷ গত বুধবার সিপিএম বিধায়ক খগেন মুর্মুর সভাপতিত্বে স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে ছিলেন রচপাল সিংহ৷ ছিলেন তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজি, জটু লাহিড়ি, ফরওয়ার্ড ব্লকের অক্ষয় ঠাকুর, সিপিএমের শাজাহান চৌধুরী, সুশান্ত বেসরার মতো বিধায়করা৷
বিধায়ক তহবিলের অর্থ বাড়ানোর এই প্রস্তাব সর্বসম্মত ভাবে গৃহীত হয় বলে জানিয়েছেন খগেন মুর্মু৷ তাঁর কথায়, 'বিধায়কদের তহবিলের বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি নিয়ে রিপোর্ট আগেও আমরা দিয়েছি বিধানসভায়৷ রচপাল সিংহ আমাদের সঙ্গে সহমত হন এই বিষয়ে৷' স্ট্যান্ডিং কমিটির এই প্রস্তাবের পাশাপাশি খগেনবাবুর সঙ্গে এই নিয়ে অর্থ দন্তরের মতবিনিময় হয়েছে৷ কমিটির অন্যতম সদস্য মঙ্গলকোটের বাম বিধায়ক শাজাহান চৌধুরীর বক্তব্য, 'গত কয়েক বছরে জিনিসপত্রের দাম প্রায় ১০গুণ বেড়েছে৷ সেই কারণে সাংসদদের বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে৷ বিধায়কদের বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন৷'
শাজাহান চৌধুরীর সঙ্গে একমত তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজি৷ তাঁর কথায়, 'সাংসদদের তহবিল দুই কোটি টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকা হয়েছে৷ রাজ্যের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিধায়কদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে৷ তাই আমরা আর্জি জানিয়েছি তহবিলের অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হোক৷' অন্য দিকে গোয়ালপোখরের কংগ্রেস বিধায়ক গোলাম রব্বানির বক্তব্য, 'এই দাবি নিয়ে আমরা তো দু-তিন বার চিঠি দিয়েছি৷ কিন্ত্ত সরকার উত্তর দিচ্ছে না৷ ৬০ লক্ষ টাকায় এই মূল্যবৃদ্ধির যুগে কোনও বিধানসভা এলাকার সাড়ে তিনলক্ষ মানুষের জন্য ব্যাপক উন্নয়নের কাজ করা যায় না৷ তাই সোমবারের বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো হোক আমরা চাই৷'
মেয়েমানুষদের এত বাড়তে নেই!
মেয়েরা কী না করতে পারে! ঘর সামলাচ্ছেন, অফিসে ডেডলাইন সামলাচ্ছেন, বাচ্চা সামলাচ্ছেন, শ্বশুরবাড়ির লোকলৌকিকতা সামলাচ্ছেন৷ এক কথায় আজকের নারী স্বনির্ভর এবং অবশ্যই স্বাধীন৷ কিন্তু এই সবের মাঝে আজও কোথাও যেন নিরাপত্তার অভাবে ভোগেন তাঁরা৷ অটোয় বসে পাশের লোককে আপনি-আজ্ঞে করে বলতে হয়, 'দাদা হাতটা একটু ঠিক করে রাখুন৷' ভিড় মেট্রোতে দিনে-দুপুরে চমকে উঠতে হয়, কামিজের চেনটা নেমে গিয়েছে অনেকটাই বা ব্লাউজ পরা খোলা পিঠে অবলীলায় হাত রেখেছেন একজন৷ প্রতিবাদে সরব হলে শুনতে হয়, আরে দিদি, এতই যখন অসুবিধে ট্যাক্সি করে গেলেই তো পারেন! এত ভিড়ে ওরম তো হতেই পারে! 'হতেই পারে'? এটাই কী স্বাভাবিক?
ছোটবেলায় রবিবার সকাল মানেই টিভির পর্দায় মহাভারত৷ উফ! কী উত্তেজনা৷ এই অর্জুন তির ছুড়ে মারল তো পরক্ষণেই কৃষ্ণের হাতে সাঁই সাঁই করে ঘুরতে থাকা সুদর্শন চক্র ঘচাং করে কেটে ফেলল কারও মাথা! কিংবা খপ করে সুভদ্রার হাত ধরে অর্জুন টেনে নিয়ে তুলল রথে৷ ডিডি ১ ডিডি২-র যুগে স্পেশাল এফেক্টে ভরপুর মহাভারত দেখতে দেখতে যেন পাড়ি দিতাম ছোট্ট অপুর মতোই এক ভিন জগতে৷ মনের মধ্যে উঁকি মারত হাজারটা প্রশ্ন৷ গুটি গুটি পায়ে দিদার কাছে গিয়ে ঝাঁপি খুলে বসতাম৷ সেই সময়ে মাঝে মাঝেই দিদা একটা কথা বলতেন, 'যা নেই ভারতে, তা নেই ভারতে'৷ সহজে বলতে গেলে, মহাভারতে যা নেই, ভারতবর্ষে তা নেই! তখন মাথার উপর দিয়ে কথাটা ট্যান হয়ে বেরিয়ে যেত৷
তারপর আস্তে আস্তে বড় হয়েছি, বুঝতে শিখেছি আশপাশের জগতটাকে৷ মাঝে মাধ্যে নিজের অজান্তেই আওড়েছি-'যা নেই ভারতে, তা নেই ভারতে৷' আওড়েছি, কিন্তু আমরা কতজনই বা খেয়াল করে দেখেছি, মেলানোর চেষ্টা করেছি আমাদের আজকের জীবনকে সেই মহাকাব্যের সঙ্গে?
আজকে আমাদের সমাজে নারীদের উপর যে অন্যায়, অত্যাচার হচ্ছে তার বীজ বপন তো কয়েক হাজার যুগ আগেই হয়ে গিয়েছিল৷ অবাক লাগছে? মনে হচ্ছে হাতে কলম পেয়ে মেয়েটি যা ইচ্ছে তাই লিখছে! না, যা ইচ্ছে (যাচ্ছেতাই) লিখছি না৷
শ্রীকৃষ্ণের লীলাখেলার বৃত্তান্ত তো ভক্তিভরে শোনেন! কিন্তু কখনও কি প্রশ্ন করেছেন শ্রীকৃষ্ণ কেন স্নানরতা গোপিনীদের গাছের আড়ালে লুকিয়ে দেখেছিলেন? কেনই বা তাঁদের পোশাক সরিয়ে রেখেছিলেন? এর মধ্যে কী একবারও 'ভয়ারিজম' বা শ্লীলতাহানি নজরে পড়েনি কারও!
বাংলা সিনেমার গানের দু'কলি ধার করেই বলতে ইচ্ছে করে, 'কৃষ্ণ করলে লীলা, আমরা করলে বিলা!' হ্যাঁ, আজকের দিনে এমন ঘটনা ঘটলে নিন্দুকেরা বলবেন বেলেল্লাপনা বা চরিত্রহীনতা৷ একশ ভাগ হক কথা৷ কিন্তু এই ঘটনা তো দলছুট, সৃষ্টিছাড়া নয়৷ তথাকথিত সৃষ্টিকর্তাই তো মেয়েদের সঙ্গে লীলা খেলায় মেতে থেকেছেন৷ রতিক্রিয়া করেছেন রাধার সঙ্গে, বিয়ে করেছেন অন্য নারীকে৷ সেই প্রেমলীলা আবার বর্ণিত হয়েছে কাব্যে! তখনও তো এক নারীকেই ব্যবহার করা হয়েছিল ভালবাসার নামে! সেদিন অর্জুন যখন সুভদ্রাকে অপহরণ করেছিলেন, তখন তো কারও আপত্তি জানানোর কথা মনে হয়নি। উল্টে অর্জুনকে সাহায্য করেছিলেন স্বয়ং কৃষ্ণ। জবাব অবশ্য তৈরি ছিল--- এটাই যে বিধির বিধান! ব্যস ইচ্ছে হোক না হোক সুভদ্রাকে দোজবর অর্জুনকে বিয়ে করতে হয়েছিল। তাও আবার হাসিমুখে! আজও সেই ট্র্যাডিশন বিদ্যমান! হ্যাঁ, যুগের দোষ, তবে এ যুগের নয়, হাজার যুগ আগে থেকেই মেয়েদের উপর জোর করাটাকে স্বাভাবিক হিসেবেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। ওই 'বিধির বিধান' গোছের জিনিস৷
আজ 'নির্ভয়া' বা 'দুর্গা'-কে নিয়ে প্রতিবাদে সারা দেশ উত্তাল৷ কিন্তু একি একেবারেই নতুন কোনও ঘটনা ভারতবাসীর কাছে? যাঁরা নাক সিঁটকে, ভ্রু কুঁচকে বলছেন যে, দেশটা দিন দিন রসাতলে যাচ্ছে, তাঁদের একটা কথা মনে করিয়ে দিতে বড্ড ইচ্ছে করছে... যে মহাকাব্যকে লাল শালুতে মুড়ে রেখে দিয়েছেন, তার আত্মজা দ্রৌপদীর কথা কি ভুলেই গেলেন? ভুলে গেলেন হাজার লোকের মাঝে, মহারথী পাঁচ স্বামীর সামনে কীভাবে বেআব্রু করা হয়েছিল তাঁকে? আজকের মতো সেদিনও সবাই নীরব দর্শকেরই ভূমিকা পালন করেছিলেন৷
না মহাভারতের মতো কোনও মহাকাব্যকে বা কোনও ঐশ্বরিক চরিত্রকে অপমান করার বিন্দুমাত্র উদ্দেশ্য আমার নেই৷ শুধু এইটুকুই বলতে চাইছি যে আজ বলে নয়, যুগ যুগ ধরে লাঞ্ছিতা হয়ে এসেছেন নারীরা৷ বেআব্রু করা হয়েছে তাঁদের৷ ভোগ্যপণ্য হিসেবে দেখা হয়েছে তাঁদের সব সময়৷ মানুষ নয়, বস্তু হিসেবেই সমাজ মেয়েদের দেখতে অভ্যস্ত৷ তাই তো দ্রৌপদী ভিক্ষাসামগ্রী হিসেবে ভাগ হয়ে যান পাঁচ স্বামীর মধ্যে৷ প্রতিবাদ করেন পাঞ্চালী, কিন্তু ধোপে টেঁকে না৷
আজও সমাজ এতটুকু পাল্টায়নি৷ আজকের তথাকথিত স্বাধীন নারীরা ততটাই নিরাপত্তাহীন৷ মধ্যযুগীয় বর্বরতার শিকার হচ্ছেন বারবার৷ আজও প্রতিপদে তাঁদের কন্ঠরোধ করা হয়৷ ধর্ষিতা হলে কখনও ফিসফিস করে আবার কখনও উচ্চস্বরে বলা হয়, 'দোষ বাবা মেয়েটারই ছিল৷ কী দরকার রাতবিরেতে বাড়ি ফেরার!' ঠিক যেমন শুনতে হয়েছিল দ্রৌপদীকে৷ তাঁর অহংকারই নাকি তিলেতিলে তঁকে সেই লজ্জাজনক ঘটনার দিকে ঠেলে দিয়েছিল৷ 'কী দরকার ছিল বাপু কথায় কথায় দুর্যোধন-দুঃশাসন বা কর্ণকে নিয়ে ঠাট্টা তামাসা করার! মেয়েমানুষের এত বাড়তে নেই৷'
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস৷ দেশ-বিদেশ সর্বত্র মহিলাদের নিয়ে হাজারটা অনুষ্ঠান, ক্যাম্পেন, বিদ্বজ্জনেদের নানা রাশভারী বক্তৃতার ছড়াছড়ি৷ কিন্তু তাতে লাভটা কী! একদিকে যখন এমন সব অনুষ্ঠানে নারীদের গুণ গাওয়া হবে, তাঁদের মহিমাণ্বিত করার চূড়ান্ত প্রয়াস চলবে, তখনই পৃথিবীর কোনও এক প্রান্তে গণধর্ষিতা হবেন কোনও অজ্ঞাতপরিচয় এক নারী, অজানা অপরাধে পুড়ে মরতে হবে কাউকে!
তাই বলি কি, অনেক তো হল এই দ্যাখনেপনা৷ একটা দিনের জন্যে 'নারী মহান' স্লোগান দিয়ে লাভটা কী? একটা বিশেষ দিন কেন? এই একটা দিন নারীকে সোনার সুতোয় বোনা বেনারসি শাড়ি বা ভার্সাচের কোটি টাকার গাউনের মতো ট্রিট নাই বা করলেন! বরং আটপৌরে নারীকে মন থেকে তাঁর অধিকারের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিন, ব্যাস, তাহলেই হবে!
রবীন্দ্রনাথ ও আরাবুল রচনা এলে কী লিখবেন
প্রথমেই দু'জনের মধ্যে পাওয়া সাযুজ্যগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক৷
প্রথমত তথা মুখ্যত যেখান থেকে তাঁদের একে অন্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হোক৷ দু'জনের কারুরই কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমা নেই৷ প্রথাগত শিক্ষায় বিশ্বাসী ডিগ্রিলোভী বাঙালিরা মনে করে যে এই ডিগ্রিহীনতা এক অতি লজ্জার বিষয়৷ যদিও রবীন্দ্রনাথ পরিণত বয়সে দু' চারটে সাম্মানিক 'ডক্টরেট' ইত্যাদি পেয়েছিলেন কিন্ত্ত তাজা-তরুণ আরাবুলের তা পাওয়ার সময় পেরিয়ে যায়নি৷ তাই ডিগ্রির তকমার বিচারে দু'জনের অবস্থান খুবই কাছাকাছি এসে পড়ে৷ সাহিত্য-সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথের অবদানের কথা শোনা যায়৷ কিন্ত্ত রাজনীতি, রণনীতি ও বাণিজ্যনীতিতে আরাবুলের অবদানও অনস্বীকার্য৷ রবীন্দ্রনাথ বোলপুরের কাছে পৈতৃক জমিতে একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছিলেন যাতে ছাত্রছাত্রীরা প্রকৃতির কোলে বসে লেখাপড়া, গান, আঁকা, হাতের কাজ ইত্যাদি শিখতে পারে৷ আরাবুলও 'বেদিক ভিলেজ' নামক এক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিলেন যেখানে প্রকৃতির কোলে বসে উচ্চবিত্ত মানুষেরা কর্মক্লান্ত নাগরিক জীবন থেকে দু' একদিন বিশ্রাম নিতে পারেন মনের মতো সঙ্গী বা সঙ্গিনী নিয়ে৷
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ব্যাপারে দু'জনেই সমান দক্ষতার পরিচয় দেন৷ বাংলার ঘরে ঘরে শিক্ষার আলোকশিখা জ্বালানোর যে গুরুদায়িত্ব রবীন্দ্রনাথ নিয়েছিলেন আজকের আরাবুলই তার যোগ্য উত্তরসূরি৷ এ বিষয়ে যে শিক্ষাগত যোগ্যতা কোনও প্রতিবন্ধক নয় তা দু'জনের কর্মকাণ্ড থেকেই প্রমাণিত হয়৷
'কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি' বা নির্মাণ শিল্পে রবীন্দ্রনাথের বিশেষ আগ্রহ ছিল বলে মনে করা হয়৷ ভিন্ন ছাঁদের ভিন্ন ভিন্ন উপাদান দিয়ে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে পাঁচটি বাড়ি বানিয়েছিলেন স্বাদ বদল করে থাকার জন্য৷ আরাবুলের নির্মাণ শিল্পে, যাকে আজকের প্রচলিত পরিভাষায় 'প্রোমোটারি' বলে, আগ্রহের কথা সর্বজনবিদিত৷ তবে আরাবুলের মহত্ত্ব এখানে আরও বেশি কারণ তিনি নিজে থাকার জন্য নয়৷ উপযুক্ত মূল্য দিয়ে যারা কিনতে পারবে তাদের বাসস্থানের সুব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য তিনি জমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ ইত্যাদি বিষয়ে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা নেন৷
পরিশেষে বলা যায় যে, তাঁদের মধ্যে আরও একটি মিল পাওয়া যায়৷ রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে নোবেল পান এবং ঘটনাচক্রে তার ঠিক একশো বছর পরে মহামান্য আদালতের কাছ থেকে আরাবুলও নোবেল (no bail) পান৷
উপরোক্ত আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে এই দুই মহানুভব বাঙালির মধ্যে অনেক সাযুজ্য বর্তমান তবে কিছু কিছু অমিলও আছে যা প্রসঙ্গক্রমে আলোচনা সাপেক্ষ৷
প্রথমত, আরাবুল যে জায়গায় রবীন্দ্রনাথকে টেক্কা দিতে পারেন তা হল তাঁর অব্যর্থ নিশানা৷ জলভর্তি জগ নিপুণ ভাবে সঠিক লক্ষে নিক্ষেপ করার বিষয়ে তিনি যে পারদর্শিতা দেখান তার তুলনা এক মাত্র চলে অলিম্পিক পদকজয়ী অভিনভ বিন্দ্রার সঙ্গে৷ রবীন্দ্রনাথের আশি বছরের ইহজীবনের নিশানা অব্যর্থ রেখে এহেন লক্ষ্যভেদ করার কোনও নজির আমাদের জানা নেই৷ এমনকী কোনও দেড়েল রাবীন্দ্রিকও এ বিষয়ে কোনও আলোকপাত করতে পারেননি৷ বরং রবীন্দ্র সমালোচকরা মনে করেন কোনও মহিলাকে জলের জগ ছঁুড়ে মারার সুযোগ পেলে তিনি হয়তো হাতের পেশি ও নিশানার নৈপুণ্য না দেখিয়ে কম্পিত হস্তে 'এ হেন পূর্ণ জলপাত্র দিয়ে/ কেমন আঘাত হানিব তোমায় প্রিয়ে'- জাতীয় দু' চার ছত্র লিখে ফেলতেন ও দিনু ঠাকুরকে ডাকতেন তাতে সুর নিক্ষেপ করতে৷ কিন্ত্ত আরাবুলের দ্বিভুজার প্রতি বরুণাস্ত্রের এই অ-সুর নিক্ষেপ বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে৷
আর একটি বিষয়ে দেখা যায় যে দু'জনের মধ্যে এক অমিল আছে৷ সেটা হল অনুগামীদের আচার-আচরণ পোশাক-আশাকে৷ রবীন্দ্র-অনুগামী বলে যে বিশেষ শ্রেণিকে সমালোচকরা চিহ্নিত করেন তাঁরা সাধারণত অপরিষ্কার পাজামা-পাঞ্জাবি পরেন৷ মাথা ভর্তি অবিন্যস্ত চুল ও একমুখ দাড়ি (তাতে দু'চারটে উকুন থাকাও অস্বাভাবিক নয়)৷ তাঁরা ঘন ঘন চা খান আর চারমিনারে সুখটান দেন৷ এমনকী জনসমক্ষে বিড়ি পান করতেও এরা দ্বিধা করেন না৷ তাঁরা সাধারণত অম্লশূল, পিত্ত ও অজীর্ণ রোগে ভোগেন৷ তাঁদের কাঁধে যে চটের ব্যাগ ঝোলে, লোকে আদিখ্যেতা করে সেটারও নাম রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সম্পর্কিত জায়গার নামের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে৷ রবীন্দ্রনাথ নিয়ে এই অতি আচার তাঁর সার্ধশতবর্ষ পালনের ঘটা দেখেও অনুধাবন করা যায়৷ সারা দেশে বিশেষ করে সারা বাংলায় রবীন্দ্রনাথের নামে কত যে রাজপথ তস্য গলি, রবীন্দ্র পাঠাগার, রবীন্দ্রপল্লী, রবীন্দ্রসঙ্ঘ, রবীন্দ্র বুক সেন্টার, রবীন্দ্র ব্যায়ামাগার, রবীন্দ্রভবন, রবীন্দ্রগান ও অঙ্কন শিক্ষা কেন্দ্র, রবীন্দ্র বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, রবীন্দ্র ফুটবল অ্যাকাডেমি, রবীন্দ্র রোল সেন্টার, রবীন্দ্র বিরিয়ানি হাউস, রবীন্দ্র ব্লাউজ স্টোর ইত্যাদি কত যে প্রতিষ্ঠান আছে তার ইয়ত্তা নেই৷ এই সব প্রতিষ্ঠানের মুখ্য উপজীব্য বিষয়গুলির সবগুলিতেই যে রবীন্দ্রনাথের বিশেষ আগ্রহ ছিল, এমন কোনও ঐতিহাসিক প্রমাণও পাওয়া যায় না৷ তথাপি রবীন্দ্র ইন্ডাস্ট্রি সারা দেশ জুড়ে রমরমিয়ে চলছে৷ আরাবুল তরুণ, নির্ভীক, ঋজু এক ব্যক্তিত্ব, তাঁর মধ্যে নাচ, গান সাহিত্যের মতো কোনও নমনীয়তা নেই৷ ও এক বলিষ্ঠ সাহসী পুরুষ যে আঘাত পেলে প্রতিঘাত করে- হয়তো আরও বেশি জোরে পদার্থবিদ্যার সূত্রের ব্যতিক্রম হিসাবে৷ তাই তাঁর অনুগামীরাও খুব সক্রিয়, প্রতিক্রিয়াশীল, সাহসী ও নির্ভীক- ঠিক যেন স্বামীজির কল্পনার তরুণশক্তি৷ (ছাত্রদের জ্ঞাতার্থে জানানো হচ্ছে যে এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ স্বামীজির আদর্শগত মতপ্রভেদ নিয়ে আলোচনার অবকাশ নেই- কারণ তা তোমাদের সিলেবাসের বহির্ভূত)৷
আরাবুলের অনুগামীরা ও রকম ল্যাতপ্যাতে নরম-সরম নয়৷ তারা পাজামা-পাঞ্জাবি নয়, দামি ব্র্যান্ডেড জিন্স, টি শার্ট, স্নিকার, সানগ্লাস পরে৷ বিড়ি চারমিনার দূর অস্ত্, বিদেশি রাজা মাপের সিগারেট ছাড়া খায় না, চা যে একমাত্র 'পানীয়' তা-ও তারা বিশেষ মানে না৷ দক্ষ সেনাপতির ছত্রছায়ায় তারা এক-এক দল এক-একটি বিশেষ কাজে পারদর্শী৷ গোঁয়ার গোবিন্দ অধ্যক্ষকে শায়েস্তা করা, অবাধ্য অধ্যাপিকাকে সহবত্ শেখানো, কিপ্টে প্রোমোটারের মন উদার করা, শত্রুপক্ষের শক্তিশালী নেতাকে ঠ্যাঙানো, কৃষিজমিপ্রেমী চাষিদের দুই বিঘা জমির উপেন বানানো ইত্যাদি ইত্যাদি আলাদা আলাদা কর্মকাণ্ডে এরা বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণপ্রান্ত৷ কর্মকাণ্ডের এই বিভিন্নতার জন্য রবীন্দ্রনাথ ও আরাবুলের অনুগামীদের মধ্যে কিছু পার্থক্য দৃষ্ট হয়৷
আরও একটি পার্থক্য দু'জনের মধ্যে এসে পড়ে৷ বাল্যকাল থেকে বহুশোকতাপে জর্জরিত রবীন্দ্রনাথের হৃদয় বার বার বিদীর্ণ হয়েছে তথাপি তিনি হৃদরোগে ভোগেননি কিন্ত্ত বহু মানুষের হৃদয়বিদীর্ণ করে আরাবুল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিত্সাধীন৷
রবীন্দ্রনাথ ও আরাবুল বিষয়ে তুলনামূলক আলোচনা থেকে দু'জনের বহু মিল ও কিছু অমিল পাওয়া যাচ্ছে৷ রবীন্দ্রনাথ নামটা একটা শিক্ষিত বাঙালি পরিবারে সারা দিনে একবার না একবার উচ্চারিত হয়েই থাকে৷ আর অন্য যে তিনজন বিখ্যাত বাঙালির নাম আমরা দিনান্তে একবার না একবার করেই থাকি তাঁরা হলেন দোষের ভাগীদার শ্রী নন্দ ঘোষ, টাকার যোগানদার শ্রী গৌরী সেন, ঈর্ষাকাতর মানুষের চোখে সফল ব্যক্তিত্ব শ্রী হরিদাস পাল মহাশয়৷ রাজস্নেহধন্য লড়াকু তাজা নেতা আরাবুল যে একদিন বাঙালির মুখে উচ্চারিত চতুর্থ নাম হয়ে উঠবে সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার কোনও অবকাশ নেই৷ আমরা আগ্রহে সেই দিনটির অপেক্ষায় আছি৷
পুনশ্চ: প্রতিবেদকের ভাইপো 'শ্রীকান্ত'র মেজদার ভাবশিষ্য তৃতীয়বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শ্রীমান বিচ্চুর সংযোজন- 'রবীন্দ্রনাথের দাড়ি আছে আরাবুলের দাড়ি নেই'৷
No comments:
Post a Comment